somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচিনপুরে কিছুক্ষন

১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর তিনেক আগের ঘটনা। কোন এক ঈদের দিন। বাপের বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি।।চরম মাঞ্জা মেরেছি। চোখে ভাবের সানগ্লাস। সাথে আছে দুই সমবয়সী চাচাত ভাই।মঞ্জুর এবং আসাদ ।
হাতে ব্যপক প্লান। আমাদের আত্নীয় স্বজনের সংখ্যাও মাশাল্লাহ !
আমাদের আজকের টারগেট হল, লতায়পাতায় জড়ানো যেসব কুটুম আছে শুধুমাত্র তাদের বাড়িতেই হাজির হওয়া।
একটা করে টারগেট ফিক্স করছি এবং সেখানে গিয়ে ঈদের খাওয়া দিচ্ছি। মানুষকে ভড়কে দেয়ার মধ্যে একটা মজা আছে।

আসল ঘটনা ঘটেছিল চতুর্থ কুটুম বাড়িতে।
যাচ্ছি অতি দুরসম্পর্কের এক খালার বাড়িতে।আমাকে সে চিনে না। কিন্তু আসাদকে চিনে।
খালার নাকি জটিল একটা মেয়েও আছে ! এই মেয়ের সাথে আসাদের নাকি কি জানি একটা ব্যাপার-স্যাপারও আছে। দেখা যাক কি হয় ?
সে এক প্রত্যন্ত প্রান্তিক গ্রাম। একদম পদ্মার পাড়ে। কুষ্টিয়া এবং পাবনার মাঝামাঝি একটা জায়গা।ধূ ধূ চর এলাকা, মানুষজন খুব কম।অনিকেত প্রান্তর বলতে যা বোঝায় ঠিক সেইরকম।এক পাশে পদ্মার হাতছানি আরেক পাশে মাইল-কে-মাইল মাস-কলাই, মটর ফল আর বাদামের সারি সারি ক্ষেত। বহু দূরে তাকালে আবছা অনেকগুলো গাছের সারি দেখা যায়।শক্ত ঢিলের মাঠ, তার পাশে ঘন আখের ক্ষেত। মহিষের গাড়ি নিয়ে গাড়িয়াল ভাই দূর পদ্মার চরে ছুটে চলেছে।তার কন্ঠে ভেসে আসছে ভাওয়াইয়া গানের সুর।প্রকৃতি এখানে শান্ত, প্রকৃতি এখানে অবারিত। প্রকৃতির থেকে এই নিশ্চুপ আনন্দ শুধু এখানেই পাওয়া যাবে।

তখন বিকাল হয়ে গিয়েছে।উত্তরবঙ্গের হিম হিম ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।একদম পরিষ্কার আকাশ।ধূ ধূ এই বালির প্রান্তরেরও একটা মোহনীয় আকর্ষন আছে।বহুদূরে প্রায় সান্ধ্য কুয়াশায় ঢাকা কয়েকটা বাড়ি দেখা যায়।আমাদের গন্তব্য সেখানেই। পদ্মার শাখা নদীতে কিছুক্ষন বসে গলা ছেরে তিনজন গান ধরলাম।আমাদের বেসুরো গানের সুর যেন দুরদিগন্তের পথযাত্রী বাদরের দলকে পথহারা করে ছাড়ে।
ঝর্ণার মত স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি।সুর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে জীবনকে অনুভব করার চেষ্টা করছি। জীবনের মধুর স্মৃতিগুলো স্মরণ করার এমন সুযোগ কয়জনের ভাগ্যে জুটবে!আমার খুব ইচ্ছা করে প্রেয়সীর হাত ধরে ঝর্নার মত সচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে সুর্যাস্ত দেখি।

খালার বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা লেগে গেল।অসময়ে কুটুম আসায় তারা বেশ বিব্রতই হলেন।তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।এখন পেটপুজো-টা ঠিক ভাবে হলেই আমাদের আর কি লাগে। আমাদের পাটি পেতে বসতে দেয়া হল।আসাদ খালার সাথে রঙের গল্প জুড়ে দিল।বোঝা গেল ব্যাটা খালাকে ভালই পটিয়ে রেখেছে।হাজার হলেও, ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ।
আমি আর মঞ্জু খালি কাঁচু-মাচু করছি।কখন যে খেতে দিবে?? এদিকে ক্ষিদায় প্রান যায় যায়।
আমরা যে দুজন মানুষ বসে বসে মাছি মারছি সেইটা কেউ খেয়ালই করছে না।আর সেই জটিল খালাত বোনকেও তো দেখা যাচ্ছে না আসে পাশে।শালা ,আজকে আসাদের খবর আছে।

কতক্ষন কেটে গিয়েছে বলতে পারব না। তবে ঘন্টা খানেক হবে হয়ত। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের প্রতি খালার মহব্বত অনেকগুন বেড়ে গিয়েছে।নতুন চাদর বিছিয়ে আমাদেরকে খাটে বসতে দেয়া হল. সেমাই খেতে দেয়া হল।অতি যত্ন সহকারে আপ্যায়ন যাকে বলে।আমার কেমন যেন খটকা লাগতে লাগল।হঠাৎ এত বেশী আদর আপ্যায়ন !
চমৎকার ভাবে রান্না করা গরুর গোস্ত খেতে দেয়া হয়েছে।আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না।বুঝতে পারছি ,Something is wrong, Something is very very wrong.
খালা এক হাতে আমাকে পাখা দিয়ে বাতাস করছেন, আরেক হাতে পাতে গোস্ত তুলে দিচ্ছেন। উফফফফ… আদরের লিমিট ক্রস হয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ খেয়াল করলাম একটি মেয়ে খুব সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে । মাথার চুলে সুন্দর করে বেণী গেঁথেছে।ঠিক যেন আমি হাজার বছরের আম্বিয়াকে দেখছি।শ্যামলা গায়ের রঙ, ছিপছিপে গড়ন।আবছা আলোয় আর তেমন কিছু বুঝতে পারলাম না।

শুধু বুঝলাম মেয়েটা দরজার আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে আর আমাদের খাওয়া দেখছে।আসাদের ঈশারায় বুঝলাম এইটাই হল কথিত সেই খালাত বন।

খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।এমন সময় মাথায় ঘোমটা দিয়ে একটা মেয়ের আগমন।হাতে করে তিন গ্লাস গুড়ের সরবত।খালা তার মেয়ের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন।বিশেষ করে আমার সাথে।ঘটনা এইবার আমার কাছে পরিষ্কার হল।তাহলে, খালা ভেবেছেন আমরা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি।আর আমাকেই কিনা হবু বর মনে করে এত আদর!!! বেচারা আসাদ, ওর আদরটা আমি পেয়ে গেলাম।

আকাশে ফুটফুটে জোৎস্না নেমেছে।বিস্তীর্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক আলোর কোন চিহ্ন নেই।যেন একমাত্র আলোর উৎস এই দশমীর বাকা চাঁদ। কেমন যেন পরাবাস্তবতার একটা অনুভূতি।বহুদুর হতে শিয়ালের ডাক শোনা যায়।বাইকের হেড-লাইট জ্বালাতেই মায়াময় পরিবেশটা কেমন খাপছাড়া হয়ে গেল। তাই ইচ্ছা করেই হেড-লাইট নিভিয়ে দিলাম।তুমুল বেগে প্রচন্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে ছুটে চলেছি।আমার তখন মনে হচ্ছিল বাইক চালাচ্ছি মহাশুন্যে, কোন বাধা নেই, কোন তাড়া নেই, কোন কারন নেই, তবুও আমি ছুটে চলেছি, অচিনপুরে।

সমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:২৬
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×