somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

আমরা যখন বিবর্তনের কথা বলি

২০ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যখন বিবর্তনের কথা বলি
ফকির ইলিয়াস
====================================
আমরা যখনই বিবর্তনের কথা বলি, তখন একটা অপশক্তি আমাদের সামনে চলে আসে। এরা কারা? তারা কী চায়? এসব প্রশ্নের সহজ উত্তর আমরা বুঝতে মোটেই কষ্টবোধ করি না। আমরা জেনে যাই, একটি প্রাচীর ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতে হলে সহস্র্র বাধা আসবেই। একটি মহল দাঁড়াবেই সব সভ্যতা, সংস্কৃতি শুদ্ধতার বিরুদ্ধে এই যে বাধা দানকারী গোষ্ঠী, এদের মূল উদ্দেশ্য কী? তাদের উদ্দেশ্য অনেক। তবে অন্যতমটি হচ্ছে- প্রজন্মকে পঙ্গু করে রাখার পাঁয়তারা। সমাজের পরিশুদ্ধ পরিবর্তনকে আটকে দেয়া।
সম্প্রতি বাংলাদেশে তিনজন পাকিস্তানি জঙ্গি ধরা পড়েছে। এর আগে ক'জন ভারতীয় সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি ধরা পড়েছিল। জঙ্গিদের প্রকৃতপক্ষে কোন দেশ নেই। ভূমি নেই। তারা তাদের ছোবল বিস্তৃত করতে চায় যত্রতত্র। তারা ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের নামে মূলত ধর্মীয় শান্তিকে বিনষ্ট করারই পাঁয়তারা করছে, করে যাচ্ছে। আর এ্রদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে, যারা প্রকৃত পক্ষে ধর্মীয় জোশ প্রচারের নামে রাজনৈতিক মতবাদ প্রচারেই মধ্যে রয়েছে। তাদের এই যে রাজনৈতিক মতবাদ এর সঙ্গে কি শান্তির কোন সম্পর্ক আছে? না, নেই। কারণ শান্তির ধর্ম যে মাটি থেকে উৎসারিত সেই ভূমিতে তা মৌলবাদের কোন স্থান নেই। স্থায়িত্ব নেই। ওসামা বিন লাদেন যে মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে তিনি তার মতবাদ প্রচার করেননি কিংবা করতে পারেননি কেন? কেন তিনি সেই জন্মমাটি থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেন? এই বিষয়গুলো প্রজন্মকে ভাবতে হবে। জানতে হবে শান্তির ধর্মের প্রকৃত ইতিহাস।
বাংলাদেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হুমকি-ধমকি অব্যাহতই রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে সপরিবারে। বলা হয়েছে, 'হিযবুত তাহরীর' নামের একটি মৌলবাদী তাত্তি্বক সংগঠনের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানোর সুযোগ দিতে হবে। কী এই কার্যক্রম? কী তাদের এজেন্ডা? তা রাষ্ট্রের মানুষ জেনে গেছেন ইতোমধ্যেই। আমরা দেখছি, জাতীয় প্রেস ক্লাবে সভা করে একটি বিশেষ মতবাদী দল ও গোষ্ঠীর নেতারা এক কাতারে বসে 'আগ্রাসন' ঠেকাবার হুঙ্কার দিচ্ছেন। তারা কথা বলছেন, সেসব সন্ত্রাসবাদী কট্টরপন্থিদের অনুকূলেই। কার স্বার্থ হাসিল করতে তারা মাঠ গরম করতে চাইছেন, তা দেশবাসীর না বোঝার কথা নয়।
বাংলাদেশের মানুষ জানেন ও বোঝেন, এই দেশে একটি মহল 'নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ' করতে বরাবরই তৎপর। তারাই চট্টগ্রামে নিজেদের কাউন্সিলের নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে মল্লযুদ্ধ করেছে। সাবেক দুই মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কমপক্ষে পনের জনকে আহত করেছে। দেশজুড়ে এই জাতীয়তাবাদী সুবিধাবাদী চক্রটি এখন একে অন্যের প্রতিপক্ষ। সদ্য ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া এসব নেতাকর্মী ভোগ করতে না পারার বেদনা আর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে চরম মারমুখো। অথচ তারা সরকারকে দোষ দিচ্ছে, সরকার নাকি তাদের কাউন্সিল করতে দিচ্ছে না।
দুই.
বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে আমরা দেখছি, বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যে রায় বহাল হবে তা তারা মেনে নেবেন। আমরা বাস্তবে দেখছি ভিন্ন চিত্র। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে, রায় যদি তারা মেনেই নেবেন তাহলে একটি অপশক্তিকে তারা উসকে দিতে চাইছেন কেন? কেন তাদের বক্তৃতার হুঙ্কারে প্রশ্রয় পাচ্ছে সেই খুনিচক্র ও তাদের দোসররা? কেন তারা শক্ত ভিত্তি নিয়ে সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না। অবস্থান নিচ্ছেন না? কেন জঙ্গিবাদ ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন না?
কারণ এখানে তাদের হীনস্বার্থ জড়িত। মনে রাখতে হবে, হরকাতুল জিহাদ কিংবা জেএমবি যখন বাংলাদেশে তাদের শিকড় গেড়ে বসার প্রচেষ্টা চালায় আজ থেকে সাত বছর আগে এই পক্ষটিই তাদের সাফাই গেয়েছিল। এর আগে 'ইত্তেহাদুল উম্মাহ' নামের আরেকটি তাত্তি্বক সংগঠন ছিল যারা মূলত একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের পারপাস সার্ভ করত।
যাদের জনগণের রায়ের প্রতি আস্থা থাকে না কিংবা যারা গণতন্ত্রের শক্তিকে ভয় পায় তারা সবসময়ই বিকল্প পথে রাষ্ট্রক্ষমতা পেতে চায়। দানবীয় শক্তির এমন উত্থান তৃতীয় বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই আমরা অহরহ দেখি। এদের কাছে বিবর্তনবাদ মানে হচ্ছে নবরূপে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতার জাগরণ! আর এজন্য তারা বারবার পথ বদলালেও মত পাল্টায় না।
একটি ছোট্ট সংবাদ অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে হয়তো বা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের চিহ্নিত আল-বদর মতিউর রহমান নিজামী আগামী তিন বছরের জন্য আবারও জামায়াতের আমীর হয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ('বাজাই')আবারও প্রমাণ করেছে তারা একাত্তরের কালো অধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা এখনও করে যাচ্ছে। তা না হলে এত নেতা থাকার পরও তারা সেই ঘাতক বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না কেন? তার কারণ হলো একাত্তরে পরাজয়ের ব্যথা তারা এখনও ভুলতে পারেনি।
বাংলাদেশকে নানা দিক থেকে কঠিন দুঃসময় ঘিরে ধরেছে। ১৯ নভেম্বর জাতির জনক হত্যার বিচারের রায় প্রকাশকে ঘিরে নানা তৎপরতা লক্ষ্য করছি আমরা। হায়েনারা বিদেশ থেকে গিয়ে ঢুকেছে বাংলাদেশে। তাই সরকারকে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এ জন্য আমি সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরতে চাই।
১। বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে যারা এ সময়ে যাচ্ছে, তাদের ভ্রমণ বিষয়ে ব্যাপক ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হোক। সীমান্তবর্তী এলাকার চেকপোস্টে তদারকি জোরদার করা হোক।
২। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি বিষয়ে জনগণ ও মিডিয়াকে জানার ব্যবস্থা করা হোক। যাতে জুজুর ভয় সৃষ্টিকারীরা মানুষকে ভুল বোঝাতে না পারে।
৩। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতিটি স্তরে গোয়েন্দা কার্যক্রম সর্বোচ্চ জোরদার করা হোক। সরকারি দলের সব অবৈধ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করা হোক।
সরকারের সঙ্গে জনগণের সমন্বয় সাধনই কর্মের গতিকে শক্তিশালী করতে পারে। এজন্য সব দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। পরিবর্তন কিংবা বদলের নামে কোনমতেই নব্য ফড়িয়াগোষ্ঠী যেন সরকারি প্রশ্রয় না পায়। বদলাবার পূর্বশর্ত হচ্ছে- ত্যাগ। আর ত্যাগই দিতে পারে মুক্তির পথদিশা।
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২০ নভেম্বর ২০০৯ / শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি - নাশরাত ইলিয়াস
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×