somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘড়ির কাঁটায় অতিষ্ঠ মানুষ

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের রাবিয়া আখতারের দুই সন্তান পড়ে ধানমন্ডির একটি ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলে। স্কুলে পৌঁছানোর সময় সকাল আটটা। ‘আটটা মানে ডিজিটাল আটটা। সারা জীবন আমরা যে সময়ে অভ্যস্ত, সেই সময় অনুযায়ী সাতটা’, বললেন তিনি।
রাবিয়া ক্ষোভের সঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন প্রতিদিন ভোরের আলো না ফুটতেই ডিজিটাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে নাশতা বানানো, স্কুলের টিফিন তৈরি, বাচ্চাদের তৈরি করা, তারপর নিজে তৈরি হয়ে সোয়া সাতটা নাগাদ বের হই। নভেম্বর-ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসেও এই সময় অনুসরণ করতে হলে তো পুরো শীতকালটা আমাদের সেহির করতে হবে।’
ওই স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্য মায়েরা একযোগে বললেন, ‘এখন যে সময়ে বের হই, শীতকালে তো সেই সময়ে সূর্যই ওঠে না। তারপর আবার বেলা তিনটা নাগাদ বাসায় ফেরার সময় যানজট খেয়ে ফেলে প্রায় এক ঘণ্টা। বর্তমান ডিজিটাল সময় যদি পরিবর্তন করা না হয়, তাহলে তো শীতের দিনে বাসায় ফিরতে ফিরতেই সন্ধ্যা হবে। এটা কী করে সম্ভব!’
অভিভাবক আয়শা রহমান বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আসুন আমরা প্রার্থনা করি, যেন সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য শীতের সূর্য সকাল সাতটার পরিবর্তে আটটায় ওঠে। আর বিকেল পাঁচটার পরিবর্তে অস্ত যায় সাতটায়।’
সরকার আগামী ১ নভেম্বর থেকে স্কুলের যে সময়সূচি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, তাতে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে স্কুল শুরু করতে হবে। কিন্তু শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাকদের কেউ-ই মনে করেন না যে শীতকালে নতুন সময়ে সকাল সাড়ে সাতটায় স্কুল শুরু করা সম্ভব। সাড়ে আটায়ও শুরু করা কঠিন। কারণ, এখনকার সাড়ে আটটা মানে প্রকৃত সময় সাড়ে সাতটা। শীতকালে এই সময়ে কেবল ভোর হবে। সে ক্ষেত্রে রাতের শেষ অর্ধেক স্কুলের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া শারমিনের মা একটি আধা সরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। তাঁর অফিস সময় সকাল নয়টা। শারমিনের মা বলেন, ‘নতুন সময় নির্ধারণের পর আমার মতো চাকরিজীবী মায়েদের খুব সমস্যা হইতেছে। সাতটায় ঘুম থেকে উঠতেই হয়। তারপর ঘরের কাজকর্ম গুছিয়ে সোয়া আটটায় বের হই। ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।’
শারমিন বলেন, ‘শীতকালে সূর্য উঠবে মা অফিসে রওনা দেওয়ার সময়। আবার বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে। মায়ের খুব কষ্ট হবে।’
সরকার মূলত বিদ্যুত্ সরবরাহে কিছুটা সুবিধা পাওয়ার জন্য গত ১৯ জুন থেকে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে এনে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়টা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, এতে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সাশ্রয় হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কতটা সাশ্রয় হয়েছে, আদৌ হয়েছে কি না, তারও কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।
বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) কাছ থেকে যে মৌখিক হিসাব পাওয়া যায়, তাতে গভীর রাত ১২টা বা তারও কিছুটা পরে ১০০ মেগাওয়াটের মতো বাড়তি বিদ্যুত্ তারা বিতরণব্যবস্থায় দিতে পারে।
বিদ্যুত্ খাতের ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, এর ফলে নিশ্চয়ই কিছুটা সুবিধা পাওয়া গেছে। কিন্তু শীতকালেও এই ব্যবস্থা বহাল রেখে কতটা সুবিধা পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ তখন বিদ্যুত্ চাহিদার ধরন বদলে যায়। সর্বোপরি এই সময়সূচি শীতকালে মানুষের যে পরিমাণ বিরক্তির উদ্রেক বা অসুবিধার সৃষ্টি করবে, সে তুলনায় এই সাশ্রয়ের মূল্য কতটুকু তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।
ঘড়ির কাঁটা আগানো-পেছানো নিয়ে সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে রয়েছে বিরক্তি। সচিবালয়ে কর্মরত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের আস্থাভাজন কিছু ব্যক্তি যাঁরা এটা বলবত্ রাখতে চান, তাঁদের তো নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসতে হয় না। তা ছাড়া তাঁদের জন্য গাড়িসহ সব ব্যবস্থাই থাকে। তাই সাধারণের অসুবিধাটা তাঁরা বোঝেন না।
বিদ্যুত্ সাশ্রয় ছাড়া সরকার শীতকালেও বর্তমান সময় বহাল রাখতে চায় যানজট নিরসনে গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু গত কয়েক দিনে যানজট পরিস্থিতির ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন হয়নি। তা ছাড়া, সরকার সময় নির্ধারণ করলেই যে সবাই শত অসুবিধা সত্ত্বেও তা অনুসরণ করবে বা করছে—এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই।
ঢাকার কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ‘ডিজিটাল সময়’ চালু করার পর থেকে তাঁরা আগের মতো সকাল সাতটায় রাস্তায় বের হন না। বের হন সাড়ে সাতটা থেকে আটটায়। এ কারণে সকালে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যানবাহন পেতে ভোগান্তির একশেষ হচ্ছে।
একটি বাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক বলেন, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনার পর থেকে সকাল সাতটায় আর তাঁরা দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েন না। তিনি বলেন, ‘কারণ যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই সাতটার সময় আটটা করা হয়েছে। এখন হয়তো এই সময় আরও পিছিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
যেসব ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল ছয়টা, শীতকালে সেসব ট্রেনে মানুষ ভ্রমণ করবে কী করে? যদিও ট্রেন চলাচলের জন্য শীতকালীন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তা তো করা হয় আগে অনুসৃত সময় অনুযায়ী। রেল বিভাগের একজন কর্মচারী বলেন, ‘সময় নিয়ে এভাবে খেলা করলে প্রতিদিন অনেক যাত্রী ছিনতাই-রাহাজানির কবলে পড়বে।’

সূত্র : প্রথম আলো : Click This Link
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×