somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জহুর হোসেন চৌধুরীঃ সংবাদ ও সংবাদপ্ত্র জগতের পথিকৃৎ

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পঞ্চাশ-ষাট দশকে মানিক মিয়া, আব্দুস সালাম ও জহুর হোসেন চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের হতভাগ্য মেহনতি মানুষের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন তা আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। সাংবাদিক, সম্পাদক ও কলামিস্ট জহুর হোসেন চৌধুরী তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় সংবাদপত্র জগতে ব্যয় করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে সংবাদ-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। তৎকালীন সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ নির্ভীক খবর পরিবেশন ও আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছে। এ সময়ে সংবাদের সম্পাদক ছিলেন জহুর হোসেন চৌধুরী। যার জন্য সংবাদকে পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। খুবই পরিতাপের বিষয় এই পাকিস্তানি সামরিকজান্তার হামলায় যখন সংবাদ পুড়ছিল তখন ওই ভবনে ছিলেন সকলের অত্যন্ত প্রিয়, সাংবাদিক শহীদ সাবের। তিনি নিউজ টেবিলে শুয়ে ছিলেন। ওখানেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে শহীদ হন।

সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯২২ সালের ২৭ জুন। বর্তমান ফেনী জেলার দাগনভূঞার রামনগর গ্রামে এক শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবী। তিনি ছিলেন
ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর বাবার কর্মস্থল সিরাজগঞ্জে।

পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর পাঠশালা ও প্রাইমারী। এরপর তিনি ভর্তি হন সিরাজগঞ্জের এক উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয় থেকে জহুর হোসেন চৌধুরী ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পাসের স্বীকৃতি অর্জন করেন। তারপর জহুর হোসেন চৌধুরী কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএ ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪০ সালে আইএ পাসের স্বীকৃতি অর্জন করেন এবং ১৯৪২ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর শারীরিক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অনেক দিন পর এ অবস্থার উন্নতি হয়। এই অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি এমএ পরীক্ষা দিতে পারেননি।

জহুর হোসেন চৌধুরীর সাংবাদিক জীবনের সূচনা হয় প্রয়াত হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকায়। ১৯৪৫ সাল থেকে একাদিক্রমে তিনি শিক্ষানবিশ, সম্পাদক ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দ্য স্টেটসম্যান’, ‘কমরেড’ ও ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। সরকারি কয়েকটি পেশাবদল শেষে তিনি আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন।

জহুর হোসেন চৌধুরী তাঁর সাংবাদিক জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘উপাত্ত’ ও ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকায় কিছু দিন কাজ করেন। এরপর তিনি ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে শেষের দিকে যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার। এ সময় তোয়াব খান ছিলেন বার্তা সম্পাদক আর ডিএ রশীদ ছিলেন চীফ রিপোর্টার। সত্যেন সেন ও রণেশদা ছিলেন এডিটোরিয়ালে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ‘সংবাদ’ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ‘কাউন্টার পয়েন্ট’ নামে একটি ইংরেজি সাময়িকী সম্পাদনা করেন। আজীবন তিনি দৈনিক সংবাদের অন্যতম পরিচালক ছিলেন।

ছাত্রজীবন থেকেই জহুর হোসেন চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি যে কাজে যুক্ত হতেন, তা খুব মনযোগ সহকারে আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করতেন। প্রথমে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। তবে বেশী দিন এ সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন না। এরপর তিনি এমএন রায়ের ‘র‌্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ সদস্য হন। ভারতমাতাকে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলের সাথে অনেক দিন যুক্ত ছিলেন।

সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যুক্ত হন। কর্মদক্ষতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার গুণে তিনি অল্প দিনের মধ্যে সকলের নজর কাটতে সক্ষম হন। এরপর তিনি ন্যাপের প্রাদেশিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন পাক-চীন মৈত্রী সমিতি এবং পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সদস্যও ছিলেন তিনি। এছাড়া সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাবেরও তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ষাটের দশকে তিনি নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের মধ্যে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে ঐক্যমোর্চা গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দৈনিক সংবাদের পাতায় তিনি ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে যে কলাম লিখতেন, তা খুবই জনপ্রিয় ছিল। এসব নিবন্ধেরই বাছাই করা সঙ্কলন ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৮১ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। দৈনিক সংবাদ তাঁর স্মরণে প্রবর্তন করেছে ‘জহুর হোসেন স্মৃতিপদক’।
জহুর হোসেন চৌধুরী ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর মারা যান।



সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×