somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিজব-উত-তাহরির

২৬ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিজবুত তাহরীর বা হিজব-উত-তাহরীর নিয়া আমার আগ্রহ কোনো কালে আছিল না। এখনও নাই। প্রথম থেকে হিজবুত তাহরীর আমার কাছে একটা ঝাকমারি ইসলামী সংগঠন। প্রথম দিন এক পথচারী এদের যে প্রচারপত্র আমার কাছে বিলি করছিল তাতে প্রথমেই টাসকি খায়া গেছিলাম। ৮০ গ্রাম অফসেটে রঙিন ছাপায় খিলাফতের কথা। ওনাদের প্রচারপত্র নিয়া, আপন মনেই মন্তব্য করছিলাম- ইন্টারেস্টিং! ইন্টারেস্টিং বললে এক ধরনের আগ্রহের প্রকাশ পায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
বাংলাদেশ গরীব-দুঃখী মুসলমানের দেশ। এই দেশে ইসলামের নামে যারা রাজনীতি করে তারা বায়তুল মোকাররমের গেটগুলা থেকে বাদজুমা এ যাবত যে সব দাবি তুলেছে তাতে গরীবের কোনো কথা শুনা যায় নাই। গরীবের দুঃখ বঞ্চনা নিয়া তাদের কোনো চিন্তা দেখা যায় নাই। যেসব বিষয়ে তাদের অত্যধিক আগ্রহ সেইগুলা হইলো, কাউকে কাফির, নাস্তিক, নাফরমান ঘোষণা কইরা, তার মাথার দাম ঘোষণা কইরা তারে দেশ থেকে খেদানোর আন্দোলন। তারা এইসব আন্দোলন কইরা কার উপকার এ যাবত করছে এই নিয়া প্রশ্ন তোলা যাইতে পারে। ইসলামী রাজনীতির অর্থ এই দেশে হইলো ইসলাম রক্ষার আন্দোলন। জনগণের আন্দোলন হিসাবে, জনগণের দাবির পক্ষে কখনোই এই দেশে ইসলাম পন্থী রাজনৈতিক দলগুলা দাঁড়ায় নাই।
ফলে, গণতান্ত্রিক রাজনীতি আমি পছন্দ করলেও এবং সকলের রাজনৈতিক অধিকার সমর্থন করলেও বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বাইর হইলেই উদ্বেগ কাজ করে। শুনা যায়, এইসব রাজনৈতিক দলগুলা নানা বড় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। শুধু অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতা তৈরির জন্যই এদের মাঠে নামানো হয়। ইস্যু তৈরি করে এদের মাধ্যমে অন্য কারো স্বার্থ হাসিল হয়। ফলে, বাংলাদেশে ইসলাম পন্থীদের রাজনীতি কোনো দিনই ব্যাপক গণাভিত্তি পায় নাই।
হিজবুত তাহরীরও এর থেকে আলাদা কিছু না। শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, ইংলিশ স্কুলগামী মুসলিম নওজোয়ানদের সংগঠন এটি। বায়তুল মোকাররম ভিত্তিক পুরানা দলগুলাতে তবু গরীবদের কিছু অংশগ্রহণ আছে। কিন্তু এদের সেটাও নাই। এরা জনবিচ্ছিন্ন অফসেট প্রকাশনার বিপ্লবী। প্রথম দিকে বায়তুল মোকাররমে এরা যখন গিয়েছিল তখন নাকি পুরানা ইসলামপন্থীরা ভয় পেয়ে গেছিল। অবশ্য ধীরে ধীরে তারা এইটুকু প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারা শিক্ষিত, বড় লোকের ছেলেদের একটি ইসলামী দল ভিন্ন আর কিছু না। কর্মসূচির দিক থেকে এরা নতুন কিছু করে নাই। নেগেটিভ রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে নিজেদের আগাগোড়া সীমাবদ্ধ রেখেছে। সবার মনে পড়বে, প্রথম আলোর বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতার কথা। জরুরি অবস্থার মধ্যে তারা যেভাবে বিনাবাধায় কর্মসূচি পালন করেছে তাতে অনেকে মনে করে, সেনা সমর্থিত সরকারের সমর্থক ড. জেকিল ও মি. হাইড অংশের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। প্রথম আলো এখানে ড. জেকিল। আর হিজবুত তাহরীর মি. হাইড।
হিজবুত তাহরীর ঠিক হউক ভুল হউক যে কোনো দাবি নিয়া মিছিল করতে পারে। কিন্তু তাদের দাবি যখন হয়, প্রথম আলো বন্ধ কইরা দেওয়া তখন সন্দেহ তৈরি হয়। একটি গণমাধ্যম বন্ধ কইরা দেওয়ার দাবি কোনো ভাল উদ্দেশ্য থেকে উঠতে পারে না। প্রথম আলোর সমালোচনা হইতে পারে, তাদের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রোপাগান্ডা চলতে পারে। প্রতিবাদ হইতে পারে। কিন্তু ধর্মের ঢাল ব্যবহার কইরা তাদের কণ্ঠরুদ্ধ করার দাবি কোনোভাবেই মানা যায় না। প্রথম আলো বন্ধ করলে কি দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে? ইসলামী রাজনীতি কায়েম হবে? নাকি কারো গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষিত হবে?
এর বাইরে হিজবুত তাহরীর যেসব দাবি তুলেছে বা আন্দোলন করেছে তাতে সেমিনার সিম্পোজিয়াম ভিত্তিক ইসলামী সেমি বুদ্ধিজীবীর দল মনে হয়। মাথায় খিলাফতের ইউটোপিয়ান আইডিয়া নিয়া এরা রাষ্ট্র, সংবিধানের সমালোচনা করতেছে। রাষ্ট্র ও সংবিধানে অনেক অসঙ্গতি আছে। সংবিধান সংশোধনের দাবি করা যাইতেও পারে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাইতে কম ইউটোপিয়ান। খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগ শেষ। আব্বাসীয়, উমাইয়া, ওসমানীয়া খলিফার যুগও শেষ। বর্তমানে মুসলিম প্রধান দেশগুলা আলাদা জাতি রাষ্ট্রে স্বাধীন হয়ে আছে। এইখানে খেলাফত কেমনে কায়েম হবে? মুসলিম জাহান বইলা কি কোনো কিছু আছে? এই দুনিয়ায় আমিরুল মোমিনিন কেমনে নির্বাচিত হবেন?
হিজবুতের মূল লক্ষ খিলাফত প্রতিষ্ঠা। তারা গণতন্ত্র মানে না, গণতন্ত্র না মানা অপরাধ না, এইটা একটা চয়েস। আমার মতে, এই চয়েস গণতান্ত্রিক সমাজে থাকা উচিত। রাষ্ট্র ও সংবিধানের সমালোচনার অধিকারও থাকা উচিত। তারা ভারতের আধিপত্যবাদ বিরোধী যে কর্মসূচিগুলা পালন করছে সেগুলাও তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী, হুজুকবাদী সংগঠন হিসাবে গত ৯ বছরে তাদের অর্জন কিছু নাই। আধা গোপন আধা প্রকাশ্য তৎপরতার মধ্যে কোনো গণভিত্তির লক্ষণ দেখা যায় নাই। বায়তুল মোকাররমে ইসলাম গেল হুজুক তুলে যে কারো পক্ষে মিছিল হয়তো নামানো সম্ভব। কিন্তু সেইটা দিয়া তিনমাস জনগণের মধ্যে থাকা সম্ভব না।
এমনকি শ্রেণীগত অবস্থান থেকে এই লোকগুলার পক্ষে অস্ত্রধারণ করে জিহাদের ডাক দেওয়াও অসম্ভব। গরীব-দুঃখী মাদ্রাসার ছাত্ররা যে ক্ষুধা ও ক্ষোভ থেকে অস্ত্র ধারণ করে সেই ক্ষুধা ও ক্ষোভ এদের আছে বইলা মনে হয় না। অথচ এদের জঙ্গি বলে অভিহিত করা হইতেছে। আমার তো মনে হয়, আমাদের প্রগতিশীল পত্রিকা, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা ডিক্সেনারি পড়াও বন্ধ কইরা দিছে। অন্তত ডিক্সেনারি পড়লে এরা জঙ্গি শব্দটার মানে বুঝতো।
সরকার হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করছে। আমার মতে, এইটা সরকারের বোকামীপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কেন?
১. তাত্ত্বিকভাবে দেখলে, যে জঙ্গি হবে সে চোখের সামনে দিয়া এমনে ঘুরাঘুরি কইরা জঙ্গি হবে এমন ভাবা বোকামী।
২. কেউ প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চাইলে তাকে মোকাবিলা করা সহজ, তার বিরুদ্ধে কথা বলা সহজ, কিন্তু নিষিদ্ধ করলে আড়ালে গিয়া সে কী করবে এইটা কেউ বলতে পারে না।
৩. সরকার এখন পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে জঙ্গিত্ব ও নাশকতার কোনো প্রমাণ দাঁড় করাইতে পারে নাই।
৪. সরকার চেষ্টা করতেছে রাষ্ট্রদোহীতার মামলা করতে। রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলাও শেষ পর্যন্ত দাঁড় করানো সম্ভব কি না সেটাও গুরুতর ভাবনার বিষয়।
৫. হিজবুত তাহরীর একটা উটকো প্রচারণা পাইলো, এই নিষিদ্ধ করণের মধ্য দিয়া।
এ পর্যন্ত টেলিভিশনে পত্রিকায় যা দেখলাম তাতে ইসলামী বই, ব্যানার ফেস্টুন ছাড়া নাশকতামূলক কিছু মেলে নাই। এইসব আলামত দিয়া কী করা সম্ভব কে জানে।
অবস্থা দেখে বুঝা যাইতেছে, অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও হুজুগে এই সংগঠনটিকে সরকার অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও হুজুগে কায়দায় বন্ধ কইরা দিতে চাইতেছে। হিজবুত তাহরীরের মতো সংগঠন বন্ধ হইলে আমার দুঃখের কিছু নাই। বরং আমার প্রশ্ন রাষ্ট্র কেন কন্সপিরেসির এইসব উপাদান পুষে বড় করে আবার মাইরা ফেলে, আবার জাগায় আর তুলে আর চাপা দেয়?
আমি বরং চিন্তিত সরকার ও রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কিছু প্রবণতা নিয়া। কচু কাটতে কাটতে তলোয়ার ধার দিতেছে না তো সরকার? বিরোধী মতের দল, পীড়নের হাতিয়ার শান দিতেছে না তো? আমাদেরকে যুক্তিহীন, অনুমান ভিত্তিক হুজুগে পুলিশি রাষ্ট্রের দিকে নিয়া যাইতেছে না তো? ফলে, সরকারের হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করার ঘটনায় যারা উল্লসিত তাদের একটু ভাবতে বলি। একটা কথা আছে, ডাকাত মাইরা শুরু করলে পরে ভাল মানুষরে ডাকাত বইলা মারা সম্ভব হয়।
তাই নাগরিকদের উচিত বিষয়গুলার দিকে খেয়াল রাখা।
৩৮টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×