[লিখাটা মনের জন্য ছিল,ওর সুবর্ণদিন পত্রিকার জন্য।জানি না কি হল! বলল-লাগবে না।এরপর একই বিষয় প্রচ্ছদ রচনা হয়ে এল শিবিরদের কিশোরকণ্ঠ পত্রিকায়!খুব অবাক লেগেছিল!বিরক্তিকর! মন কিছুক্ষণ চিল্লাল। কি করা!হয়ত কাকতালীয়! ব্লগেই পোস্ট করলাম। স্যরি , মন , সুবর্ণদিনের জন্য শুভকামনা....]
বিজ্ঞানীরা প্রাণীদের দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন –যারা উদ্ভিদ খায় তাদের হারবিভরাস বা উদ্ভিদভোজী
এবং যারা মাংস বা গোশত খায় তাদের কারনিভরাস বা মাংসাশী বলে। কিন্তু তোমরা কি শুনেছ মাংসখেকো
গাছের কথা অর্থাৎ মাংসাশী গাছের কথা? বিশ্বাস কর আর নাই কর, এটাই সত্যি, আছে মাংসাশী গাছ।
এশিয়ার লোকজন গল্প করত কলসী গাছের(The Pitcher Plant) কথা। সে গাছের কলসী উজ্জ্বল লাল রঙের মধুর মত মিষ্টি জুস ভর্তি। আর এই মধুর জন্যই আসে পোকা। কলসী গাছের রয়েছে কলসীর মত লম্বা নল, তাই একে দণ্ড কলসও বলে। যখন কোন পোকা গাছের নলের মধ্য থেকে মধু খাবার চেষ্টা করে ,তখনই পা পিছলে পড়ে যায় কলসীর মধ্যে। আর কলসীর মুখে থাকে একটা ঢাকনা। কলসী পোকা ঢোকা মাত্রই দেয় ঢাকনা বন্ধ করে। এরপর কলসীর ভিতরের সেই মধু পোকাকে বানায় গাছের খাবার উপযোগী। আর গাছ খায় পোকার মাংস! এটা গল্প নয়, সত্যি!
আর সানডিউ(Sundew) বা সূর্য-শিশির হলো আরেকটি মাংসাশী গাছ। সানডিউ গাছের পাতায় থাকে চুলের মত কর্ষিকা। কর্ষিকার মাথা থেকে বের হওয়া আঠা চকচকে শিশিরবিন্দুর মত মনে হয়। যখন এ সূর্যশিশিরে পোকারা আকৃষ্ট হয়ে গাছের কাছে যায়, কোন পাতায় বসে, তখন কর্ষিকা থেকে বের হওয়া সুপার গ্লুর মত এই আঠা আটকে ফেলে পোকাদের। পোকারা পালাতে চাইলেও পালাতে পারে না। এরপর কর্ষিকা গুটিয়ে শিকারকে পাতার মধ্যে ঢেকে ফেলে, ঠিক খাঁচার মত। আর পাতা থেকে নিঃসৃত তরল পোকাকে গাছের খাবার উপযোগী করে দেয়। এইতো গেল মাংসাশী গাছ সানডিউ-র কথা।
আর সবচে’ বিখ্যাত মাংসাশী গাছ হলো ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ(Venas’ flytrap) বা মাছি ধরার সুন্দরী ফাঁদ।এর উচ্চতা প্রায় এক ফুটের মত। আমেরিকার উত্তর-দক্ষিণ ক্যারোলিনার সামুদ্রিক এলাকায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের তিন থেকে ছয় ইঞ্চি বড় পাতা রয়েছে, যা দুই অংশে বিভক্ত (যা দেখতে দুই ভাগে বিভক্ত চোয়ালের মত)। সানডিউ গাছের মত এদেরও রয়েছে চুলের মত কর্ষিকা, তবে মাত্র তিনটি। তবে প্রত্যেক পাতার চারপাশের কিনারায় রয়েছে ছোট ছোট খোঁচা খোঁচা অনেক রোম। যখন কোন পোকা পাতার এক চোয়ালে বসে, তখন পাতার অন্য চোয়ালটা অনুভূতি পাওয়া মাত্র পোকাসহ চোয়ালের সাথে লেগে যায় (এটা ঘটতে মাত্র আধা সেকেণ্ড সময় লাগে)! সেসময় ছোট রোমগুলোও তাদের মধ্যে অন্তঃবন্ধনী গড়ে তোলে। ফলে পোকা ফাঁদ থেকে ছাড়া পায় না। আর পাতার লালাগ্রন্থি থেকে বের হওয়া লাল তরল গ্রাস করে নেয় পোকাটিকে। এরপর আস্তে আস্তে পোকাটিকে খেতে পাতার দশদিন লেগে যায়। পাতা আবার খুলে নতুন শিকারের আশায়। এভাবে সে তিন থেকে চারটি পোকা খেতে পারে। তারপর নিজেরাই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের বেঁচে থাকার জন্য দরকার প্রচুর নাইট্রোজেন। কিন্তু ভেজা মাটিতে এদের জন্ম বলে পোকা শিকার করেই সেই প্রয়োজন মেটায় তারা। ফলে নিজেদের প্রয়োজনই এদের করেছে মাংসাশী করে।
২০০৭ সালে খুঁজে পাওয়া গেছে মাংসাশী গাছের আরও তিন প্রজাতি। আমেরিকার স্টুয়ার্ট ম্যাকফারসন(Steiwart Mc Pherson) ও অ্যালাস্টেয়ার রবিনসন(Alastair Robinson) এবং ফিলিপাইনের ভলকার হেনরিচ(Volker Heinrich) নামের তিন বিজ্ঞানী ফিলিপাইনের মাউণ্ট ভিক্টোরিয়ায় অভিযান চালিয়ে খুঁজে পেয়েছেন মাংসাশী গাছের নতুন এসব প্রজাতি। তারা পাহাড়ের পাদদেশে নিচু ভূমির বনে খুঁজে পাওয়া মাংসাশী গোলাপী ফার্ন আর নীল মাশরুমের মত দেখতে এই গাছগুলোর নাম দেন Nepenthes philippinensis। তারা আরেক প্রকার গাছও শনাক্ত করেছেন, যার নাম দিয়েছেন Nepenthes attenboroughii। এরা শুধু পোকার মাংসই নয়, বড় ইদুরও খেয়ে ফেলে!
তিন বিজ্ঞানীর এই দল মাউণ্ট ভিক্টোরিয়ার চূড়া পর্যন্ত চষে অতর্কিতই মুখোমুখী হয়েছিলেন এক বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মাংসাশী গাছের।Nepenthes deaniana নামের এই মাংসাশী গাছটির শেষ চিহ্নও ১৯৪৫ সালে শুষ্ক উদ্ভিদের সংগ্রহশালায় আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আবার এই মাংসাশী গাছেরও দেখা পেলেন। কী বিশ্বাস হচ্ছে না!
এখন বিজ্ঞানীদের ধারণাও পাল্টে যাচ্ছে। তারা বলছেন পরিবেশে টিকে থাকার জন্যই এসব মাংসাশী গাছের জন্ম হচ্ছে।এরপর হয়ত প্রাণীদের মত করে উদ্ভিদদেরও দুই ভাগে ভাগ করতে হবে, কে জানে! আমরা যখন প্রকৃতির কাছে যাই তখনই বারবার খুঁজে পাই নতুন কোন প্রজাতি, নতুন কোন প্রাণ। প্রকৃতির সাথে তাল মেলাতেই বিবর্তিত হয়ে এদের জন্ম, কী বলো, ভাবতে হবে।ভাবতে হবে আবার করে বিবর্তনবাদ।