গল্পটাগুলো আমার বাবা-মা কে নিয়ে। রুচি, চলাফেরা বা যে কোনো ব্যপারে ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলার আবস্হান পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রীতে ।শতভাগ অমিল।
বাবা হলেন জর্মান প্রকৃতির। সরাসরি কথা বলেন।সাধারণভাবে চলতে পছন্দ করেন। ২ যোগ ২ সমান সবসময়ই চার, এই নীতিতে বিশ্বাসী।
কড়া ধরনের সেন্স অফ হিউমার। প্রয়োজন এবং পছন্দ করেন, এমন লোক ছাড়া কারও সাথে কথা বলেন না।
মা হলেন উচ্চভিলাষী, সামাজিক এবং পলিটিসিয়ান।সবাইকে খুশি রাখতে চান । তীব্র আত্মসম্মান বোধ।
সেন্স অফ হিউমার বাবার সাথে প্রায়ই মিলেনা। ফলে বাবার রসিকতা গেলা প্রায়ই ভদ্রমহিলার পক্ষে সম্ভব হয়না। শুরু হয় যত বিপত্তি।ফলাফল তুমুল ঝগড়া ঝাটি।
ঘটনা-১:
বিয়ার পর পর মা খুব আহ্লাদ করে বাবাকে নিয়া স্টুডিও তে
নিয়া গেলেন এবং সাদা কালো ছবি তুলে আনলেন। মা আবার সেই ছবি বড় করে ফ্রেমে বাধানোর ব্যবস্হা করলেন।
গোড়া থেকেই বাবা এইটা নিয়া খুব বিরক্ত ছিলেন, কারণ ছবি তোলার জন্য স্টুডিও তে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিলোনা।
ফ্রেম সহ ছবি আসার পরে মা আহ্লাদে গদগদ হয়ে বাবার আশেপাশে ঘুরঘুর করে।বাবা বুঝেও না বসার ভান করে বিছানায় শুয়ে বইয়ের পাতায় চোখ ডুবায়ে রাখলেন।
মা দেখলেন বাবা কোনো উৎসাহ বা মনোযোগ দেখাইতেছে না।কিন্তু ব্যপারটা শেয়ার না করেও থাকা যাচ্ছে না।
অবশেষে আর অপেক্ষা করতে না পাইরা বাবাকে বললেন,
"ওগো শুনছো।"
বাবা বই থেকে চোখ না তুলেই শুকনা গলায় বললেন, "বলো।"
মা হাতে ছবির ফ্রেমটা বাবার দিকে তাক কইরা বললেন, "দেখোনা।কি সুন্দর আসছে ছবিটা।"
বাবা নির্লিপ্ত ভাবে বললেন, "দেখলাম।তো?"
মা খুব আগ্রহ নিয়া বললেন, "আচ্ছা। ছবিটা কই টানানো যায় বলো তো?"
বাবা কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়া ছবির দিকে তাকায়ে থাকলেন এবং গম্ভীর গলায় বললেন "বাইরে গিয়া কুত্তার গলা্য় টানা্য়ে দিয়া আসতে পার।"
ঘটনা-২:
আমার মামা বাড়ি থেকে আসার সময় দু'জোড়া তাল কিনে আনছে । স্বভাব সুলভ ভাবে মামা সারাবাড়ি তোলপাড় করে ফেলতেছেন এবং গল্প ফাদছেন যে, খুব কসরৎ করে উনি তাল কিনে জিতছেন।
বাবা তার শ্যলককে অর্কমন্য হিসাবে জানেন এবং "ছ" বর্গীয় কোনো এক প্রাণীর নামে সম্বোধন করে আরাম পান। তাই বলা বাহুল্য মামার এই গাল গল্প বাবার মহা বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়াইলো।
এদিকে মা তার কণিষ্ঠ ভ্রাতার বিজয়কে বিশাল সেলিব্রেট করতে লাগলেন।বাহবা দিয়া দুনি্যা উল্টায়ে ফেললেন।
এই চান্স মা এবং মামাকে হেনস্হা করার । বাবা উসখুস করতে লাগলেন। অবশেষে মামাকে ডাকলে, "এই সবুজ, এই দিকে শোন্।" (আমার মামার নাম সবুজ।)
বাবা: তাল তুই কত দিয়া কিনছিস?
মামা: জ্বি, ত্রিশ টাকা জোড়া। খুবই ভালো তাল।গাছ পাকা। খুব স্বস্তায় পাইলাম।
বাবা: ভালো। তো কি হবে এই তাল দিয়া?
মামা: আপা তালের পিঠা বানাবে।
বাবা: তো তালের পিঠা বানাইতে আর কি কি লাগে?নাকি শুধু তাল সিদ্ধ করলেই হ্য়?
মামা: জ্বী না, সয়াবিন তেল, চিনি আর ময়দা লাগে।
বাবা: কি পরি মান লাগে সেগুলা?
মামা: ২ কেজি তেল, ১ কেজি চিনি, ২কেজি ময়দা।
বাবা: ঐ গুলার দাম কত?
মামা: সবমিলা ৪০০ টাকার মত।
এইবার বাবার মুখে হাসি ফুটলো। মা পাশেই ছিলেন এতক্ষণ। বাবা মাকে বললেন,
"আচ্ছা। ৩০ টাকা ৪৩০ টাকার কত পার্সেন্ট?"
মা ক্রুদ্ধ চোখে বাবার দিকে তাকা্যে থাকলেন।
বাবা বুঝলেন চেতানোর এই সুযোগ। মা কিছু বলার আগেই বললেন,
"ওহ।মনেই তো থাকেনা।তুমি তো আবার আর্টসের ছাত্রী ছিলা, অংক টংক তো পারার কথা না।"
মা তারস্বরে চিৎকার চেচামেচি শুরু করলেন। বাবা পাত্তা না দিয়া হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে আসলেন।
বের হইতে হইতে মাকে শোনায়ে শোনায়ে বলতে লাগলেন, "বাজারে যাই। তেল ময়দা কিনা নিয়া আসি।"
(চলবে.....।)