somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজমির শরীফ দর্শন - আট দিনে ভারত দর্শন ( পর্ব - পাঁচ)ঃ এম ই জাভেদ

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজমির শহরটি ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি পুণ্যভূমি হিসাবে বিবেচিত। ঠিক ভারতীয় বললে অবশ্য ভুল হবে। কারন বর্তমানে এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী পুন্যার্থিদের আগমন ঘটে থাকে বিধায় এটি এখন বিশ্বজনীন তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে আছে হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী( রঃ) এর মাজার যা আজমির শরীফ হিসাবে সমধিক পরিচিত। আমাদের আজমির আগমনের হেতু এই আজমির শরীফ বা দরগাহ দর্শন।



১৯৫০ সালে ‘ আজমির’ ভারতের একটি রাজ্য হিসাবে মর্যাদা লাভ করলেও ১৯৫৬ সালে এটি রাজস্থানের সাথে একীভূত হয়ে যায়। আজমির শহরটি রাজস্থানের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী(রঃ) ১১৪২ খ্রিস্টাব্দে ইরানে জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ভারতে আগমন করেন। কথিত আছে যে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সরাসরি বংশধর। আজমির এসে ৮০০ ফুট উঁচু এক পাহাড়ের পাদদেশে তিনি আস্তানা গড়ে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। বর্তমানে তার মৃত্যু বার্ষিকীতে আরবি রজব মাসের ১ম সপ্তাহে এখানে ঘটা করে ওরস উদযাপিত হয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পদচারনায় তখন মাজার এলাকাটি থাকে বেশ মুখরিত।



গত ২১ মে এ বছরের ওরস শেষ হয়েছে। অল্পের জন্য আমরা ওরস দেখা মিস করলাম। ৬ রজব হচ্ছে ‘QUL’ অর্থাৎ ওরসের শেষ দিন। ইতিহাস থেকে জানা যায় হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী(রঃ) তার জীবনের শেষ কয়েকটি দিন নির্জন কক্ষে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থেকে ৬ রজব তারিখে ওফাত লাভ করেন। তাই এই দিনটি পুন্যার্থিদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে ওরসে আগত সবাই সুর করে হাততালি সহকারে আল্লাহ, রাসুল ও সূফী আউলিয়াদের গুণকীর্তন পূর্বক এক ধরনের কবিতা বা verse পাঠ করে থাকেন। একে বলা হয় ‘ CONCLUSION OF CHATI SHARIF’ বা ‘ BHADWA’ । ‘ BHADWA’ পাঠে অন্য কোন বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার হয় না। এর রচয়িতা হযরত সাইদ বেহলল চিশতী। ‘ BHADWA’ পাঠ শেষে ‘QUL’ এর সমাপ্তি ঘটে এবং ফাতিহা পাঠ করা হয়। অবশেষে অপরাহ্ণ ১.৩০ ঘটিকায় কামান ফায়ারের মাধ্যমে ওরসের যবনিকাপাত ঘটে। উল্লেখ্য, ওরস উপলক্ষে বিশেষ দোয়ার জন্য মাজার পরিচালনা কমিটি কর্তৃক দোয়া প্রার্থী মুসল্লিদের নামের লিস্ট করা হয়। যারা সশরীরে হাজির থাকতে পারেন না তারাও বিভিন্ন ভাবে অর্থ কড়ি পাঠিয়ে পুণ্য লাভ করতে পারেন। এ অর্থ দিয়ে মাজারের জন্য ফুল, ভেলভেটের চাদর কেনা হয়; মিসকিনদের জন্য কাঙ্গালি ভোজ কিংবা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে ডোনেটরদের জন্য দোয়া করা হয়।



মাজারের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা-ভক্তি থাকলেও মাজার জিয়ারতের নামে ধর্মান্ধ পুন্যার্থিদের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মোটেও সমর্থন করি না। এসব আচরন ইসলাম সম্মত তো নয়ই, বরং শিরকের সমতুল্য। সিলেটে হযরত শাহজালাল(রঃ) এর মাজারের যা দেখেছি এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই।



লোকজনকে দেখলাম মাজারের গেটে লাল সুতা বেঁধে মানত করছে, কেউ কাউ মাজারের দেওয়ালে মাথা ঠুকে পড়ে আছে ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেকে হাত কিংবা মাথা দিয়ে মাজারের দেওয়াল স্পর্শ করে বির বির করে মনোবাঞ্ছা পূরণের দোয়া করছে।



কেউ কেউ নাকি মাজারে সেজদা ও করে থাকে!! মাজারে মানত করলে নাকি মনের ইচ্ছা পূরণ হয়!! আমি তো শুনেছি জিয়ারতের উদ্দেশে মাজারে গমন করাও নিষেধ। ঘটনাচক্রে কেউ এসে জিয়ারত করলে সেটা ভিন্ন কথা। আমি ধর্মবেত্তা নই। এ ব্যাপারে আলেম সমাজ ভাল বলতে পারবেন।



মাজারকে কেন্দ্র করে এখানে দারুণ এক ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ফ্লাওয়ার বাস্কেট, ভেলভেটের চাদর, সুগন্ধি আগরবাতি, টুপিসহ নানা রকম জামা – কাপড় আর খাবার দাবার।হোটেল ব্যবসাটা ও এখানে বেশ জমজমাট।










আমি কিছু টুপি আর থ্রি পিচ কিনলাম – অবশ্যই নিজেদের ব্যবহারের জন্য। জামা কাপড়ের দাম বেশ সস্তাই মনে হল।



কেনাকাটা সেরে অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে প্রবেশ করলাম
মাজারের ভেতরে। এখানে ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে । তা সত্বেও ক্যামেরাটিকে পকেটে পুরে রেখে দিলাম সুযোগ পেলে ক্লিকবাজি করার জন্য। মাজার চত্বরের ছবি তুলতে পারলেও মাজারের ভেতরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ক্যামেরা বের করার সাহস করিনি। মূল মাজারের ভেতর প্রচন্ড রকম ভিড়। ক্যামেরা বের করার উপায়ও নেই। নারী- পুরুষ – শিশু নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে মাজার দেখতে লাইন ধরে ঢুকছে। নিরাপত্তা রক্ষী কাউকে দাঁড়াতে দিচ্ছেনা; দেখতে হচ্ছে হেঁটে হেঁটে। দাঁড়িয়ে দেখতে হলে ভেলভেট চাদরের উপর রূপী ছুঁড়ে মারতে হবে। আমি একটু দাঁড়াতেই এক নিরাপত্তারক্ষী আমার কাছে এসে বলল – রূপী ঢাল। আমার রূপী ঢালার ইচ্ছা না থাকায় সামনে হাঁটা দিলাম। বের হওয়ার সময় দুই একজনকে দেখা গেল দর্শনার্থীদের মাথায় ময়ূরের পালকের ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি মারার বিনিময়ে রূপী নিচ্ছে ( এটা নাকি আশীর্বাদ ) !!




মাজার চত্বরে ঝাড় – ফুঁকের ব্যবসাও দেখলাম বেশ রমরমা। চত্বরের এক পাশে এক দল লোক হারমোনিয়াম বাজিয়ে কাওয়ালী সঙ্গিত গাইছে উচ্চ স্বরে।



মাজার ও এর সংলগ্ন চত্বরের দেওয়াল এবং ছাদের দৃষ্টি নন্দন কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হলাম।





মাজারের লাগোয়া মসজিদ একেবারে জনশূন্য বলা চলে। দুই একজন লোক মসজিদের মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে নিশ্চিন্তে। মসজিদের মিনারটা বেশ সুন্দর দেখতে। মিনারে রয়েছে নানা রকম সোনা খচিত কারুকার্য।








মসজিদ থেকে বের হয়ে এবার মূল গেটের দিকে অগ্রসর হলাম। এখান থেকে বেরোতে হবে। বের হবার সময় খেয়াল করলাম দুই পাশে বিশাল বড় দুইটা ডেগ রাখা। ডেগে কি আছে দেখতে একটু কৌতূহল বোধ হল। সিঁড়ি বেয়ে উঠে ডেগের কাছাকছি গিয়ে দেখি একটাতে লোকজন টাকা ঢালছে; আরেকটাতে চাল- ডাল, খাবার –দাবার। সন্ধ্যা নাগাদ বিশাল আয়তনের এই ডেগ দুটা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।



প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ দরগাহ পরিচালিত হয় ভারত সরকারের খাজা বাবা অ্যাক্ট – ১৯৫৫ এর আওতায়। সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত দরগাহ কমিটি মাজারের জন্য প্রাপ্ত সকল প্রকার ডোনেশন ব্যবস্থাপনা এবং মাজার রক্ষণাবেক্ষণ সহ বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান যেমন ডিসপেনসারি, গেস্ট হাউজ ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকেন। আমার আজমির শরীফ দর্শন দ্রুত শেষ করতে হল সহকর্মীর ফোন পেয়ে। এক্ষুনি হোটেলে ফিরে যেতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের গাড়ি রওনা হবে তাজমহলের শহর আগ্রার উদ্দেশে। বিশ্বের সপ্তাশ্চার্জ দেখার অদম্য বাসনায় পুলকিত হয়ে আমরা চললাম আগ্রার পথে। (চলবে)



তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×