somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানোর উপায় কী?

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম দেইখা মনে হইতে পারে হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? রাষ্ট্র কি ব্যবসায়ীদের হাতে বিপন্ন হয়া পড়ছে যে শেষমেষ সেনাবাহিনী, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক, আমলাদের হাত থেকে বাঁচানোর চাইতে ব্যবসায়ীদের হাত থেকে দেশ বাঁচানোর ধূয়া তুলতেছেন? মাথা ঠিক আছে তো ভাইটি?

হয়। মাথা ঠিক আছে। আর সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিস্কে প্রশ্নটা করতেছি বইলাই আপাতত বিশ্বাস করতেছি।

আমাদের সমাজে, পৃথকীকরণ, সেপারেশন, স্বাধীন খুব পরিচিত শব্দ। আমরা বিচারবিভাগের পৃথকীকরণের দাবি তুইলা অভ্যস্ত। বিচার বিভাগের সেপারেশন চাই। স্বাধীন দুর্ণীতি দমন কমিশন বা নির্বাচন কমিশন চাই। এমনকি শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে স্বাধীন সেনাবাহিনী গঠনের প্রতিশ্রুতিও দিছিলেন। দুনিয়ার কোথাও এই জিনিশ নাই। দুনিয়ায় দুই ধরনের রাষ্ট্র আছে। এক ধরনের রাষ্ট্রে সব কিছুর ওপরে সেনাবাহিনী। বন্দুকের ক্ষমতাই সবচেয়ে বড় ক্ষমতা সেইখানে। আরেক ধরনের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে কয়টা গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে সেনাবাহিনী একটা। কিন্তু এই প্রথম স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সেনাবাহিনীর কথা শোনা গেছলো। যাই হউক, বহু সেপারেশনের দাবি তুললেও কখনো ব্যবসায়ীদের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে এই প্রশ্ন এইদেশে উঠে নাই। রাষ্ট্রের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সেপারেশন যে দরকার এইটা কেউ খোলাখুলি বলছেন বইলা মনে পড়ে না।
দুনিয়াটা একটা বাজার। রাষ্ট্রও এই বাজারের আওতাভুক্ত একটা প্রতিষ্ঠান। বাজারের বাইরে কিছু নাই। ফলে, সরকারও বাজারের একটি অংশ। এখন বাজার যদি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। অর্থাৎ বাজারের যারা পরিচালক তারা যদি সরকারেরও পরিচালক হয়া উঠে তাইলে আখেরে বাজারই জনগণের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রক শক্তি, এইটা ধইরা নিতে হবে। ফলে, কার্যত ব্যবসায়ীরা সরকারের নিয়ন্ত্রক শক্তি হইলে নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নিত্যপণ্য সবই বাজারের সওদা হিসেবে কিনতে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের দিকে একবার তাকাইলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাবো ঘটনা এই-ই ঘটতেছে। যার কেনার ক্ষমতা আছে সেই নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, অধিকার কিনতেছে। বাকী নিত্যপ্রয়োজনীয় সওদার কথা বাদই দিলাম এইখানে। তার মানে, সরকার পুরাটা বাজার ও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
কিছু দৃশ্যের কথা আপনাদের মনে থাকার কথা।
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার আগে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি গিয়া তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ কইরা আইছিল। ওই সরকার আসার পিছনে ছিল বাজারের স্বার্থ। কারণ রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে ব্যবসাপাতি হইতেছিল না এইটা ছিল তাদের আসার বড় যুক্তি। ওই সরকার আসার পর তারা বাজার নিয়ন্ত্রণের যেসব উদ্যোগ নিছিল সবই ভেস্তে গেছে। কারণ, সেনাবাহিনীর ওপর দিয়া যে বাহিনী চলে তার নাম ব্যবসায়ী বাহিনী। ওই আমলে বাজার মানুষরে কান্দাইছে। আর মানুষের কান্দন দেইখা সরকারও চোখ মুছতে বাধ্য হইছে।
ওই সরকার যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ আসছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের সফলতা আওয়ামী লীগকে কয়দিন সান্তনা দিলেও এখন জনগণের কান্দন শুরু হইছে। সরকারের হম্বিতম্বি কোনো কামে আসতেছে না। আসলে সরকার হম্বিতম্বি করতেছে কি না তাও বোঝা মুশকিল। কারণ, বিএনপি হোক বা আওয়ামী লীগ সব সরকারে যাদের প্রাধান্য বেশি তারা ব্যবসায়ী। একটি জরিপে নাকি দেখা গেছে এখনকার পার্লামেন্টে ৩৮% এমপি সরাসরি ব্যবসায়ী। আর বাকী রাজনীতিকের অধিকাংশ পেশা হিসেবে ব্যবসাকেই অবলম্বন করেন। মন্ত্রী-মিনিস্টাররা হয় ব্যবসায়ী নয়তো ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি। এমতাবস্থায় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোনো এমপি নিজেদের অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিবে এইটা ভাবা মুশকিল। কোনো মন্ত্রী বাজারকে প্রভাবিত করার জন্য টিসিবিকে কার্যকর করবে অথবা বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগ করবে এইটা বিশ্বাস করা কঠিন। তা হইতেছেও না। ফলে, দিনে দুপুরে পকেট কাটা যাইতেছে মানুষের। দেশ দুইভাগ হয়ে গেছে। একভাবে ব্যবসায়ী আরেকভাগে ক্রেতা।
সরকার ব্যবসায়ীদের পক্ষে কেননা ব্যবসায়ীরাই সরকার।
ফলে, বাজারের বাইরে কোনো সরকারের অস্তিত্ব টের পাওয়া যাইতেছে না। সামনে আরও যাবে না। এখন সেপারেশনের দাবি তুলতে অভ্যস্ত নাগরিকদের উচিত, সরকার থেকে ব্যবসায়ীদের বিচ্ছেদের দাবি তোলা। সরকারকে স্বায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন করা গেলে হয়তো জনগণের সরকার ধারণাটির কিছু বিকাশ হইতে পারে। এরজন্য প্রথমত সরকারকে ব্যবসায়ী মুক্ত করতে হবে। পৃথিবীর সভ্যদেশগুলোতে রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসারত কোনো ব্যবসায়ী সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াইতে পারেন না। আমাদের দেশে রাষ্ট্র তো বটেই, জনগণের সঙ্গে ব্যবসা করে এমন কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া উচিত। কারণ, রাষ্ট্র বলতে জনগণই বুঝতে হবে। ব্যবসা যেহেতু নীতিহীন বিষয়, আর মুক্তবাজার যেহেতু অকাট্য বাইবেল সেহেতু সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের স্থায়ী বিচ্ছেদ না ঘটাইলে আর কোনো উপায় নাই।
কিছুদিন আগে স্পিকার, বর্তমান সংসদকে মাছের বাজার কইছিলেন। পাশাপাশি সংসদের সাংসদদের অনুপস্থিতির আধিক্যে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। স্পিকার যথার্থ খেয়াল করছেন। এত ব্যবসায়ী থাকলে সংসদকে বাজার মনে হওয়ার কথা স্বাভাবিকভাবে। আর অনুপস্থিতির কারণও সেই ব্যবসাই। ব্যবসায় অভ্যস্ত লোকেরা সংসদের চেয়ে বাজারে অভ্যস্ত বোধ করেন, ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়।
সংসদ শুধু সরকারি বা বিরোধী দল অকার্যকর করে না। সংসদ অকার্যকর করে রাখে ব্যবসায়ীরা। তারা টাকা দিয়ে সংসদ কিনে বা দখল করে সেটাকে ঠুঁটো জথন্নাথ বানায়ে এখন ব্যবসায়ে মত্ত। এদের হাত থেকে রাজনীতি, সংসদ ও সরকারকে রক্ষা করতে না পারলে জনগণের রক্ষা নাই।
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×