somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরাঞ্চলে দস্যু বাশার মাঝির তাণ্ডব : দিনদুপুরে কেটে নিচ্ছে ক্ষেতের ধান : ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনা

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দস্যুসম্রাট বাশার মাঝির তাণ্ডব চলছে এখন নোয়াখালী জেলার দক্ষিণাংশে চরাঞ্চলজুড়ে। দিনদুপুরে কৃষকের ক্ষেতের পাকা ধান কেটে নিচ্ছে দস্যুবাহিনী। ধর্ষণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক এবং সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে যে, এর প্রতিবাদ করে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে চরের দস্যুরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। তবে সব জেনেও নোয়াখালীর প্রশাসন যেন কিছুই জানে না।
জানা যায়, আশির দশকে নোয়াখালীর দক্ষিণে চরাঞ্চলে উপকূলীয় বনায়ন কার্যক্রমের আওতায় গড়ে ওঠে বিশাল বনাঞ্চল। প্রশাসনের নাগালের বাইরে দুর্গম এ বনাঞ্চলে তখন আশ্রয় নিতে শুরু করে নৌডাকাতরা। এ সময় নৌপথে ডাকাতির পাশাপাশি চরে আশ্রয় নেয়া ডাকাতরা হানা দিতে শুরু করে চরের আশপাশ এলাকার বাড়িঘরে। চরভাটারে জোতদার রেনু মেম্বারের কাজের লোক হিসেবে তখন এ পরিবারের ব্যবসায়িক নৌকা দেখাশোনা করত বাশার মাঝি। ’৯২-৯৩ সালে দস্যুরা যখন বন নিধন শুরু করে, তখন এদের সঙ্গে যুক্ত হয় বাশার মাঝি। এরপর রেনু মেম্বারের বাড়ি ছেড়ে আস্তানা গড়ে বনে। চরের সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর জোন হয়ে যায় দক্ষিণের বনাঞ্চল। বাশার মাঝি আর নব্যা চোরদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় মেঘনা হয়ে হাতিয়ার চরাঞ্চলে। জানা যায়, ২০০৩ সালে বনদস্যু নির্মূল অভিযানকালে নব্যা চোরা গ্রেফতার হলেও রহস্যজনকভাবে পালাতে সক্ষম হয় বাশার মাঝি। বনদস্যু নির্মূল অভিযানের পর দক্ষিণাঞ্চলে উজাড় হয়ে যাওয়া বন এলাকায় নানাভাবে দখল নেয় নোয়াখালীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর বাশার মাঝি আস্তানা গড়ে তোলে আরও দক্ষিণের জাহাজ্যার চরের গহিন জঙ্গলে। বর্তমানে এ চরে অস্ত্রশস্ত্রের বিশাল মজুত গড়েছে বাশার মাঝি। সহস্রাধিক সদস্যের দুর্ধর্ষ বাহিনীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে বয়ার চর, নলের চর, ক্যারিং চর, চর বাশার, নঙ্গল্লার চর, কালাধুর এবং সংলগ্ন মেঘনা নদী। এসব চরকে সেক্টরে বিভক্ত করে কমান্ডার নিযুক্ত করে কার্যত শাসন করেছে বাশার মাঝি। এসব চর হাতিয়া উপজেলার অধীন হলেও কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। চরগুলো সুবর্ণচর উপজেলা সংলগ্ন হলেও অন্য উপজেলার অধীন হওয়ায় কার্যত এখানে প্রশাসনিক যোগাযোগ নেই। জানা যায়, এসব চরের ভূমিহীন বাজার ও থানার হাটে দুটি পুলিশ বক্স থাকলেও এখানকার দায়িত্বরত পুলিশ নিজেদের রক্ষার্থে বাশার মাঝির সঙ্গে সমঝোতা করেই সময় কাটায়। আর চরগুলোর ওপর দস্যু বাশারের এমনই নিয়ন্ত্রণ যে, সে একটি চরের নামকরণ করেছে চর বাশার। নিজেকে আওয়ামী লীগ দলীয় দাবি করে ক্যারিং চরে সে বাজারের নাম দিয়েছে মুজিব বাজার, হাসিনা বাজার ও জয় বাজার। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে ওই চরাঞ্চলে হাজার হাজার একর জমিতে ফলেছে বাম্পার ফলন। আর গত সপ্তাহ থেকে কৃষকের এসব পাকা ধান কেটে নিতে শুরু করেছে বাশার বাহিনী। জানা যায়, জমির আয়তন বুঝে প্রত্যেক কৃষককে ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার ও ১ লাখ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে দিয়েছে দুস্য বাশার। অধিকাংশ কৃষকই টাকা দিতে না পারায় প্রতিদিন জমির ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে বাশার বাহিনী। কৃষকরা এ নিয়ে ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। যারা টুঁ শব্দ করছে তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। আতঙ্ক ছড়াতে দস্যুবাহিনী তাদের নিত্য কর্মকাণ্ড ধর্ষণের মাত্রাও বেপরোয়া করেছে। প্রতিদিনই এখন তরুণী ও কিশোরী মেয়ের সন্ধানে বের হয় বাশার বাহিনী। জানা যায়, নলের চরের মান্নান নগরে মান্নানের কিশোরী দুই মেয়েকে ধর্ষণের পর প্রতিবাদ করলে সবাইকে হত্যার হুমকি দেয় বাশার বাহিনী। তারা এখন পালিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে। মাসাধিককাল আগে দিনদুপুরে ঘটে এ ধর্ষণের ঘটনা। এছাড়া নলের চরের জহির হুজুরের বাড়িতে সম্প্রতি বেড়াতে যায় তার তরুণী ভাগ্নি। খবর পেয়ে মেয়েটির সঙ্গে স্ত্রীকেও ধর্ষণ করে বাশার বাহিনী। জহির হুজুর পালিয়ে নোয়াখালী শহরের হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানেও হামলা চালায় বাশার বাহিনীর সদস্যরা। মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দেয়ায় এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জহির হুজুর। চরজুড়ে এখন দুস্য বাশারের দুর্ধর্ষ বাহিনী প্রতিদিন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি যা পাচ্ছে তাই লুট করে নিচ্ছে। তবে ভয়ে কেউই এ নিয়ে মুখ খুলছে না। প্রত্যেক চরে বাশারের প্রতিনিধি রয়েছে একজন করে কমান্ডার এবং ৫-৭ জন সহকারী। বয়ার চরে জাবের কমান্ডার, আশরাফ, কমান্ডার, এমাল হক, করিম্যা, আজাদ, নলের চরে মালেক হরাজী, মতিন কমান্ডার, বাহার, আফসার, ক্যারিং চরে লিটন কমান্ডার, ভুট্টু, মিয়া শিকদার, জুয়েল, বারেক কমান্ডার, নিজাম, নাসির কেরানি, চর বাশারে সিদ্দিক কমান্ডার, বাবের, নঈখ্যার চরে আজাহার কমান্ডার, জাবেদ, দেলোয়ার, শামীম, রুবেল আমিন, কালাধুর বাজারে মীরাজ কমান্ডার, ইউসুফ, ফারুক মেম্বার, জসীম এসব এলাকার জনগণের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে আছে। এদের সামনে সাধারণ মানুষ কোনো বিষয়েই কথা বলার সাহস করে না। জানা যায়, এসব চরের বাইরেও নিযুক্ত রয়েছে বাশার বাহিনীর পাঁচ শতাধিক গোয়েন্দা ক্যাডার। এরা নোয়াখালী শহর থেকে হাতিয়ার পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাট, বাজারের পরিস্থিতি জানায় বাশার মাঝিকে। ব্যাপক গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের কারণে চরগুলোতে কোনো অপরিচিত লোক প্রবেশ করতে পারে না। অপরিচিত দেখলেই তার পেছনে লেগে যায় দস্যু বাশারের সদস্যরা। এদিকে চরাঞ্চলের এসব ঘনটা স্থানীয় লোকদের সবারই জানা থাকলেও কিছুই জানে না প্রশাসন। হাতিয়া থানার ওসি রতন দাশ গুপ্তকে ধান কেটে নেয়াসহ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চরের পরিস্থিতি এখন ভালো। তবে বাশার মাঝিকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। অথচ এ যাবত কখনও বাশার মাঝির আস্তানা জাহাজ্যার চরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে তিনি জানেন না। হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হারুন আর রশিদ বলেন, চরে ধানকাটা চলছে। কিন্তু সেখানে প্রশাসনের সবসময় খবর রাখা দুরূহ ব্যাপার। খবর পেলে প্রশাসন পদক্ষেপ নেয় বলে তিনি জানান। আর নোয়াখালীর দক্ষিণের এ ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না জেলা প্রশাসক। দস্যুবাহিনীর তত্পরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি মোঃ মিজানুর রহমান গতকাল আমার দেশকে বলেন, চরের কোনো খারাপ খবর আমাদের কাছে নেই। খবর পেলে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।
Click This Link
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×