somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মায়ের কথা

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীলিমা, একজন সাধারণ মা। তিনি শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিতই বলা যায়, তবে একজন নারী হিসেবে বেশ আটপৌরে চলাফেরাই তার। তার কথাবার্তায়, চালচলনে তেমন একটা আধুনিক মনে হয় না। কিন্তু তিনি মননে, চিন্তা চেতনায় একজন আধুনিক নারী। অনেকটা খাপ ছাড়া লাগে তাকে এই সমাজে। সমাজের অনেক প্রচলিত ধ্যান-ধারণা তিনি মানেন না। আবার, সমাজের অনেক আধুনিক ধারারও তিনি সমর্থক নন। বেশ অল্প বয়েসেই মা হয়েছেন। ফুটফুটে দুই সন্তানের মা, একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা, ফাইনাল পরীক্ষা ছিল একেবারেই নাকের ডগায়, এরই মাঝে কোলে এলো সন্তান। একদিকে মা হিসেবে খুশীর অন্ত নাই, অন্যদিকে পড়াশোনার চাপে, রাত জেগে সন্তানকে বুকে আগলে রেখে হিমশিম দশা! সন্তান সামলে ধীরে ধীরে রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে। মাঝে মাঝে তার মনে হতো হয়তো ঐ বয়সে মা না হলে আরো ভাল কিছু করতে পারতো, আবার পরক্ষণই মনে হতো এমন সন্তানের মা-ই বা কতজনে হতে পারে! কত মা-ই তো একটা সন্তানের জন্য হাহাকার করে মরে । আল্লাহতাআলা তো তাকে এক অপূর্ব নেয়ামত দিয়েছেন। সন্তানের হাসিমাখা মায়াময় মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সব সীমাবদ্ধতা, কষ্ট সবকিছুই ভুলে যেতেন তিনি। একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী পেয়েছেন, সংসার-সন্তান সামলে মনপ্রাণ ঢেলে নিজের কাজ করে যেতেন। সব মিলিয়ে বেশ সুখেই দিন যাচ্ছিল, তবুও এর মাঝেই যেন কেমন একটা শূন্যতা! নিজেকে ঠিক বুঝতে পারেন না তিনি, কোথায় যেন কি নেই, কিসের যেন অভাব! নাহ্‌, টাকাপয়সা নিয়ে বিশেষ কোন উচ্চাকাংখা নেই মনে, কিন্তু কোথায় যেন একটা অভাববোধ। নানান ব্যস্ততায় নিজের মনের যত্ন নেবার কথা মনেই আসতো না। মনের খবর তেমন রাখাই হয়নি। ধীরে ধীরে একধরণের বিষণ্ণতায় পেয়ে বসে নীলিমাকে। কেমন যেন তাল লয় কেটে যেতে থাকে। সন্তানের প্রতি মনোযোগ কমেনি, কিন্তু সংসারের প্রতি কেমন যেন একটা উদাসীনতা চলে আসতে থাকে মনের মাঝে। মনে হয় এই সংসারের গন্ডি ছেড়ে মুক্তি পেলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে! হঠাত একদিন ঝড় এলো, প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড়! সব ভেঙ্গেচুরে তছনছ! ঝড়ের প্রচন্ড তান্ডবে মায়ের বুক থেকে সন্তানেরা হারিয়ে গেল! একাকী হয়ে গেলেন নীলিমা!
মাঝে মাঝে গিয়ে ছেলেমেয়েকে দেখে আসেন নীলিমা। ওরা দাদির কাছে আছে, মায়ের অধিকার নেই বাচ্চাদের নিজের কাছে রাখার। দূর থেকে একটু দেখে, একটু কথা বলে এতোটুকুই পাওয়া। মেয়েটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে মায়ের জন্যে, খুব চায় মায়ের বুকে ফিরে আসতে। কিন্তু সংসারের কড়া নিয়মের কাছে তাদের চোখের জলের এতোটুকু দাম নেই। এই মরুভূমির সংসার-এর মাটি বড় শক্ত, ভীষণ কঠিন তার প্রাণ! দুটো অবুঝ শিশুর কান্নাতে তার মন গলে না। মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ছবি আঁকে মেয়েটি, মা-ই তাকে ড্রয়ং স্কুলে পাঠিয়েছিল। প্রতি শুক্রবার ছেলে মেয়ে দুজনকে নিয়ে যেত ড্রয়ং স্কুলে। অংকনের নানারকম রংপেন্সিল কিনে দিত বাচ্চাদেরকে। অফিসের কাজে বিদেশে গেল যেবার, সেখান থেকেও বাচ্চাদের জন্য অংকন্সামগ্রী নিয়ে আসলো। বড় শখ, ছেলে মেয়েরা নিজেদের মনের ভাব যেন প্রকাশ করতে পারে শিল্পের মাধ্যমে। মেয়েটি তার মনের ইচ্ছে বুঝেছে, প্রতিবার মা গেলেই সবার অলক্ষ্যে নিজের হাতে আঁকা বেশ কয়েকটি ছবি মায়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়, ফিসফিসিয়ে কানের কাছে এসে বলে বাসায় গিয়ে দেখো, তোমার জন্যে এঁকেছি। ছলছল চোখে মা তাকিয়ে থাকে তার প্রিয় সন্তানের মুখে। মনে মনে ভাবে আর কত প্রায়শ্চিত্ত হলে পরে তার মেয়ে তার বুকে ফিরে আসবে! আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে তাকে? ছেলেটি বেশ অন্তর্মুখী! কম কথা বলে। তবুও মায়ের জন্য তার ছটফটানি লুকিয়ে রাখতে পারে না। মা যদি বলে, মায়ের জন্য মন কাঁদে না তোমার, এক গভীর দীর্ধশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক থেকে। বলে, আম্মু এমন করলে কেন তুমি? তুমি এতো বোকা কেন? আমার ভয় করে সবসময়ে। ওদেরকে আমার ভয় লাগে। আব্বু মাঝে মাঝে কাঁদে, আমি গেলে আব্বুর কাছে কে থাকবে? মা চোখের জল গোপন করে। ছেলের গালে একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে হাসিমুখে জানতে চায়, মায়ের চোখের জল দেখেছ কখনো? দেখতে ইচ্ছে করে?
অনন্ত এই অপেক্ষার শেষ কোথায় জানে না নীলিমা। ভাবতে ভাবতে বিকেল গড়িয়ে যায়, ধূসর এক শূণ্য চোখে তাকিয়ে থাকে দূর আকাশের দিকে। মাগরিবের আযান পড়ে পাড়ার মসজিদে। আল্লাহর কাছে আর্জি জানিয়ে ঘরে ফিরে আসে নীলিমা, যাবতীয় ভুল ভ্রান্তি তুমি মাফ করো খোদা, আমরা তোমা হতেই এসেছি, তোমার কাছেই সকল বিপদ আপদে আশ্রয় চাই!

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×