somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলেজ

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলেজের কথা লিখতে গিয়ে দেখছি সে সময়টা কেমন যেন হুস্‌ করে কেটে গেছিলো!
উচ্চমাধ্যমিকের পর কিছুদিন পি.ডি. কলেজে ক্লাস করি। সত্যি বলতে মেয়েদের কলেজ হলেও ওখানে কি একটা চাপ চাপ ব্যাপার ছিল। কিছু মেয়ে প্রচন্ড সিরিয়াস! সারাদিন পড়া পড়া। আবার কিছু সাজগোজ নিয়েই আছে! আর কলেজ থেকে বেরলে মনে হবে ছেলেদের মেলা! লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে!

সেদিক দিয়ে আনন্দচন্দ্র কলেজে এসে বেশ ভাল লাগলো।
মনে আছে, প্রথম কিছুদিন আমাদের আবার শাড়ি পরতে হচ্ছিল। সেটাও একটা মজা। প্রতিদিন নতুন নতুন শাড়ি পরে হোঁচট খেতে খেতে কলেজ যেতাম। কারণ কলেজ বাড়ি থেকে খুব কাছে না হলেও খুব বেশি দুরেও না। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দুরেই শিরীষতলা, তারপর কিছুটা হেটেই কলেজ। রিক্সায় গেলে একটু খুকি খুকি ভাববে বন্ধুরা! আবার ওই রাস্তাটা হেঁটে যাতায়াতও কেমন যেন লাগত। মনেহত সবাই বুঝি দেখছে। শিরীষতলায় বাজার মত ছিল।
যদিও শেষে একজন বন্ধু জুটে গেল। আমাদের ক্লাসেরই। তার কথা দিয়ে কলেজ পর্ব শুরু করি। খুব গম্ভীর আর গোঁয়ার টাইপের ছিল ছেলেটি-ইন্দ্র। কোনদিন ক্লাস করত কোনদিন করত না। আমাদের ক্লাসে কোন বন্ধুও তেমন ছিল না। যতদুর মনে হচ্ছে ইকনমিক্সসের দলে ঘুরত। কিন্তু কলেজ থেকে ফেরার সময় ঠিক আমার সাথেই ফিরত। সারা রাস্তা আমিই কথা বলতাম। শিরীষতলা পেরিয়ে ফাঁকা সুন্দর পথটুকু আমি চলে আসতাম। শিরীষতলার গলিতেই ইন্দ্র থাকত।

কলেজে মানে বাধাধরা ক্লাস করার কোন চাপ নেই, এটা বেশ ভালই বুঝে গেলাম। তবু ক্লাস করতাম কারণ প্রধান কারণ ছিলেন AP। ওনার ক্লাসে অন্য ডিপারমেন্টের ছেলেমেয়েরাও ভিড় করে থাকত। বিশাল ঘরে বসার যায়গা থাকত না। বাইরের ছেলেরা সব দাঁড়িয়ে থাকত। স্যার ছন্দের ক্লাস নিতেন।
এখনও চোখের সামনে যেন ভাসছে! উনি ‘কৃষ্ণকলি’ আবৃত্তি করছেন, ক্লাস নিস্তব্ধ। আমার তো শুনতে শুনতে নিজেরই ওরকম কৃষ্ণকলি হতে ইচ্ছে করতো। পরে বন্ধুদেরও দেখেছিলাম একই অবস্থা!

স্যারের কোয়াটার কলেজ়ের সামনেই ছিল। আমরা বেশ ক’জন ওনার কাছে পড়তে যেতাম। টাউন থেকে কিছু আসত। ময়নাগুড়ি থেকে অনেকে আসত। কলেজ কোয়াটার বেশ সুন্দর ছিল। পড়তে যে খুব ভাল লাগত তা না। ফেল করলে ভাইবোন ধরে ফেলবে তাই এতদিন পড়তাম। কলেজ়ে শুনলাম প্রথম বছর এমনিই উঠিয়ে দেবে। তবু পড়তে যেতাম স্যারের জন্য।

এর আগে পেয়েছি অমিতদাকে। প্রচন্ড শাসনে রাখতেন।
আর AP কেমন উদাস টাইপের মনে হত, সে জন্য কষ্টও হত। ওনার জলপাইগুড়িতে বোধহয় তেমন ভাল লাগত না। প্রায়ই ছুটিতে যেতেন। শুনেছি উনি শান্তিনিকেতনের ছাত্র। ওনার স্ত্রীকে কাকিমা বলতাম। দু’জনেই শান্তিনিকেতনে পড়তেন।
ওনাদের ছেলে একদম APর ডুপ্লিকেট। গায়ের রঙ যা পরিষ্কার। সে হোলি চাইল্ডে ক্লাস ওয়ানে পড়ত। স্যার শ্যামলা লম্বা গড়নের ছিলেন। খুব শান্ত! রাগলেও বোঝা যেত না।

স্যারের কথা শুনবো বলে যেতাম বটে, তবে একটা জানলার উল্টোদিকে বসে বেশ কিছুক্ষণ পড়া শুনতে শুনতে বোর হয়ে বাইরে তাকিয়ে গাছ, পাখি এসব লক্ষ্য করতাম। আমরা একটা চৌকি ঘিরে বসতাম।
স্যারের পাশে উমা বসত। বেশ সুন্দরী আর সব পড়া করে আসত। স্যার কারো দিকে তেমন তাকাতেন না। আপন মনে পড়াতেন।
তবু মাঝে মাঝে একবার আমার নাম ধরে ডাকলে আবার ঘরের মাঝে আসতেই হত।

মনেপরে অফপিরিওডে আমরা গাছেরতলায় বসে গুলতানি করছি। স্যার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওমনি আমায় ডেকে নিলেন-কি যে ভাল লেগেছিলো! যদিও উনি কি একটা দরকারি কথা সবাইকে বলে দিতেই ডেকেছিলেন।
তবু! আমরা মেয়েরা APকে নিয়ে সারাদিন আলোচনা করতাম। তাতে ছেলেগুলো বেশ টিটকিরি মারত। স্যার নাকি বুড়ো! মোটেও স্যার বুড়োটে ছিলেন না। ওনাকে অনেকটা সত্যজিৎ আর শ্রীকান্ত আচার্যের মাঝামাঝি লাগতো।
আর APর চোখে কি একটা ছেলেমানুষি সারল্য ছিল। ফিজিক্সের স্যার ওনার পাশেই থাকতেন। বেশ স্নেহ করতেন। একদিন দেখি উনি APকে বলছেন- কি বসন্ত তো এসে গেল, কবিতা লিখবে তো! শুনে APএকটু লজ্জাই পেলেন। তারপর দু’জনে হো হো করে হাসছিলেন।

একদিন আমি আর সম্পা রিক্সা করে টাউনে যাচ্ছি। সামনে উল্টোদিক দিয়ে হেলমেট মাথায় কে যেন দেখতে দেখতে গেল। পরে দেখি ওমা! এতো আমাদের AP! হা…হা…হাঃ, খুব মজা লেগেছিল।

সত্যি বলতে AP হচ্ছেন আমার দেখা প্রথম সুপুরুষ। মাঝে মাঝে সবাই ওনার ওখানে আড্ডা মারতাম। কে কি পড়ি এসব জিজ্ঞেস করলেন। আমাদের বাড়িতে অনেকদিন ধরেই আনন্দমেলা নেওয়া হয়। শুনে উনি গম্ভীর ভাবে বল্লেন এবার থেকে ‘দেশ’টা রাখ। আমিও বাড়ি এসে পাপাকে বলে ব্যবস্থা করলাম। খুব যে ভাল বুঝতাম, তা নয়। তবু পড়তাম। বইমেলার আগে উনি কিছু বই কিনতেও বলেছিলেন।

উনি হঠাৎ চলে গেলেন। কিন্তু দায়িত্ববোধ খুব ছিল। পরীক্ষার আগে আমাকে আর উমাকে ঠিক সাজেসন পোস্টে পাঠাতেন। উমা আমাদের মধ্যে টপার ছিল। AP উমাকে আগে চিঠি দিয়ে পরে আমায় লিখেছিলেন।

যদিও উনি হঠাৎ করে যাবার পর কেউ আমাদের পড়াতে চাইলেন না। অনেক বলে একজনের কাছে সবাই ম্যানেজ করল। কিন্তু প্রথমদিনই উনি এমন ধরনের একটা ঠাট্টা করলেন যে APর স্থানে ওনাকে আর বসাতে পারলাম না। আমি আর সম্পা কারো কাছেই আর গেলাম না। শুনে পরেরবার AP আবার সাজেসন পাঠান। আমি আর সম্পা ওনাকে পয়লা বৈশাখ, টিচারস ডে’তে কার্ডও পাঠাতাম। আমাদের সেই চোদ্দ-পনেরোজন সবার নাম লিখে। উনি নিশ্চয়ই সে সব দেখে মুচকি হাসতেন।

আমাদের পরিতোষ নামে একটি বন্ধু ছিল। সে আবার ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সাথেই বেশি মেয়েলি গল্পে মেতে থাকত। সে আবার কি একটা পরীক্ষা দিতে বীরভূম গেল আর ঠিক খুঁজ়ে খুঁজ়ে দু’রাত স্যারের ওখানে কাটিয়ে এলো। স্যার এবং ওনার স্ত্রী খুব খাতির যত্ন করেছিলেন।

AP গেলেন আমারও পড়ার সখ মিটলো। তখন ছারা গরু টাইপ অবস্থা! কলেজ়েও নতুন সব প্রফেসর জয়েন করলেন।

তনুদি যেদিন আমাদের ক্লাস নিতে এলেন সে দিনের কথা স্পস্ট মনে আছে। সবাই এদিক ওদিক আড্ডা দিচ্ছে। শীতকাল। একটি মেয়ে সাধারণ একটা কাঁথাস্টিচের শাল গায়ে দিয়ে ঢুকছে। কেউ খেয়ালও করেনি। উনিই আবার ডেক্সের উপর উঠে ডাস্টার পেটাতে শুরু করলেন। সবাই অবাক! ইনি আমাদের নতুন প্রফেসর। এরকম চারজন নতুন এলেন। বন্ধুর মত হয়ে গেলেন।

আমি আর সম্পা তনুদির নতুন ফ্লেটে আড্ডা মারতাম। উদ্দেশ্য যদিও পড়া। আমিতো ওনার নতুন নতুন বিদেশী বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেতাম। উনি একা থাকতে খুব ভয় পেতেন। কিছুদিন পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবার তনুদির মা আর ভাইও এলো। আমি তনুদির মার সাথে আড্ডা মারতাম পাশের ঘরে। তনুদি খুব চ্যাঁচালে ওনার মা আমায় ওনার লেপের মধ্যে আমায় লুকিয়ে নিতেন।

এ সময় খবর পেলাম সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং চলছে। অন্য ডিপারমেন্টে লম্বু ছিল। ওকে নিয়ে সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং নিতে শুরু করলাম।
ওটা শেষ করার কিছুদিন পর খবর পেলাম আসাম রাইফেল থেকে বর্ডারের কিছু সৈনিক এসেছে, তারা হঠাৎ আক্রমণ হলে আত্মরক্ষার জন্য গেরিলা ট্রেনিং দেবে, সেটা নিতেও ছুটলাম।

এবার লম্বু ছারাও সঙ্গে ছিল তপতি ও কুসুম, যাদের কথা আগে বলেছি। সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং টাউনের রবীন্দ্র সদনে হত।
কিন্তু পরেরটা আমাদের আসামমোরের হাইওয়ে ছারিয়েও প্রায় দু-তিন ঘন্টার পথ আর গ্রাম।

প্রথমদিন তো প্রচুর খুঁজে খুঁজে যাওয়া হল। শহর থেকে আমরাই গেছি, বেশ খাতির যত্ন হল। প্রথম ক’দিন আমরা চারজন টাউন থেকে দুটো রিক্সা ঠিক করে যেতাম। ফেরার সময় একটা ছোট বাস ধরতাম।

ওখানে গিয়ে তপতি-কুসুম যেন হাঁপ ছেরে বাঁচত। আমার লম্বুকেই বেশি মনে আছে। খুব দৌড়াদৌড়ি করাতো। ফেরার সময় আমরা চারজন প্রায়ই ঝামেলায় পরতাম। বাস একদিন মিস হল। শেষে অনেক বলে কয়ে শহরে একটা ছোট টেম্প যাচ্ছিল তাতে সন্ধ্যের পর টাউনে ফিরতে পারলাম। বাসের জন্য ট্রেনিং শেষে আমি আর লম্বু দৌড়–ঝাপ করতাম। সেই মওকায় তপতি-কুসুম কোন ঝোপ-ঝারে বসে প্রেম করত। আমরা চ্যাঁচামেচি করে ওদের আনতাম। তারা যেন আর বাড়িই ফিরতে চায় না। সম্পা, লম্বু বা এখানেও সব যায়গায় আমার সাথে যে থাকে সেই প্রায় আমার গার্জেন হয়ে আমায় গাইডে রাখে। কিন্তু ওদের প্রেমের ঠেলায় লম্বুর মেজাজো যখন সপ্তমে তখন আমাকে আসরে নামতে হল। আমি খুঁজে খুঁজে আবার ওদের মাঝে গিয়ে বকবো কি! ওদের দেখেই হেসে মরি! দু’জনে দু’জনের দিকে হাঁ করে কি যে দেখতো ভগবান যানে! তবু শেষ পর্যন্ত আমি আর লম্বু শত বিরক্তি সত্ত্বেও ওদের জুটিকে স্নেহ করতাম। কারণ টাউনে ওদের কি হেনস্থা হত আমরা দুরে থেকেও তার কষ্ট যেন বুঝতাম।

শেষে এমন হল আমার পাপা-যে আমাকে পুর ছার দিয়ে রেখেছিল সেও কোথায় কেন এত দেরি হয় সরেজমিনে দেখতে চললো। সঙ্গে বাপ্পা, লম্বুর বাড়ি থেকে কেউ যায়নি তবে পাপার সাথে বোধহয় কথা হয়েগেল।

সেদিন সারাবেলা পিকনিকই হয়ে গেল। পাশে ছেলেদেরও ট্রেনিং হচ্ছে শুনে পাপা বাপ্পাকেও ভর্তি করে দিল। পরে তপতির ভাইও জয়েন করলো। দু’টো রিক্সা সব সময়ের জন্য ঠিক হল। বাকি বাপ্পা আর তপতির ভাই আমাদের সাথে সাথে সাইকেলে যাতায়াত করত।
দু’দিনের মাথায় তপতি, যে কিনা ছেলে হতে হতে মেয়ে হয়ে গেছে আমার বিশ্বাস সেও বাপ্পাদের সাথে হাওয়া খেতে খেতে বোঁ বোঁ করে সাইকেলিং করে যাতায়াত করতে শুরু করলো। তপতির ভাই দেখলাম দিদিকে প্রচন্ড ভালবাসে। তপতির কথা ভেবে আমার এখনও দুঃখ হয়। কেবল ওর ওই ভাইকে দেখে একটাই শান্তনা যে সে চিরদিন তার খ্যাপা দিদিকে দেখবে।

এদিকে কলেজ়ে অনিয়মিত বলে বেশ বকুনীও খাই। যদিও আমার বন্ধুরা খুব ভাল ছিল। তনুদিরাও খুব সাহায্য করতেন।

এবার কলেজের বন্ধুদের কথা বলি। স্কুলের অনেকেই এলো। নতুনদের মধ্যে যার কথা আগে মনে আসে সে ছিল খুব সুন্দরী। গভমেন্ট স্কুলের মেয়ে। ওই স্কুলে জলপাইগুড়ির সব সুন্দরীরা পড়ে-এটা জনশ্রূতি। তো এর সাথে খুব বন্ধুত্ব হল। ওর সব সমস্যার কথা বলতো। মেয়েটির বাবা একদম উৎপল দত্তের মত রাগী ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওর বিয়ে দিয়ে দিলেন।

এ সময় লম্বুরও বিয়ে হয়ে গেল। তারপর কুসুমের। তপতিকে নিমন্ত্রণও করেনি। যদিও তপতি আমাদের কলেজে এসে কুসুমের কষ্টের গল্পই করত। পর পর সব হচ্ছিল। কেউই ফাস্ট ইয়ার সে ভাবে শেষ করতে পারল না।

তো আমার এই বন্ধুটি খুব মনকষ্টে ছিল। একে দেখলে আমার রাধার কথা মনে হত। তেমনই কোমল! খুব আস্তে আস্তে কথা বলত। একটি ছেলেকে ভালবাসত। সে দার্জিলিংএ জিওগ্রাফি অনার্স নিয়ে পড়তো। সমবয়সি। ছুটিতে কলেজ়ে পরিচয় হল। এক-একজন মানুষ আছে যাদের চোখ সব সময় হাসে। ছেলেটিও তেমনি ছিল। দু’জনেই জানত পরস্পরকে পাবেনা। আমার ভেবেই খারাপ লাগতো।

এদিকে কিছুদিনের জন্য ও কলকাতায় এলো। উঠলো ওর মায়ের বান্ধবীর বাড়ি। সঙ্গে কাকিমাও ছিলেন। কাকিমার বান্ধবী ও তার ছেলের আবার ওকে খুব পছন্দ হয়ে গেল। ও জলপাইগুড়ি এলো। এবার কতো চিঠি কলকাতা থেকে আসতে লাগলো। ওর মারও সম্বন্ধটা পছন্দের ছিল। কলকাতার ছেলেটি বোধহয় গানের জগতে যুক্ত, আমাদের চেয়ে কিছু বড় হবে। কি সুন্দর সুন্দর গানের ক্যাসেট পাঠাত! কেনা নয় কিন্তু! সব নিজের সংগ্রহ। ও সব আমায় শুনতে দিত। একটা খুব সুন্দর পিয়ানোর কম্পোজিসন শুনেছিলাম, সেই প্রথম মনে আছে। শেষে ও-ও একটা বিশাল চিঠি কলকাতায় পাঠালো। আমাকেও পড়ালো। সে চিঠি পড়ে দাদাটাও জলপাইগুড়ি চলে এলো। ওরা বাঁধে ঘুরতেও গেল। দাদাটা সব শুনে বলেছিল কোনদিন যদি কোন দরকার পরে যেন তাকে জানায়। শেষে এক ব্যাঙ্ক অফিসারের সাথে যদিও কাকু ওর বিয়ে দিয়ে দেন।

এই বন্ধুটি, AP সবাই যাবার পরে পরে যখন বেশ মনটা একটু ভার ভার তখন আমাদের ডিপারমেন্ট থেকে পিকনিক হল। অন্য বিভাগের ছেলেমেয়েরাও গেল। বিশাল লড়িতে যাওয়া হল। গাড়িও ছিল। তাতে প্রফেস্রররাই গেলেন। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে সেই গাড়ি গেল। আর ওভাবে যাবার জন্য পরে বকুনী খেলাম।
কিন্তু খুব মজা হয়ে ছিল। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। আমাদের গ্রুপে নির্মল কেবল ক্যামেরা নিয়ে যায়। আর ফটো তোলা নিয়ে হুরোহুরি! আমিও বেশ মুটকি, তবু টুম্পাটা আর একটু বেশি হওয়ায় ইচ্ছে করে সবাই ওর হাতে কিছু না কিছু খাবার ধরিয়েই দিচ্ছিল ছবি তোলার সময়। তখন তো বুঝিনি! এবার ছবিগুলো দেখেতো আমরা হেসে বাঁচি না! সব কটা ছবিই ওর অদ্ভূত ওঠে। তাই দেখে ওর কি কাই মাই! হা…হা, সে সব দেখলে এখনো হাসি পায়।

লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। এবার শেষ করি সেই ইন্দ্রকে দিয়েই। সমবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি ম্যাচিওর হয়ে যায় মনে হয়। তাই আমার ক্লাসের সব ছেলেকেই কেমন ছেলেমানুষ গোছের লাগত। তেমন শক্তগোছেরও কেউ ছিল না, এক এই ইন্দ্রটা ছারা। তো এও বেশিদিন ক্লাস করলো না। কোথায় চলে গেল।

AP থাকতেই একবার বড়দিনের দিন ভোরবেলা আমরা চার্চ থেকে ফিরছি ঠিক সে সময় ইন্দ্রও ওর এক বন্ধুর সাথে বোধ হয় চার্চে যাচ্ছিল। আমাকে বাড়ির সামনে দেখে কি মনে হল বললো চল তোর বাড়ি যাবো। কিন্তু সে মুহুর্তে আমার কিছু অসুবিধে ছিল ওদের বাড়িতে আনার, কিন্তু ও তা শুনবেই না। ছেলেমানুষি গোঁ ধরলো। আমারও রাগ উঠে গেল। মাঝখান থেকে ওর বন্ধুটা ফাঁপরে পরে গেল। ও আমাদের পাড়ারই ছেলে। তো শেষ পর্যন্ত ইন্দ্র খুব রাগ করে ফিরে গেল।
পরে অনেকবার আমার অসুবিধে কি ছিল বোঝাতে গেলাম, শুনলো না। আমি যানি ও অন্য ধরনের ছিল। অন্য ক্লাসমেটদের মত নয়। কিন্তু এত একগুয়ে ছিল! ওর কথা এখন সে ভাবে কারো মনেও নেই। সম্পারা মনেই করতে পারে না!

একদিন ক্লাসে দেরি করে ঢুকছে, AP কি একটা বুঝিয়ে বলতে গেলেন। ওমনি রাগ করে ক্লাস থেকেই বেরিয়ে গেল। তারপর ক্লাস আর করছেই না। অন্য ক্লাসে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করতে গেলে উত্তর দেয় না। পরে কলেজও ছেরে দিল। ইকনমিক্স ডিপারটমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেল বাইরে কোথায় চলে গেছে। অদ্ভূত এক বন্ধু ছিল এই ইন্দ্র!

(সকল চরিত্রের নাম পরিবর্তন করা হল)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৫৭
২০টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×