somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিনার সঙ্গে একমঞ্চে উঠছেন না খালেদা

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য নিরসন দিবসে আয়োজিত সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। শনিবার বিকেল তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার একমঞ্চে উপস্থিত হয়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়ার কথা ছিলো। শুক্রবার বিকালে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, "এক তরফা সহযোগিতা করতে যাওয়াটা অপরাধ, নৈরাজ্য, নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সমর্থন করার সমতুল্য বলে মনে হচ্ছে। "গত কয়েকদিনের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে আমরা দুঃখের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীকালের (শনিবার) সমাবেশে যোগদান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।'' সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, "আমরা সমাবেশে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিনের পরিস্থিতির পর নৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টির জন্য আমার এখানে আজ এই বক্তব্য দিতে হচ্ছে।" বর্তমান সরকারের আমলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য ও দলীয়করণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "সরকার জাতীয় ঐক্য রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা ব্যর্থ সরকারে পরিণত হয়েছে। দেশকে এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে, যেখানে মানুষের সামান্যতম নিরাপত্তা নেই।" বিরোধী দলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের নয় মাসের আচরণকে অতীতের স্বৈরাচারী সরকার ও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরের চেয়েও বর্বর বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য সৃষ্টি ও সহযোগিতার পূর্বশর্ত হিসেবে সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানিয়ে তা পূরণ করে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার আহবান জানান খালেদা জিয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সরকার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলেই কেবল বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। আর তা না হলে দারিদ্র্য মোচনে ঐক্যের আহবান অন্তঃসার শূন্য হয়েই থাকবে।" বক্তব্যের শেষে কবি সুকান্তের কবিতা 'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়' উল্লেখ করে খালেদা বলেন, "বাংলাদেশে যদি দারিদ্র্যর হার কমতে না থাকে, তাহলে মানুষ আকাশে চাঁদ দেখতে পেলেও, খাবার থালায় রুটি- এমন কি ঝলসানো রুটিও আর দেখতে পাবে না।" শনিবার ঢাকায় দারিদ্র বিরোধী সম্মেলনে তাকে আমন্ত্রণের বিষয়ে সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ যে আন্তরিক চেষ্টা করেন তার প্রশংসা করে সে জন্য ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, "আজ (শুক্রবার) একটি পত্রের মাধ্যমে সমাবেশে না যাওয়ার কথা স্পিকারকে জানিয়ে দেওয়া হবে।"

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য নিরসন দিবস উপলক্ষে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত শনিবারের সম্মেলনে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বানের ক্ষণটি এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন স্পিকার। বৃহস্পতিবার সরকারি ও বিরোধী দলের প্রধান হুইপকে নিয়ে সংসদ ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "দেশের প্রধান দুই দলের দুই নেতা একমঞ্চে বসে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একযোগে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবেন। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও অনন্য নজির হয়ে থাকবে। এটি হবে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্র্ত।" হামিদ আরও বলেন, "আমাদের প্রধান দুই নেত্রী আমার কাছে শ্রদ্ধাভাজন। আগামীতে জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে তারা এক হতে পারবেন। এটি (১৭ অক্টোবরের অনুষ্ঠান) তারই শুরু মাত্র।" ওই সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নাল আবদীন ফারুক বলেছিলেন, "১৭ অক্টোবরের সাফল্য নিয়ে সংসদের বাইরে আমরা (সরকার ও বিরোধী দল) এক সঙ্গে কাজ করছি। আশা করছি, স্পিকার বিরোধী দলকে সংসদে আনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন।" বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ কয়েকটি টিভি চ্যানেলকেও জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া শনিবারের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। সরকারকে দলের নয়, দেশের সরকারের মতো আচরণের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, "সারা দেশের প্রতিটি থানায় বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারি দলের লোকজন মিথ্যা মামলা ও হয়রানি-নির্যাতন করছে। "দলীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতির জন্য আমাদের সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকায় সভা-সমাবেশ ডাকলে সেখানে বাধা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হচ্ছে। সরকারি দলের গুণ্ডা-পাণ্ডারা নারী নির্যাতন করছে।" ট্রানজিট সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, "আমরা এশিয়ান হাইওয়ে চাই। কিন্তু কোনও করিডোর চাই না। এশিয়ান হাইওয়ের বিষয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও আলাপ করেনি। ভারতীয় হাইকমিশনারও এ বিষয়ে আলোচনা করতে কোনও যোগাযোগ আমাদের সঙ্গে করেননি।" বৃহস্পতিবার ট্র্রানজিট বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী দল কেন বিরোধিতা করছে, ভারত তা-ও ভাবছে। এ জটিলতা দূর করতে ভারত বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করবে।" সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, "আমরা সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে সহযোগিতা করার কথা বলে আসছি। কিন্ত আপনারতো দেখতেই পারছেন- তারা কি করছে। সরকার-ই দূরত্ব বাড়াচ্ছে।" সরকারকে সময় দেওয়া ও সহযোগিতা করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "সরকার সেই সময়ের মধ্যে নিজেকে শুধরিয়ে নিয়ে দেশের সরকারের মতো দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।" "আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি না দিলেও জনগণ এ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবে। তখন জনগণের পাশে আমাদেরও থাকতে হবে" বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আর এ গণি, এম শামসুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম, সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, এম কে আনোয়ার, বিরোধী দলের প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব আবদুল্লাহ আল নোমান, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য নিরসন দিবস উপলক্ষে ১৬-১৮ অক্টোবর দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে। দারিদ্র্যবিরোধী ক্যাম্পেইন জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, সর্বদলীয় সংসদীয় গ্র"প (এপিপিজি) এবং পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্ট (পিইটি) এর সহযোগিতায় এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×