somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল জল শৈশব-৬

২৪ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

চর ঈশ্বরের পথে

চর ঈশ্বরের সেই সময়ের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক খান ওরফে খোকা মিয়া তাঁর বাড়িতে দাওয়াত দিলেন। ( ওনার নতুন বাড়ীটি ছিলো বুড়ির চরে) আমার মাকে বোন ডাকার সূত্রে তাঁকে মামা ডাকি। (আমৃত্যু তিনি এই ভাই বোনের সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন) সেই মামা বাড়ি হাতিয়ার প্রায় দক্ষিণ প্রান্তে। রওয়ানা দিলাম স্কুটারে চড়ে। এই যানবাহনটিতে বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যে চড়লেও এটি আমার দুচোখের বিষ। সর্বক্ষণ কাঁপতে থাকে, ছোটখাট গর্তেও যেভাবে হোঁচট খায় তাতে প্রাণ উড়ে যাবার দশা। যাই হোক, মামাবাড়ি যাবার খুশীতে শুরুতে ওসব কিছুই মনে হচ্ছিলো না। তখন সে এলাকায় মহিষেটানা গাড়ীর আধিক্যই ছিলো। কাঁচা রাস্তা। বর্ষার শেষদিক। মহিষ আর গরুর গাড়ীর চাকার বদৌলতে রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিলো কিছুক্ষণ পরই কৃষকরা রাস্তায় ধানের চারা বুনতে আসবেন। কর্দমাক্ত পিচ্ছিল রাস্তায় স্কুটারের পিচ্ছিলপায়ের প্রলয় নাচন শুরু হবার পর দেখি বড়োদের মুখই ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। দু'পাশ ঢেকে দেয়া সত্ত্বেও ভিজে যাচ্ছিলাম। কারণ বন্ধ টেক্সিতে বন্দী থাকা তো কঠিন ছিলো। প্রায়ই মাথা বের করে পথের ছবিতে মুখ বাড়িয়ে দিচ্ছিলাম। সাথে জুটছিলো আম্মার ধমক। ছোট ভাইটি কোলে থাকায় আমাকে দেখে রাখা তাঁর জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছিলো। এক সময় মামাবাড়ির দোতলা টিনের ঘরের সামনে এসে থামলাম। তখন বৃষ্টি ছিলো না।

দোতলা টিনবাড়ি

মামার বাড়িটা ছিলো বিরাট। সামনে কাচারীঘর। ভিটি পাকা। বারান্দা ছাড়াও একটু বাড়তি অংশ ছিলো। আর বসার জন্য ছিলো পাকা বেঞ্চি। বাড়ীর দরজার দু'পাশে সারবাঁধা সুপারি গাছ। কাচারীর সামনে ছোট ফুল বাগান। মূল ঘর দোতলা। টিনের। ভেতর দিয়ে আর বাইরে দিয়ে কাঠের সিঁড়ি। উঠানে নানা ধরণের সবজির বাগান। কবুতরের জন্য এতোবড় ঘর কেউ বানায় এটা আমার ধারণা ছিলো না। কবুতরের ঘরের জন্য সিঁড়ি ছিলো। সারাবাড়ী ঘিরে বিরাট বাগান। বিশাল বিশাল নানাজাতের গাছ। আর ছিলো বিরাট এক পুকুর। সেই পুকুরে দেখি ঘাটে এক চারকোণা টিনের নৌকা বাঁধা। অনেকটা স্পীড বোটের মতো।

ঝাল ছাড়া মরিচ !

দোতলার সিঁড়ির পাশে একটা গাছে দেখি বিশাল বিশাল মরিচ ধরে আছে। দেখেই ভয়ে অস্থির ! ছোট মরিচের ঝালেই যেখানে প্রাণ যাবার দশা সেখানে এই বিশাল মরিচ খেলে ঝালেই মরতে হবে। আমাকে হতভম্ব করে জানানো হলো, এই মরিচের নাকি ঝালই নেই !!!!!! শুনে আরেক দফা টাসকি খেলাম। ( অথচ এখন আমার পিচ্ছি ছেলেও ক্যাপসিকাম চেনে)
কিন্তু সেটা খেয়ে সত্যতা পরীক্ষার হিম্মত দেখাইনি।

কবুতর ! কবুতর !

পরদিন সকালে ঘুম জড়ানো চোখে বাইরে এলাম। মামা ডেকে পাঠিয়েছেন। বললেন, কবুতর ছাড়া হবে। একসময় আমার অবাক চোখের সামনে দিয়ে একে একে বেরিয়ে এলো অনেক কবুতর। আমার ধারণা দেড়শ'র কম হবে না। কতো রকমের কবুতর। অনেক নাম বললেন মামা। আমার শুধু মনে আছে গেরোবাজ আর লোটনের কথা।

তেলাপিয়া ও অন্যান্য

তারপর গেলাম পুকুরে মাছধরা দেখতে। জেলেরা মাছ ধরছিলেন। বড়ো বড়ো মাছ লাফ দিয়ে জাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এসব দেখে খুব মজা পাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত জাল গুটিয়ে যখন পুকুরপাড়ে আনলো তখন দেখলাম বিশাল বিশাল মাছ নড়াচড়া করছে। এর ভেতর থেকে বড়ো কাতলা (পরে মাপা হয়েছে ১২ সের ওজন) আর রুই রাখা হলো ( ৭ সের)। আর রাখা হলো ১০/১২টা তেলাপিয়া। সেই প্রথম ওই মাছের নাম শুনলাম। এটা ইন্দোনেশীয় মাছ। তখন থেকেই তেলাপিয়া চাষ শুরু হয়েছে এদেশে।

পুকুরে নৌকাভ্রমন

মাছধরার পর মামা আমাকে নিয়ে পুকুরে নৌকাভ্রমন শুরু করলেন। চারকোনা আকৃতির কাঠের ফ্রেমে টিনের নৌকা। বৈঠায় চলে। ভরা পুকুরের মাঝে গিয়ে খুব ভয় পেয়ে গেলাম। চিৎকার শুরু করায় নৌকাভ্রমন সংক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।

ফিরে আসা ও ছোরতা বৃত্তান্ত !

সেদিনই দুপরে খাওয়া দাওয়া সেরে স্কুটারে চেপে বসলাম। আকাশে কিছু মেঘ ছিলো। কিন্তু যতোই সময় যাচ্ছিলো ততোই মেঘের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছিলো। খানাখন্দেভরা জঘন্য রাস্তায় বেশী জোরে যাওয়া যাচ্ছিলো না। একটু পর স্কুটারের স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলো। কিছুতেই স্টার্ট নিচ্ছিলো না। সাধে কী বলে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। আমরা স্কুটার থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম। ঘনকালো মেঘের চাদরে ঢাকা চারপাশ। বেশ জোরে বাতাস বইছে। রাস্তায় পায়ে হাঁটা মানুষজনের সাথে গরু/মহিষের গাড়ীও ছিলো। হঠাৎ সবাই আতঙ্কিত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়েছিলো। আমিও তাকালাম। সাদারঙের হাতির শুড়ের মতো বিশাল এক শুড় আকাশ থেকে নেমে সাগরের জলে যেন মুখ ডুবিয়ে পানি পান করছিলো। সবাই বলছিলো, ছোরতা পড়েছে। আতঙ্কিতস্বরে দোয়া দরুদ পড়ছিলো সবাই। আম্মা আমার ছোটভাইটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আব্বাকে দেখলাম ফ্যাকাসেমুখে চুপ হয়ে আছেন।

এরপর কিভাবে স্কুটার সারিয়ে কখন ফিরেছি তার আর কিছু আমার মনে নেই। শুধু ভয়ানক সেই ছোরতার ছবিটাই আমার স্মৃতিতে সাতঙ্কে গেঁথে আছে। এতো দিন আমার ধারণা ছিলো এটা কোন হেলুসিনেশান। কিন্তু বছর দুই আগে দেখলাম ভিয়েতনামের মেকং নদীতে এরকম একটা ছোরতা পড়েছে। পত্রিকা তার ছবি ছেপে দিয়েছে। এখন জানি এর নাম যাই হোক সেদিন সত্যিই সেই ছোরতা পড়েছিলো। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×