গতকাল স্কুলে যাই নি। শরীর খারাপ, জ্বর আর ভীষণ দুর্বল শরীর। ছেলে-মেয়েরগুলোর কথা মনে পড়েছে গতকাল রাতেও। কী সুন্দর সুন্দর এক একটা মুখ। ভাবছিলাম ওরা কী আমার কাস পছন্দ করে? কোন দিন ভাবিনি শিকতায় আসব, শিকতা আমার কোন কালে পছন্দের তালিকায় ছিল না। কতদিন থাকবো তাও জানি না। কলেজ, ইউনিভাসিটিতে পড়ার সময় প্রাইভেট টিউশনি আমার সইতো না। আমি মনে হয় ভাল পড়াতে পারতাম না। যেখানে আমার বন্ধুদের কাছে অনেক ছেলে-মেয়ে প্রাইভেট পড়ার জন্য উম্মূখ হয়ে থাকতো সেখানে আমার একটা টিউশনি জোগার করাই কঠিন হতো। অনেকদিন ধরে আমি মেনে নিতে পারছিলাম না যে আমি ভাল পড়াতে পারি না। কিন্তু অবশেষে মেনে নিয়েছিলাম যে আমি ভাল শিক্ষক নই।
অক্টোবরের শেষাশেষি। শীত আসছে। সকালে শীত পড়ে, মাঠের ঘাষে শিশির জমে সন্ধার পর থেকেই। শরীর একটু ভাল লাগতেই বাকি যেকটা খাতা ছিল তাতে হাত দিয়েছিলাম, পাশের কম্পিউটারে গান বাজছে। এমন সময় হুড়মুড় করে ৮-১০ জন মেয়ে ঢুকে পড়ে। রক্সি, রোকসানা, নুসরাত, সেতু, নাসরিন, ফাতেমা...
“স্যারের না কি অসুখ? ক্যামন আছেন স্যার?”
“হুম ভাল তোমরা ক্যামন আছো? ভাল তো?”
“স্যার আমাগোরে আরো আগে কইতেন তাইলেই তো আমরা আইসা দেইখ্যা যাইতাম।”
“না না তোমরা দেখতে আসছো তাতেই আমি খুশি। ”
স্কুলের ঘন্টা পড়তেই আমি তাড়া দেই । “যাও ঘন্টা পড়ছে”
“স্যার আমগোরে খেদাইয়া দিতাছেন। চল যাই গা ।” একজন বলে উঠে।
“দাড়া রাসেলের খাতা কাটতেছে স্যারে দেখে যাই।” অন্য জন বলে।
“স্যার এরে নাম্বার কম দিবেন । হেয় ঐ দিন কইছে মেয়েগোরে কানে ধইরা দাড়াইতো।”
আমি হাসি হাসি মুখ করে ওদের দিকে তাকালাম।
ওরা চলে যাচ্ছিলো স্কুলের দিকে। ভাবছিলাম আমি কি তাহলে ওদের প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় পড়ে গেছি। প্রিয় শিক্ষক! আমি সাধ্য মতো ছেষ্টা করি তাদের ভাল করে পড়াতে। সবসময় চেষ্টা করি ক্লাসের সবার মনোযোগ যেন ধরে রাখতে পারি। আর ইদানিং, আমার শিক্ষকতার পাঁচ মাসের এই সুদীর্ঘ জীবনে, কেন যেন মনে হচ্ছে ওরা আমার কাসের জন্য অপেক্ষা করে। ওরা একদিন বড় হবে তখন কি আমার কথা মনে করতে পারবে। বুদ্ধদেব বসুর কবিতার লাইন মনে পড়ছে
কী ভালই না লাগছে এই সকাল বেলা
কেমন করে বলি
-চিল্কায়
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৯