somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অজ্ঞান পার্টি ও আমার বেঁচে অবস্থায় ফিরে পাওয়া (একটি করুন অভিজ্ঞতা ও সচেতনতামুলক পোষ্ট)

২৪ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ আসছে, সবাই নাড়ির টানে গ্রামে ছুটছে। এ সময়ই অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই এ সময় একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন-

তাই পোষ্টটি আবার দিলাম।

ঘটনাটা ঘটেছে ২য় রমজানে, সময়ের অভাবে এতদিন লিখতে পারেনি।

২য় রমজানে আমার বোনদের পারবারিক কোট-কাচারীর একটা কাজে নোয়াখালী মাইজদী কোর্টে যায়। কাজ শেরে দুপুর ৩-৩.৩০ মধ্যের ঢাকা চলে আসবে বলে ওদের গাড়ী থেকে চৌমুহনী চৌরাস্তায় নেমে যায়। আমরা জানি যেহেতু রমজান তাই আব্বা আজ আর ঢাকা আসবে না, আমার বোনদের বাড়ীতেই থাকবে। তাই দুপুরের পর থেকে আমাদের থেকে আর কোন যোগাযোগ করি নাই, উনিও আর কোনরূপ যোগাযোগ করে নাই। আমার বোন, ভগ্নিপতি ওরাও ভাবছে উনিতো ঢাকায়ই চলে আসছে। রাত ১০টা, ১১ টা থেকে ওনার নাম্বারে ফোন করি ফোন যাচ্ছে না। চিন্তায় মাথায় ধরছে না, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার বোনের কাছে আবার ফোন করি। ও বলে উনিতো ঢাকা চলে গেছেন। এই করতে করতে সবতো টেনশনে, সম্ভাব্য সব জায়গায় ফোন করি। কোথাও কেউ কোন নিউজ বলতে পারে না। সারা রাত কারও কোন ঘুম নাই। ফুফুকে সেহেরির সময় জানালাম, ফুফুও টেনসনে পড়ে গেল। আমাদের বাড়ীর পাশের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারকে ফোন দিলাম। স্যার বললো স্যারের সাথে শেষ যখন কথা হয়, তখন উনি বলেছিল ঢাকায় আসতেছেন।

বোনে ফোন দিল, বলল সব চ্যানেলে, পত্রিকায় খবর নিতে, প্রয়োজনে পত্রিকায় ছবিসহ নিউজ দিতে। ভগ্নিপতি ফোন দিল বলল, আমি বাস ষ্ট্যান্ড যাচ্ছি, ওখানে খোজ নিয়ে দেখি কোন খোজ পাই কিনা? আমি তাকে বললাম সাথে থানাও খোঁজ নিযে আসেন। আর আমিও সায়েদাবাদ বাস ষ্ট্যান্ডে যাাচ্ছি দেখি ওখানে কোন খোঁজ পাই কিনা?

ইতিমধ্যে কাকারে ফোন করে জানালাম, বলালাম ওসিরে ফোন করে ঘটনাটা জানাতে? কাকা বেগমগঞ্জ থানার ওসিরে ফোন করল, ওসি বর্ণনা শুনে রেলওয়ে থানায় খোজ নিতে বলল, ওখানে এই এইজের একজন সেন্সলেন্স অবস্থায় আছে। সাথে সাথে ভগ্নিপতিরে ফোন করলাম, ওকে রেলওয়ে থানায় যেতে বললাম এবং ফিরে এসে বেগমগ্হজ থানার ওসিরে ঘটনা জানাতে বললাম। এরি মধ্যে আমিও সায়েদাবাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

সকালে আবার প্রিন্সিপাল স্যারকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম উনার সাথে যখন কথা হয়, তখন আমার আব্বা কি বলেছে, গাড়ীর নাম বলেছে কিনা? উনি বলল, গাড়ীর নাম বলেনি, তবে বলেছে চান্দিনা আছে একটু পরে ইফতারের টাইম হবে, ঢাকা পৌঁছে ফোন দিব।

আমার আর বুঝার বাকী নাই যে, ঘটনা ঘটেছে ঢাকার কাছাকাছি কোথাও। কাকাকে ঘটনা বললাম।

পথি মধ্যে আমার ডাক্তার কাজিনের কথা মনে পড়ল, যাকে আমার আব্বা অনেক স্নেহ করে। তাকে বললাম, মেডিকেল লাইনের খোঁজ নিতে। সে বলল, সেও মেডিকেলে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে বেগমগঞ্জ থানা, চৌ-রাস্তা খোজা শেষ, আমিও সায়েদাবাদ কয়েকটা কাউন্টারে খোজ নিচ্ছিলাম। মাথা ভন ভন করছে, কিভাবে কি করব, কিছুই মাথা ধরছে না। এমন সময় আমার ঐ ডাক্তার কাজিন ফোন করল-ভাইয়া মামাকে পাওয়া গেছে, ঢাকা মেডিকেল-এর ১নং ওয়ার্ডে আছে, আপনি যাত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন। আমি আর কিছু জিঞ্জেস না করে সি.এন.জি ঠিক করে আবার তারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থায় আছে? সে বলল চেন্সলেজ অবস্থায় আছে। বুঝলাম যে বেঁচে আছে।
এরপর সব জায়গায় আবার ফোন করে জানালাম, থানার ওসিরেও জানালাম।

গিয়ে দেখি উনাকে আমার কাজিন মাথা ধৌত করে দিচ্ছে, আমাকে ঠিক চিনছে বলে মনে হল না। বলল মেডিসিন যা দরকার লিখে দিয়েছি, এখানে থাকলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে। বাসায় নিয়ে যান কাল থেকে উনি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমি বললাম কিভাবে মেডিকেল আসল। কে বা কারা দিয়ে গেছে তবে রাতে আনার পরই ওয়াশ করা হয়েছে। অবশেষে বাসায় নিয়ে যাই। মাঝে মাঝে কাউকে চিনে আবার চিনে না, বলে আমি এখানে কেন? কবে এখানে এসেছি, ইত্যাদি।

যাই হোক পরের দিন থেকে সেন্স ফিরে এসেছে, কিন্তু প্রচুর উইকনেস থাকার কারণে কয়েকদিন হাঁটতে পারে নাই।

সুস্থ হওয়ার পর উনার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটা জনলাম-ঘটনাটা হল-

উনি যখন চৌ-রাস্তা থেকে বাসে উঠবে ঐ মুহুর্তে ঐ লোকের সাথে পরিচয়। ঐ লোকেই তাকে অন্য বাসে উঠতে উদ্ভুদ্ধ করেছে। লোকটা নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, উনার ব্যবহারে আমার পিতা খুবই মুগ্ধ ছিল। ঐ লোক নিজেকে ইতালি প্রবাসী, ইতালিতে নিজস্ব রেস্তোরা আছে, তাছাড়া কম টাকায় (৩-৪ লাখ টাকা) ইতালি মানুষজন নিয়ে পরে আস্তে আস্তে টাকা নিয়ে থাকে। তার এক সন্তান বিসিএস ক্যাডার, একজন এবার বিসিএস পরীক্ষা দিছে। তার এক ভায়রা ভাই চিটাগাং বিভাগীয় কমিশনার। আচ্ছা এমন লোক প্রতারক হতে পারে কেউ কি বিশ্বাস করবে?

এখানে উল্লেখ্য যে, আমার আব্বা তার ইফতার সামগ্রী গাড়ীতে উঠার আগেই কিনে সাথে রেখে দিয়েছেন। আর ঐ লোক কিনছে দুইটা জুস। দুইজনেই পাশাপাশি সিটে বসেছে। ইফতারের সময়ে আব্বা ইফতার খেলো এবং ঐ লোক বলল এই জুসটা আপনি খেয়ে নিন। উনি জুসটা একটু খেয়ে নামাজ পড়ে আর ঘটনা বলতে পারেন। পরের দিন আমরা উনাকে ঢাকা মেডিকেলের ১নং ওয়ার্ডের ফ্লোরে আধা সেন্স অবস্থায় আবিস্কার করি।

যেহেতু আব্বার ব্যবসায়িক লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্ডসহ অনেকগুলো অরিজিনাল ডকুমেন্টসহ ব্যাগ নিয়ে গেছে তাই আমার আব্বা কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ঐ বাসের কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারে, তারা অজ্ঞান অবস্থায় উনাকে পেয়ে তাদের মালিককে জানালে কিছু টাকা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে মেডিকেলে পাঠাতে বলে। তারা সয়েদাবাদ পুলিশি ফাঁড়ি থেকে পুলিশ ডেকে তাই করে।

আমার বাবা ফিরে এসেছে এবং উনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। কিন্তু যে অবস্থা ছিল উনাকে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে নাও পাওয়া যেত। শুকরিয়া মহান আল্লাহর কাছে।

এ ঘটনাটা বললাম আপনাদের সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। রাস্তা-ঘাটে, গাড়ীতে অপরিচিত কোন স্থানে, গাড়ীতে কারও সাথে কোনরূপ সখ্যতা না গড়তে, না খেতে।

সবাই ভাল থাকুন, নিরাপদে, সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে যার যার আপন জনের কাছে পৌঁছুন।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×