somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপ টুর - পর্ব ২

২৭ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটোবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো লন্ডন বেড়াতে যাবার, আমি চট্টগ্রাম বড় হলেও আমার origin হলো সিলেট। সিলেটীরা বেশীর ভাগ লন্ডন থাকে, আমারো প্রচুর আত্তীয় স্বজন লন্ডন থাকেন, তাই সবসময় আমি লন্ডন যাবার ব্যাপারে বিপুল আগ্রহী ছিলাম। তাদের কাছে কত রকমের গল্প শুনতাম, খুব জানতে ইচ্ছা করতো তারা কেমন থাকেন, কি করেন, দেশটা কেমন! অবশেষে সেই দিন এলো যেদিন আমাদের প্লেন লন্ডনের মাটিতে পা রাখলো, এবং আমি অবাক হলাম জেনে যে, আমি অতি হাস্যকরভাবে আবেগপ্রবন একজন মানুষ!! কারন আমার চোখ থেকে পানি পরছে লন্ডনের মাটিতে পা রেখে, আমি আবেগাপ্লুত না হয়ে বরং নিজের এই 'অতি' আবেগপ্রবনতায় কিছুটা বিরক্ত হলাম!!

আমার চাচা এসেছিলেন আমাদের নিতে, আমরা এয়ারপোর্ট থেকে চাচার বাসা পৌছাতে ৪৫ মিনিটের জায়গায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটে লাগালাম (গল্পের কারনে ভুল রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম :( )। পরদিন সকালে শুরু হলো আমাদের আকাঙ্খিত টুর!!

১ম দিনঃ (সেপ্টেম্বর ২৬, ২০০৯)
ট্রেনে করে Luton (চাচার বাসা) থেকে London শহরে গেলাম, প্রথমে দেখতে গেলাম Buckingham palace (লন্ডনের রানীর প্রাসাদ)। অখানকার আসল চমক ছিলো সেন্ত্রির মর্তির মতো দাড়িয়ে থাকা, সে একচুল-ও নড়েনা। আমার মনে হলো প্রাসাদের চেয়ে ওইটাই বরং সবাই আগ্রহ নিয়ে দেখে :) প্রাসাদের আশপাশ ঘুরে কিছুক্ষন হেটে চলে গেলাম লন্ডন টাওয়ার ব্রীজ দেখতে, ব্রীজটার আসল আকর্ষন হলো বড় কোনো জাহাজ বা নৌকা ওই ব্রীজের নিচ দিয়ে যাবার সময় সেটা খুলে যায়, দেখার মতো একটা দৃশ্য কিন্তু আমরা ১৫ মিনিটের জন্য ব্রীজ দেখতে এসে সেটা দেখব আশা করনি। আমাদের ভাগ্য খুব ভাল ছিল বলে কিনা জানিনা, আমরা ঠিক চলে আসবার সময় আমাদের অবাক করে দিয়ে ব্রীজটা খুলে গেল :) একটা বড় নৌকা যাচ্ছিল উচু কোনো জিনিষ নিয়ে। এক মিনিট দেরি না করে ভিডিওতে বন্দি করে নিলাম সেই দৃশ্য!!

এরপর গেলাম বিগ বেন ঘড়ি আর লন্ডন আই দেখতে, London Eye হলো বিশাল এক চরকি যেটা থেকে পুরো লন্ডন শহর দেখা যায়, পুরো জিনিষ্টা চড়তে ৪৫ মিনিট লাগে বলে সেখানে আর উঠা হয়নি, শুধু পোজ মেরে কিছু ছবি তুলেছি আশে পাশে :) তারপর গেলাম লন্ডনের বুকে ক্ষুদ্র বাংলাদেশ দেখতে, মানে ব্রিকলেন, জায়গাটা হলো বাংগালি পাড়া, আশেপাশে সব বাঙ্গালি দোকান পাঠ। সেখানে সোনারগা রেস্তোরাতে বিরিয়ানি খেলাম, মনে হলো ঢাকা বসে খাচ্ছি!! এরপর শহরের আর কিছু মার্কেট পাড়া, থিয়েটার পাড়া দেখে সেদিনের টুরের সেখানেই সমাপ্তি দিলাম।

২য় দিনঃ (সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৯)
পরদিন গেলাম অতি প্রাচিনতম, অতি বিখ্যাত Oxford University দেখতে। University -র প্রতিটা কলেজ (বিভাগ) দেখতে একেকটা প্রাসাদের মতো, এই প্রাসাদ্গুলোর ভেতরে class হচ্ছে ভেবে অদ্ভুত লাগল। সারাদিন ওখানেই কাটালাম। ওখানে একটা চার্চ-এর ৫তালায় উঠেছিলাম, সেটার interesting ব্যাপারটা হলো 'ঊপরে ঊঠার সিড়ি', আমি আমার জীবনে এত সরু এবং পেচানো সিড়ি আর দেখিনি, উঠার আগে চিৎকার করে বলতে হয় 'আমরা আসছি, কেঊ নেমনা', এতই ছোটো সিড়ি যে উঠলে নামার রাস্তা থাকেনা আর নামলে উঠার জায়গা হয়না! এত কারসাজি করে সেই চার্চের উপরে উঠে লাভ হয়েছিল, পুরো University-টাকে বেশ ভালোভাবে দেখা যায় উপর থেকে!

University টুর শেষে ওইদিন 'রাতের লন্ডন শহর' দেখালেন আমার এক কাজিন ভাই। বেশ জমজমাট আর আলোকময়, অনেকটা New York-এর 'Time Square'-এর মতো, শুধু এটা তার ছোটো version!!

৩য় দিনঃ (সেপ্টেম্বর ২৮, ২০০৯)
আমাদের UK'এর শেষ দিন। আমরা গেলাম British Museum । যেই দেশ একসময় বেশিরভাগ দেশকে শাষন করেছে তার Museum কালেকশন কেমন হবে তা আগেই বুঝেছিলাম, প্রাচিন ঐতিহ্যের এমন অনেক দেশের অনেক নিদের্শন আছে যা ওই দেশের নিজের আছে কিনা সন্দেহ! আমি সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছি Mummy দেখে। বিশ্বাস হয়না হাজার বছর আগের এই মানুষগুলো এখনো কত real মনে হয়!!!!!

Museum দেখা শেষে এদিক ওদিক ঘুরে বেরালাম, কিছু শপিং সেন্টার, কিছু রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।

জানি তিন দিনের এই ইঊকে টুর-এ এর চেয়ে বেশি আর কীইবা দেখতে পারব, তবু ভীষন তৃপ্ত অনুভব করেছি। আমার অনেক দিনের একটা শখ পুর্নতা পেয়েছে। আমি এখন আমার কল্পনার ইঊকের সাথে বাস্তবের ইঊকে-কে মিলাতে পারি :)

ইঊকে টুর-এর আরেকটা জিনিষ দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি, বাংলাদেশের মতো ওখানেও car-গুলোতে ডান দিকে ড্রাইভার বসে। আমেরিকায় অনেক অভ্যস্ত হয়ে গেছি বাম দিকে ড্রাইভ করে/দেখে, তাই হঠাৎ অমনটি দেখে কী অস্বস্তিই না লাগছিল!! মনে হচ্ছিল সবাই এমন wrong way-তে চলছে কেন!!!!

টাওয়ার ব্রীজের ছবিঃ



দা Mummy :



অক্সফোর্ড University:



বাংলাদেশি পাড়া ব্রিকলেনঃ

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:১৩
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×