somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচার বনাম রাজনীতি --- আসিফ নজরুল

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচার বনাম রাজনীতি
ড. আসিফ নজরুল
গত এক দশকে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। কিছু কিছু সুপারিশের সঙ্গে অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিক একমত হয়েছেন। এসব বিষয়ে সমাজের কোনো অংশ থেকেই আসলে কখনো আপত্তি ওঠেনি। এমন একটি বিষয় হচ্ছে সংসদে স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের নিরপেক্ষতা সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের একটি বড় শর্ত। বৃটেনে শত বছরের সাংবিধানিক রীতিই গড়ে উঠেছে যে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজ দল থেকে পদত্যাগ করেন। এই পদত্যাগ তাঁর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে এবং এই নিরপেক্ষতাকে গোটা জাতি সম্মান জানান পরবর্তী নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী না দিয়ে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ১৯৮৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে দল থেকে স্পিকারের পদত্যাগকে উত্সাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন একটি আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠেছিল যে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার তাঁদের পরিপূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন। বড় দল দুটোর নির্বাচনী ইশতেহারে এই অঙ্গীকার ছিল।
এমন একটি পটভূমিতে বর্তমান সংসদের ডেপুটি স্পিকার মারাত্মক একটি মন্তব্য করেছেন সেদিন। পত্র-পত্রিকা যদি সঠিক লিখে থাকে তাহলে তিনি বলেছেন: �জিয়াই মুজিবের হত্যাকারী�। এটি মারাত্মক কারণ জাতীয় সংসদের অভিভাবক হিসেবে এই উত্তপ্ত বিতর্ক উসকে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই তাঁর। এটি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঙ্গেও বেমানান। তিনি জাতীয় সংসদের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক, যে প্রতিষ্ঠানের অভিভাবককে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, দলীয় রাজনীতির বাগিবতণ্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের চূড়ান্ত পর্ব যখন চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে, তখন এ ধরনের মন্তব্য আমরা আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতার মুখে শুনেছি। যে বিষয়ের নিষ্পত্তি আদালতে হতে চলেছে, সেটি নিয়ে কোনো দায়িত্বশীল রাজনীতিকের মন্তব্য করা শোভনীয় নয়, কাঙ্ক্ষিতও নয়। সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে ইতিমধ্যে গণমাধ্যম এমনকি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সতর্ক করেছেন। রাজনীতিবিদদের সৌভাগ্য বলতে হবে, এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সতর্কবাণী তাঁদের শোনানো হয়নি আদালত থেকে।

২.
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের জাতির ইতিহাসে চরম কলঙ্কিত অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু তাঁকে নয়, বাংলাদেশে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতিকেও নির্মূল করার চিন্তা ছিল কারও কারও মধ্যে। তা না হলে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর জেলখানায় ভেতরে তাঁর অনুসারী চার নেতাকেও হত্যা করা হতো না। বঙ্গবন্ধুর আমলে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমনের চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু ১৫ আগস্টে তাঁর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে তিক্ত বিভাজনের সূত্রপাত করেছে তা তুলনাহীন; তার মাশুল আজও দিতে হচ্ছে দেশকে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে অবশ্যই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়া জরুরি। এই বিচারকে অন্তত বিচার চলাকালীন রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার চেষ্টা করাও সমপরিমাণ জরুরি।
বিচারকার্য শেষ হলে আপিল ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ রায় অবশ্যই পাব আমরা। শুধু অভিযুক্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে নয়, হয়তো অন্য বহু রাজনীতিক এবং সেনানায়ক সম্পর্কে আমরা প্রাসঙ্গিক মন্তব্য পেতে পারি সেখানে। গবেষণা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা জোরদার হলে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে দেশি-বিদেশি কিছু মহলের ইন্ধন সম্পর্কেও নতুন প্রামাণ্য তথ্য আমাদের সাংবাদিক বা গবেষকেরা একসময় উদ্ধার করতে পারবেন। ততদিন পর্যন্ত আমাদের সবার অপেক্ষা করে থাকাটাই শ্রেয়। তা না করে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কখনো সফিউল্লাহ, কখনো জিয়াউর রহমান, কখনো এমনকি খালেদ মোশাররফকে দায়ী করে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকেরা বিবৃতি দেওয়া অব্যাহত রাখলে এই বিচারের আবেদন লঘু হয়ে পড়তে পারে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে উল্লিখিত ব্যক্তিরা দায়ী হলে এই মামলার অভিযোগপত্রে তা বলা হয়নি কেন? কোনো ঘটনার সুবিধাভোগী বহু মানুষ থাকতে পারেন। ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার সুযোগ কর্নেল তাহের বা খালেদ মোশাররফের ছিল। দুর্ভাগ্য হোক, কৌশলগত ভুল হোক, তাঁরা সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেননি, পেরেছেন জিয়াউর রহমান। তাঁর আগে এবং তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হয়েছেন আওয়ামী লীগেরও কিছু নেতা। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে তাঁদের কার কী ভূমিকা ছিল তা তাই শুধু কে কে সুবিধাভোগী হয়েছেন সেই বিচারে করা সম্ভব না। এ নিয়ে অবশ্যই যৌক্তিক গবেষণা এমনকি রাজনৈতিক বাগিবতণ্ডাও হতে পারে। তবে বিচার চলাকালীন এসব বিষয়ে ধারণাপ্রসূত মন্তব্য করা থেকে আমাদের সবার বিরত থাকাই শ্রেয়।

৩.
ভুল সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করা থেকে বিরত নেই বিএনপিরও একশ্রেণীর নেতা। ইতিপূর্বে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বিচার চলাকালীন ১৫ আগস্টকে ১/১১-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই নিষ্ঠুর মন্তব্য শুধু আওয়ামী লীগের সমর্থকদের নয়, যেকোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষকে আহত করেছিল। এর পরও বিভিন্ন সময়ে বিএনপির কিছু নেতা আকার-ইঙ্গিতে এমন ধারণা দিয়েছেন, যাতে বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ডের বিচারে তাঁদের সমর্থন নেই বলে মনে হতে পারে।
আমাদের সবার বোঝা প্রয়োজন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার রাজনৈতিক ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয় আর। এই বিচারকে কেন্দ্র করে কোনো রকম রাজনৈতিক ফায়দা লাভের চেষ্টা করাও ঠিক হবে না কারও জন্য। এটি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। রাজনৈতিক বিতণ্ডা থেকে দূরে থেকে এই বিচার প্রক্রিয়াকে শ্রদ্ধা জানানো যেকোনো সুনাগরিকের কর্তব্য।

৪.
১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি দেশে বর্তমানে বিরাজমান সংঘাতের রাজনীতির একটি চিত্র মাত্র। বিরোধী দল কর্তৃক এখনো সংসদ বর্জন অব্যাহত রয়েছে, সরকার পতনের অপরিণত হুংকারও তারা দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারি দলের কেউ কেউ সংসদকে বিরোধী দল সম্পর্কে কুত্সা রটনার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন। স্বয়ং দুই প্রধান নেত্রী হঠাত্ হঠাত্ তাঁদের সংযম হারিয়ে ফেলে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন। ১/১১ পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গঠনমূলক কাজ ও চিন্তার মধ্য দিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিযোগিতার যে প্রত্যাশা আমরা নির্বাচনের পর পোষণ করতে শুরু করছিলাম তা ইতিমধ্যে হোঁচট খেতে শুরু করেছে।
আমার ধারণা, আমাদের দুই নেত্রীর এখনই খুব সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। আমাদের সবার চেয়ে তাঁদেরই বেশি জানার কথা, সংঘাতের রাজনীতি দেশে গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই ঝুঁকি আরও বেশি। চীন ও ভারতের মতো দুই উদীয়মান মহাশক্তিধর দেশের স্বার্থ রয়েছে বাংলাদেশকে ঘিরে। ৯/১১ ঘটনার পর একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব, অন্যদিকে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। জ্বালানি শক্তির সম্ভাবনার কারণে বাংলাদেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার অভিলাষ রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। এদের কেউ কেউ বাংলাদেশের মতো দেশে ক্ষমতার পালাবদল ত্বরান্বিত করার বা তা ঠেকিয়ে রাখার মতো শক্তিশালী। এসব মহলের স্বার্থ রক্ষা করে চলেন বা এদের দ্বারা ব্যবহূত হন এমন মানুষও কম নয় এ দেশে। দুই নেত্রী তথা দুই বড় দলের সংঘাত এদের শক্তিকে আরও সুসংহত করবে। কখনো কখনো তা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা ১/১১ সময়ের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন আমাদের।
দুই দলের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক বিতর্কের কিছু সনাতনী বিষয় আদালত, কিছু বিষয় ঐতিহাসিক আর কিছু বিষয় জনগণের রায়ের ওপর ছেড়ে দিন। আওয়ামী লীগের চেষ্টা থাক বিগত বিএনপি সরকারের তুলনায় অনেক বেশি জনকল্যাণমুখী সুশাসন দেশকে প্রদান করার জন্য। বিএনপির চেষ্টা থাকুক আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক শ্রেয় দল হিসেবে আগামী নির্বাচনের জন্য নিজেকে উপস্থাপনের।
যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা, তা কেবল এভাবেই সম্ভব।


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×