মুন্না নামে এক ব্লগার আছে সামুতে, যার শেষ পোষ্ট ছিল ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:২৩ মিনিটে।
অত্যন্ত নিষ্ঠাবাণ এই ব্লগার এর পর আর পোষ্ট দেননি। কিন্তু তার আগে মুন্না তার ১ বছর ২ মাস ব্লগীং জীবনের একটা দীর্ঘ সময় জোকস, বিশেষ করে ১৮+ পোষ্ট দিয়ে সন্ধ্যারাত, মধ্যরাত এমনকি দিনগুলোও গরম করে রাখতো।
একটা সময় মুন্না আমাদের মতো এই ১৮+ জোকস প্রত্যাশীদের একরাশ হতাশায় ডুবিয়ে সেচ্ছা নির্বাসনে চলে যায়। এরপর তাকে ব্লগে দেখা যায়নি।
ইদানিং মাঝে মাঝে তাকে আবির্ভূত দেখা যায়। লগ ইন করে মুন্না বসে থাকে। পোষ্ট দেয় না।
যতক্ষণ সে থাকেন ততক্ষণ আমিও সামুর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনি, এই বুঝি সতেরো বছরের মুন্না আঠারো প্লাস বছরের পোষ্ট ছেড়ে দিচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য মুন্নার বয়স আমার কাছে সব সময়ই সতেরো। কারণ,তার সাথে যখন পরিচয় হয় তখন সে সতেরো বছর বয়সের এক বিজ্ঞ শিশু ( জাতিসংঘের শিশূ অধিকার সনদ অনুযায়ি আঠারো বছরের নিচে সকলেই শিশু।
যদিও পর্যন্ত তার মেয়ে ঘেষা প্রবণতা ছাড়া সবই আগের মতোই শিশুসুলভ আছে।
তার মেয়ে ঘেষা প্রবণতা উল্লেখ করার মতো।
মুন্না একদিন আমার বাসায় ছিল। কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর দেখলাম মুন্না গরমের মধ্যেও কাথা মুড়ি দিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়েছে। ভাবলাম, ঘুমিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম কাথার ভেতর থেকে কথার শব্দ। বুঝলাম, তার বান্ধবীর জন্য বরাদ্ধকৃত সময় শুরু হয়ে গেছে।
বিস্ময়কর বিষয়, সেটা শুধু একবচন ছিলনা। বহুবচন ছিল। সে একই রাতে পাঁচ জনের সাথে কথা বলল। সবার সঙ্গেই একই সুর, একই লিরিক -
এ্যাই খেয়েছ?
সেকি খাওনি ক্যানো? শরীর খারাপ করবে তো।
তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
তুমি চাইলে এক্ষণই চলে আসতে পারবো।
কাল ক্লাশে আসছো তো?
তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লেগেছিল।
মুন্নার এই কর্মকান্ডে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আর মুন্নার ধারাবাহিক সবাইকে সময় দিয়ে নিজে চোখে ছোট করতে করতে একেবারে বন্ধ করেই ঘুমিয়ে পড়লো।
এখানে আরো উল্লেখ্য মুন্নার ভার্সিটিতে তার ডিপার্টমেন্টের প্রায় অর্ধেক মেয়ের সাথে এফএনএফ করা।
মুন্না মেয়েদের ভীষণ ভালোবাসে। ভালোবাসে তার ভাইব্রাদারদেরও। আর অনেক বেশি ভালোবাসে মানুষের কাছ থেকে কাজ নিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে। একটা উদাহরণ দেই, মুন্না পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও করে।
তো মানুষ মানুষের কাছ থেকে জিনিসপত্র, টাকা পয়সা নিয়ে লাপাত্তা হয়। আর মুন্না লাপাত্তা হয় বিভিন্ন পাতার সম্পাদকদের কাছ থেকে এসাইনমেন্ট নিয়ে। এখনো খোঁজ নিলে দেখা যাবে, মুন্না মিনিমাম পাঁচ সাতজন বিভাগীয় সম্পাদকের এসাইনমেন্ট নিয়ে ভেগে আছে।
যাই হোক, এরকম উল্লেখ করার মতো অসংখ্য ঘটনা আছে মুন্নাকে নিয়ে। সে এরকমই। যে বিষয়ে সবচেয়ে সিরিয়াসনেস দেখায় আমি সেটাতে সবচেয়ে আতঙ্কিত থাকি। কারণ, ওইটা তার হয়না। এই যে ব্লগ ছেড়েছে যেদিন তার আগের দিন সে আমকে বলেছিল, ইশতিয়াক ভাই চিন্তা করছি এখন থেকে কিছু সিরিয়াস লেখা ব্লগে পোষ্ট করবো।
আজ মুন্নার জন্মদিন,তাকে আর প্রশংসা করে লাভ নেই। তাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই। আর গত বছরের এই দিনের একটা মর্মান্তিক স্মৃতীচারণ করে শেষ করি, মুন্না গত বছর এই দিনে আমাকে আগের রাত থেকে ফোন, ভাই কাল একটু কষ্ট করে মৌচাক আসবেন। আপনাকে তো এমনি কিছু খাওয়াতে পারিনা কাল খাওয়াবো। আর ইকবাল ভাইকেও বলেছি সেও আসবে।
তারপর সকালে আবার ফোন।
আবার ফোন এগারোটায়।
বারোটায়।
যদিও তার এতো সিরিয়াসনেস দেখে আমার ভেতর শুকিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে গেলাম। যাওয়ার পর দেখি মুন্নার আর কোনো খাওয়া দাওয়া বিষয়ক কথাবার্তা নেই। আমিও ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলি। মুন্নার কোনো রেসপনস নাই। অবশেষে মুন্না মুখ খুলল, ভাই বান্ধবীদেও দাওয়াত দিয়েছিলাম সাত জনকে এসছে বারো জন।
আমার অবস্থা শেষ। এখন কী করা যায় বলেন?
আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, আরে না মিয়া, আমি কী খাইতে আইছি নাকি? তোমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আইছি। আর আমার তো পেট ভরা।
পরে আরেক মেহমান ইকবাল এসে কি পরিস্থিতি ফেস করে তা আর দেখার জন্য দাঁড়ালাম না। যদিও তার পরিনতি আরো খারাপ হবার কথা। সদ্য বিবাহিত ইকবাল নাকি তার বউকে সকাল থেকেই সতর্ক করে আসছিল, এ্যাই আমার জন্য কিন্তু রান্না করো না আমার দাওয়াত আছে।
ছবি : এই সেই আলোচিত ব্যাচেলর মুন্না।
মেয়েদের কারনে হোক, আর বিভাগীয় সম্পাদকদের কাছ থেকে বাচতে হোক চেহারা আড়াল করে আছে সে।
১৮+ পোষ্ট দেয়া সতেরো বছরের মুন্নার আজ জন্মদিন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?
ছবি সূত্র: গুগল
বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন
বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার মায়ের চৌহদ্দি
আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু
খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!
নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন