somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পর্কের রসায়ন

১২ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্পর্কের রসায়ন

মানুষে মানুষে সম্পর্ক এক জটিল রসায়ন। এ যেন এক অচেনা বৃত্ত। এই বৃত্তের অস্তিত্ব আছে কিন্তু নির্দ্দিষ্ট কোন পরিধি নেই। আর যদি’বা পরিধি খুঁজে পাওয়া যায় তবে সেটাকে পরিমাপ করা কঠিন। সম্পর্কের চুলচেঁড়া হিসেব-নিকেশ ও বিচার-বিশ্লেষণ অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার। সম্পর্কের রসায়ন কোন্ সূত্রকে মেনে চলে বা কো্‌ সূত্রের উপর নির্ভরশীল, সেটা সঠিকভাবে জানতে হলে সবার আগে একজন মানুষকে জানতে হবে। মানুষের মনকে জানতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে একই বৃত্তে অবস্থানরত কিছু সম্পর্ক একই সূত্রে গাঁথা মনে হলেও সম্পর্কের সূক্ষ্ম রসায়নে তা একে অপরের পরিপূরক নয়। তাই মানুষের কাছে যে সম্পর্কটা সহজ বা স্বাভাবিক বা যে সম্পর্ক একজনের পক্ষে অতিক্রমযোগ্য, বৃত্তের বাইরের একজনের জন্য সেই সম্পর্ক অসম্ভব বা অনতিক্রম বলে মনে হতে পারে। অনেকেই তার চিরচেনা বৃত্তের গন্ডি থেকে বাইরে যেতে পারেনা, আবার অনেকে অচেনা কোন বৃত্তের বলয়ে প্রবেশ করতে পারেনা। পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো হয়তো এই একই কারণে এক ও অনন্য সত্ত্বার অধিকারী। রাসায়নিক বিক্রিয়া বা পারমাণবিক বিষ্ফোরণ ছাড়া কোন ভাবেই তাদের বিভাজন বা তাদের সত্ত্বাকে আলাদা করা সম্ভব নয়। এককভাবে তারা অনন্য। তাই ভাঙ্গতে বা গড়তে গেলে সেটা অন্যরকম কিছু বা অন্যকিছুতে বদলে যায়।

মানুষের সম্পর্কের রসায়নটা হয়তো সেরকম একটা কিছু। নিজের একক ভাবনায় যা কিছু চিরাচরিত ও শাশ্বত বলে মনে হয় অন্যের কাছে তা ব্যতিক্রম হতে পারে। আবার যৌথভাবে বা সামগ্রিকভাবে সবার ভাবনাকে একত্রিত করলে সেটা আবার অন্যরকম রূপ নেয়। একটা জীবনের সাথে আরেকটা জীবন যুক্ত হলে তাদের মৌলিক ভাবনা ও সম্পর্কগত রসায়নে কিছুটা পরিবর্তন আসে। আবার দুজনের মাঝে ভিন্ন কোন সত্ত্বা বা তৃতীয় কোন ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটলে সেই সম্পর্কের রসায়ন বা সমীকরণ হঠাৎ বদলে যেতে পারে। দুজনের মাঝে এই যে অন্য কারো অনুপ্রবেশ সেটা তৃতীয় এক মাত্রায় রূপ নিতে পারে। মানব মনের এমন বিচিত্র রসায়ন কোন পরীক্ষাগারে নিপূণভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে- এই দুটো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক এমনটাই হবে কিংবা কারো প্রত্যক্ষ প্রভাবে ঠিক এতোটাই বদলে যাবে অথবা কারো প্রভাব যদি না’ও পরে তবে তা ঠিক আগের মতোই রয়ে যাবে। না, সেটা হবার নয়- সেটা বলাও সম্ভব নয়।

মানব মনের সম্পর্কগুলো বড্ড জটিল। কোন সম্পর্কই গবেষণাগারে পরীক্ষা করে নিরূপণ করা সম্ভব নয় তার সঠিক স্বরূপ। বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় সম্পর্কজনিত আকর্ষণ বা টানাপোড়েন। সম্পর্কজনিত ঘনিষ্ঠতা বা বিভেদের মূল কারণগুলো কী। ল্যাবে যেমন কোন অজানা সল্টকে জানার জন্য নির্ধারিত কোন এসিড বা রাসায়নিক উপাদান দ্বারা নানাবিধ বিক্রিয়া ঘটানো হয়- মানুষের সম্পর্কের বেলায় তেমন কোন সল্ট-টেস্টের ব্যবস্থা নেই বা করার প্রয়োজন হয়না। পৃথিবীতে এমন কোন রাসায়নিক পদার্থ বা এমন কোন এসিড বা এমন কোন রিএজেন্ট নেই যার বিক্রিয়ায় নির্ধারণ করা যেতে পারে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বা মনের সাথে মনের সম্পর্ক কেমন হবে। সবকিছুই অনুমানসাপেক্ষ। সুতরাং বৃত্তের ভেতরে কিংবা বাইরে যে অবস্থানেই মানুষ থাকুক না কেন তার আচরণগত বৈশিষ্ট বা মানবিক প্রকাশ বা মানসিক ভিন্নতা কিংবা সম্পর্কের ওঠানামা কেমন বা কতটা হবে তা বলা মোটেও সম্ভব নয়। বলা সম্ভব নয় বলেই একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের সম্পর্ক কতটা টেকসই বা ভঙ্গুর, কতটা অম্ল বা মধুর, কতটা বিশ্বস্ত বা অবিশ্বাসী, কতটা সন্দেহমুক্ত বা পরিচ্ছন্ন মনের হবে তা শুধু অনুমানই করতে পারি, সিদ্ধান্দ দিতে পারিনা। আর এই সম্পর্কগত বিচার বিশ্লেষণের জটিলতার কারণেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে হয়। মানুষ ব্যতীত কোন প্রাণীর মধ্যে মনোগতভাবে এমন জটিল ধরণের টানাপোড়েন নেই বলেই চলে।

অত্যাধুনিক কলাকৌশল ও শ্রম বিনিয়োগ করে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রযুক্তি ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে, সব রকমের মানবিক গুনাবলী সংযোজন করে যদি একটা রোবট তৈরী করা হয় তবে সেটা মানবিকতার প্রকাশে বা সংবেদনশীলতায় কখনোই মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেনা। পৃথিবীর এ যাবৎকালে শ্রেষ্ঠ অমরপ্রেম কাহিনীর চরিত্রগুলোর বিষদ বর্ণনা ও বৈশিষ্ট, গভীরতম ভালবাসার পর্যাপ্ত পরিমানে মাইক্রোচিপস্, সেই রোবটের শরীরে বসিয়ে দিলেও সে তার বিচার বুদ্ধি দিয়ে তার নিজের জন্য একজন বিশ্বস্ত মনের মানুষ খুঁজে বের করতে পারবে না। কারণ তার মন বলে কিছু নেই, আর এই মনেই সৃষ্টি হয় যত প্রেম-ভালবাসা। মানব মনের এই জটিল রসায়ন বুঝতে হলে একটা মন অবশ্যই থাকা দরকার। পৃথিবীর কোন ডাক্তার বা বৈজ্ঞানিক পর্যন্ত আজ মানুষের দেহের ভেতর মনকে আবিস্কার করতে পারেনি অথচ প্রতিটি মানুষ স্বীকার করে তাদের মন বলে কিছু একটা আছে। বিধাতা নিজেও মানুষের মনের রহস্য বুঝতে পারেন কিনা ভাবতে হয়। বিধাতার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষ হলেও মানুষের মন তাঁর সৃষ্টি বিষয়ক মহাপরিকল্পনার অন্যতম জটিল রহস্য। মানুষের মন তাঁর সৃষ্টির জটিলতম বস্তু (বস্তু বলাটা যদিও ঠিক নয় নয়, কারণ এর কোন আকার, ওজন, অবস্থান নেই- শুধু উপলব্ধি আছে)। অথচ এই মন মানুষের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়, এর নির্দিষ্ট কোন অবস্থান নেই। তবুও সে আছে। আর মানুষের কঠিনতম সাধনা হলো সেই মনের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা। যে মানুষ নিজের মনকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারে- সেই মানুষই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে। আর এই কারণেই মনে হয় মেডিটেশন বা ধ্যান মানুষের মনে প্রশান্তি অর্জনের একটা দিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তাই সর্বক্ষেত্রে মনকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল জানা প্রয়োজন। মন আয়নার মতো- যে যখন এই মনের কাছে আসে তখনই তার ছায়া পড়ে, চলে গেলে আবার তা মুছে যায়। মানুষের সাথে যত সম্পর্কের রসায়ন গড়ে তোলে এই মন। মানুষের যত ভাললাগা, মন্দলাগার পেছনেও রয়েছে এই মন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ২:৩৭
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×