somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই আমাদের শহীদ মিনার

০২ রা নভেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ দুপুর বেলা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়েছি দুর্ঘটনায় আহত ‍এক আত্মীয়কে দেখতে। রোগীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে ফিরে আসছি। শহীদ মিনার সংলগ্ন পথ ধরে হাটছিলাম। হাতে তেমন কোন কাজ ছিলনা। ভাবলাম আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের এই স্মৃতিস্তম্ভটাকে একবার ‍কাছ থেকে দেখে যাই। শহীদ ‍মিনারে প্রবেশ করলাম কিন্তু শহীদ মিনার ও চারপাশের পরিবেশ দেখে মনে বড় ধাক্কা খেলাম। যদিও আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের খুব অদূরে, পড়াশোনার স্বার্থে ঢাকায় থাকছি অনেকদিন তবুও এর আগে কখনো শহীদ মিনারে আসা হয়ে ওঠেনি।


চারপাশ দিয়ে অরক্ষিত মিনারের ভেতরে এসে মিনার চত্বরে একসাথে ঘাস খাচ্ছে ঘোড়া ও ছাগল (আসলে ঘোড়া ছাগল চড়াচ্ছিল দু’জন লোক, ছবি দেখুন)। মুল বেদীতে ক্রিকেট খেলছে একদল ছেলে। একপাশে সিগারেট, চকলেট এ জাতীয় খাবারের দোকান সাজিয়ে বসেছে হকার। পাশেই নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছে কতগুলো ছিন্নমূল মানুষ। মিনারে ভেতরে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা আর আবর্জনা। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বাদামের খোসা, ছেড়া কাগজ, ছেড়া পলিথিন, সিগারেটের খোসা, ব্যবহৃত সিগারেটের ‍ ‍অবশিষ্টাংশ, ছেড়া জুতো, কোমল পানীয়ের বোতল, চিপসের মোড়ক, কলার খোসা, ডাবের খোসা, আইসক্রিমের কাঠি, জুসের মোড়ক, ভাঙ্গা কাচের বোতল, গাছের ঝড়া পাতার স্তুপ- কী নেই এখানে! মিনারের প্রবেশ পথের সিড়িতে গাছের ছায়ায় বসে আছে অলস পথিক আর ঘুরতে ‍আসা দর্শনার্থী। এই স্থানের জন্যে ‍তারা আরো বাদামের খোসা এবং এই জাতীয় পদার্থের যোগান ‍দিয়ে যাচ্ছেন। প্রবেশ পথের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে রাজনৈতিক পোস্টার। নিরাপত্তার জন্যে এখানে কোন পুলিশ দেখা গেলনা। এই ‍হলো আমাদের মহান ভাষা ‍আন্দোলনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চিত্র!


১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের পবিত্র স্মৃতির ‍ উদ্দেশ্যে যে মিনারটি নির্মিত হয়েছে, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখনো পর্যন্ত যে স্থানটিকে ঘিরে পরিচালিত হয়ে আসছে সকল ন্যায্য দাবী আদায়ের আন্দোলন, মহান ভাষা শহীদ দিবসের মূল অনুষ্ঠান যেখানে হয়ে থাকে, যে ঝকঝকে শহীদ ‍মিনারকে ভাষা শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে থাকি- এটাই কি সেই শহীদ মিনার? ঠিক মেলাতে পারছিনা। আমার সাথে কোন ক্যামেরা ছিলনা। তবুও আমার ফোনের ভিজিএ ক্যামেরা দিয়েই এই দুর্লভ দৃশ্য ধারণ করলাম। সামহোয়ারইন পাঠকদের জন্যে তা-ই এখানে জুরে দিলাম। একটা দেশের জাতিসত্বা ও আত্মপরিচয়ের আন্দালনের স্মৃতিচিহ্ন জরিয়ে আছে যে স্মৃতিস্তম্ভের সাথে তা এমন অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকতে পারে- শহীদ মিনারের এমন করুণ অবস্থা স্বচক্ষে না দেখলে তা আমার পক্ষে বিশ্বাস করা যেতনা।


শহীদ মিনারের এই করুণ অবস্থা দেখে আমার কেবল একটা কথাই বারবার মনে হচ্ছিল বছরের একটি দিন ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের যতো আয়োজন আমরা করি তা সবই মেকি। শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমদের যতো শ্রদ্ধাবোধ আছে আমরা বোধহয় তা বছরের এক দিনেই সব ঢেলে দিই। প্রকৃত শ্রদ্ধাবোধ যে কতোখানি আছে তা শহীদ মিনারের করুণ অবস্থাই বলে দেয়। যতোদূর জানি শহীদ মিনারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ‍বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত, তারা কি শহীদ মিনারের এই দূরাবস্থা চোখে দেখেন না?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০১
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×