somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ডুবে ভেসে উঠি বারবার - ০২

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখনই যমুনার উপর দিয়ে যাই, তখনই এই অনুভূতিটা হয়। এ নিয়ে কয়েকবার। যমুনা ছাড়াও অন্য নদীর বুকের উপর দিয়ে চাকা চলে, কিন্তু বারবার কেন যেন যমুনাকেই মনে হয় মানুষের কাছে পরাজিত। হতে পারে চোখের সামনে দিয়ে যমুনার উপর সেতুটি বড় হয়েছে বলে, হতে পারে যমুনার মাঝখানের চরের বিশালতা দেখে। নদীর বুকে এতো বড় চর আর কোথাও দেখি নি। অভিমানে যমুনা দেবী বুকের উপর চরকে শুতে দিয়ে পানিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে দিন দিন? কে জানে, অভিমানের চাপা ভারে চরের মাটিগুলো একদিন হয়তো পাললিক শিলা হয়ে যাবে! মানুষের অভিমান পোষ মানানো যায়, সহজেই। নদীর অভিমান নদীর ওপর নির্ভরশীল প্রতিটি গাছ, প্রাণী, বালুকণা কিংবা বাতাসের প্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে- সবাই তখন দেখাদেখি অভিমান করতে থাকে! আর কে না জানে প্রকৃতির যুথবদ্ধতা প্রকৃতির সবচেয়ে বড় শক্তি! সময় বাঁচানোর তাগিদে কিংবা সভ্যতা বিকাশের উন্মত্ততায় মানুষ হয়তো তা টেরই পায় না! সমস্যা হলো, যখন টের পাবে, তখন অভিমানে অভিমানে নদী নিজেকে পুরোপুরি লুকিয়ে ফেলবে মাটির তলায়! মানুষের হাহাকারে যমুনা, এখনও, অভিমান নিয়েও বুকের জল উথলায়-পাথলায়; মানুষের মুমূর্ষু কাতরতায় ফিরে তাকাবার শক্তিটুকুও ওই সময় যমুনার থাকবে না।
০১.১১.০৯

২.
কুমিল্লায় কুকুর-সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশের যতো হাইওয়ে আছে, তার প্রত্যেকটিতে অন্তত একবার করে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লায় রাস্তায় যে পরিমাণ কুকুর দেখা যায়, অন্য কোনো রাস্তায় শতভাগের এক ভাগও মেলে না। সমস্যা সেটা না— রাস্তার কুকুর তো রাস্তায়ই থাকে! কতো মানুষই তো রাস্তায় থাকে! অনেক কুকুরের পাকা মেঝেতে শোয়ার বন্দোবস্ত থাকলেও প্রচুর মানুষ আছে যারা কখনোই একটা পাকা বাড়ি চোখেও দেখে নি। যেটা বলছিলাম- কুমিল্লার কুকুরের কথা মনে হলো এই দিনাজপুরে এসে। বাঁশেরহাটের ঠিক আগে আগে রাস্তায় একটাকে মরে পড়ে থাকতে দেখলাম। উত্তরবঙ্গে গত দুদিনে এই প্রথম মৃত কুকুর দেখলাম। অথচ কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে মোটামুটি ফেনী পর্যন্ত যে রাস্তাটা, এই ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে সেখানে অন্তত ১০-১৫টি মরা কুকুর পড়ে থাকতে দেখা যাবে। এই আমার গাড়িই তো সেদিন একটা কুকুর মেরেছে!

এর কারণ কী? ধূর, মানুষ নিয়েই চিন্তায় বাঁচি না— এ সামান্য কুকুর! কুত্তা! কুত্তা মরলে আমার কী? আমার কিছু না। কিন্তু থ্যাঁতলানো, রক্ত-মগজ বের করা, দলা মাংসপিণ্ড দেখলে গা গুলায়! ভাত খাবার সময় মনে হলে পাকস্থলীর পিস্টন ভাতগুলোকে সহজে নামতে দেয় না! না হলে কুত্তা মরলে আমার কী? কুকুররা মানুষনির্মিত সভ্যতার সাথে এখনও একাত্ম হতে পারে নি— মরবেই; ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলার শিক্ষা ওদের দেওয়া হয় নি- তাই মরে পরে থাকে। কুত্তার বাচ্চা তো, একটাকে মরতে দেখেও শিক্ষা হয় না! আবার সে নিজেও রাস্তায় দুদিন পরে এভাবেই মরে পড়ে থাকে। খেতে পায় কিনা কে জানে! মানুষের কাছ থেকে কি প্রতিবাদের ভাষা শিখে এসেছে— রাস্তা না যাওয়া পর্যন্ত দাবি আদায় হবে না? খাওয়া না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়া যাবে না? কে জানে? হতেও পারে। দুনিয়াতে কিছুই অসম্ভব না! আর রাস্তায় নামলে কুত্তার মরণ এদেশে অস্বাভাবিক কিছু না।

আচ্ছা, এমন কি হতে পারে ‘কোন এক বিপন্ন বিস্ময়ের’ ঠেলায় কুকুরগুলো রাস্তায় দামি লেক্সাস-আরএমটু-ভলভো-স্ক্যানিয়ার নিচে মরে সুখ পেতে আসে?
০২.১১.০৯

৩.
যতো বঙ্গ আছে, তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের মানুষ রাস্তা পার হতে সবচেয়ে বেশি কেয়ারলেস। কথা নেই, বার্তা নেই— হুট করে দৌড় মারে! একটু আগে এক মুরুব্বি রাস্তা পার হলেন— মোটামুটি ঘাড় ঘুরিয়ে দুদিকে দেখে যে পার হতে হয়- সেই নিয়ম পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে। এদিকে আমার গাড়ি, ওদিকে হানিফ পরিবহনের গাড়ি- দুটোই কড়া ব্রেক কষলো। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে গোটা তাবাড়িয়া বাজারে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হলেন মুরুব্বি- অথচ কোনো বিকার নেই! গাড়ির কাচ নামিয়ে শুনলাম অভিধানে না থাকা বেশ কয়েকটি শব্দ নিবেদন করছেন আমাদের উদ্দেশ্যে। বিমলানন্দ পেলাম:D। আচ্ছা, একটা গালিয়ভিধান বানালে কেমন হয়? বাংলা একাডেমী আবার সেন্সরশিপ আরোপ করবে না তো?
০৩.১১.০৯

৪.
নানা কারণে হিন্দি গান শোনা হয় কম। এখনও মোটামুটি তু চিজ বারি হায় মাস্তে মাস্তের জমানায় আটকে আছি। আহা! ওই কোমরের জন্য কতোদিন ঘুমাতে পারি নি! এর ঠিক পরের আমলের মোটামুটি জনপ্রিয় গানগুলো মাঝে মাঝে শোনা হয়েছে। অধিকাংশ হিন্দি গান আসলে শোনা হয় রাস্তার পাশের ক্যাসেটের দোকানে। যেতে যেতে একটুখানি সুর বাতাসে ভেসে আসে- পছন্দ হলে দাঁড়িয়ে পুরোটাই শুনে ফেলি। মাঝখানে যে হিন্দি গানে নানা কিসিম চলে এসেছে, সেটা জানাই হয় নি।

গাড়িতে বসে ল্যাপটপে গুতাচ্ছি— কালকের প্ল্যান। ড্রাইভার আক্কাস ভাই গান শুনতে শুনতে গাড়ি চালান, এবং যথারীতি হিন্দি। হঠাৎ করে শরীরটা কেমন যেনো নেচে উঠলো! বাইরে যদিও গাম্ভীর্যের মুখোশ যথারীতি পরা, কিন্তু শরীরে ভেতরকার রক্ত নাচানাচি শুরু করে দিলো। ব্রয়লারের বাইরের দিক দেখে ভেতরকার ফুটন্ত পানির নাচানাচি বুঝা যায় না। ওদিকে ভেতরে মনে হচ্ছে হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থি পামেলাকে নিয়ে একবার ডান হাতে, আরেকবার বাম হাতে যাচ্ছে। একবার উপরে উঠছে তো আরেকবার নিচে নামছে। ডিএনএর সাইটোসিন-গুয়ানিন-এডিনিনরা ধমনী ছেড়ে শিরায়, শিরা থেকে ধমনীতে কুর্নিকোভার সাথে ভরতনাট্যম করছে, কলজেটা মোটামুটি রাভিনা ট্যান্ডন ট্যান্ডন ট্যান্ডন ট্যান্ডন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, বামপায়ের কড়ে আঙ্গুল দেখি শাবনূরের মতো লাফাচ্ছে, পাকস্থলীর জারক রস দুলতে দুলতে ইয়ের (এর নাম বলা যাবে না) বৃষ্টিভেজা শাড়ি দেখছে— সে এক এলাহী কাণ্ড! মর জ্বালা, ঠোঁটও দেখি ক্রমাগত নিশপিশ করছে! মাঝখানে ঐশ্বরিয়া কোন ফাঁকে হৃৎপিণ্ডের লাল পানি সঞ্চালনেও স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আমি এদিকে চোখ বুঁজে রাণী মুখার্জির কোমরের একটু নিচে ধরে ঝাঁকাচ্ছি- আওওওসাইইওওওওও... আওসাইওও.. টুটে দিল কি পীড় সহি না যায়েয়েয়েয়েয়েয়েয়ে....

রাণীর সুড়সুড়ি লাগছে। আমার করার কিচ্ছু নাই ;) । আহা! টুটে দিল কি পীড় সহি না যায়েয়েয়েয়েয়েয়েয়ে....
০৪.১১.০৯

(ঈষৎ সম্পাদিত :|)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×