somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদ্ম

২২ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘোষবাবু প্লেনে যাওয়ার কথা বলাতে রায়হান সাহেব খুশীই হলেন। যাক জীবনে প্রথমবারের মত কাছ থেকে আকাশ দেখা যাবে। প্রৌঢ় ঘোষবাবু সবদিক থেকে সিনিয়র হলেও দু’জনের মাঝে দূরত্বটা কম। রায়হান সাহেব বুঝতে পারছেন না ঢাকায় তার কাজটা কি। মনে হচ্ছে শুধুমাত্র সঙ্গ পাওয়ার জন্যেই তাকে বেছে নিয়েছেন ঘোষবাবু। কিন্তু তার যেতে ইচ্ছে করছিল না মোটেই। নেহায়েত জি এম সাহেব বলেছেন বলে যেতে হচ্ছে। জি এমের সাথে আবার এমডি সাহেবের খুবই ভাল খাতির। জি এম ব্যাটাকে খুশী রাখা দরকার। এয়ারপোর্টে ঘোষবাবু’র এক দুসম্পর্কের মামা’র সাথে দেখা হয়ে গেল। কথায় কথায় জানা গেল তিনি ঢাকায় একটা মিটিং এটেন্ড করে ফিরছেন। ঘোষবাবু অবশ্য তাঁকে খুব তাড়া দেখিয়ে অভিনয় করে বললেন, তিনি জাপানে একটা কোম্পানী সার্ভে করতে যাচ্ছেন। অবশেষে প্লেনের সুরঙ্গে প্রবেশ। বিশাল প্লেনের ভেতর তিন সারি সিট। তারা মাঝখানের সারির নির্ধারিত স্থানে বসলেন।
বেশীর ভাগ যাত্রীর দৃষ্টি গিয়ে পড়ছে ঘোষবাবুর উপর। রাস্তা ঘাটে অবশ্য দৃষ্টির সাথে কিছু কিছু মন্তব্যও ছুটে আসে। ঘোষবাবু মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবেন, খালি রিকশার ড্রাইভারেরা কেন যে তাকে ‘ভাড়া আছে’ বলে এড়িয়ে যায়? তখন বড় অভিমান হয়, চারশ পাউন্ড ওজন খুব একটা বেশী কি? ঘোষবাবু রায়হান সাহেবের কানের কাছে অনবরত বকবক করে চলেছেন। তার কোলের উপরে ঘুমিয়ে থাকা ল্যাপটপটিকে দিয়াশলাইয়ের বাক্সের মত মনে হচ্ছে। রায়হান সাহেব মনযোগ দিয়ে চারিদিক অবলোকন করছেন। সবদিকে খেয়াল রাখা দরকার। বন্ধুরা ‘প্লেন’ সম্পর্কে জানতে চাইলে কি বলবেন তিনি? লাউড স্পিকারে এক কিন্নর কন্ঠী মনভোলানো স্বরে কি যেন বলে চলেছেন। মুখে মোহনীয় হাসি লাগিয়ে এক লাল শাড়ী পরিহিতা সুবাস ছড়িয়ে পাশ দিয়ে হেটে গেলেন। রায়হান সাহেব কিছুক্ষণ উসখুস করার পর আনমনে বলে উঠলেন, ‘মেয়েটি মনে হয় অবিবাহিত।’ ঘোষবাবু কি বুঝলেন কে জানে, তিনি প্রচন্ড শব্দে ধমকে উঠলেন। তার খেয়াল ছিল না যে তিনি এখন অফিসে নন, প্লেনে। তারপর চারিদিকে লোকজন দেখে চুপসে গেলেন। আশপাশের যাত্রীদের ভ্রু কোঁচকানো দৃষ্টির সামনে দু’জন কিছূক্ষণ চুপ করে রইলেন। কিছুপরে চাপা স্বরে ঘোষবাবু বললেন, ‘চোখ এত দিকে ঘোরে কেন?’ রায়হান সাহেব অপমানিত বোধ করলেন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘স্যার আপনি সবার সামনে এভাবে..।’ কথা শেষ করার আগেই ঘোষবাবু আগের চাইতে একটু নিচু স্বরে আবার ধমকে উঠলেন, ‘মাথায় সর্বসময় বিয়ের কথা ঘোরে, না?’ একটু দূরে লাল শাড়ীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওই মেয়েটির কথা বলছিলে না, হ্যাঁ.. উনি অবিবাহিতা।’ অবাক রায়হান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার আপনি কি করে জানলেন?’ ঘোষবাবু একটু থমকে গেলেন। তারপর আবারো ধমকে উঠলেন, ‘গাধা.. আমি কি করে জানবো এ্যাঁ? আমি বড়জোর আমার স্ত্রীর কথা জানতে পারি.. আমার স্ত্রী বিবাহিতা।’ এসময় সেই লাল শাড়ী এসে ঘোষবাবুর কাছে জানতে চাইলেন, ‘কোন সমস্যা?’ তিনি বললেন, ‘না না.. ছেলেটা কেবলই বকবক করে চলেছে, তাই একটু ধমকে দিলাম.. হেহ্‌ হেহ্‌ ..।’। তরুনী রায়হান সাহেবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন। ওফ্‌ এই সুন্দরীর সামনে স্যার তার সাথে এইরকম ব্যবহার করলেন? রায়হান সাহেব করুন মুখে বললেন, ‘স্যার প্লিজ..।’ ঘোষবাবু দাঁত কেলিয়ে নিঃশব্দে হাসলেন। হঠাৎ একটা ঝাকুনিতে রায়হান সাহেব চমকে উঠলেন। প্রশ্ন নিয়ে ঘোষবাবুর দিকে তাকাতেই দেখলেন তিনি সবজান্তার মত হাসছেন, ‘ভয়ের কিছু নেই.. প্লেনটা আকাশে উঠতে যাচ্ছে।’
কিছুক্ষণ পর, সেই লাল শাড়ী পরিহিতা হাতে একটা ট্রে নিয়ে পেছনের সিট গুলোয় ঘুরে তাদের কাছে আসলেন। ট্রেতে নানা রঙের, নানা আকৃতির চকোলেট। ঘোষবাবু একটি চকোলেট নিলেন। তার দেখাদেখি রায়হান সাহেব একটা নিলেন। ঘোষবাবু জেদ করে রায়হান সাহেবের দিকে তাকিয়ে আরো একটা নিলেন। রায়হান সাহেব আরো একটা নিতে গিয়ে অপ্রস্তুত হেসে তরুণীর দিকে তাকালেন। তরুণী রায়হান সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি আর নেবেন?’ ঘোষবাবু হঠাৎ জানালা দিয়ে মেঘ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রায়হান সাহেব লজ্জায় হাতের চকোলেটটা রেখে দিলেন ট্রেতে। রূপসী তার ঠোঁটের ডান পাশের কালো তিলটি নাচিয়ে সামনে অগ্রসর হলেন। বয়সটাই শালার গোলমেলে। কোন সুন্দরী একটু তাকিয়ে হাসলেই বুকটা ধ্বক করে ওঠে, মনে হয় মেয়েটা বুঝি..।
রায়হান সাহেব তার চোখ নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন। চোখের মণি গুলো নড়ছে না। মণিজোড়া আটকে আছে লাল শাড়ীতে। লাল শাড়ী প্লেনের পেছনদিকের এক বয়স্ক যাত্রীকে সাহায্য করছেন। স্বেচ্ছায় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল একবার, অমনি বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। অবশেষে রায়হান সাহেবের হৃদয়টা ভেঙ্গে চুরে মাটি স্পর্শ করল প্লেন। সিটবেল্ট খুলে পেছনের দিকে হাটা শুরু করলে ঘোষবাবু তাকে ডাক দিলেন, ‘এইযে গাধা.. দরজা সামনে।’ রায়হান সাহেব থতমত খেয়ে সামনের দিকে আসতে আসতে কুঁই কুঁই করে বললেন, ‘না মানে.. ভাবলাম, নামার দরজাটা বুঝি পেছনে।’ ঘোষবাবু কাশছেন নাকি হাসছেন বোঝা গেল না। খুব রাগ হল রায়হান সাহেবের। ঘোষবাবু তাকে লাল শাড়ীর কাছ থেকে ডেকে এনে নিজেই এগিয়ে গেলেন ওদিকে। তারপর লাল শাড়ীকে কি যেন বলে ফিরে এলেন। লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই লোকটার।
ক্যাবে করে যেতে যেতে রায়হান সাহেব ঘোষবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন,‘স্যার অফিসের কাজতো আরো একদিন পরে.. আমরা কি ট্রেনে বা বাসে আসতে পারতাম না?’ ঘোষবাবু আড়চোখে তাকালেন, ‘পারতাম.. তবে অফিস যেহেতু বিল দেবে, এত কষ্ট করার কি দরকার।’ রায়হান সাহেবের খুবই অস্বস্থি লাগছে, ঘোষবাবুর প্যান্টের জিপারটি খোলা। সেখান থেকে ইন করা শার্টের একটি কোণা বেরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে তাকিয়ে রায়হান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার আমরা কি এখন হোটেলে উঠব?’ ঘোষবাবু উদাস হয়ে গেলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘নাহ্‌.. আমার দোস্তের জন্য মনটা কেমন করছে। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সাড়বো। উম্‌ম্‌ তারপর, তারপর মনিপূরী পাড়া.. রাতটা ওখানেই কাটাব।’ বিষ্মিত রায়হান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার বন্ধু বুঝি ওপাড়ায় থাকেন?’ ঘোষবাবু হাই তুললেন, ‘নাহ্‌.. ওপাড়ায় তার বউ থাকেন।’ রায়হান সাহেব আরো বেশী বিষ্মিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘তাহলে আমি কোথায় থাকবো?’ ঘোষবাবু আরো উদাস হয়ে গেলেন। তিনি কি একটা চিন্তা করতে করতে বললেন, ‘সমস্যা নাই.. ওখানে অনেক রুম আছে।’ রায়হান সাহেব উসখুস করছেন। বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি কাচুমাচু করে বললেন, ‘স্যার অফিস যখন বিল দেবে, তখন আমরা হোটেলে উঠি না কেন?’ ঘোষবাবু ভ্রু কুঁচকে দ্রুত সরে যাওয়া রাস্তার সাইনবোর্ড গুলো পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
হোটেল বয় আর কেউ আসবে কিনা জিজ্ঞেস করাতে ঘোষবাবু ধমকে উঠলেন, ‘কেন আমাদের পছন্দ হচ্ছে না?’ বয় রীতিমত অবাক, এত খাবার এরা দু’জনে খাবেন! বয়টা ফাজিল টাইপ। সে তরি তরকারীর বাটিগুলো ঘোষবাবুর সামনে জড়ো করতে লাগল। এবং রায়বাবুও সেই বাটিগুলো একে একে খালি করতে লাগলেন। রায়হান সাহেব বাসার বাইরে তেমনে একটা খেতে পারেন না। তবু রূপচাঁদা মাছ দিয়ে অল্প খেলেন।
রেস্টুরেন্টটা ভালই। তবে মনটা কেমন যেন আঁকুপাঁকু করছে। আসলে চাটগাঁ’র বাইরে রায়হান সাহেবের খুব একটা যাওয়া হয়না। তিনি হাত ধূয়ে এসে ঝিম ধরে বসে আছেন। মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব। তার হাসি পেয়ে গেল। মা’টা তার বউ দেখতে পাগল হয়ে গেছে। একটি গুরুগম্ভীর গর্জনে তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। তাকিয়ে দেখেন ঘোষবাবুর মুখ হা করা, উনি ঢেকুর তুলছেন। কিছুক্ষণ পর ঘোষবাবুর দিক থেকে আরো একটা গর্জন ভেসে এল। তবে এবার ঘোষবাবুর মুখ বন্ধ, শরীরটা একপাশে কাত করা। শব্দের ধরন শুনে রায়হান সাহেব নিশ্চিত, এটি ঢেকুরের শব্দ নয়। ঘোষবাবু হেলান দিয়ে বসে পেটটাকে যথাসম্ভব আরাম দেয়ার চেষ্টা করছেন। রায়হান সাহেব মনে মনে ভাবছেন, ‘তোর হা করা মুখে ভাত ভাসতে দেখা গেছে স্‌ সালা.. গলা পর্যন্ত খেয়েছিস আজ।’ কিন্তু মুখে বললেন, ‘স্যারতো তেমন কিছু খেলেন না?’ ঘোষবাবু উত্তর না দিয়ে, মুখ বিকৃত করে দৌড়ে একটি রুমে গিয়ে ঢুকলেন। রায়হান সাহেব বয়কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঐ রুমটা কিসের?’ বয় হেসে বলল, ‘ঐডা ফেশাকখানা।’ সাথে সাথে ভেতর থেকে ঘোষবাবুর নির্ঘোষ শোনা গেল। উনি বমি করছেন। কিছুক্ষণ পর বিধ্বস্ত ঘোষবাবুকে দেখা গেল কুঁজ হয়ে হেঁটে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন। বেল্ট খোলা, এবার জিপারের ভিতর থেকে ইন করা শার্টের দু’টি কোণাই বেরিয়ে এসেছে। বয় বিল নিয়ে উপস্থিত। ঘোষবাবু বললেন, ‘ তাড়াতাড়ি বিলটা দাও.. উঠতে হবে।’ রায়হান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার দই খাবেন?’ কি যেন ভাবলেন ঘোষবাবু, ‘উম্‌ম্‌ম্‌.. হ্যাঁ, খাওয়া যায়।’ বয়টা কিছুই জানে না কিছুই বোঝে না এমন ভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘দই কিসে করে দুমু?’ ঘোষবাবু বললেন, ‘ক্যান্?‌’ ফাজিল বয় যেতে যেতে বলল, ‘না মানে.. আমগো বড় গামলাডাত্ পরটার কাঁই রাখা আছে..।’ বয়ের কথা শুনে রায়হান সাহেব অপ্রস্তুত, ঘোষবাবু গম্ভীর। আরো গম্ভীর হতে গিয়ে ঘোষবাবু ফিচ্ করে হেসে ফেললেন। বললেন, ‘অফিস যখন বিল দেবে.. তখন গামলা করে খেলেই ভাল হত.. কি বল রায়হান?’ রায়হান সাহেব টেবিলে রাখা ফুলদানির লাল গোলাপটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। বিষয়টি খেয়াল করে ঘোষবাবু বললেন, ‘লক্ষ্য করছি.. আজ তোমাকে যেন লালে বেশী টানছে।’ রায়হান সাহেব লাল গোলাপ থেকে চট করে চোখ সরিয়ে নিলেন। মুখটিপে হেসে ঘোষবাবু বললেন, ‘তা পরশু তেরতম মেয়ে দেখতে যাওয়া বলেছিলে না.. কেমন দেখলে?’ রায়হান সাহেবের বুক থেকে একটি গরম শ্বাস বেরিয়ে এল, ‘এগারতম মেয়েটিকেই অন্য এক ঘটক তেরতম হিসেবে দেখিয়েছে স্যার।’ ঘোষবাবু অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন, ‘তোমাকে যে পছন্দ করেনি সেই মেয়েটাতো?’ রায়হান সাহেব লজ্জা পেলেন। ঘোষবাবু বিষয়টি লক্ষ্য করে পরিবেশটা হালকা করার জন্য বললেন, ‘আচ্ছা মেয়ে দেখতে গিয়ে তুমি সর্বপ্রথম কোন বিষয়টি লক্ষ্য করো?’ ইতিমধ্যে দই এসে গেছে। রায়হান সাহেব হাসলেন, ‘স্যার আমি পাত্রীর মা - খালাদের ভাল ভাবে লক্ষ্য করি।’ ঘোষবাবু অবাক হলেন, ‘কেন?’ এ বিষয়ে কথা বলতে রায়হান সাহেবকে খুবই উৎসাহী দেখাল, ‘মানে, বুড়ো বয়সে পাত্রীটি দেখতে কি রকম হবে তার একটা চেহারা কল্পনা করার চেষ্টা আরকি।’ ঘোষবাবুর দই পর্ব শুরু হয়েছে। চামচটি ঘোষবাবুর মুখ আর দইয়ের বাটিতে দ্রুত ওঠানামা করছে। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘বিয়ের ফুল সবে ফুটতে শুরু করেছে.. চিন্তা কোরো না.. হয়ে যাবে।’ রায়হান সাহেব উদগ্রীব হয়ে বললেন, ‘ইয়ে.. স্যার আপনি একবার আপনার এক পরিচিতা’র কথা বলেছিলেন না..।’ ঘোষবাবু চামচ চাটছেন, ‘ও হ্যাঁ..তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে.. তিনি বলেছেন, তুমি যা বল।’ রায়হান সাহেবের চামচ নীচে পড়ে গেল, ‘আপনিতো কোন প্রোগ্রাম দেননি স্যার।’ ঘোষবাবুর তখন আর কোথাও দই অবশিষ্ট নেই। মনে হচ্ছে, স্টিলের চামচটা লজ্জায় কুঁকরে যাচ্ছে। তার সমস্ত মনযোগ কেড়ে নিয়েছে ঐ চামচ।
রায়হান সাহেব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, ঘোষবাবু ঘোমটা দেয়া মহিলাটির পাশে বসে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদছেন। মহিলাটি চোখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরই নাম রায়হান?’ ঘোষবাবু শুনলেন বলে মনে হল না, ‘দু’দিন বাদে বরাবর এক বছর হয়ে যাবে, আমার মনেই হচ্ছে না ভাবী।’ মহিলাটি রায়হান সাহেবকে বসতে ইশারা করে দেয়ালে টাঙ্গানো স্মৃতি’র দিকে হেঁটে গেলেন। ঘোষবাবু কেঁদেই চলেছেন। তিনিও ছবিটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘এখানে আসলে যে রুমে আমি শোয়েব ঘুমাতাম সেটা দেখতে ইচ্ছা করছে ভাবী।’ রায়হান সাহেব এই কান্নাকাটির পরিবেশে কি করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি কেশে বললেন, ‘পানি খাব।’ মহিলা তার দিকে একবার ফিরে তাকালেন। ঘরের দেয়ালে হালকা সবুজ রঙ। কাবা শরীফের ছবির পাশে তিন জনের মাঝারি আকৃতির একটি পারিবারিক ছবি ঝুলছে। ঘোষবাবু আর ভদ্রমহিলা ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছেন। ছবিটি যেন তাদের সাথে কথা কইছে চুপিচুপি। ছবির ব্যাক গ্রাউন্ডে আকাশে স্থির হয়ে উড়ছে এক ঝাঁক পাখী। পাখীদের খানিক দূরে একটি প্লেন নাক উঁচু করে আকাশে উঠছে। মনে হচ্ছে বহুদূর হতে ভদ্রমহিলার কন্ঠ ভেসে আসছে, তিনি বললেন, ‘প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ওর বিমান বাহিনীর বন্ধুরা একটা ঘরোয়া স্মরণসভা করবেন.. ওখানে আমাকে যেতে বলেছেন.. বাসাতেও একটা মিলাদ পড়াতে হবে.. তারপর সময় করে আপনাকে খবর দিব, আপনি ওঁদেরকে আসতে বলবেন।’ কিছুক্ষণ পর হয়তো তাঁর অতিথির কথা মনে পড়ল, ‘আচ্ছা কথাবার্তা পরে হবে, আপনারা হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নিন।’ ঘোষবাবুর পকেটে সম্ভবত রুমাল নেই। উনি শার্টের হাতা উল্টে সশব্দে নাক ঝারলেন, ‘আমরা খেয়ে এসেছি ভাবী.. অফিসিয়াল ট্যুরতো.. অফিসই সব ধরনের খরচ...। রায়হান সাহেব একটা নকল কাশি দিয়ে রুমের সাথে লাগোয়া টয়লেটে ঢুকে পড়লেন।
টয়লেটে কল ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া রায়হান সাহেবের আর কোন কাজ ছিল না। যখন বুঝতে পারলেন রুমটা খালি হয়েছে তখন বেরিয়ে এলেন। কিছুক্ষণ পরে হালকা সবুজ পর্দা সরিয়ে রুমে ঢুকলেন গোলাপী কামিজ পড়া একটি পদ্মফুল। দেয়াল সবুজ, পর্দা সবুজ। আহ্, যেন সরোবরের সবুজ জলে একটিমাত্র পদ্ম ফুটে মিটিমিটি হাসছে। সদ্যস্নাতা’র ভেজা চুলগুলি পিঠে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। রায়হান সাহেব সালাম দিতে গিয়ে তোত্‌লাতে লাগলেন। গোলাপী’র হাতে একটি গ্লাস ধরা রয়েছে। রায়হান সাহেব একটি ঝাঁকুনি অনুভব করলেন। তার মনে হচ্ছে, তিনি এখনো প্লেনে বসে আছেন। পদ্ম কাছে আসলে, রায়হান সাহেবের চোখ আটকে যায় কালো তিলটিতে। তিলটি নেচে উঠল, সাথে সাথে রায়হান সাহেবের বুকটাও ধ্বক করে উঠল। কোন ভনিতা না করে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে পদ্ম কথা বলে উঠলেন, ‘অত লজ্জা পেলে চলে, চকলেটটা তখন রেখে দিয়েছিলেন কেন?’
























৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×