somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৌলানা সাহেব বলেছেন আমার জানাযা তিনি পড়াবেন না

১৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় রাস্তার মোড়ে, হোটেল বা দোকানে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় তবলীগের দলবল দেখলে এদিক ওদিক দৌড়ে পালাতাম। এখন আর দৌড়ে পালাইনা। সোজা ভাষায় বলে দেই আমি অবিশ্বাসী। বাসে, রাস্তায় বা সমাবেশে মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ বা ভরণ-পোষণের জন্য কেউ দান চাইলে নিজে থেকেই কিছু দিতাম। এখন যেচে কিছু দেইনা। জোরাজুরি করলে সোজা বলে দেই আমি অবিশ্বাসী।

বাড়ি থেকে পাঁচটা প্লট দূরেই মসজিদ। একসময় এটাই ছিল এলাকার একমাত্র মসজিদ। এখন অবশ্য আশেপাশে আরো কয়েকটা হয়েছে। বেশিরভাগই সরকারি বা বিরোধপূর্ণ জমিতে। তবে পুরণো হওয়ার কারণে এখনও এই মসজিদটির গুরুত্ব অন্যগুলোর চেয়ে বেশি। মসজিদের ইমাম সাহেবও বহু পুরনো। মসজিদকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সাধারণত দেখা যায় ইমাম-মুয়াজ্জিনরা কোন মসজিদে বেশিদিন টিকতে পারেন না। কিন্তু উল্লেখিত ইমাম সাহেব শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই আছেন। মাঝখানে দু'একবার যে ঝড়-তুফান টুকটাক হয়নি তা অবশ্য নয়। তবে ভদ্রলোকের ম্যানেজ করার ক্ষমতা সবসময়ই অসাধারণ।

এলাকার পুরণো বাসিন্দা হওয়ার কারণে মসজিদটার সাথে আমার বাবা প্রথম থেকেই জড়িত ছিলেন। সে কারণে ইমাম সাহেবের সাথে আমার বাবার সম্পর্ক খুবই পুরণো এবং আন্তরিক। বাড়িতে নিয়মিত মিলাদ পড়ানো এবং মিলাদ শেষে ইমাম সাহেবের হাতে চকচকে একটা নোট গুজে দেয়ার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও তাঁর একটা সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু আমি। ধর্মীয় কার্যাদিতে অংশগ্রহণ না করার কারণে তিনি সর্বদাই আমার উপর বিরক্ত। দেখা হলেই নানা আদেশ, উপদেশ দেন। দোজখের ভয় দেখান। আমি এতোদিন এগুলো নতমুখে শুনে আসতাম। তবে সেদিন বিরক্তিটা একটু চরম পর্যায়েই পৌছে গেল। উপদেশের একপর্যায়ে নতমস্তকটা সোজা করে বলে দিলাম, আমি অবিশ্বাসী। মুহুর্তেই ভদ্রলোকের চোখ দুটো আগুনের মতো হয়ে গেল। আগুনের গোলাগুলো একসময় চোখ অতিক্রম করে মুখ থেকে নির্গত হল। গোলাগুলোকে সংগ্রহ করে এগুলোর সারমর্ম যদি অক্ষরের ভাষায় প্রকাশ করি তবে বাক্যটা হবেঃ যদি অচিরেই আমি তওবা পড়ে মসজিদে নিয়মিত না যাই তবে তিনি আমার জানাযা পড়াবেন না।

আমি জানি মৌলানা সাহেব কথাটি সিরিয়াসলি বলেননি। আমি জানি জানাযা এবং চল্লিশার মিলাদের পরে ওনার হাতে একটা চকচকে নোট গুজে দিলে তিনি আমাকে আল্লাহ'র আরশের ছায়ায় স্থান দেয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করে মোনাজাত করবেন। তারপরেও ভেতরে ভেতরে যে একটা ভয় কাজ করছিলনা তা কিন্তু নই। ভাবলাম যদি সত্যিই সে জানাযা দিতে অস্বীকার করে তবে আমার পরিবার এবং মৃতদেহটাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। চিন্তা করে দেখলাম পরিবার ও মৃতদেহটাকে বিব্রতকর অবস্থার হাত হতে রক্ষার জন্য আগেভাগেই এটাকে কোন একটি হাসপাতালে ডোনেট করে দেয়াই উত্তম। এতে করে কেউ না কেউতো উপকৃত হবে। জীবনেতো কারো উপকারে আসলাম না, মরার পরে যদি একটু আসি।

কামনা করি দেশের প্রতিটি মৌলানা ওনার মতো তেজস্বী এবং ধর্মরক্ষক হোন। এতে করে নাস্তিক, আধা-নাস্তিক, সংশয়বাদীরা জানাযা না পাওয়ার ভয়ে নিজের ডেডবডিটাকে কোন হাসপাতালে ডোনেট করে দিতে বাধ্য হবে। কেউ না কেউতো এতে উপকৃত হবে; হোক না সে কোন মসজিদের ইমাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৭
৩১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×