somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষ-৪

২১ শে নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলম ভাই বিয়ে করেছেন সত্যিই। যাকে বিয়ে করেছেন তাকে আগেও কয়েকবার দেখেছি। আঁখি নামের এই শ্যামাঙ্গী মেয়েটি আলম ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম করলেও হুট করে আমাদেরই পাড়ার মাজুলকে বিয়ে করে ফেলেছিলো। সেখানে তার একটি মেয়ে জন্ম নিয়ে হাসপাতালেই মারা গিয়েছিলো। তারপর কোনো কারণে বছর দুয়েক পর ওদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমার মনে হয় আলমভাই এর প্রধাণ কারণ। বিয়ের পর কোনো ছেলেই চাইবে না তার স্ত্রী আর কারো সঙ্গে ঘুরে বেড়াক। তা ছাড়া যে গাড়িটি প্রতিদিন তাদের অফিসে আনা নেয়া করতো সে গাড়ির ড্রাইভারের ধারণা মেয়েটা আলম ভাইয়ের। আমি ঘরের কাউকে কিংবা ভাবিকে এ ব্যাপারে কিছু বলি না। এ সমস্ত কথা শুনতে বা বলতে আমার ভালো লাগে না। তবুও নানা ধরনের কথা আমার কানে আসে। কোনো কোনোটাতে এতটাই নোংরা ইঙ্গিত থাকে যে, তখন সত্যি সত্যিই খুনী হতে ইচ্ছে হয়।

বড় ভাবি মাঝে মধ্যে মায়ের কাছে এসে কান্নাকাটি করেন। তখন মা কি বলে পুত্রবধূকে প্রবোধ দেন জানি না। মেয়েদের চোখে পানি দেখলে আমারও কান্না পায়। তাই তাদের কান্নাকাটির সময় ধারে কাছে থাকি না। তার স্বামী ঠিক মত ঘরে আসে না। নতুন বউকে নিয়ে নতুন কোনো জায়গায় থাকছে।

কিছুদিন পর শুনতে পাই আলম ভাইর মেয়ে চিকু আমেরিকা চলে গেছে। শুনে একটু খারাপ লেগেছিলো। মেয়েটা আমেরিকা চলে গেল অথচ আমাদের কাউকে জানালো না। আলম ভাই বা ভাবিও কিছু জানাননি। কেন জানাননি সেটা হয়তো তারাই বলতে পারবেন। কিন্তু মানুষ যখন বাঁচে তখন কেবল নিজের জন্যেই বাঁচে না। একটি মানুষের সঙ্গে অনেক ধরণের মানুষ সম্পর্কিত থাকে। তার মাঝে কিছু কিছু সম্পর্ক কাছের হলেও মানুষ তাদের কথা ভাবে না। ওদের মেয়ের হুট করে আমেরিকা চলে যাওয়াটাও কেমন যেন অদ্ভূত আর উদ্ভট বলে মনে হয়েছিলো আমার কাছে। মা-বাবা শুনে কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু আলম ভাই বা ভাবিকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেননি।

রাতের বেলা পিলু জানালো ইকবাল তার নামে টাকা পাঠিয়েছে। অনেক টাকা নাকি। আমি তাকে বলি, কেমন টাকা পাঠিয়েছে রে পিলু?

পিলু ঠোঁট চেপে জানায়, তোকে বলবো কেন? তোর টাকার দরকার হলে বলতে পারিস।

তাই তো বলছি কত পাঠালো? হাজার পঞ্চাশেক দিতে পারবি?

পিলু কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললো, এবার হয়তো পারবো না।

তাহলে হাজার দশেক দে!

তখনই একটি দশ হাজার টাকার চেক লিখে দিলো পিলু।

আমাদের ঘরে কোনো ফোন নেই। ইকবাল দেশের বাইরে থাকে। পিলু কল সেন্টারে নয়তো পাশের বাড়ি গিয়ে ইকবালের সঙ্গে কথা বলে তা আমার ভালো লাগে না। তাই ঠিক করেছি একটা সেলফোন তাকে কিনে দেবো। আমার নিজের টাকা থাকলে হয়তো তার কাছ থেকে টাকা নিতাম না।

টাকা তুলেই একটি সিম সহ সেলফোন কিনে ফেলি। নকিয়ার চালু একটি মডেল। এ মডেলটাই বেশিরভাগ মানুষের হাতে দেখি। সবাই যখন কিনছে তাহলে এটা নিশ্চয়ই ভালো হবে। দামও হয়তো সাশ্রয়ী। কিন্তু সেলফোন পেয়ে পিলু একটুও খুশি হলো না। বললো, ল্যান্ড ফোনের জন্যতো টিএন্ডটিতে টাকা জমা দিয়ে এসেছি! একমাসের ভেতর হয়ে যাবে! আর তুই এটা কিনতে গেলি কেন? আমিই তো অনেক মার্কেট চিনি! টাকাটা দিয়েছিলাম তোকে!

বললাম, আমার টাকার দরকার নেই।

কারো টাকার দরকার নেই কথাটা হাস্যকর।

পিলু আজকাল অনেক ভারী ভারী কথা বলে। মা বাবার সঙ্গে কেমন রেগে রেগে কথা বলে। হয়তো তার টাকার কিয়দংশ আমাদের সংসারে খরচ হচ্ছে বলে সেও আলম ভাইয়ের মত মেজাজ দেখিয়ে কথা বলছে।

একবার টাকা আনতে ভাবির কাছে গিয়েছিলাম। ভাবি কেঁদে ফেলার মত মুখ করে বলেছিলেন, আর কত তোদের টানবো? তোরা কি এখানে আসা বন্ধ করতে পারিস না?

এরপর বাবাকে বলেছিলাম যে, টাকা আনতে আমি আর যেতে পারবো না।
বাবা বলেছিলেন, তোর খারাপ লাগলে আর যাস না।

কিন্তু তবুও আমি অনেকবার গিয়েছি টাকার জন্য। আমার খারাপ লাগলেও ভাবির মুখ কালো করা হাত থেকে টাকা নিয়ে বাবাকে দিয়েছি।

পিলু এখন প্রতি মাসেই শপিঙে যাচ্ছে। নিজের জন্য নানা ধরনের জিনিস কিনে আনছে। জীবনে দেখিনি বা নাম শুনিনি এমন জিনিসও কিনে নিয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে আমাদের জন্য এটা ওটা নিয়ে আসছে।
মা বলেছিলেন, সবই খরচ করে ফেলছিস নাকি? তোর ভবিষ্যত নেই? কিছু টাকা ব্যাঙ্কে রেখে দিলেও তো পারিস!

পিলু জবাব দিয়েছিলো, টাকাগুলো আমার খরচের জন্যই পাঠাচ্ছে। জমাবো কেন? ইকবালই তো আমার ভবিষ্যত!

মা চুপ হয়ে গিয়েছিলেন।

বাবা অনেকদিন ধরেই বলছিলেন, কি একটা শারীরিক সমস্যায় নাকি তিনি ভুগছেন। পিলুকে কদিন ধরেই বলছিলেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু তার নাকি ভালোই লাগে না। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে কার কার সঙ্গে প্রায় সারাক্ষণই কথা বলে। মা দরজায় কান পেতে কথার ধরণ বুঝতে চেষ্টা করেন।

মা’কে বলি, বাবা আমার সঙ্গে হাসপাতালে গেলেই তো পারেন।

মা বিরক্ত মুখে জানান, তোর কান্ডজ্ঞান কিছু আছে নাকি! তোকে নিয়ে যেতে নাকি ভরসা পায় না।

বাবা কেন যেন আমাকে সহ্যই করতে পারেন না আজকাল। মনে হয় কোনো কারণে তিনি আমার মুখ দেখতে চান না। হয়তো বেকার হয়ে পিতা আর ভগ্নির অর্থ অপচয় করছি দেখে আমি বাবার চোখের বিষ হয়ে গেছি। তখনই আমার মনে পড়ে যে, শেষ ইন্টারভিউ দেবার সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, এবার চাকরি না হলে রেল লাইনের পাশের কোনো বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নেবো। প্রতিজ্ঞা করেও তা রক্ষা করিনি বলেই হয়তো নিয়তি আমার উপর শোধ নিচ্ছেন।

কিন্তু কোন এলাকায় রেল লাইনের পাশে ঘন বস্তি আছে তাই জানি না। তবে মনে মনে ঠিক করি যে, এবার সত্যি সত্যিই যাবো। আর ক’টা দিন বাদে। রাইসার পরীক্ষা শেষ হলেই যাবো।

মেয়েটা প্রথম প্রথম ভালোই ছিলো। কিন্তু উপরের ক্লাসে উঠবার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশুনার প্রতিও যেন মনোযোগ হারাচ্ছে। সেদিন হঠাৎ করেই সে আমাকে বলে বসলো, স্যার আপনার কি প্রেমিকা আছে?

আমি হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকি তার মুখের দিকে। মাত্র এইটে পড়ে মেয়ে। এমন প্রশ্ন করতেই পারে। আর এ থেকেই বুঝতে পারি মেয়েটা বড় হচ্ছে। লেখাপড়ার বাইরে কৌতুহল বাড়ছে।

সে ভেবেছে আমি তার উপর রাগ করেছি। তাই হয়তো বললো, খালামণি জিজ্ঞেস করতে বলেছিলো।

আমি বলি, রাগ করিনি। তোমার কৌতুহল ভেবে হঠাৎ চমকে উঠেছিলাম।

কেন স্যার?

ভেবেছিলাম, তুমি তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছো কিছু।

তেমন কিছু না স্যার। বন্ধুরা আরো অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে। সেদিন খালামণি হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো, তোর স্যার কি তোর সঙ্গে তার নিজের কথা কিছু বলে? আমি না করতেই ও কথাটা জিজ্ঞেস করলো।

তোমার খালামণি কি দেশে?

কাল সন্ধ্যায় এসেছে। এসেই ঘুম দিয়েছে। সকালে স্কুলে যাবো তৈরী হচ্ছি তখনই ও কথাটা বললো।

আচ্ছা আমি উনার সঙ্গে কথা বলবো।

তার মনোযোগ পড়ার বাইরে চলে এসেছে। এখন পড়ায় মনোযোগ ফিরে আসবে না। হয়তো আজ তার পড়াও হবে না। তাই ভিন্ন খাতে সরাতেই বলি, আচ্ছা তুমি না বলেছিলে স্কুল থেকে কোথাও নাকি নিয়ে যাবে। সেটা কবে?

সেটা কবে এখনও তো কিছু জানায়নি। কিন্তু মা আমাকে যেতে মানা করেছে।

কেন?

পরীক্ষার পর দার্জিলিং যাবে বলেছে।

আচ্ছা। সেখানে যে ভালো স্কুল আছে জানো?

জানি। কিন্তু সেখানে পড়তে যাবো না।

কেন? ভালো স্কুল।

আমি এদেশেই থাকবো। কোথাও যাবো না।

আমি বলি, বড় ডিগ্রি নিতে হলে তো যেতেই হবে।

শুনেছি আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকেও বড় ডিগ্রি নেয়া যায়।

রাইসার কথা শুনে আমার খুবই ভালো লাগলো। মনে হলো সে তার নিজের দেশটাকে খুবই ভালোবাসে।

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাইসা বললো, বিচ্ছেদ কি?

ছাড়াছাড়ি। বিচ্ছিন্নতা।

সেপারেট?

তেমনিই।

তারপর আবার বলি, তোমার বাংলা শব্দ-ভান্ডার খুবই দুর্বল দেখছি। অভিধান নেই?

রাইসা কেমন বোকার মত মুখ করে তাকিয়ে থাকে।

বলি, বাংলা ডিকশনারি নেই?

সে মাথা নাড়লো।

বললাম, একটা বাংলা ডিকশনারি কিনে নিও।

বাবা বাংলা পছন্দ করেন না। জানেন আমার খুব ইচ্ছে হয় বাংলা বই পড়তে। কিন্তু আমাদের ঘরে একটিও বাংলা বই নেই। শুনেছি বাংলায় কত সুন্দর সুন্দর স্টোরি আর নভেল আছে। বাবা বলেন, বাংলা পড়া নাকি মিডলক্লাস টেন্ডেন্সি!

আমার খুবই খারাপ লাগে। রাগও হয়। ইচ্ছে হয় রাইসার বাবার কলার চেপে ধরে এখনই জিজ্ঞেস করি, বাংলা ভাষার ব্যাপারে কেন তার এমন ধারণা হলো? কিন্তু তা করতে হলে বুকের পাটা লাগে। আমি তেমন সাহসী কাজ করতে পারবো না হয়তো। ইচ্ছে করলে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছটা রাইসাকে দিতে পারি। কিন্তু সন্তানের ব্যাপারে কোনো বাবার সিদ্ধান্তকে খাটো করে দেখাটা মূর্খামীর পর্যায়েই পড়বে হয়তো। তাই সিদ্ধান্ত নেই আজকের পর রাইসাকে আর পড়াতে আসবো না। অন্য কোথাও টিউশানি খুঁজে নেবো। নয়তো পরিকল্পনা মত কোনো বস্তিতে গিয়ে উঠবো।
(চলবে)
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×