somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেগে উঠ একাত্তর...........

১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
একটা গল্প বলি। মুক্তিযুদ্ধের গল্প (আশ্চর্য, ইদানিং মুক্তিযুদ্ধোর তরতাজা সত্যকথনও গল্প হয়ে উঠেছে!)।শ্রীমঙ্গল চা বাগানে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। অফিসাররা থাকেন ম্যানেজারের বাংলোতে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা পাকিস্তানিদের। আলী আজগর এবং তার এক সহযোদ্ধা মিলে পরিকল্পনা করল বাংলোর সামনে কাঁচা রাস্তায় এম-১৪ এন্টি পারসোনাল মাইন লাগাবে। আলী আজগর যখন তার শেষ মাইনটি গর্তের ভেতর ঢোকাচ্ছে, তখন হঠাৎ খেয়াল করল চারজন
পাকিস্তানি অফিসার গল্প করতে করতে বাংলোর দিকে হেঁটে আসছে। আজগরের অবস্থান থেকে পাকিস্তানিদের এবং মাইন পোতায় ব্যস্ত তার বন্ধুর দূরত্ব প্রায় সমান। ডাকতে গেলে পাকিস্তানিরা শুনে ফেলবেই শুধু নয়, তাকে দেখেও ফেলবে। দূরত্ব মাত্র দশ বারো গজ অথচ তার বন্ধুর পিঠ তখন শত্র“র দিকে। একটু ও আঁচ করতে পারছেনা সে। সেকেন্ডের অংশভাগে সিদ্ধান্ত নিতে হল আলী আজগরকে। নিরুপায় হয়ে গড়িয়ে ঢুকে গেল চা বাগানের ভিতর। শত্র“রা খেয়ালই করতে পারল না। সহযোদ্ধা বন্ধুটি ধরা পড়ল মাইন লাগানোরত অবস্থায়। একদম সাথে সাথে শুরু হল অস্ত্রের আর বুটের আঘাত। মাইনের ভয়ে এরা আর স্থান ত্যাগ করছে না। পরিণিতি নির্ণীত, মুর্হুতেই বুেেঝ ফেলল যোদ্ধা আজগর। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে একটু হালকা করে নিল। তারপর একটু আগে নিজের পোঁতা একটি মাইনের উপর ডান পায়ের সজোরে আঘাত। চোখের পলকে বিকট শব্দে উড়ে গেল সবাই। আমরা যার নাম ধাম কিছুই জানি না, সে মহান মুক্তিযোদ্ধাও!
মৃত্যুকে হৃদয়ে ধারণ করে লাখো তরুণ এভাবেই বাংলাদেশের তরে বলি হয়েছে। দুর্ভাগ্য এই জাতির, স্বাধীনতার মাত্র ৩৯তম বাষির্কীর পূর্বেই সেই কষ্টার্জিত স্বাধীনতার গর্বিত পতাকা খামছে ধরেছে একাত্তরের পরাজিত শকুন!
২.
বাংলাদেশ যার পরতে পরতে উৎসর্গীকৃত মহানমানুষদের রক্তঘামের স্পর্শ। তার বি¯তৃত তেজুড়ে দোল খাওয়া ফসল হেসে উঠে, পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী ছলাৎ ছলাৎ করে বয়ে চলে, কত রং এর পাখিরা স্বাধীনতার গান গাই। কত বধূয়া ভেজা পায়ে শিশির মাড়িয়ে সূর্যকে ডেকে তুলে, কৃষকের হাসিকান্নার আধার এই সোনামাখা মাটি। তবুও কেন এত অবহেলিত, অবদমিত বিশ্ব সভায় বাংলাদেশ? প্রশ্ন মহান মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাদের চোখের সম্মুখে ডুবে যাচ্ছে তাদেরই উদ্ধারকৃত সোনার দেশ! একটা মানচিত্র, একটা জাতীয় সংগীত, আর একটা লাল রংয়ের পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েই কী তাদের দায়িত্ব শেষ! সব চোরদের হাতে রাষ্ট্রমতা দিয়ে তারা তাদের অস্ত্র ফেলে েেত খামারে চলে গিয়েছিল মুক্তির গান গাইতে গাইতে, এরই ফাঁকে দুষ্ট বিভীষণরা পিতার কোলে বসে ধর্ষণ করেছে সাড়ে তিন বছরের নাবালক বাংলাদেশকে অতঃপর পিতার এমন অদ্ভুত পতন! বিভীষণরা স্বরূপে ফিরল, রাজাকাররা শয়তানের মত একা একা মিলন করে বাচ্চা ফুটাতে লাগল সারা বাংলাদেশে........ফলাফল মুক্তির যে বারতা আনল যারা আমরা তাদের ভুলে গেলাম। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যের ভার তুলে দিলাম রাজাকারদের হাতে। সেই জোব্বা পরা রাজাকার যে আমার সামনে আমার বোনকে তুরে নিয়ে গেছে, আমার মায়ের সামনে হত্যা করেছে আমার বাবাবে, ভাইকে.......সাড়ে নয়মাস কাঁটা চামচ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ধ্বংস করেছে প্রেমিকার ভবিষৎ। কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বিভক্ত হয়ে গেল যোদ্ধারা নৌকা আর ধানের শীষের শিবিরে- রাজাকারের নাতির সাথে শাদী মোবারক হল জনকের নাতির........ভুলে গেলাম ইতিহাস মতা, আর মতার লোভে আমরা সব হয়ে গেলাম রাজাকারের দোসর। মুক্তিযুদ্ধের কথা আজ নিষিদ্ধ জার্নাল!
৩.
সাধের স্বাধীনতা অর্থবহ হওয়ার পরিবর্তে হয়ে গেল মাঠে ময়দানে মতার শ্লোগান। একদিকে স্বাধীনদেশে যেখানে রাষ্ট্র সবাইকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথা তা না করে বস্তি উচ্ছেদের নামে লাখো মানুষকে রাস্তায় ঘুম পাড়ানির গান শোনাচ্ছে, অন্যদিকে বস্তি উচ্ছেদ করে টাউট, বাটপারের দল হাউজিং ব্যবসার নামে প্লট, ফাটের অবৈধ ব্যবসায় মেতে উঠেছে, একদিকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে একটু ঘুমানোর জন্য মানুষ হন্য হয়ে ঘুরছে অন্যদিকে রাজনীতির নীতিবিবর্জিত খেলায় অংশ নিয়ে ধূর্ত খেলোয়াডরা বিশাল বিশাল ফাটের এসিরুমে ওয়াইন আর নারী নিয়ে রাত কাটাচ্ছে। অনেক আগে জনক একবার দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিল সবাই পাই সোনার খনি আমি পাইছি চোরের খনি। সেই মহাচোররা বৃত্ত বৈভবে বড় হয়ে ডাকাত হয়েছে এখন। তাদের ডাকাতি আর লুটপাটের ফলশ্র“তিতে আজ বস্তি বাড়ছে, যৌনদাসে পরিণত হচ্ছে হাজারো মা-বোন- সাধারণ মানুষ আজ দলিত মথিত।
মধ্যবিত্ত নামের একটা সমাজ ছিল একসময় যারা সমাজ পরিবর্তনে মুর্খ্য ভূমিকা রাখতো। রাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্য সবার আগে যারা জীবনবাজি রাখত আজ সে মধ্যবিত্ত নামে কোন শ্রেণীর অস্তিত্ব বাংলাদেশে আছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ উদ্রেক। উচ্চবিত্ত আর নিুবিত্তের ছড়াছড়ি কালে মধ্যবিত্ত সব হারিয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। উচ্চ আর নিুের মধ্যে এত এত তফাৎ সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক বছরে তাদের মধ্যে মধ্যবিত্তের স্থান খুঁজে বেরা করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য। টিন থেকে বন্য হরিণ কিছুই বাদ রাখেনি এইসব উচ্চবিত্ত তথা চাটার দল। এরাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে তাদের রক্তঘামে প্রতিষ্ঠিত দেশে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নামক ভিার ব্যবস্থা করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা সবাই জীবনসায়াহ্নে এসে সেই অপমানও সহ্য করছে মতা আর প্রতিপত্তির ভয়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের সম্মুখে রাজাকারের গাড়িতে পত্পত্ করে উড়েছে লাল সবুজ পতাকা। মার্চ আসলে কেবল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মাঠঘাট গরম করে রাখি, তারপর সব ভুলে রাজাকারের গাড়িতে বসে এক সাথে ওয়াইন গিলি। সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র বাংলাদেশ!
৪.
এক ঈশপের আধুনিক গল্প
অতীতঃ কৃষক ও সাপ
পথের ধারে পড়েছিল এক সাপ, শীতে জমে হিম হয়ে আছে। একজন দয়ালু কৃষক সাপটাকে দেখে কাপড় জড়িয়ে কোলে তুলে নিল। সাপটা উষ্ণতায় প্রাণ ফিরে পেয়েই ছোবল দিল কৃষককে। যন্ত্রণায় ছটফট করে মারা গেল দয়ালু কৃষক।
সারকথা ঃ দুষ্টলোককে উপকার করতে নেই।
আধুনিকরুপ ঃ বাহাত্তর সালে পথের ধারে আটকা পড়েছিল এক সাপ। ভয়ে আতংক হিম হয়ে আছে। একজনের মায়া হল সাপটাকে দেখে তাকে তুলে মুক্ত করেদিল, মুক্তি পেয়েই সে ছোবল দিল লোকটাকে। লোকটা যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বলল, কে? তুমি কে?
সারকথা ঃ বিনা বিচারে যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি দিতে নেই।

৫। এমনতো কথা ছিল না। কথা ছিল একটা মুক্ত স্বদেশের পতাকাতলে হাত দুটি দু’পাশে ছড়িয়ে দিয়ে মুক্তবিহঙ্গের মত উড়তে থাকব। প্রতিটি পথের বাঁকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আমাদের অভিবাদন জানাবে। বাঁশবাগানের মাথার উপর যে চাঁদ উঠবে তার আলো লুটিয়ে পড়বে আমাদের উঠোনে, আমাদের সবার আকাশের তলে ছাউনী থাকবে, পেটের ভেতরটা পাথর না হয়ে ভাতে পূর্ণ থাকবে, বধূয়ার চোখে জলে পরিবর্তে সুরমাটানা থাকবে........আমাদের বংশধররা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে প্রতিদিন শ্রদ্ধা জানাবে এই মাটির গভীরে শুয়ে থাকা চিরঞ্জীব মহানমানুষদের।
হয়নি, সব বৃথা গেছে। ভাইয়ের রক্তের সাথে বোনের অশ্র“জল মাটিতে কেঁদে মরছে। কেন এমন হল? কারা আমাদের পূর্ণ ঘর শূন্য করেছে? না কোনে ভিনগ্রহের এলিয়েনরা নয়, আমি, আপনি, আমরা সবাই যৌথপ্রচেষ্টায় তিলতিলে শ্মশান বানিয়েছি প্রিয় দেশটাকে। এক একজন একটা একটা দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি এই দুনীর্তির মৃত্যুকূপ.......
বাংলাদেশ জ্বলছে.........কোথায় পাব শান্তজল..........জেগে উঠ একাত্তর......জেগে উঠ মহান যোদ্ধার দল।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×