somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেক্যুলার শিক্ষানীতির কুফল এবং আমাদের করণীয়

২২ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা হলো মানবমনের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো। এটা শুধুমাত্র ধর্মহীন সাধারণ শিক্ষা দিয়ে সম্ভব নয়; আবার শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক শিক্ষা দিয়েও নয়। বরং উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত শিক্ষা দিয়েই তা সম্ভব। সমন্বিত শিক্ষাই হলো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। এটিই হলো জাতীয় শিক্ষা। এ শিক্ষাই দেহ ও মনের উন্নয়ন সাধন করে। প্লেটো বলেছেন, ‘শরীর ও আত্মার পূর্ণতার জন্য যা প্রয়োজন সবই শিক্ষা'। জনলকের মতে, ‘শিক্ষার চরম লক্ষ্য সুস্থ শরীর, সুস্থ মন তৈরি করা।' এরিস্টটলের মতে, শিক্ষার সত্যিকার লক্ষ্য ধর্মের পবিত্রতার মধ্যদিয়ে সুখ লাভ করা। পাশ্চাত্য মনীষী স্টানলিপুল বলেছেন-‘তুমি যদি তোমার ছেলেকে ৩টি R তথা Reading, Writing, Arithmetic শিক্ষা দাও, ৪র্থ R তথা Religion বা ধর্ম বাদ দাও, তবে তুমি ৫ম R পাবে এবং সেটি হচ্ছে Rascal বা বদমায়েশ।' সুতরাং ধর্মহীন শিক্ষা বদমায়েশ, চোর, বাটপার, লম্পট প্রভৃতি তৈরির হাতিয়ার। এর কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন।
সেক্যুলার শিক্ষানীতির রূপকার পাশ্চাত্য সভ্যতা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে তারা শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে যুক্তি ও মুক্তচর্চার নামে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচলন ঘটান। মুক্তবুদ্ধির অনুসারীরা ধর্মকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে এ দর্শন থেকে ইউরোপে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এ ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালুর ফলে সেখানে দেখা দেয় নৈতিকতার দারুণ অবনতি। সমাজব্যবস্থা অনাচার-কুআচারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, ধর্মীয় চেতনাবোধ না থাকায় বেহায়াপনা, বেলাল্লাপনা ও কুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতিতে ছেয়ে যায়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে অবাধ যৌনচারের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সীমাহীন অশ্লীলতার ফলে মরণব্যাধি এইডস রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ঘাতক এইডসের মরণ ছোবল যুবসমাজকে গ্রাস করতে থাকে। এর থেকে উত্তরণের জন্য তারা ঝুঁকে পড়ে ধর্মীয় নীতিমালা অনুসরণের দিকে।
ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থার কুফল হলো মানুষ ধর্মের অধীন থেকে মুক্ত হয়ে ভোগবাদী হয়ে পড়া। ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় অনুভূতি না থাকার ফলে যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়। যৌবনের বিদ্রোহী মনোভাব ও বুদ্ধিভ্রংশ তরুণ-তরুণী সাময়িক স্বস্তির অন্বেষণে মদ্যপানে ডুবে যায়। নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হয়ে সম্ভাবনাময় যুবসমাজের ভবিষ্যৎ রত্নতুল্য জীবনী শক্তি হারিয়ে ফেলে। সমাজজীবন ক্রমশ ধ্বংসের অতল গহবরে নিমজ্জিত হয়। দেখা দেয় ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক অবক্ষয়। সৃষ্টি হয় এক শান্ত ও বেদনাময় পরিবেশ। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ পালন করছে ‘‘মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস।’’
ধর্মহীন শিক্ষানীতির মূল ভিত্তি হলো সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ। এ মতবাদের দর্শন হলো ‘কেড়ে নাও, ভোগ করো’’ এ নীতি থেকে ছিনতাই, রাহাজানি ও লুণ্ঠনের উৎপত্তি। এতে সমাজব্যবস্থায় দেখা দেয় চরম অরাজকতা। বিঘ্নিত হয় শান্তি-শৃক্মখলা। তাই তো সমাজতন্ত্রের সুতিকাগার রাশিয়া মাত্র ৭০ বছরের মাথায় ধ্বংস হয়ে যায়।
ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, ইসলামী অনুশাসনের অবজ্ঞা ও সর্বোপরি আল্লাহর ভয় না থাকার ফলে আজ সর্বত্রই লংঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। সন্ত্রাস আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ঘুষের বিষবা আজ প্রশাসন ব্যবস্থাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। দুর্নীতির হিংসা কালো থাবা আজ সমাজকে গ্রাস করছে।
আল্লাহভীতি ও পরকালের জবাবদিহিতা না থাকার ফলে প্রগতিশীল ছাত্ররা ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করে গর্ববোধ করছে। কত মানুষকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করছে। ধর্মীয় অনুশীল ও মৃত্যুভয় না থাকার কারণে প্রগতিশীলের ধ্বজাধারীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলজাতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছে। এসব কিছু হচ্ছে সততা, নীতি-নৈতিকতা ও ন্যায়বোধ না থাকার কারণে। আর এসব হলো গুণ অর্জনের মূলভিত্তি হলো ধর্ম। পৃথিবীর সকল ধর্মই মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, মঙ্গলের কথা বলে, আত্মার পরিশুদ্ধির কথা বলে, আর ন্যায়বোধ জাগিয়ে তোলে।
সেক্যুলার শিক্ষানীতি মাদরাসা শিক্ষা বন্ধের পূর্বাভাস। বৃটিশ শাসন থেকে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালুর মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষার ওপর চালানো হয় সাঁড়াশি আক্রমণ। ম্যাক্সমুলারের মতে, ১৭৫৭ খৃস্টাব্দে আমাদের দেশে ৮০ হাজার ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মক্তব) চালু ছিল। উইলিয়াম এডাম তার জরিপে উল্লেখ করেন ১৮৩৫-৩৮ খৃস্টাব্দে তৎকালীন বাংলাদেশে ১ লাখ মক্তব ছিল। মসজিদ সংলগ্ন অনেকগুলো কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র চালু ছিল। ১৮৮২ সালে স্যার উইলিয়াম হান্টার শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় মক্তব, মাদরাসা ও দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আবার ব্যক্তি উদ্যোগে ও সামাজিকভাবে যেসব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে ১৯১৫ সালের নিউ স্কিম শিক্ষাসূচির আলোকে সেগুলো স্কুল-কলেজে পরিণত হয়ে যায়। আর যারা নিউ স্কিম শিক্ষাসূচি গ্রহণ করেনি, সেগুলো ওল্ড স্কিমে থেকে যায়। যা বর্তমানে আলিয়া মাদরাসা নামে পরিচিত। এ মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য ২০০৯ সালের কবির চৌধুরী সেক্যুলার শিক্ষানীতির আবির্ভাব ঘটে।
এ সেক্যুলার শিক্ষানীতি চালু করতে পারলে এদেশ থেকে মুসলিম ঐতিহ্য তুলে দেয়া যাবে। মুসলমানদের মন থেকে ঈমান-আকিদা মুছে ফেলা যাবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের বিজাতীয় মতাদর্শে ফিরে যাওয়ার পথ সহজ হবে। যেটা ধর্মবিদ্বেষী কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের দীর্ঘদিনের মনের একান্ত বাসনা। এ বাসনা পূরণ হলে ধর্মচর্চার কোনও লোক থাকবে না। জানাযার ইমাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশে ৫ লাখ মসজিদে নামায পড়াবার কোনও ইমাম থাকবে না। মসজিদগুলোতে দৈনিক ৫ বার আযানের ধ্বনি উচ্চারিত হবে না। যে আযানের ধ্বনি কবির চৌধুরী বিরক্তিকর ধ্বনি বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। অনেক দেরিতে হলেও তার সে আশা এখন পূরণ হবে। এ লক্ষ্যে কবির চৌধুরীর মতো ধর্মবিদ্বেষীকে দিয়ে জাতীয় শিক্ষা কমিশন '০৯ গঠন করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছেন, মাদরাসা শিক্ষা জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র (প্রথম আলো, ২ এপ্রিল/০৯)। এ অজুহাতে মাদরাসাগুলো বন্ধের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে সেক্যুলার শিক্ষানীতি আবিষ্কার করা হয়। এ শিক্ষানীতিতে কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে ললিতকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। যাতে এদেশের কচিকাচা নিাপ শিশু সন্তানরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পরিবর্তে মূর্তি পূজারী হতে পারে। ড. কুদরত-ই-খুদা দেশ স্বাধীনের পরে একমাস ভারত সফর করে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও মূর্তি সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৭৪ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট পেশ করেন। সমাজতন্ত্র ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ ও মূর্তি সংস্কৃতির আলোকে প্রণীত শিক্ষানীতি ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে, মরহুম শেক মুজিবর রহমান সে সময় তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আবারও সেই একই ধাঁচের শিক্ষানীতি জাতির ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। সেক্যুলার শিক্ষানীতি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী শিক্ষানীতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর '০৮-এর নির্বাচন পূর্ব ভাষণে বলেছিলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনও আইন পাস করবে না। বর্তমানে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী এ শিক্ষানীতি বাতিল করে তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন বলে দেশবাসী আশা করছে।
[email protected]
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×