somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজ প্রযুক্তি

২২ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবুজ প্রযুক্তি
যেন সূর্যের সঙ্গে বোঝাপড়া। শীতে উত্তাপ ছড়ালেও গ্রীষ্নে সূর্য তার তেজ নিয়ে পালিয়ে বেড়াবে এই বাড়ি থেকে। যে কারণে শীতে বাড়িটি উষ্ণ থাকলেও গ্রীষ্নে থাকবে শীতল। বাড়ির সব বাতি জ্বলবে সৌরশক্তিতে। বাড়িটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও থাকবে, কিন্তু সেটাও হবে পরিবেশবান্ধব। বাতাস থেকে নয়, ভূগর্ভস্থ তাপমাত্রা কাজে লাগাবে কৃত্রিমভাবে। পুরো বাড়ির নকশায় জ্যামিতিক যুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সূর্যের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার জন্য। সেই সূর্যের তেজকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও পানি গরম করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়িটিতে। গাছগাছালি, তৈজসপত্র, বাড়ি তৈরির সরঞ্জামসহ এখানকার সবকিছু এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন পরিবেশদূষণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। তাই বলে আভিজাত্যেও কোনো কমতি থাকছে না। পরিবেশের দোহাই দিয়ে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে না আপনাকে। শান্তিময় এই অত্যাধুনিক বাড়িটি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার ফারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৈরি করা বাড়িটি দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছে। ক্লিফস কটেজ নামের এই সবুজ বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। তিন হাজার ৪০০ বর্গফুটের এই বাড়িটিতে আভিজাত্যের কোনো কমতি নেই। জীবনকে সহজ করতে পুরো বাড়িতে প্রচুর যান্ত্রিক বিন্যাস রয়েছে এখানে। কিন্তু এ জন্য যে বিদ্যুৎ খরচ হয় সেটা খুবই নগণ্য। কারণ বেশির ভাগ বিদ্যুৎই উৎপাদন করা হয় সূর্যের মতো প্রকৃতির আরও কিছু নিয়ামত কাজে লাগিয়ে। অত্যাধুনিক এই বাড়িটির ব্যবস্থাপনার জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচসহ মাসে মোট খরচ হয় ৭৫ ডলারের মতো, যা কিনা তিন কক্ষের একটি খুব সাধারণ বাসার চেয়েও কম। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্লিফস কটেজের আদলে বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই বাড়িটির প্রতি আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র সরকারও। সে দেশের সাধারণ জনগণকে এমন বাড়ি তৈরিতে উৎসাহ জোগাচ্ছে তারা।
বাড়িটিতে জৌলুশের কোনো অভাব নেই। কিন্তু সেই জৌলুশ আনা হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি দিয়েই। এাখানকার মেঝেগুলো তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। বাঁশের ওপর কাঁচের টাইলস, সেই টাইলস পচনশীল এক ধরনের বিশেষ কাচে তৈরি। বাগান সাজানো হয়েছে সেখানে মানানসই স্থানীয় গাছ দিয়ে। এসব গাছে পানি দেওয়া হয় জমানো বৃষ্টির পানি থেকে। বাড়িটিতে ১২ হাজার গ্যালন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এই পানি পরিশোধন করে খাওয়া ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যায়।
সূর্যের তাপ, তেজ ও দিক পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে পুরো বাড়িটির নকশা করা হয়েছে। ক্লিফস কটেজের ছাদটা অনেক অংশে ভাগ করা, অনেকটা বহুচালা ঘরের মতো। প্রতিটি চালা আবার একেক কোণে একেক দিকে মুখ করে আছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেবে এগুলো। শীতকালে সূর্য যেদিকে থাকবে, সেদিককার ছাদের বিন্যাস অনেকটা খোলামেলা, যাতে সূর্যের তাপ সরাসরি আসতে পারে। আবার গ্রীষ্নকালের তাপ ঠেকাতে ঘরের একদিকের ছাদ দিয়ে বেশ একটা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে বাতাসপ্রবাহের পরিকল্পিত ব্যবস্থা। ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য পুরো ঘরে বিশেষ ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এই পাথরগুলো তাপ শোষশ করে ঘরকে ঠান্ডা রাখে। সেই সঙ্গে আছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ এক ধরনের ভেষজ জেলি।
আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও। কিন্তু সেগুলো সাধারণ শীতাতপ যন্ত্র নয়। প্রযুক্তিও আলাদা। ভূগর্ভস্থ তাপমাত্রা ব্যবহার করে বিশেষ পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বসানো হয়েছে ক্লিফস কটেজে। এতে শীতাতপ ব্যবস্থার বিদ্যুৎ খরচ কমেছে অন্তত অর্ধেক।
ক্লিফস কটেজের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ আসে সৌরশক্তি থেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও সৌরশক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে পানি গরম করার কাজে। ছাদে পানি গরম করার এই ব্যবস্থা থেকেই গৃহস্থালির কাজের প্রায় সব গরম পানি পাওয়া যায়। এখানকার সৌর উৎপাদনব্যবস্থা পুরোপুরি কম্পিউটারচালিত। বিভিন্ন সংগ্রাহক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কম্পিউটারের নির্দেশে সৌরবিদ্যুতের গ্রাহক অংশগুলো স্থান ও দিক পরিবর্তন করে। বাড়িটিতে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এ থেকে প্রায় ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় না ক্লিফস কটেজের জন্য। বাড়তি বিদ্যুৎ স্থানীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
ক্লিফস কটেজ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উপযোগী এবং প্রশংসিত সবুজ বাড়ির মধ্যে একটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশদূষণ কমাতে সারা বিশ্ব এখন সোচ্চার। এ ধরনের সবুজ বাড়ি নিশ্চয়ই আশার আলো বিশ্ববাসীর কাছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×