somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***দৃষ্টি আকর্ষণ: আল-ওহ্হাব অর্থ: সব কিছুর দাতা অর্থাৎ যিনি সব কিছু দান করে থাকেন*** (উৎসর্গঃ তুষারপাত)

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল-ওহ্হাব (الْوَهَّابُ) অর্থ: সব কিছুর দাতা অর্থাৎ যিনি সব কিছু দান করে থাকেন
মহান আল্লাহ তাআলার যে ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো শুধু আল্লাহর জন্যই, কারণ এইগুণগুলো শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে

إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ (ইন্নাকা আনতাল ওহ্হাব)
অর্থ: তুমিই সব কিছুর দাতা। (সূরা আল ইমরান : ৮)

رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ ( রাব্বানা লা তুজ্বিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লা জুনকা রহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওহ্হাব)
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। (সূরা আল ইমরান: ৮)

কেউ যদি আল্লাহর গুণবাচক নাম রাখতে চায় তাহলে সে সরাসরি সেই নাম রাখতে পারবে না কারণ আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো শুধু আল্লাহর জন্যই, এইগুণগুলো শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে, অন্যকারো নেই।
তবে আল্লাহর গুণবাচক নামের আগে “আবদ” (عبد) যার অর্থ হচ্ছে বান্দাহ বা দাস, যুক্ত করে সে নামটি রাখতে পারবে। যেমন: আর-রহমান অর্থ পরম করুণাময়, এখন কেউ যদি শুধু রহমান নামটি রাখতে চায় তাহলে রহমান শব্দটির আগে “আবদ” শব্দটি যোগ করতে হবে; আব্দুর রহমান যার অর্থ হলো পরম করুণাময়ের বান্দাহ বা দাস। আবার, আব্দুল্লাহ যার অর্থ হলো, আল্লাহর বান্দাহ বা দাস

একইভাবে কেউ যদি ওহ্হাব নামটি রাখে তখন হবে আব্দুল ওহ্হাব অর্থাৎ সব কিছুর দাতা’র বান্দাহ বা দাস

ব্লগের একজন জ্ঞানী লেখক তার অনেক লেখাগুলোতেই ‘ওহাবী’ বলে সউদি সরকারকে গালাগালি করে থাকেন এবং সেই সাথে আমাদের দেশেও অনেক মানুষকে এই নামটা বলে গালাগাল করা হয়। এইভাবে “ওহাবী” বলে কাউকে গালাগাল করাটা মোটেই ঠিক না কারণ এইটা আল্লাহ একটি গুণবাচক নামকে বিকৃত করে তৈরী করা হয়েছে।

কিভাবে এই নামের সূত্রপাত হলো সে সম্পর্কে একটু তথ্য দিই:
মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব হিজরী দ্বাদশ শতকের একজন অন্যতম আলেম ছিলেন। তিনি ১১১৫ হিজরী মোতাবেক ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে সউদি আরবের নাজদ এলাকায় এক ধর্মপ্রাণ ও সম্মানিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। উনার পিতা ছিলেন একজন খ্যাতনামা আলেম এবং তার নাম ছিল আব্দুল ওহ্হাব

আরবী লোকদের নাম রাখার স্টাইল হলো, তাদের নাম থাকে একটা আর এরপর তারা তাদের নামের সাথে তাদের বাবা’র নাম, দাদার নাম যোগ করে রাখে।
যেমন: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু) যার অর্থ হলো, উমরের পুত্র আব্দুল্লাহ। আবার আনাস বিন মালিক যার অর্থ মালিকের পুত্র আনাস। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে, আসমা বিনতে আবু বকর অর্থ আবু বকরের মেয়ে আসমা

অর্থাৎ ইবনে এবং বিন শব্দটির অর্থ হচ্ছে ছেলে আর বিনতে শব্দটির অর্থ হচ্ছে মেয়ে। আপনারা হয়তো অনেক সময় খেয়াল করে থাকবেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক সময় মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ বলা হয়ে থাকে যার মানে হলো, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ, কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ

এখন মূল ঘটনায় আসি, মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব যার অর্থ হলো আব্দুল ওহ্হাবের পুত্র মুহাম্মদ। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব শিরকের বিরদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ইসলামকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার জন্য আহবান জানান। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীদের তথা ইসলামের শত্রুদের এই বিষয়টি পছন্দ হলো না, তাই তারা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব এর শিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ভিন্নখাতে প্রাবাহিত করার জন্য নানা ধরণের প্ররোচনা চালায় আর এ জন্য তারা একটা যুতসই উপাধি খুজছিল। যেহেতু উনার আসল নাম হচ্ছে মুহাম্মদ যা আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি নাম, তাই মুহাম্মদী বা মুহাম্মদী ইসলাম বলে যদি প্ররোচনা চালানো যায় তাহলে লাভ হবে না বরং হিতে বিপরীত হবে। তাই তারা “মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব” নামটি থেকে ওহ্হাব নামটি নিল আর তাকে উপাধি দিল ‘ওহাবী’ বলে। কেউ শিরক বিরুধী কোন কথা বললে, বিদআত বিরুধী কোন কথা বল্লে এবং সহীহ হাদিসের অনুসরণ করলে তাদের “ওহাবী” এবং সউদি সরকারের দালাল বলে গালিগালাজ করা হয়ে থাকে আমাদের দেশে। যা মোটেই ঠিক নয়, কারণ আমি লেখার শুরুতেই বলেছি আবারও বলছি, “ওহ্হাব” নামটি হচ্ছে আল্লাহর একটা গুণবাচক নাম আর এই নামের বিকৃত করে উপস্থাপন কারা মোটেই ঠিক নয়। আপনাদের যদি তাদের ভাল নাই লাগে তখন চুপ থাকুন আর যদি গালিগালাজ করতেই হয় তাহলে অন্যকোন নাম বেছে নিন, দয়াকরে “ওহাবী” বলে গালিগালাজ করবেন না।

ব্লগের এই জ্ঞানী ব্লগার এত কিছু জানেন অথচ তিনি এই বিষয়টি কেন জানেন না তা আমার বোধগম্য হলো না। কারণ, উনার লেখা দেখলেই বুঝা যায় উনি অনেক পড়াশুনা করেছেন তবুও তিনি কেন এই গালিগালাজটি ব্যবহার করে ইসলাম বিরুধীদের সাথে তাল মেলান তা আমি বুঝতে পারলাম না। উনার নিকট আমার অনুরোধ রইল, গালিগালাজ যদি করতেই হয় অন্যকোন নাম ব্যবহার করুন, দয়াকরে “ওহাবী” নামটি ব্যবহার করবেন না।

মহান আল্লাহ আমাদের শয়তান ও তার অনুসারীদের, বিভ্রান্তকারীদের, বিদআতীদের এবং শিরকপূর্ণ কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে হিফাজত করুন। আমীন।


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৩৯
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×