somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় চাচার ফান ম্যাগাজিন

০১ লা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় ফিরেই শুনলাম, বড়চাচা নাকি আমার খোঁজ করছেন। বড়চাচাকে বাড়ির ছোটরা এতই পছন্দ করে যে, কাউকে তার খোঁজ করতে হয় না। সবাই এমনিতেই তার আশেপাশে থাকতে চায়। কারন, তার গল্প বলার স্বভাব। বড়চাচাকে আমিও খুব পছন্দ করি, কিন্তু তার এই গল্প বলার বাতিকের কারনেই তার আশেপাশে আমার বেশিক্ষণ থাকতে ইচ্ছা করে না। তার বেশিরভাগ গল্পই আমার কাছে বানোয়াট মনে হয়। দুনিয়ার এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে তার জীবনে একটা ঘটনা ঘটেনি। আর সেসব গল্প তিনি আমাদেরই শোনাতে পছন্দ করেন।

বড়চাচার ঘরে ঢুকতেই দেখি, বাড়ির ছোটরা সব তার ঘরে। ঘটনা কী! গল্প টল্পের ব্যাপার নেই তো? আমাকে দেখেই বড়চাচা বললেন, তুই নাকি এটাতে লিখিস, তোর নামও দেখলাম?
বড়চাচার হাতে রস+আলোর এ সপ্তাহের সংখ্যাটা। আমি হ্যা সূচক মাথা নেড়ে বললাম, লিখি মাঝে মাঝে।
কী ছাইপাশ লিখিস এসব? শুধু তুই-ই না, এখানে যারা লেখে তাদের সবগুলোর কথাই বলছি।
ছোটদের সামনে বড়চাচার এ ধরণের সরাসরি মন্তব্যে অপমানিত বোধ করার কিছু আছে কিনা, সেটাই যখন ভাবছিলাম, তখনই বড়চাচা বললেন, এসব ছাইপাশ পড়ে এরা আবার হাসেও দেখি। আরে, এতে হাসির কী আছে? হাসির পত্রিকা বের করতাম আমি আর আমার বন্ধুরা। সে গল্প বলব বলেই তোদের ডেকেছি।
সেরেছে! যা ভেবেছিলাম, তা-ই। বানিয়ে একটা অজুহাত দিতে যাব, তার আগেই বড়চাচা শুরু করলেন, তখন আমরা সবে কলেজে উঠেছি। তোরা তো জানিসই পড়ালেখায় আমরা সব বন্ধুই ছিলাম অসাধারণ। সবাই...
বড়চাচাকে থামিয়ে দিয়ে ঋতু বলে উঠল, এসএসসিতে তোমার কী রেজাল্ট ছিল, বড়চাচ্চু?
আরে, সে তো আরেক ঘটনা। আমি, মশিউর...
বড়চাচা আরেক গল্প ফাঁদতে যাচ্ছেন বুঝতে পেরে বাধা দেই আমি, থাক, এটা পরে শুনব, তুমি আগে ওটা শেষ কর। বড়চাচা আবার শুরু করেন, তো আমরা কলেজে ভর্তি হওয়ার ছ’মাস যেতে না যেতেই লক্ষ্য করলাম, কলেজের দু’বছরের বই-ই আমাদের মুখস্ত হয়ে গেছে। পড়ার আর কিছুই নেই! আমরা তখন কী করি? কিচ্ছু ভাল্লাগে না। তখন মশিউর বলল, আয়, একটা ফান ম্যাগাজিন বের করি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা আনন্দে ইউরেকা ইউরেকা বলে পুরো কলেজে একটা চক্কর দিয়ে দিলাম। পত্রিকার নামও পেয়ে গেলাম। যা বলে চিৎকার দিয়েছিলাম, সেই ‘ইউরেকা’ই হল পত্রিকার নাম। তারপর থেকেই মনে হয় মানুষ হঠাৎ কিছু পেয়ে গেলে ‘ইউরেকা’ বলে!
বড়চাচার গুলটা হজম করতে বেশ কষ্ট হত, যদি তখুনি আমার দু’চোখ জুড়ে ঘুম চলে না আসত। বড়চাচার গল্প শুনলেই ইদানীং আমার ঘুম চলে আসে। তবে বড়চাচা সেটা টের পান না, কারন আমি চোখ খুলে রেখে ঘুমাই। ঘুমানোর অদ্ভূত এই স্টাইলটির কারনে প্রথম কয়েকদিন আমি চিন্তিত হলেও এখন এর বেশ সুবিধা উপভোগ করছি। ঘুমের মধ্যেই হালকা হালকা শুনতে পাচ্ছি, বড়চাচা বলছেন, প্রথম সংখ্যাতেই তাক লাগিয়ে দিলাম। যে পড়ে সে-ই হাসে। যখন পড়ে তখন তো হাসেই, যখন পড়ে না, তখনও হাসে। একদিন মকবুল স্যার কাস নিচ্ছেন। তিনি নিউটনের তৃতীয় সূত্রটা বলতেই আমিনুলটা হো হো করে হেসে উঠল। স্যার রেগে গিয়ে বললেন, নিউটনের এ সূত্রের কোন জায়গাটি হাসির- আমাকে বুঝিয়ে বল। কে শোনে স্যারের কথা, আমিনুল তখনও হেসেই চলেছে। স্যার ওকে মারতে যাবেন, এমন সময় ও হাসতে হাসতেই কোনমতে বলল, তিনদিন আগে নাকি ও আমাদের পত্রিকার একটা ফিচার পড়েছিল, সেটা মনে পড়েছে বলেই হাসছে! স্যার এবার আমাদের মারতে এলেন। বললেন, পত্রিকা বের করে ছেলেপেলেদের মাথা খাচ্ছ? দেখাচ্ছি মজা। আমি তখনই বুদ্ধি করে ব্যাগ থেকে আমাদের পত্রিকাটা বের করে দিলাম। প্রচ্ছদ দেখেই স্যারের সেকি হাসি! মজার ব্যাপার হল, সপ্তাখানেক পর স্যার যখন আলোর প্রতিসরণ পড়াচ্ছিলেন, তখন নিজেই হেসে উঠলেন। তার নাকি আমাদের পত্রিকার একটা কার্টুনের কথা মনে পড়েছে।........
কতক্ষণ ঘুমিয়েছি কে জানে। সজাগ হতেই দেখি চাচার গল্প প্রায় শেষ। ছোটরা এক এক জন এক এক প্রশ্ন করছে। আমিও কিছু একটা না জিজ্ঞেস করলে খারাপ দেখায়। তাই বুদ্ধি করে জানতে চাইলাম, বড়চাচা, তোমার পত্রিকাটা তো এখন আর বের হয় না। তা এটা বন্ধ হল কেন?
বড়চাচা ফিসফিস করে বললেন, কাউকে বলিস না যেন! আমাদের পত্রিকা পড়ে মানুষজন হাসত, রাস্তা ঘাটে গড়াগড়ি খেত, তাতে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু একবার আমাদের পত্রিকা পড়ে একজনের হাসতে হাসতে পেট ফেটে গেল! তারপর আরো দুজনের একই অবস্থা। তারপর আরো অনেকের। এই যে লোকে বলে না, “হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাওয়া”- এ কথা তো এ ঘটনার পরই সৃষ্টি হয়েছে! এ রকম চলতে থাকলে তো আমাদের পুলিশে ধরত, ঠিক ফাঁসি হয়ে যেত। তাই গোপনে ওটা বন্ধ করে দিলাম। আর সব কপিও পুড়িয়ে ফেললাম, নয় তো আবারও যদি কারো হাসতে হাসতে পেট ফেটে যায়!

রাতে ঘুমানোর আগে হঠাৎ বড়চাচার ঘর থেকে তার হাসির শব্দ শুনলাম। ব্যাপারটা কী দেখতে জানালা দিয়ে তার ঘরে উঁকি দিতেই দেখি বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনি রস+আলো পড়ছেন!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×