somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ-প্রিয় ঋতু হেমন্ত আর আত্মস্বীকৃত খুনীগো বিচারের অজুহাত...

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মা যখন সংসার ধর্ম পালনে ব্রতী হওনের লেইগা স্কুল মাস্টারী ছাড়লেন তখন থেইকা জীবনানন্দ নামের এক কবির লগে পরিচয় ঘটলো। চাকরী স্থলে ছাত্রীগো আয়োজনে দেয়া এক ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে তারে খান ব্রাদার্স প্রকাশিত জীবননান্দ দাশের কবিতা সংগ্রহ উপহার দেওয়া হয়। নিতান্তই বালক আমি সেই থেইকা সবুজ মলাটের বইটারে আকড়াইয়া বড়ো হইছি। আমার মা'রে সর্বক্ষণ কাছে পাওয়ার সমার্থক হইয়া উঠছিলো এই বই। স্বার্থপর বালক আর কি ভাবতে পারে ক'ন!

সম্ভবতঃ রনেশ দাসগুপ্ত সেই সংগ্রহের একটা ভূমিকা লিখছিলেন। সেই ভূমিকায় তিনি একটা বড় অংশ উৎসর্গ রাখছিলেন হেমন্ত ঋতুরে। যেমনটা ফিরা ফিরা আসে জীবনানন্দের কবিতায়। শৈশবের সেই বানান কইরা পড়ার ফাকেই আমার প্রিয় ঋতু হয় হেমন্ত; যখন 'হেমন্ত ফুরায়ে যায় পৃথিবীর ভাঁড়ারের থেকে' আমার তখন নিজেরে নিঃস্ব মনে হয়, ক্রমশঃ হতাশাগ্রস্ত হইয়া পড়ি। ভাবতে থাকি 'শীত এসে নষ্ট করে দিয়ে যাবে তারে'। হেমন্তের বিষাদ আমারো প্রাণে বেজে ওঠে।

এমনই এক হেমন্তরে হঠাৎ আমার অচেনা লাগতে শুরু করে। কোথায় কি পাল্টে গেলো তবে? সেই সুন্দর চিরল পাতার মতোন মেঘের সারি কতোটা আয়েশে ভেসে থাকে...নীলাভ হয়ে ফুটে থাকে সরোবর...তবু আজ আমারই নিকট হেমন্ত কেরম ভিন্নতায় ধরা দেয়!

শীতের শব্জী বাজারে উঠতেছে হরদম। প্রকাশের বাড়াবাড়িতে এইসব শব্জীর ফলনের সময়কাল শীত হইলেও আসলে হেমন্তেই শুরু মহার্ঘ্য এই প্রত্যাশার। হেমন্তে কৃষকেরা-আড়তদারেরা-খুচরা বিক্রেতারা শব্জীর সরবরাহ স্বল্পতার সুযোগে যদিও দাম বাড়াইয়া রাখে অনেক। আমরা তবুও কাড়াকাড়ি কইরা সাধ্যের অতীত দামেই একবেলা দুইবেলা ফুলকপি আর সীমের চচ্চরি খাই। হেমন্তে উল্লাস বাড়ে আলোকচিত্রীগো। তারা দলে দলে বাইর হয় আকাশের বিচিত্রতা ফ্রেমবদ্ধ করনের তাগীদে; হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটে। হেমন্তরে নবান্নের মাস কওয়া হয়। সারা বছরের চাইলের একটা বড় সরবরাহ ভান্ডার এই সময়েই গইড়া উঠে...সোনালী হয় বাতাস...মসৃন দোলা খেয়ে ভূমির সাথে তার খেলা...কৃষকের উৎসব চলে দুইমাস...অস্তিত্ব সরব রাখতে পারেন তারা এই সময়...

এমন এক হেমন্তের সমাপনী কালে আমি হঠাৎ শংকিত হই। সপ্তাহের মধ্যবর্তী কালেই। যখন আজ অথবা আগামীকাল সরকার তার নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবো বইলা জানতে পারি পত্রিকা মারফত। এই দুই লাইনের ভাব প্রকাশ একান্তই বালখিল্য হইয়া গেলো। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিম্বা সর্বনিম্ন মজুরী ঘোষণার বিষয়টারে আমি আদৌ বিরোধীতা করতেছি না...কখনোই করতে চাই না। কিন্তু সামাজিক চরিত্রের লগেতো আমারো গা ভেসে চলে স্রোতে...আমিও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনায় ভীত হই। ভাবি জীবনযাত্রার মান লিখিত ভাবে আরো একবার বাড়লো বইলা...

এমনিতেই আওয়ামি লীগের সরকার তাগো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়া স্বভাবজাত আচরণের প্রকাশ ঘটাইতে শুরু করছে। দোষ চাপানো হইতেছে বিরোধী দলীয় ব্যবসায়িগো বা বিরোধী দলের ক্ষমতাকালীন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার উপর। আওয়ামি লীগবর্তী ব্যবসায়িরা এবং সন্ত্রাসীরা আসলে ফারিশতা টাইপ কোন সত্ত্বা। তারা কখনো কোনো অন্যায় করনের ইচ্ছাপ্রকাশও করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লগে সরকারি আমলাতন্ত্রের কোন যোগাযোগ যেনো থাকতে পারে না। এই দেশে কেবল বিরোধী শাসকেরা লেগে আছে ব্যবহার্যের মূল্য বাড়ানের খেলায়। ক্ষমতায় যারা থাকে তারা কেবল সমাধান খোঁজে...

সমাধানও মনে হয় একটা আছে। কয়দিন আগে একজন শেখ পরিবার ঘনিষ্ঠ সাংসদের উপর বোমা হামলা হওনের পর শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তারা সরকারী দলের নির্দেশ মোতাবেক পাইলো শেখ মুজিবের হত্যাকারীগো আত্মীয়স্বজনেরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাইছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীগো বিচার হইলেই কেবল এই হামলার বিচার হইবো। কিছুদিন চললো এরে ওরে ধড়পাকরের খেলা। হঠাৎ তদন্ত কর্মকর্তারা নতুন ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা দেখলেন তদন্তকালে। উন্মোচিত হইলো তরুণ সেনা কর্মকর্তাগো যোগসাজশের কাহিনী। আজকে এই হেমন্তের শেষভাগের খবরের কাগজে দেখলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কইছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীগো বিচার হইলেই কেবল এই প্রবণতারে নস্যাৎ করা যাইবো।

বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাগো হয়তো শুইনা যাইতে হইবো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-বাণিজ্যমন্ত্রী-শিল্পমন্ত্রী-শ্রমমন্ত্রীগো এই অজুহাত কথন। দ্রব্যমূল্য-শ্রমিক অসন্তোষ-রফতানী স্বল্পতা সব হয়তো বঙ্গবন্ধুর খুনীগো ষড়যন্ত্র...'বাকি সব মানুষেরা অন্ধকারে হেমন্তের অবিরল পাতার মতন/কোথাও নদীর পারে উড়ে যেতে চায়'...উড়ে যাবে...
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×