somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহবান---মোজাফফর হোসেন

২৬ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিভি কেন্দ্র থেকে দুজন সাংবাদিক ১৬-ই ডিসেম্বরের উপর একটি রিপোর্ট করতে একটি গ্রামে আসে
আহবান
মোজাফফর হোসেন

হামজা: সুধী দর্শকবৃন্দু, আমি মোঃ হামজা এবং আমার সাথে সহকারী মোঃ কোবরা। আমরা এসেছি ‘সোনার বাংলা’ টিভি চ্যানেল থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের ওপর রিপোর্ট করতে।

প্রথম দৃশ্য: গ্রাম্য বাজারে
হামজা: বুঝলি কোবরা মোড়লরাই গ্রামের সব। চল ঐ মোড়ল গোছের লোকটার কাছে আগে যাই; নইলে আবার মাইন্ড করতে পারে।
সহকারী: (কলা খেতে খেতে) ভাইজান হের মেয়ে-টেয়ে আছে কি-না জিগায় লয়েন- সুযোগ জহন হয়েছে। ।
হামজা: আসসালামু আলাইকম চাচাজান।
মোড়ল: বিকালের বিচারটা না করা পর্যন- কোন চাঁদা আমি দেব না- হুম্!
হামজা: না চাচা আমরা টেলিভিশন থেকে এসেছি। ১৬ই ডিসেম্বর সম্পর্কে জানতে চাই।
মোড়ল: সকিনার মার বিচারটা? সে এক লম্বা হিস্টি- আমি কবু না।
সহকারী: ভাইজান মনে হয় বিবির চিল্লাবিল্লায় কানের পর্দা ফাটছে! খাড়ান মালটা কানে লাগাই দিই।
হামজা: চাচা গতকাল তো মহান বিজয় দিবস ছিল- এ সম্পর্কে যদি আমাদের কিছু বলেন?
মোড়ল: বেশ ভালো! স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাইবা গতকাল বউটার গায়ে একটা আঁচড়ও কাটি নাই; আমার ভাতে চুল- ভাবা যায়?!
হামজা: তা চাচা গ্রামে তেমন আয়োজন-টায়োজন...?
মোড়ল: পোলারা মাঠে খেলাধূলার আয়োজন করেছিল। আমার কাছে চাঁদা চাইল- দিলাম ১০ টাকা (ভাবখানা এমন যেন দশ হাজার টাকা দিয়েছেন)! স্বাধীনতা বলে কথা! আমাকে আবার প্রধান অতিথী হওনের জন্য ধরল। তা বেশ ভালোই লাগছিল। মাঝে মধ্যে এরকম বিনোদনের দরকার আছে।
হামজা: লাখো শহীদের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন হল। স্বাধীনতার পর কি কখনো আপনার মনে হয়েছে যে দেশটাকে আপনারও কিছু দেবার আছে?
মোড়ল: দেখ বাবা, আমি ক্ষুদ্র মানুষ। ছোটবেলায় একবার মিলিটারিতে দাঁড়াইছিলাম- হয়নি; এই ক্ষুদ্র মানুষ এত বড় দেশটাকে কি-ই বা দিবার পারে! তাও চেষ্টা করি। গ্রামের তিন তিনটা অসহায় মেয়েকে ঘরে তুলেছি- এটাই বা কম কি কও? অনেক ছয়ফুট মানুষও তো করবার পারে না।
হামজা: চাচা, আপনার ছেলে মেয়ে কয়ডা? ওদের কি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোন জ্ঞান-ট্যান দেন?
মোড়ল: ছেলে- মেয়ে? তা বাপু অত গুনবার সময় কোথাই! সারাদিন বিচার- শালিস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠি। গতবছর একটা টিভি কিনে দিয়েছি- তাতে নাকি আজকাল দেশ(!) ও মাটির(!) কথা বলে।
হামজা: চাচা আমাদেরকে আপনার মুল্যবান সময় দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোড়ল: তা বাপু তোমরা দূর দেশ থেকি আইছ, আমার বাড়িতে ওবেলায় এসে একপেট খেয়ে যেও। মোড়ল মানুষ- সবদিকে খেয়াল রাখেতে হয়। এই কালু আমাকে কড়া করে এককাপ চা দে। (বলতে বলতে মোড়লের প্রস'ান)।

দ্বিতীয় দৃশ্য: রাস-ার ধারে
(এক দোকানের সামনে এসে দাঁড়াবে দুজন)
হামজা: এই দোকানদার ভাই এক কাপ চা দাও।
সহকারী: হামাকে একটা কপি লাগা।
দোকানদার: কাচা মাল বেচি না স্যার- হাটে যেতি হইব।
সহকারী: বুঝলেন ভাইজান এই গ্যারামের ব্যাঁবাক অসিক্ষিত।
হামজা: থামবি; ঐ দেখ একটা যুবক যায়- চল ওকে কিছু জিজ্ঞেস করি।
সহকারী: হাওয়াই গা ভাসিয়ে হেলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ!
হামজা: (যুবকের কাছে গিয়ে) হাই স্মার্ট বয়!
যুবক: (একটু বিস্মিত হয়ে) আপনারা?
হামজা: আমরা টেলিভিশন থেকে এসেছি। আপনার নাম প্লিজ?
যুবক: পা কাটা আব্দুল।
হামজা: তা মি. আব্দুল গতকাল তো ১৬ই ডিসেম্বর ছিল- এ বিষয়ে কাল সারাদিন কি করেছিলেন?
যুবক: আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক করেছিলাম।
হামজা: খুবই প্রসংশনীয় উদ্যোগ। তা নাটক করতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
যুবক: আমি যেখানে থাকি সমস্যা তার ধারে কাছেও ভেড়ে না (ভাব নিয়ে)! আর তাছাড়া গ্রামের প্রতিটা বাড়ি থেকে চাঁদা উঠাইছিলাম- আয়োজনে কোন ঘাটতি ছিল না।
হামজা: না আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম, এ এলাকায় তো আওমে লীগ, বিএনপি ও জামায়াত- সমানে সমান; তাই কোন রাজনৈতিক সমস্যা হয়েছিল কি-না?
যুবক: হাঃ হাঃ হাঃ! রাজনৈতিক সমস্যা? প্রশ্নই ওঠে না। কেননা এলাকার প্রতিটা রাজনৈতিক নেতাদের কথা মাথায় রেখে আমরা নাটক করেছি।
হামজা: ঠিক বুজলাম না?
যুবক: না বোঝার তো কিছু নেই! লীগের নেতার কাছে নাটক উপলক্ষে চাঁদা চাইলাম, তিনি বললেন- নাটকে যেন জিয়াউর রহমানের নাম না নেওয়া হয়। বিএনপির নেতার কাছে চাঁদা চাইলে তিনি বললেন, শেখ মুজিবরের কোন কথা যেন নাটকে না থাকে।
হামজা: জামায়তের নেতার কাছে জাননি?
যুবক: হ্যাঁ গিয়েছিলাম। তিনিও টাকা দিয়ে বললেন, নাটক থেকে রাজাকারদের পাঠ উঠিয়ে দিতে।
হামজা: তাহলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক করেননি?
যুবক: কেন করবো না? অবশ্যই করেছি।
হামজা: কিভাবে?
যুবক: নাটকে জিয়াউর রহমান, শেখ মুজিবর রহমান এঁনাদের নাম একবারও নিইনি।
হামজা: আর রাজাকার?
যুবক: নাটকে ওদেরও কোন পাঠ দিইনি।
সহকারী: (দর্শকদের দিকে মুখ করে) মুক্তিযুদ্ধের নাটক অথচ শেখ মুজিবর রহমানের কথা নেই, নেই রাজাকারদের বিভৎস চেহারার বর্ণনা!
হামজা: মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা?
যুবক: দেখুন মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বিরাট একটা অর্জন। আমি মুক্তিযুদ্ধাদের অন-র থেকে শ্রদ্ধা করি। যাই হোক, পাকিস'ানের খেলা বোধহয় এতক্ষণে শুরু হয়ে গেল- আমি এখন যাই।
হামজা: আপনাকে ধন্যবাদ।
যুবক: জ্বি। আবার দেখা হবে।

তৃতীয় দৃশ্য: রাস-ার ধারে
সহকারী: ভাইজান, ঐ যে একঝাঁক ম্যাইয়া যায়, চলেন ওগো কিছু জিগায়।
হামজা: এটা শহর না বুঝলি- মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে। (সহকারী পিছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েদের দেখবে) এই সোজা হ্ বলছি, ঐ দেখ এলাকার রাচনীতিবিদ আসে। ওনারে ধরি চল।
(রাজনীতিবিদ ও তার মাথায় ছাতা ধরে স্টেজে চামচার আগমন)
হামজা: স্যার আমরা টেলিভিশন থেকে এসেছি। গতকাল তো বিজয় দিবস ছিল এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
চামচা: টিবি থেকি!? ওরে আল্লাহ! আমার ময়নার কত দিনের সখ আমাকে টিবিতে দেখনের!
রাজনীতিবিদ: গতকাল ছিল অমর ১৬-ই মার্চ! এই দিনে...
চামচা: (কানে কানে) স্যার, মার্চ না ডিসেম্বর!
রাজনীতিবিদ: ও আচ্ছা। গতকাল ছিল অমর ২৬ শে ডিসেম্বর! এই দিনে...
চামচা: স্যার, ২৬-শে না ১৬-ই!
রাজনীতিবিদ: চোপ রহারামজাদা! যাই হোক কুদ্দুস যেটা বলে ওটাই ঠিক। প্রিয় গ্রামবাসী, আপনারা চিন-া করবেন না। আপনাদের দেওয়া কথা আমি পালন করার চেষ্টা করছি। আমি সেদিন পোলাও খেতে খেতে আমার বসকে বললাম, নদীর ওপর দিয়ে রাস-া বানিয়ে দিতে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন- হয়ে যাবে। ভাই সব, আমি ২০২০ সাল পর্যন- একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি; আপনারা ততদিন আমাকে ক্ষমতায় রাখলে এই গ্রামের স্কুল থেকে শুরু করে মাদ্রাসা মসজিদ সব সরকারী বানিয়ে দেব- আমি কথা দিচ্ছি। আমাদের গ্রাম হবে ডিজিটাল গ্রাম। আমি আবার বিরোধী দলের মতন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি কাজে।
হামজা: স্যার আমরা তো ১৬-ই ডিসেম্বর নিয়ে কথা বলছিলাম- তো এই দিনে কোন বিশেষ আয়োজন-টায়োজন করেছিলেন কি?
রাজনীতিবিদ: হ্যাঁ, অনেকেই আমাকে ধরেছিল; কিন' যেতে পারিনি। গিয়েছিলাম বেহান বাড়ি। বেহানের হাতের...
হামজা: (থামিয়ে দিয়ে) না স্যার, আমি জানতে চাচ্ছিলাম সামাজিক কোন আয়োজন করেছিলেন কি-না?
রাজনীতিবিদ: কি করিনি আমি? এই এলাকার লোকজন আমাকে দেখলেই সালাম দেই! এই তো কিছুদিন আগে রাস-ারধারে একখান বটগাছ লাগাইলাম। গত মৌসুমে আম্বিয়ার মাকে দুইটা টিনও দিয়েছি।
চামচা: শুধু কয়েক জায়গায় ফুটু (নিচু স্বরে)!
রাজনীতিবিদ: চোপ বেয়াদ্দপ! দুস' অসহায় মানুষের মাঝে রেশনের মাল বিলি করে দিয়েছি।
চামচা: গতবারের আটকে রাখা রেশন!
রাজনীতিবিদ: কুদ্দুস! (দাঁতে দাঁত খিঁচে)
হামজা: স্যার আমরা তো ১৬-ই ডিসেম্বরের ওপর রিপোর্ট করতে এসেছি। আমরা জানি, আপনি এ এলাকার একজন জনপ্রিয় নেতা। শুনেছি, আপনি নাকি মুক্তিযুদ্ধও করেছেন। তো এই দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে তরুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে যদি কিছু বলতেন।
রাজনীতিবিদ: ১৬-ডিসেম্বর? ওহ্ কি কুৎসিত আর ভয়াবহ সেই দিনটা! ঐ দিনে অনেক মা বোনের ইজ্জত পামচার হয়েছিল; অনেক বোন তার ভাইকে হারিয়েছিল। যা হবার তা তো হয়েছিলই, আমি আর ঐদিকে যাচ্ছিনে। আমার এখন জরুরী মিটিং আছে। (হামজাকে কাছে টেনে) শোন ব্যাটা, এটা বিটিভির ৮টার সংবাদে পাঠিয়ে দিও। অনেকদিন পর প্রাণখুলে একদন্ড কথা বললাম।
হামজা: স্যার আমাদের টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।
রাজনীতিবিদ: তোমাদেরকেও আমার পার্টির তরফ থেকে ব্যালট পেপারের শুভেচ্ছা রইল। চল কুদ্দুস।

চতুর্থ দৃশ্য
হামজা: বুঝলি কোবরা আজকের আবহাওয়াটা বেশ ভালো।
সহাকারী: চলেন ভাইজান, বাংলা ছবিডা দেইখা আসি। এই শীতে যা জমব না!
হামজা: থাম। ঐ দেখ কবি মশাই যায়। চল উনি কি বলেন শুনি। (কাছে এসে) এই যে কবি মশাই আকাশের দিকে তাক করে কি করছেন?
কবি: তারা গুনছি।
হামজা: এখন তো দিন- তারা পেলেন কোথায়?
কবি: তুিম দেখছ দিন, আমি রাত
দু’জনের মাঝে বিস-র ব্যবধান
ঝলমলে আকাশ, টসটসে তারা
আহ্ কি সুখ!
সহকারী: এ তো দেখছি প্রকৃত আধুনিক কবি!
হাজমা: তা কবি মশাই কবে থেকে কবিতা লেখা শুরু?
কবি: যেদিন প্রথম রবীন্দ্রনাথের
মহেষ কবিতা পড়েছি
সেদিন থেকে আমিও মরেছি
আমার দীর্ঘ কবি জীবনে
কিছু লালনগীতি, নজরুলগীতিও লিখেছি।
হামজা: কবি মশাই গতকালতো বিজয় দিবস ছিল- এ উপলক্ষে কোন কবিতা-টবিতা লিখেছেন কি?
কবি: স্বাধীনতা অমর স্বাধীনতা
স্বাধীনতা আমার বিজয় গাঁথা
স্বাধীনতা আমার ভালোবাসা
যদি তুমি ছ্যাঁকা দাও-
আমি আর বাঁচব না
খেয়ে ফেলব ঐ কলাগাছ
পুড়িয়ে ফেলব ইটের ভাটা
তবুও তোমার বুক থেকে
আনবোই ছিঁড়ে তোমার হৃদপিন্ডটা। (তারা গুনতে গুনতে কবির প্রস'ান)

(কবি যেতে না যেতেই... )
সহকারী: এক আকাশের তারা তুই একা গুণিসনে, গুণতে দিস কবি কিছু মোরে...
হামজা: এই গান থামা- হুজুর আসে। আসসালামু আলাইকম।
হুজুর: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
হামজা: হুজুর কিছু কথা বলতাম।
হুজুর: বৃথা সময় নষ্ট আমি পছন্দ করি না।
হামজা: গতকাল দিনটি সম্পর্কে কি আপনার কিছু জানা আছে?
হুজুর: নাউজুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ। তোমরা মসুলমান না? দুনিয়ার বেবাক মসুলমানকো মালুম হে কাল পবিত্র জুম্মার দিন আছিল।
হামজা: না মানে আমি ১৬-ই ডিসেম্বর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
হুজুর: হ্- বড় ব্যস- ছিলাম। ফুটুস-ফাটুসের মাঝেও আল্লাহর রাস-ায় কাম করেছি। (ডান দিক দিয়ে একটি মেয়ে যাবে) বেগানা মাইয়াডা কে যায়! মাথায় কাপড় নাই- নাউজুবিল্লাহ! ভালো কইরা চিইনা লই- বেয়াদ্দপ!
হামজা: তা হুজুর দেশ তো স্বাধীন হল; কোন আপছোস-টাপছোস?
হুজুর: না, সব ঠিকই আছে, তবে পূর্ব পাকিস'ান নামটাই ভালো আছিল। পাকিস'ান বড় প্রেয়ারের শব্দ!
হামজা: কিন' এই যুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা নিয়ে যে নানান জনে নানান কথা বলে?
হুজুর: বৃথা সময় নষ্ট আমি পছন্দ করি না। ওরা নাদান, নাছামজ- আল্লাহ ওদের মাফি করুন।

শেষ দৃশ্য
হামজা: চল কোবরা স্বাধীনতা সম্পর্কে ঐ ফকির কি বলে শুনি।
সহকারী: ফকিরের আবার স্বাধীনতা! চলেন।
হামজা: ( অন্ধ ফকিরের কাছে এসে) মিয়া ভাই গত কাল তো ১৬-ই ডিসেম্বর ছিল- এ সম্পর্কে কি কিছু জানেন?
ফকির: জানুম না মানে? আমার বাবা একজন মুক্তিযুদ্ধা।
হামজা: আপনার বাবা মুক্তিযুদ্ধের ভাতা পান না?
ফকির: চিয়ারমেনকে ঘুস দিবার পারেনি বইলা পান না। বাবার ভাতাটা ও-পাড়ার সবদার সাহেব পায়।
হামজা: তা ভাই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানেন?
ফকির: জানুম কেমনে! দ্যাশের সরকার পাল্টানোর সাথে সাতে ইতিহাস যেভাবে পাল্টায়- কবে হুনুম রাজাকাররা দ্যাশ স্বাধীন কইরাছে আর মুক্তি যুদ্ধারা বাধা দিছে।
হামজা: আচ্ছা, আপনার মনে হয় না- দেশের জন্য আপনারও কিছু করার আছে?
ফকির: হক্ কতা আবার ফক্ করি বেরি যায়! দ্যাকেন আপনাগো মত দামী স্যুট পরা বাবুরা দ্যাশের কতা না ভাবলেও আমরা ভাবি। আর ভাবি বইলাই চুরি-ডাকাতি কইরা বড় বড় কতা না বুইলা ভিক্কি করি। যারা ছেড়া ক্যাথায় ঘুমায় তাদের কান থাকে মাটিতে। দ্যাশের একটা ব্যারাম হইলেই ঠিকই টের পাইয়া যায়। শুধু দাওয়া থাকে আপনাগো হাতে নইলে দ্যাশটা কবে সুস' হইয়া যাইত। (বলতে বলতে ফকিরের প্রস'ান)

সহকারী: ভাইজান আর ভাল্লাগে না।
হামজা: আজ এ পর্যন-ই থাক- চল সব গুছিয়ে নে। (ক্যামেরা গুটিয়ে নিয়ে স্টেজ থেকে প্রায় বের হয়ে যাবে এমন সময় স্টেজে এক বৃদ্ধের প্রবেশ ঘটবে)
বৃদ্ধ: কে আছিস তোরা? কে আছিস? আমার সফিক আর রফিককে এনে দে! ওরে কে আছিস তোরা? (ক্যামেরা ফেলে হামজা ও সহকারী ছুটে যাবে বৃদ্ধের কাছে )
হামজা: চাচা আপনি কাঁদেন কেন?
বৃদ্ধ: আমার সফিক আর রফিক...!
হামজা: কি হয়েছে ওদের?
বৃদ্ধ: পাকিস'ানী মেলেটারীরা আমার কচি দুধের ম্যাইয়াটারে উঠাই লইয়া যায়। হায়েনারা আমার পরীর লাহান ম্যাইটার কচি দেহ খাবলে খুবলে গাঙে ভাসিয়ে দেয়। প্রতিশোধ নিতে আমার আঠারো বছরের সফিক আর তের বছরের রফিক যুদ্ধে গেল। (কান্নার সাথে) সফিকের লাশ আর রফিকের...! ওদের মা আজ কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ! ওরে কে আছিস তোরা? কে আছিস- ওদের মায়ের পাশে সফিক আর রফিক সেজে দাঁড়া। (দূর থেকে ভেসে আসবে- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...) ঐ যে শোন- শোন তোরা। আমার সফিক আর রফিক বলছে, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি..। তোমরাও বলো, ওদের কসম লাগে চুপ করে থেকো না আর। বলো আমার সাথে, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...
সমবেত কন্ঠে: আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...
বৃদ্ধ: (স্টেজের সম্মুখদিকে এগিয়ে এসে হাতের লাঠি ফেলে) হে তরুন সমাজ, আহ্বান তোমাদের, জেগে ওঠো আর একবার- ঘটাও আর একটি একাত্তর।
সকলে সমবেত কন্ঠে: ঘটবে একাত্তর। ঘটবেই।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×