আজ সকাল (১৭ ফেব্রুয়ারী) থেকে শাহবাগ চত্বরে গান গাচ্ছিলাম আমরা। আমি ভোর ৬টার দিকে যখন মূল মঞ্চের মাঝে গেলাম, তখন দেখলাম আরিফ ভাই গান গাচ্ছেন চমৎকার গলায়! আমি আর রনী ভাই সকালে দুটো গান গাইতেই গীটারের তার ছিড়ে গেল। এই ভোরে আর গীটারের তার পাই কোথায়! রনী ভাই মূহুর্তের মধ্যেই কোথা থেকে যেন তার নিয়ে আসল। তারটা লাগাচ্ছিলাম, আবার ছিড়ে গেল! এদিকে মাইকে স্লোগান চলছে। স্লোগান দিচ্ছি আর তার বাঁধছি। আবার শুরু হল গান। আমরা সূর্য সারথীরা আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই গাইছি। আমাদের গান "জেগে উঠো, জেগে উঠি সবাই", এই পথ ছাড়বার নয়, গান আর স্লোগান, শাহবাগ আজ বাংলাদেশের হৃদয় এবং ৭১এর জাগরনী গান গুলো গাইলাম। আমাদের সাথে গাইলো মূল মঞ্চের সব মানুষ। সকাল দশটার আগে আমি যখন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য অন্য কয়েকজনের সাথে কাজ করছিলাম, রনি ভাই তখন ছায়ানটের শিল্পীদের সাথে সুর বেঁধে নিচ্ছিলো "আমার সোনার বাংলা"। এরপর সবাই মিলে গাইলাম আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। একসাথে গাইলো সারা বাংলাদেশ। জাগরনী মঞ্চে আগেও গান গেয়েছি, কিন্তু আজ আমার গানের জীবন সার্থক হল। আমি যদি জীবনে আর কোন গান নাও গাইতে পারি "কোন আফসোস থাকবেনা"। জাতীয় সংগীত গাইবার সময় বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিলো। এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় গান "আমার সোনায় বাংলা", যেমন প্রিয় জায়গা আমার শহর, যেমন প্রিয় আমার মা, আমার প্রেমিকা। আমার হৃদয়ের সকল ভালবাসা দিয়ে গাইলাম এই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর গানটি। গাওয়ার সময় ঠিকই আমার পাশে ছিল আমার প্রেমিকা, আমার মা, আমার প্রিয় বাংলাদেশ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, গীটার, আমার আব্বুর দেয়া জাতীয় পতাকা, আমার প্রেমিকার দেওয়া আমার আরেকটি পতাকা, সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার সমস্ত ঘৃনা আর ক্রোধ। আমার বন্ধুদের অনেকেই তখন শাহবাগে ছিলেন না, কিন্তু আমি জানি তারা এই পৃথিবীর যেখানেই থাকুকনা কেন তখন আমার সাথে এই শাহবাগেই ছিল। বাংলা মা, তোমাকে অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেকঅনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেকঅনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক............অনেক অনেক বেশী ভালবাসি। তোমার বিরুদ্ধতাকারীদের প্রতি আমাদের চির ধিক্কার, তীব্র ঘৃনা থাকবে সবসময়। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতেই হবে, হবেই হবে। ভাই হত্যার প্রতিশোধ নেবই নেব, নাহলে আমাদের বাঁচা হবে কলঙ্কময়। বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার যে দৃপ্ত দৃঢ় শপথ আমরা নিয়েছি তা পালন করেই বাঁচব, নাহলে মৃত্যু চাইবো নিজের। কারন আমরা যদি আমাদের প্রিয় জননী জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত না করতে পারি, তাহলে আমার মা বোন পিতা তাদের প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে নিবে কলঙ্কের বিষ, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে আমার যৌবন-দৃপ্ততা নিয়ে, আমার দেশের মহান মুক্তিযোদ্ধারা, বীর শহীদেরা হয়তো আমাকে ক্ষমা করে দিবেন জানি, কিন্তু আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা কোনদিন। আমি এই আন্দোলনের সাধারন একজন কর্মী, লাখো জনতার একজন। আমার কন্ঠস্বর আজ শুধু আমার একার নয়, এই বাংলাদেশের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের কন্ঠ আজ আমার সাথে মিলেছে, সবার শক্তি এক করে আমি দৃঢ় কন্ঠে বলিঃ আমি সুদিন এনে দিতে চাই বাংলার প্রতিটি মানুষের জন্য, আমি আমার সাপাখি'র জন্য একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন দেশ গড়তে চাই, কলঙ্ক মুক্ত স্বদেশ দেখাতে চাই আমার সন্তান কল্প নীল কে।
আমরা হারবো না প্রিয় জন্মভূমি, তোমার মাটিতে বাঁচার অধিকার অর্জন করে তবেই বাঁচবো
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।
EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে কোকের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানা: ফিলিস্তিনি স্টেইটহুড, স্বনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অসমম্মান করে।
কোকা-কোলার পূর্ব জেরুজালেমের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানাটিকে ঘিরে শুরু থেকেই তীব্র বিতর্ক আছে। এই এলাকাটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
জঘন্যতম রেফারির বলি বাংলাদেশ
আজকে রেফারি খেলছে মূল খেলা। গতকালকে পাকিস্তান লর্ডগিরি করে হারছে কিন্তু এই দিক থেকে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছে। দুইটা ওয়াইড দেয়নি। রেফারি তিনটা আউট দিছে তাড়াহুড়ো করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
পরিপক্ক প্রেম: মানসিক শান্তি
জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পৌঁছানোর পর, মানুষ যখন পরিপক্ক হয়ে ওঠে, তখন প্রেমের মাপকাঠি বদলে যায়। তখন আর কেউ প্রেমে পড়ার জন্য শুধু সৌন্দর্য, উচ্ছ্বলতা, কিংবা সুগঠিত দেহ খোঁজে না।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রবীন্দ্রনাথের শেষ কটা দিন কেমন কেটেছিল?
১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। সারা জীবন চিকিৎসকের কাঁচি থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন, এবার বুঝি আর তা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন