somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

রক্তপাতের বিপক্ষে মানুষের অবস্থান

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক্তপাতের বিপক্ষে মানুষের অবস্থান
ফকির ইলিয়াস
=====================================
বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার সহসা উন্নতি হবে, এমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একটা প্রত্যাশার বাণী শুনিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার ঘোষণা ছিল, তিনি বদলে দেবার সূচনা করবেন গোটা বিশ্ব। কিন্তু দশ মাসে এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং যুদ্ধ চলছে। মৃত্যুর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। বোমা হামলা কিংবা আত্মঘাতি বোমার আওয়াজ ভীত সন্ত্রস্থ করে তোলছে মানুষের মন।
সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেটস হিলারী কিন্টন। এই সফলকালে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানে ইসলামিক মিলিট্যান্ট শক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তানে আসলে কি হচ্ছে ? আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে জঙ্গিরা এতো শক্তি সাহস কোথা থেকে পাচ্ছে ? এসব প্রশ্ন উঠছে খুব সঙ্গত কারণে। পেশওয়ারের একটি আত্মঘাতি বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা একশত। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। এই বোমা হামলাকারীরা মসজিদ পর্যন্ত উড়িয়ে দিয়েছে। এর কারণ কি ? ধর্মই যদি তাদের আরাধ্য বিষয় হয়, তবে মসজিদ তাদের হাতে আক্রান্ত হবে কেন ?
এটা সবার জন্য পাক-আফগান সীমান্তে আল কায়েদা, তালেবান শক্তিরা একটি শত্রু ঘাঁটি গড়ে তোলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' ওসামা বিন লাদেনও রয়েছেন এই মরু প্রদেশে। এমন আশংকা যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকেই করে আসছে। এরপরও মার্কিন গোয়েন্দাদের সকল কারিগরি শক্তির চোখে ধুলো দিয়ে লাদেন এই অঞ্চলে তার জঙ্গিবাদ চালিয়েই যাচ্ছেন।
বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদের অন্যতম চারণ ভূমি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের বিষয়ে অত্যন্ত সরলপ্রাণ এবং সুদৃঢ় বিশ্বাসী। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ধর্মীয় সমাজ কল্যাণের নামে ‘হিজবুত তাহরীর’ কিংবা দাওয়াতুল ইসলামের মতো কোন সংগঠন রাজতন্ত্র শাসিত সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, দুবাই,ওমান প্রভৃতি দেশে গড়ে উঠতে পারেনি কিংবা পারবেও না। অথচ সকল নবী, রাসুলদের আবির্ভাব সেই আরব মল্লুকেই হয়েছিল। এর কারণ কি ? কারণটি হচ্ছে কট্টরপন্থিদেরকে প্রধান মুসলিম দেশগুলো, নিজ দেশে পৃষ্ঠপোষকতা করে না। অথচ আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই সংবাদ দেখি উপমহাদেশের অনেকগুলো ধর্মীয় সংগঠন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফান্ড পায়। কেন এই ফান্ড দেয়া হয় ? এর নেপথ্য উদ্দেশ্য কি ? যারা, যে সব রাষ্ট্র প্রধানরা - নিজ দেশে ‘এক্সট্রিম পলিটিক্যাল মোটিভেশন’ লালন করে না, তারা অন্য দেশে এর পৃষ্ঠপোষকতা কেন করে ?
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মি· স্টিফেন চাকলার বলেন, রাজতন্ত্রী দেশগুলো হচ্ছে ধর্মীয় সুবিধাবাদে বেশি লাভবান। কারণ তারা বংশ পরম্পরায় একটি দেশ শাসন করে। আর নিজের রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অন্য দেশে ধর্মীয় কট্টরবাদ জিইয়ে রাখার জন্য সেই সব তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি চক্র দায়ী।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। তা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের গণমানুষের মুক্তি সংগ্রাম কিন্তু ধনী আরব মুল্লুকের জোরালো সমর্থন কোনদিনই পায়নি। না পাবার কারণ কি ? কারণটি হচ্ছে, তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস তৈল সমৃদ্ধ আরব দেশগুলো কখনোই করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না, তেলের বদলে যুক্তরাষ্ট্র আরব বিশ্বের রাজা, বাদশাহ, খলিফা, সুলতানদের বংশ পরম্পরায় শাসনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।
দুই·
একটি রাষ্ট্র কাঠামোতে ধ্বংস নামে, যখন রাষ্ট্র পরিচালকরা‌ কোন অশুভ শক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কিংবা প্ররোচিত হন। যে পাকিস্তানে আজ সরকার বনাম জঙ্গিদের গৃহযুদ্ধ চলছে, সেই পাকিস্তানে জঙ্গিরা মদদ পেয়েছে সামরিক স্বৈরাশাসকের। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাত মিলিয়েছিলেন জঙ্গিবাদী অপশক্তির সাথে। ফলে তারা তাদের বিষদাঁত শক্ত করতে পেয়েছে পাকিস্তানের মরুভূমিতে। প্রায় একই অবস্থা ঘটেছিল বাংলাদেশেও চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে।
এখানে একটি সঙ্গত প্রশ্ন উত্থাপন করা খুব জরুরি মনে করি। তা হচ্ছে ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব কার হাতে ছিল ? আমরা জানি এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ কোন মন্ত্রী ছিলেন না। এর নেপথ্য কারণ কি ? পনেরো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। কেন একজন প্রতিমন্ত্রীর হাতে ছিল সর্বময় ক্ষমতা ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এ সময়ে এই মন্ত্রণালয়টি চালাতো বিশেষ একটি মহলের সিন্ডিকেট। একটি ভবন নিয়ন্ত্রণ করতো সবকিছু। ফলে, শিক্ষা, অর্থ সহ আরো বেশ কিছু মন্ত্রণালয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী থাকার পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ কোন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়নি চারদলীয় জোট সরকার। যা সে সময়ে ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতোই নাজুক থাকার পরও এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন নি খালেদা-নিজামীর জোট সরকার। বাংলাদেশ এখনও সেই জঙ্গিবাদের দহন বয়ে বেড়াচ্ছে। যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব জঙ্গিবাদী সংগঠন বিভিন্নভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্বে সকল নাশকতা মূলক কাজের হোতাদের মাঝে একটা যোগসূত্র আছে। আর তা হচ্ছে এরা গোটা বিশ্বকে অশান্ত করতে চায়। মানুষকে ভীত করে তোলতে চায়। সহিংসতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। মানুষের অর্থনৈতিক মন্দার চরম ক্রান্তিকালে সামাজিক অশান্তিটি হচ্ছে বাড়তি দুঃখ। যারা একটি গোষ্ঠী ভিত্তিক মতবাদ কায়েম করে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেবার কথা বলে এরা মূলতঃ সমাজে কলহই ছড়াচ্ছে বেশি। প্রকারান্তরে বিশেষ মহলের স্বার্থ হাসিল করছে। এই সব হানাহানি, এই সব রক্তপাতের বিরুদ্ধে মানুষের অবস্থান শক্ত করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত ভাবে সবাইকে।
আর যারা সরকার চালান, যারা রাষ্ট্রপরে নিয়ন্ত্রক তাদের কে একটি কথা মনে রাখতে হবে গভীরভাবে। তা হচ্ছে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুবিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। আমরা দেখেছি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে একুশে আগষ্টের বোমা হামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। তা সফল হয়নি। যেমনটি হয়নি সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেবার পরও ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। বিশ্বে আজ ন্যায়ের ধারা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তা হলে সকল শুভ কর্মের উদ্যোগই ব্যাহত হবে বার বার।
নিউইয়র্ক, ৩১ অক্টোবর ২০০৯
--------------------------------------------------------------------
দৈনিক উত্তরপূর্ব । সিলেট । ৩ নভেম্বর ২০০৯ মংগলবার প্রকাশিত

ছবি- হোসে ডিয়াজ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:৩৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×