২২ নভেম্বর বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা দুদু মিয়ার ১৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। দুদু মিয়ার আসল নাম মুহম্মদ মহসীন আহমেদ। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবর্তক হাজী শরীয়তুল্লাহ তাঁর পিতা। তিনি ছিলেন ইংরেজ বিরোধী। তিনি বাংলার জনগণের মধ্যে বিদ্রোহের ইস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেন। ১৮৪০ সালে তাঁর মৃত্যু হলে পুত্র দুদু মিয়া পিতার সংগ্রামী আন্দোলনের দায়িত্ব নেন। এ দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দুদু মিয়ার জন্ম ১৮১৯ সালে। ফরিদপুরে। ছোটবেলা থেকে বাবার রাজনৈতিক ভাবাদর্শ তাকে আলোড়িত করে। পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তি লাভের জন্য ইস্পাত দৃঢ শপথ নেন। বাবার অসমাপ্ত আন্দোলন তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেন। ফরিদপুর, পাবনা, বাখরগন্জ, ঢাকা ও নোয়াখালী এলাকায় তিনি সংগ্রাম ও বিদ্রোহ করে ইংরেজকে উচ্ছেদের মাধ্যমে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
সাধারণ মানুষের জন্য স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই তিনি সকল বিদ্রোহ পরিচালনা করে সফল হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের ওপর থেকে কর বিলোপ করে তিনি শোষক শ্রেণীর কাছ থেকে কর আদায় করতেন। গ্রামে গ্রামে বৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে আদালত প্রতিষ্ঠা করে বিচারকার্য চালাতেন। ইংরেজকে বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎখাত করে মানুষের স্বাধীন রাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৩৮ সালে ইংরেজ সরকার দুদু মিয়াকে প্রথম গ্রেফতার করে। জনগণের আন্দোলনের মুখে ইংরেজ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ১৮৪৪ ও ১৮৪৭ সালে লুণ্ঠনের অভিযোগ এনে ইংরেজ সরকার তাকে গ্রেফতার করে। প্রমাণের অভাবে প্রত্যেকবারেই সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বাংলার কৃষক সমাজে দুদু মিয়ার জনপ্রিয়তা এতই প্রবল ছিল যে সরকার তাকে বন্দি করে বেশী দিন রাখতে সাহস পায়নি। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় দুদু মিয়াকে ‘রাজবন্দি’ হিসেবে কলকাতায় আটক রাখা হয়।
সংগ্রাম ও কারাবাসের ফলে জীবনের এক পর্যায়ে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। সিপাহী বিদ্রোহের অবসানের পর ১৮৬০ সালে তাকে মুক্ত করা হয়। এর দু’বছর পর ১৮৬২ সালের ২২ নভেম্বর ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে শসস্ত্র আন্দোলনকারী দুদু মিয়া ঢাকায় মারা যান।