somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বৃদ্ধ বয়সের অলস ভাবনা! এডিটেড!

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পার্কের বেন্ঞ্চে একাই বসে, সবুজ ঘাস গুলো ঢেকে গেছে ঝরে পড়া লাল হলুদ ম্যাপলের পাতায়। কিছু দিন আগেও পাতাগুলো সবুজে ছেয়ে ছিলো পুরো পার্কটায়। শীতের সময় আসছে বলেই পাতাগুলো ঝরে পড়েছে। বৃদ্ধ ভাববার চেস্টা করে কতগুলো শীত সে জীবনে যে দেখেছে হাসতে খেলতে।

খুবই সোজা হিসাব, নিজের বয়সের হিসাবের সাথে মিলিয়ে নিলেই হলো! বৃদ্ধ নিজেই আনমনে হেসে ভাবে কতগুলো শীত সে খুব সুখে কাটিয়েছে। স্মৃতির পাতাগুলো মাঝে মাঝে উল্টোতে বিরক্তি লাগলেও স্বল্প দৈর্ঘ্যের দিনে যৌবনের ভাগটার কথা মনে পড়তে বড় সুখ লাগে তার। বাসায় গিয়ে কি আর করবে, দুটো আলু সেদ্ধ আর কিছু লেটুস পাতা। ডাক্তারের কড়া বারন গুরুপাকে!

ইদানিং বাসায় থাকতে মোটেও মন টিকছে না, গতকাল টেলিফোন লাইনটা কেটে দিতে বলা হলো, কারন কাউকে ফোন করবার নাই, টেলিভিশনে তেমন কিছু দেখাও যায় না, সব যাচ্ছে তাই। অথবা মুভী....হলিউডের কারনে এখন এদেশে ২-৩ মাসে একটা মুভী মুক্তি পায় আর তাও যা হয় সবই বস্তাপচা। দেশটা কেমন যেন পাল্টে গেলো। পাল্টে গেলো হয়তো নিজের জীবনটাও।

একটা দুঃখের স্মৃতি খুব মনে পড়ে। তখন দেশে থাকতে কাউকে খুব মনে ধরেছিলো। একটা গোলাপ নিয়ে প্রতিদিন বনানীর অন্জ্ঞনসের সামনে অপেক্ষা করতে ভালোই লাগতো। সে উত্তরা থেকে আসতো। একটা ফোন দিতো অবস্হান জানার জন্য, তারপর অকারন ঘোরাফেরা অথবা ওর শপিং। তারপর কোথাও বসে একটু ফ্রেন্ঞ্চ ফ্রাই অথবা মুড়ি মুড়কি, বেশ ভালোই। একদিন সেই দেখাটা বন্ধ হয়ে গেলো। সম্পর্কগুলো চোখের পলকেই শেষ, হ্রদয়ে তখন গভীর ক্ষত থাকলেও ক্যারিয়ার অথবা আকাশ ছোবার স্বপ্ন গুলোর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবার জন্য ছুটা শুরু করলো অবিরাম। একসময় দেশ ছাড়লো, খুব কস্টে চলছিলো প্রথম দিন গুলো এখানে, আবহাওয়া, চালচলন, অর্থনৈতিক সবকিছু নিয়েই বিদিকিচ্ছিড়ি। হঠাৎ একদিন কোনো এক বন্ধুর দেয়া ভিডিওর লিংকে ওর বিয়ের অনুষ্ঠান দেখলো,


মনে পড়ে সেই অনুষ্ঠানে বেজেছিলো বিসমিল্লা খার সানাই: কাভি কাভি মেরে দিল মে.......

তারপর কতরাত নির্ঘুম কেটে যায়, শুধু কর্তব্যবোধগুলো রক্তে এ্যাড্রিনালিনে নাড়া দিতো বলেই হয়তো এগিয়ে যাওয়া চলছিলো। একদিন কর্তব্যবোধের দিন ফুরোলো, কিন্তু আয়নায় তাকাতেই দেখে বড্ড দেরী হয়ে গেছে। খুব করে কাদতে মন চাইছিলো তখন, কিন্তু কোনো এক শীতকালে কেউ কাদতে বারন করেছিলো, কারন কাদলে নাকি অশ্রূগুলো জমে যাবে! হাহাহাহাহা.........

সবাই যে যার পথে চলে গেলো, কেউ কেউ খুব ঘনিষ্ঠ চিরবিদায়বেলায় নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ মনে হওয়া শুরু করলো।

একবার খুব গো ধরে বসলো, যৌবনে স্বপ্ন ছিলো তার শেষ জীবন কাটুক সাগরে, মন খুব চাইছিলো সাগর পাড়ে একখন্ড জায়গা কিনে কাটিয়ে দিক বাকিটা জীবন। খুব সুন্দর একটা বাংলো থাকবে থাকবে সেখানে অটবীর আসবাব, যেমনটি তার প্রিয়তমা সাজাতে চেয়েছিলো তার ছোট্ট সবার ঘর আর ড্রয়িং। তবে একটা ডেস্লে লুকোনো থাকবে একটা রিভলবার আরেকটা গুলি। যখন হয়তো মনে হবে এই জীবনটা বেচে থাকা মানে একটা বোঝা বয়ে বেড়ানো তখনই গুলিটা রিভলবারে ভরে মাথার এক কোনায় বসে টেনে দেবে ট্রগার। বন্ধ হোক যত মনের উচাটন! পরে ভাবলো কি মানে হয় এমন কাপুরুষতার, একবার দেখুক না ভবিষ্যতটা, হয়তো কিছু দেখার আছে অদেখার, অথবা জীবনের মানে হয়তো কোনদিন পাল্টাবে! ভাগ্য তো সবারই বদলায়!

বাড়িয়ে দিলো কাজের পরিমান, ব্যাংকে জমলো প্রচুর পয়সা, সেই পয়সা দিয়ে হয়তো আকাশের মালিকানাও দাবী করা যেতো, ভাগ্য তার আসলেই বদলাল। কিন্তু এই অর্থহীন মালিকানা নিয়েই কি হবে, কে দেখবে! এখন লাভ ক্ষতির কোনো হিসাব নাই, শুধু হিসাব আর কতদিন এরকম শীত গ্রীস্ম দেখবো ভীন দেশে। ভীন দেশের শীত গ্রীস্মে দেশের গায়ের সেই সোদা গন্ধ নেই, নেই খেজুড়ের রস খাবার সুযোগ, অথবা মেলার মাঝে হাওয়াই মিঠাই অথাব ক্যান্ডি ফ্লস খাবার বাসনা, অথবা কারো চোখে চোখ রেখে জীবনটা কাটিয়ে দেবার সংকল্প বোধ!

বয়স খুব বাজে ভ্রমন সঙ্গী- মনে হয় না; বয়স একটা খুব বাজে বাস্তবতা, যাকে একসময় হাড়ে হাড়ে বুঝা যায়!!

হঠাৎ দূর থেকে গীর্জার আওয়াজে ঘোর কাটে, ঘড়িতে দেখে বুঝতে পারে বাড়ি ফেরার সময় হলো, একটু পর সন্ধ্যা নামবে, শীতের সন্ধ্যা!

অনেক আগে শোনা মাকসুদের একটা গান

দিনের আলো নিভে গেলো
রঙ্গের দোকান খেলো
ও বেলা গেলো
এই বার তুমি সাধের দোকান তোলো
এই বার তুমি আপন দেশে চলো!

নিজের আপন দেশ কেমন আছে, জানে না বৃদ্ধ, হঠাৎ সেই সানাইয়ের সুর বুকে বাজে আর চারিদিক সব চুরমার হয়ে যায়!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৫
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×