somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এডমিন যদি হয় আর্মি পারসন

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট একটা চাকরি আমার। সিনিয়র কমার্শিয়াল এক্সিকিউটিভ, সেটাও আবার মাঝারি ধরনের একটি গ্রুপ অব কোম্পানীতে। মালিকের মূল ব্যবসা গার্মেন্টস, টেক্সটাইল। চরিত্রের দিক থেকে ঠিক অন্যান্য গার্মেন্টস মালিকের মত নন আমাদের এমডি। নিচু স্বরে কথা বলেন ভদ্রভাবে। কাউকে গালি দিতে শুনি নাই। স্টাফদের বেতন তুলনা মূলকভাবে খুবই কম। তরপরও কারো কোন আপসোস নাই কারন টাকার চেয়ে মর্যাদার মূল্য অনেক বেশী। সকলেই চায় এমন একটা চাকরি করতে যেখানে থাকবে না কোন গালাগালি, হামকি ধামকি। অন্তত আমার মত শান্তি প্রিয় মানুষদের জন্য এটা আদর্শ চাকরি বটে।

এ ঘটনা তখনকর যখন কোম্পানীর ভরা যৌবন, মালিকের কোন দুশ্চিন্তা নাই। মার্চেনডাইজার ম্যানেজার মালিকের আপন খালাত ভাই, কমার্শিয়াল ম্যানেজারও খালাত ভাই তবে একটু দুর সম্পর্কের। তারা বেশ টাকার মালিক বনে গেছেন। হয়তো বা কমিশনের মারপ্যাচ বুঝে গেছেন। তার পরেও মালিকের কোন লোকসান নাই। তারা কাজ আনছে ভুরি ভুরি মালিককে ১০ টাকা দিয়ে তারা কৌশলে হয়তো এক টাকা নিয়ে নিচ্ছে।

হঠাৎ এমডির মনে হল এই অনাকাঙ্খিত ব্যায়টা যদি রোধ করা যেত তাহলে আরো লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু এ কথা খালাত ভাইদের কাছে উপস্থাপন করি কেমনে। মাথায় বুদ্ধি এল কাউকে দিয়ে বলাতে হবে, কন্ট্রোল করতে হবে ওদের কমিশন খাওয়া।
যেই ভাবা সেই কাজ। নিয়োগ দিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাহেবকে একজন এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হিসাবে। সকল এডমিন তার উপর ন্যাস্ত হল।

মেজর সাহেব তার মেজরিয় কায়দায় সবাইকে ডেকে ডেকে নতুন করে ভাইবা নিলেন, বায়োডাটা নিলেন এবং ঘোষনা দিলেন যে এখন থেকে নতুন করে পদবী ধার্য করা হবে এবং কাজের পারফরমেন্স হিসাবে প্রমোশন দেওয়া হবে। ঘোষনা পত্র পিয়ন দ্বারা সবার ডেস্কে ডেস্কে পাঠানো হল সই করানোর জন্য।

যিনি ছিলেন মার্চেনডাইজার ম্যানেজার তার পদবী হল এসিষ্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার। এমনি ভাবে সবাইকে দুই ধাপ নামিয়ে দিলেন প্রথম ধাক্কায়। এমডি সাহেবকে বোঝাতে সক্ষম হলেন ১৫/২০ বছর ধরে যারা চাকরি করছে তারা সবাই চোর এমনকি আপনার খালাত ভাইও। উনি মেজর সাহেবের উপর বেজায় খুশী হলেন। লোক নিয়োগ এবং ছাটাই দেওয়ার সকল পাওয়ার ইডির উপর বর্তাল। প্রথম ধাক্কায় দুর সম্পর্কের খালাত ভাইকে একটা মাত্র নোটিশ দিয়ে বিদায় করে দিলেন প্রতিস্থাপন হিসাবে নিজের লোক নিয়ে এলেন। এর পর ধাপে ধাপে এমডির আপন খালাত ভাই, ফ্যাক্টরির বিশ্বস্ত জি,এম সহ নিচের লেবেলের প্রায় ২০/২৫ জন বিদায় হয়ে গেলেন। তবে এমডি সাহেবের আপন খালাত ভাইয়ের চলে যাওয়াটা ছিল হৃদয় বিদারক। প্রচন্ড অপমানে এবং ক্ষোভে তার চোখে পানি চলে এসেছিল। দেখলাম চোখ মুছতে মুছতে অফিস থেকে চলে গেলেন ভদ্রলোক। পিছন ফিরে একবারও তাকালেন না। বর্তমানে তিনি একটি বায়িং হাউজের মালিক।

সকলের প্রতিস্থাপন হিসাবে মেজর সাহেবের আত্মীয় স্বজনরা বহাল তাবিয়াতে চলে এলেন কো-থেকে। ইডি সাহেবের বিশ্বস্থতা আরো এক ধাপ বেড়ে গেল। পুরানো ষ্টাফদের মধ্যে হাতে গোনা ২/৪ জন ছাড়া সবাই চলে গেল মেজর সাহেবের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে। একদিকে বেতন কম অন্যদিকে অত্যাচার এ দুয়ের সমন্বয়ে আমাদের অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচির মত অবস্থা। আমি পড়ে রইলাম পেটের তাড়নায়!
এভাবে মেজর সাহেব নিজের প্লটফরম যথেষ্ট মজবুত করে ফেললেন।

ফ্যাক্টরীরর যাবতীয় কেনা কাটা তার হাত দিয়েই হতে লাগল। অন্যেরা কিছু পারচেজ করতে গেলে ইডি সাহেবের বিশ্বস্ত লোক সাথে যেতেন কিন্তু ওনার নিজের লোক কিছু কিনতে গেলে কাউকে যেতে হত না। তারা ছিলেন সত্যের সীলমোহর। কনভেন্স এবং লাঞ্চ বিল নিয়ে সবাইকে করত হয়রানি। তার লোকদের জন্য সব কিছু ছিল শিথীল, ছুটি চাইলে মিলতো না। একদিন বেশী বাড়িতে থাকলে বেতন হেল্ডআপ করে রাখা হতো। অথচ তার লোক একটানা ১৫দিন ছুটি কাটালেও কোন উচ্চবাচ্চা হত না।

বেশ কিছুদিন পর- মালিক বুঝতে পারলেন তিনি খাল কেটে কুমির এনেছেন। ছোট্ট একটা ইন্টারনাল অডিটে দেখা গেল মেজর সাহেব ১৬ লক্ষ টাকার স্পেয়ার কিনেছেন কোন ইনডেন্ট ছাড়া। তার কোন ভাউচার নাই, কোথায় এ স্পেয়ার ব্যবহার হয়েছে তারও কোন হদীস নাই। ঘুম ভাঙল মালিকের, কিন্তু তখন বেশ দেরী হয়ে গেছে। কোম্পানীর করুন দশার হৃদয়বিদারক ঘন্টা আগেই বেজে গেছে। লস..লস আর লস.........চারিদিকের লস যেন পুরাতন ষ্টাফদের অভিশাপ। ইডি সাহেব বিপদ বুঝতে পেরে তার লোকদের বলে দিয়েছেন, যে যেখানে পার চাকরীর ব্যবস্থা কর। একে একে সবাই চলে গেলেন, এমনকি ইডি সাহেব নিজেও। কোম্পানীকে করে গেলেন তলা শূণ্য ঝুড়ি। গম গম করা সেই অফিস আজ এক মৃত্যুপুরি। লাইট সব জ্বলেনা, এসিও চলে না। মালিক আসেন শরীরটাকে যেন টেনে হিঁচড়ে। কারো সাথে কথা বলার যেন ভাষা নেই। নতুন ষ্টাফ কেউ নেই পুরাতন ৩/৪ জন ছাড়া। ফ্যাক্টরী আজ বন্ধ হয়ে গেছে। এলসি নাই, ব্যাংকেও কম যাই। মাস গেলে বেতন হবে কি হবে না তার চিন্তায় মশগুল থাকি। বসে বসে ব্লগ লেখি...................আর ভাবি

অতি লোভ কখনোই ভাল নয়। কি দরকার ছিল এমন মেজর সাহেবকে নিয়োগ দিয়ে এতগুলো ষ্টফের চোখের পানি ঝরানো?
ওরা চলে গিয়ে ভালই হয়েছে, এখন সবাই ভাল পজিশনে আছে। আমিও হয়তো চলে যাব তবে ভাল কোথাও যেখানে থাকবে সত্যিকারের এডমিন, থাকবে পাওনা ছুটির ব্যাবস্থা, থাকবে প্রমোশন, থাকবে নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট। আর যেন বুকের মাঝে যন্ত্রনা নিয়ে অফিস করতে না হয়!!

আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ভাল একটা চাকুরি জুটে যায়।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×