somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ভিত্তিহীন ভুতুড়ে গল্প

২৪ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নুরুল হক সাহেবের বাড়িটা দুর থেকে বাগান বাড়ির মত লাগে ।বিভিন্ন রকমের গাছ গাছালি দিয়ে চারদিক ঘেরা,সামনে পিছনে দুইটা পুকুর ।পনের কামরা বিশিষ্ট একটা বড় আধুনিক দালান যেখানে শুধু পাঁচটি প্রানী বাস করেন । উনি,উনার বউ,দশ বছরের ছেলে আসিফ,সাত বছরের মেয়ে সাবিনা এবং কাজের মহিলা জলিকার মা । নুরুল হক সাহেবের পাঁচ ভাই,বাকী চার ভাই পরিবার সহ আমেরিকাতে থাকেন । উনি ও একবার আমেরিকাতে গিয়েছিলেন,ভাইয়েরা চেয়েছিলেন উনি ও যেন উনার ফেমিলি নিয়ে আমেরিকাতে উনাদের সাথে স্হায়ীভাবে থাকেন । কিন্তু উনার আমেরিকা ভাল লাগেনি,তাই দেশে ফিরে এসেছেন । উনি প্রায়ই একটা কথা বলেন,উনার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও নাকি উনি শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না । তাই উনি উনার পরিবার নিয়ে দেশে থাকেন ।
নুরুল হক সাহেব মানুষ হিসাবে কেমন সে সম্পর্কে কেউ কোন সঠিক ধারনা দিতে পারে না । একেকজন একেক কথা বলে । তবে উনার সুনামের চেয়ে দূর্নামই বেশি প্রচলিত । একবার নাকি উনি উনার বাড়িতে এক চোর ধরে,চোরকে নিজ হাতে জবাই করে ফেলেন । প্রতি মাসে নাকি উনার বাড়িতে একটা আসর বসে,যেখানে মদের নেশা চলে আর বাজার থেকে মেয়ে আনা হয় । যদিও এর কোন সত্যতার প্রমান এখনও বাস্তবে পাওয়া যায়নি.।

আসিফ ক্লাস ফাইভে,সাবিনা ক্লাস থ্রিতে পড়ে । ওদের স্কুলে,মক্তবে নিয়ে যাওয়া আসার জন্যে জলিকার মাকে রাখা হয়েছে বাড়িতে । ঘরের অন্যন্য কাজ ও করে । ও প্রতিদিন সকালে নুরুল হক সাহেব ও উনার ঘুমে থাকতে থাকতে আসিফ ও সাবিনা কে মক্তবে দিয়ে আসে । মক্তবে দিয়ে এসে সকালের নাস্তা শুরু করে ঘরের যাবতীয় কাজ শেষ করে আবার ওদের মক্তব থেকে নিয়ে আসে । এভাবে জলিকার মার প্রত্যহ দিন শুরু হয় । জলিকার মা একটু অদ্ভুদ টাইপের মহিলা । ও খুব কম কথা বলে,কাজ ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না । সবসময় একা একা থাকে । এরকম থাকার পিছনে কিছু যুক্তি আছে । ওর তের বছর বয়সে বিয়ে হয়,সতের বছর বয়সে ও বিধবা হয় । ওর স্বামী সাপের কামড়ে মারা যায় । ওর মেয়ে জলিকা বার বছর বয়সে মারা যায় । কেউ জানে না ও কিভাবে মারা গেল । ওর লাশ পাওয়া গিয়েছিল গ্রামের দক্ষিন দিকে এক পরিত্যক্ত পুকুরে ভাসা অবস্হায় । জলিকার মূত্যু নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে,সেটা হল কে বা কারা নাকি জলিকাকে ধর্ষন করে মেরে পুকুরে লাশ ফেলে দিয়েছে । যদিও এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি । এরপর থেকে নাকি জলিকার মা এরকম কিছুটা অস্বাভাবিকের মত হয়ে গেছে ।

জলিকার মা প্রতিদিনের মত আসিফকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মক্তবে নিয়ে যাওয়ার জন্যে । আসিফ ঘুম থেকে হাত মুখ ধোয়ে মক্তবে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়ে জলিকার মাকে জিজ্ঞেস করে সাবিনা কোথায়, ও প্রস্তুত হয়েছে কিনা । জলিকার মা বলে ভাইজান আইজ আপারে একটু দেরিতে নিয়া যামু, উনার একটু শরীর খারাপ,আপনাকে দিয়া আইস্যা উনারে নিয়া যামু ।উনি আরেকটু ঘুমাক । আসিফ আর কিছু না বলে জলিকার মার সাথে মক্তবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল । ঘর থেকে বেরুতেই আসিফের কেন জানি ভয় লাগল,তার মনে হল এখন ও সকাল হয়নি,রাত এখন ও বাকি । আসিফ জলিকার মাকে জিজ্ঞেস করল বুয়া আমার মনে হচ্ছে এখন ও সকাল হয় নি । সে সাথে সাথে বলে উঠল কি বলেন ভাইজান,দেখেন না চারদিক কেমন ফরসা । আসিফ আর কিছু না বলে ওর সাথে হাঁটতে লাগল ।মসজিদের কাছে পৌছতেই হঠাৎ আসিফ দেখে জলিকার মা তার পাশে নাই । সে থতমত হয়ে চারদিক তাকাল । দুইবার বুয়া বুয়া বলে ডাকল । দেখে তার চারপাশে কেউ নাই,চারদিক নিরব । সে সাথেসাথে বোঝে নিল,এখন ও সকাল হয়নি,চারদিক এত আলোকিত কারন আজ ভরা পূনিমা । আসিফ ভয়ে কাঁপতে লাগল । চিৎকার করতে চাচ্ছে কিন্তু মুখ থেকে কোন শব্দ বের করতে পারছে না ।তার হাত পা শক্ত হয়ে আসছে ।কোনরকম বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল । এমন সময় পিছন থেকে শুনতে পেল ঘোড়ার ডাকের মত শব্দ,পিছনে মসজিদের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা উচু উলঙ্গ মানুষ তার দিকে দৌড়ে আসছে,যার মুখ ঘোড়ার মত । সামনে চেয়ে দেখে হাজার হাজার ভেড়া তার দিকে তেড়ে আসছে । কান্না জড়ানো গোঙ্গানির শব্দে,উপরের দিকে চেয়ে দেখে তার ঠিক মাথার উপরে কে যেন সাদা কাপড় পরে ঘোমটা দিয়ে শূন্যে বসে আছে । তার দু পা সাপের মত কি একটা পেছিয়ে নিচ্ছে,পানিতে ডুবলে যে রকম শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে সে রকম যেন তার ও শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ।

পরেরদিন সকালে আসিফ কে মসজিদের পাশে অজ্ঞান অবস্হায় পাওয়া যায় । আর সাবিনাকে অজ্ঞান অবস্হায় পাওয়া যায় পুকুর পাড়ে । জলিকার মাকে কোথাও খোজে পাওয়া যায় না । দুই দিন পর জলিকার মার লাশ পাওয়া যায় গ্রামের দক্ষিন দিকে এক পরিত্যক্ত পুকুরে যেখানে তার সুন্দরী মেয়ে জলিকার লাশ পাওয়া গিয়েছিল ।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×