somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই ট্রেন ডাকাতের রোমহর্ষক বর্ণনা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রেন ডাকাতি অন্যান্য অপরাধের চেয়ে ভিন্ন। অসহায় যাত্রীরা তাদের টাকা-পয়সা, সোনা-গয়না অনায়াসে দিয়ে দেয়ার পরও তারা বাঁচতে পারে না। বিশ টাকার জন্যও হত্যা করেছি। মানি ব্যাগে টাকা না থাকার কারণেও যাত্রীদের ফেলে দিয়েছি। আমরা নিজেরা বাঁচার জন্যই তাদের ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলি। আখাউড়া থেকে ঢাকাগামী তিতাস কমিউটারের ৪ যাত্রীকেও একই কারণে হত্যা করা হয়। ট্রেন থেকে ধাক্কা দেয়াটা, যাত্রী ফেলে দেয়াটা আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা কাজ। এমন অপরাধ জীবনে অনেক করেছি। কখনও পুলিশ বুঝতে পারেনি। এবার ধরা খেয়ে গেলাম।
এমন ভয়াবহ স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত দুই ডাকাত আল-আমিন ও শুক্কুর আলি। ঢাকা জিআরপি থানার পুলিশ এ দুজনকে গ্রেফতারের পর তাদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থল আখাউড়ায়। সেখানে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে তারা বর্ণনা করেছে ৩১ জানুয়ারি তিতাস কমিউটার ট্রেনের ৪ যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলার রোমহর্ষক কাহিনী।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ জানান, তিতাস ট্রেনের ৪ যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার ঘটনায় আখাউড়ায় মামলা হলেও মামলার তদন্ত করতে হয়েছে ঢাকায়। এ ঘটনায় জড়িতরা ঢাকায় আত্মগোপন করে। এটা নিশ্চিত হয়েই রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। শেষপর্যন্ত তেজগাঁও শাহীনবাগ বস্তিতে অভিযান চালিয়ে ধরা হয় আল আমীনকে। নোয়াখালী থেকে ধরা হয় শুক্কুর আলীকে। তাদের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে ধরা হয়।
জিআরপি জানায়, গ্রেফতারের পর তাদের রিমান্ডে আনার পর সেদিনের তিতাস ট্রেন ডাকাতির সব ঘটনা খুলে বলে। দুজনেই স্বীকার করে হত্যাকা-ে তারা ৯ জন অংশ নেয়। যে কামরায় যাত্রী কম সেটা দেখেই তারা উঠে পড়ে। সেই ট্রেনের মাঝামাঝি একটা কামরায় তারা দেখতে পায় মাত্র ৪ যাত্রী। তাদের একজন ছিল মহিলা। ট্রেন পূর্ণগতিতে ছাড়ার পর শুক্কুর আলি ও আলামীনসহ অন্যরা তাদের কাছ থেকে সব মালামাল কেড়ে নেয়। মহিলা যাত্রীর গলায় থাকা একটা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল জোড়া হাতিয়ে নেয়। বাকি ৩ জনের কাছেও খুব বেশি টাকা ছিল না। সব মিলিয়ে ৭-৮ হাজার টাকার মতো ছিল। এ টাকাই পরে তারা ভাগাভাগি করে নেয়। তাতে জনপ্রতি হাজারখানেক করে পায়। অথচ এজন্য তাদের হত্যা করতে হয়েছে।
আল আমিনের ভাষ্যমতে, যাত্রীদের কাছ থেকে সব মালামাল নেয়ার পরও তাদের হত্যা করা হয়। কেন তাদের হত্যা করা হলো জানতে চাইলে আল-আমিন পুলিশের কাছে স্বীকার করে- এছাড়া কোন উপায় ছিল না। কারণ ওরা আমাদের বর্ণনা দিলে আমরা ধরা খেয়ে যাব। এ ভয়ে তাদের হত্যা করি। ট্রেনটা পাগাচং ব্রিজের কাছে আসতেই হঠাৎ গলায় গামছা পেঁচিয়ে টান দিয়েই ফেলে দিই। কামরার গেটের কাছে এমন কায়দায় তাদের টান দেয়া হয়- যাতে সহজেই ওরা পড়ে যায়। আমরা থেকে যাই ভেতরেই। এভাবে একে একে ৪ জনকে হত্যা করা হয়। আর চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। এটা জেনেই তাদের ফেলে দেয়া হয়।
ওসি মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ওরা অন্য ডাকাতদের চেয়ে স্বতন্ত্র। সাধারণত ডাকাতরা কাক্সিক্ষত মালামাল পেয়ে গেলে আর ভিকটিমকে হত্যা করে না। কিন্তু রেল ডাকাতরা বিশ টাকার জন্যও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে অনায়াসেই যাত্রীদের মেরে ফেলে। তাদের কাছে এটা খুবই মামুলি ব্যাপার। এমনকি একবার এক যাত্রীর কাছে কোন টাকা-পয়সা না পেয়েও তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। কেন সেই যাত্রীর মানিব্যাগে টাকা ছিল না সেটাই ছিল তার অপরাধ। টাকা না পাওয়ার ক্রোধ মেটাতে অনায়াসেই তারা যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ওরা সুখ পায়।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×