somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তা করি-১

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপাতত হাই সাহেব তার ঘরের অনেকগুলি কাঠের চেয়ারের একটায় বসে সিগারেট খাচ্ছেন। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিছু চিন্তা।

সোনামুড়ি এলাকাটা মোটামুটি বিশাল না হলেও খুব একটা ছোট নয়। এখানে মানুষজনের বসবাস অবশ্য খুব কম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকগুলো ঘর-বাড়ী পুরো এলাকাটাকে একটা আদর্শ আবাসিক এলাকা হিসেবে উৎকটভাবে উপস্থাপন করছে। এখানে আধপাকা বাড়ীগুলোর বারান্দায় আর উঠোনে এবং কাঁচা বাড়ীগুলোর উঠোনে কাপড় শুকোতে দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকালে এখানকার রান্নাঘরগুলোতে লাকড়ি জ্বলে ভাত আর আলুভর্তা-সবজী রান্না করার জন্য। এখানকার বাড়ীগুলোর কর্তা পুরুষেরা নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় বাজারে যান সাপ্তাহিক বাজার করার জন্য। মাঝে মাঝে আধলিটার কেরোসিন বা সয়াবিন কেনার জন্য গৃহিনীরা বাড়ীর ছোট ছেলেকে দোকানে পাঠান একটা গলায় দড়ি বাধা কাঁচের বোতল অথবা একটা পুরানো তেল চিটচিটে কোকাকোলা বা আর সি কোলার প্লাষ্টিকের বোটল হাতে ধরিয়ে দিয়ে। গ্রামও নয় আবার মফস্বলও নয় এমন এক উৎপরবর্তনশীল অবস্থায় এই এলাকার অবস্থান। হাই সাহেবের দুটো মেয়ে। বড় মেয়েটা ক্লাস এইটে পড়ে আর ছোট মেয়েটা ক্লাস ফোরে পড়ে। হাই সাহেবের গৃহিনী একজন আটপৌরে রান্না ঘরে হাড়ি ঠেলা ও ঘর ঝাড় মোছার কাছে নিয়োজিত একজন সহজ সরল মহিলা। উনার জীবনের আশা আকাংখা বলতে খুব বেশীকিছু নেই। প্রতিদিন ঘরকন্নার কাজের চাপে বেশী কিছু চিন্তার সুযোগও তার নেই। ঘরের কাজ শেষ হলে উনি খুজে খুজে আরও কাজ বের করেন যাতে কখনও বসে থাকতে না হয়। কাজ করতে করতে উনার অবস্থা এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কখনও কোন কাজশূণ্য অবস্থায় পড়লে উনার অস্বস্থি শুরু হয়। বিনোদন বলতে উনি উনি বোঝেন রাত্রে সবাইকে খাইয়ে দিয়ে বিটিভির নাটক দেখতে বসা। পশ্চাদপৎ এলাকা হিসেবে এখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছালেও আকাশসংস্কৃতির তার এসে পৌছায়নি। তাই উনি মোটামুটি হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাব থেকে মুক্ত একটা কর্মময় জীবন যাপন করছেন। শুক্রবারে বিটিভির বাংলা চলচ্চিত্র উনার সাপ্তাহিক বড় বিনোদন। শুক্রবার এই জন্য উনি তাড়াতাড়ি সব কাজ সারেন এবং সবাইকে দুপুরের খাবার দিয়ে সবার সাথে সপরিবারে সিনেমা দেখতে বসেন। শুক্রবারে, আশেপাশের অনেক বাড়ী থেকে, যাদের বাড়ীতে টেলিভিশন নেই তারা জড়ো হয় হাই সাহেবের বাড়ীর টেলিভিশনের ঘরটায়। বাচ্চা ছেলেপেলেদের সংখ্যাই বেশী থাকে। চলচ্চিত্রে সকলেই মননিবেশ করেন এবং কিচুক্ষণ পর পর দশ মিনিটের বিজ্ঞাপন বিরতিতে সকলে হালকা খোশ গল্প করেন। এ সময়টা বাচ্চারা দশ মিনিটের জন্য বাড়ীর উঠোনে বা বাড়ী সংলগ্ন রাস্তায় খন্ডকালীন খেলাধুলায় মেতে উঠে। এরপর হয়তো ঘর হতে কেউ ডাক দেয়, "ঐ ছবি শুরু হইয়া গেছে"। ব্যাস সকলে পড়িমড়ি করে ছুটে আসে টেলিভিশনের ঘরে। মুগ্ধ নয়নে সকলে দেখে চলচ্চিত্রের কারিশমা। তারা দুঃখিত হয় নায়ক নায়িকার দুঃখময় জীবনে, আনন্দিত হয় ভিলেনের মার খাওয়াতে এবং প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করে ভিলেনের চরম শাস্তির, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নায়কের হাতে ভিলেনের মৃত্যুই সবচেয়ে সুন্দর পরিণতি হিসেবে মনে করে। একসময় সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে। চলচ্চিত্রেরো পাট শেষ হয়। সকলে যার যার বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। স্কুলে পড়ুয়ারা চিন্তা করতে থাকে,"আহা, যদি সারাজীবন বিজ্ঞাপনবিহীনভাবে একটানা চলচ্চিত্র দেখে যেতে পারতাম। যদি কালকে শনিবার স্কুলে যাওয়া না লাগত। যদি পুরো জীবনটাই চলচ্চিত্রময় হত। কতই না ভালো হত।" মহিলারা চিন্তা করেন, "যাক ভাল ভাবে সময়টা কাটল।" এইটুকু ভেবেই তারা ঘর ঝাড়ু দিতে এবং প্রতি ঘরে বাতি জ্বালাতে ব্যাস্ত হয়ে ওঠেন। তারপর তারা লেগে যান, রান্না ঘরের হাঁড়ি ঠেলতে। রাতের খাবার রান্নাই তখন হয়ে ওঠে তাদের পরবর্তী জীবনকর্ম। .....................
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×