somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেউ কি কখনো মনে রাখে...

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। খুব শান্ত, ভদ্র। পড়াশোনায় খুব পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী। সততা ও নম্রতা ওর চরিত্রের ভুষণ। সবাই ওকে ভালোবাসে। সারাক্ষণ ওর চিকন অধর দুটিতে মন পাগলকরা হাসি লেগেই থাকে। ক্লাসমেটরা তাই মজা করে বলে- ওর চেহারাটাই ও রকম!

ওর ব্যবহার ও স্বভাবসূলভ মিষ্টি হাসিটার জন্য শিক্ষকরাও ওকে খুব স্নেহ করে। ওর সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত ভবিষ্যত কামনা করে। বরাবরই ক্লাসের মেধা তালিকায় ও শীর্ষে থাকে। মাঝে মধ্যে এমন রেজাল্ট করে যে, ক্লাসমেটরা বলেই ফেলে-
: আরিফ, আমরা বোধহয় তোর আর পেরে উঠবো নারে!
ও তখন খুব লজ্জা পায়। লজ্জায় ওর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। ও লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলে-
: কেন পারবিনা? তোরা আমার মতো চেষ্টা কর, দেখবি- তোদের রেজাল্টও আমার মতো হবে।
ক্লাসমেটরা তখন চোখ বড় বড় করে বলে-
: তো..র মতো রেজাল্ট! থাক, বাবা! আমরা আমাদের রেজাল্টেই খুশি!

=============================================গল্পটি ২০শে জুলাই ২০০৬ইংরেজি তারিখে দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রিয়জনে প্রকাশিত হয়েছে... মুহাম্মাদ সাইফ নামে।=============================================
একজন আধুনিক তরুণের সবগুলো গুণই ওর মধ্যে আছে। কিন্তু ও অন্য সবার মতো আধুনিকতার নোংরা স্রোতো গা ভাসাবার পাত্র নয়। ও খুব অবাক হয় যখন দেখে- আধুনিকতার নামে সারা বিশ্বে চলছে নোংরামি। অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছুড়ির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করা হচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতিকে। কথিত 'হাই সোসাইটি''তে অবহেলিত হচ্ছে বিদ্বান ও শিক্ষিত জনের পরামর্শ। নেতৃত্বের ছড়ি উঠেছে সব অযোগ্য লোকের হাতে। ক্ষমতার ঝাঁঝ দেখিয়ে, আধুনিকতার দোহাই দিয়ে হাই সোসাইটির হাই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিদের।

আরিফ ভাবে। অনেক ভাবে। আর অবাক হয়। খুব অবাক হয়। ওর বুকের ভিতর জমে থাকা কষ্টেরা ‘শরীর’ লাভ করে। বুকের খাঁচা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চায়। ওর বুকটা চিনচিনিয়ে ব্যথা করে। কষ্টেরা বের হতে পারেনা; বুকের ভিতর নতজানু হয়ে পড়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর হামাগুড়ি দিতে দিতে ফিরে যায়- বুকের কোণের কষ্টের ঘরটাতে। সেখানে গিয়ে গুমড়ে কাঁদে। কষ্টদের কান্নায় ওর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

দুই
একদিন আরিখ রুমে বসে একাগ্রচিত্তে পড়ছিলো। হঠাৎ ওর কানে ভেসে আসে প্রচন্ড শোরগোলে শব্দ। ও চমকে ওঠে। বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।

কলেজের মাঠে ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়া না, যুদ্ধ। হিংসার যুদ্ধ। ক্ষমতার যুদ্ধ। রাজনীতির যুদ্ধ। ওই যুদ্ধবাজদের সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক নেই।

ও যোদ্ধাদের দিকে তাকায়। আশ্চর্য! ওখানে তো কোনো যোদ্ধা নেই! সবাই এ কলেজেরই ছাত্র! তাহলে ওরা যুদ্ধ করছে কেন? হাজারটা প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ও উত্তর খোজে, কিন্তু পায়না। ও ভাবে। অনেক ভাবে। ভাবতে ভাবতে ভাবনার সাগরে তলিয়ে যায়। সেখানে প্রশ্নের অক্টোপাসরা ওকে ঘিরে ধরে।

তরুণরা জাতির প্রাণশক্তি। তরুণরা জাগলে পৃথিবী সরব হয়ে ওঠে। তরুণরা জাতির ভবিষ্যত। কিন্তু এরা যদি হিংসার অনলে পুড়ে পুড়ে বড় হয় তাহলে এরা ভবিষ্যতে করবেটা কী? আগামী প্রজন্মকেও হিংসার আগুণে পুড়তে শিখাবে? নাকি এখনই শোধরে নিবে নিজেদের?
ও বারান্দায় দাড়িঁয়ে যুদ্ধ দেখে আর ভাবে। কিন্তু কোনো কুল-কিনারা পায়না…
হঠাৎ একটা বুলেট এসে লাগে তার বুকে। মুহুর্তেই একটা প্রাণের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধও থেমেও যায়। যুদ্ধে লাভ ক্ষতি কী হলো সে হিসাব কেউ রাখেনা।

তিন
সবাই ঘিরে আছে আরিফের লাশ। ওসি সাহেব প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কী অপরাধ করেছিলো ছেলেটি?
সবাই নিশ্চুপ।
শুধু বৃদ্ধ মালি এসে ওসি সাহেবের সামনে দাঁড়ায়। বলেন, আসলে ওটাই প্রাপ্তি ছিলো।
ওসি সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কী আসে যায় আরিফের মতো মেধাবীদের মৃত্যুতে? গ্রামে ওর বাবা মা কাঁদবে। সাংবাদিকরা ছবি ছাপাবে। গরম গরম খবরটা মুখে মুখে ছড়াবে…

তারপর… তারপর সেই আগের মতো- নতুন আরিফদের মৃত্যু-পর্ব। কেউ কি কখনো মনে রাখে?
হয়তো রাখে, হয়তো রাখেনা…
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×