somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর হাঁটা

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পা নামক যানে ইদানিং খুব বেশি চড়া হচ্ছে । সময় অসময় না মেনেই চড়ছি এই যানে । অজপাড়া গাঁ থেকে এসে শহরের পিচঢালা রাস্তায় হেঁটে কখনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার সাহস থাকবে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। সে ছোটবেলা থেকেই হাঁটায় যত ভয় আমার । কতদিন যে মায়ের সঙ্গে মামা বাড়ি যেতে পারি নি হাঁটতে পারি না বলে, তা হিসাব কষলে ছোটখাটো এক গণিতজ্ঞ হওয়া যাবে বলে আমার ধারণা। যে হাঁটাকে আমি ভয় পেতাম সে হাঁটাই এখন আমার চাকরির মত হয়ে গেছে। যদিও এই চাকরিটা তথাকথিত প্রাইভেট কোম্পানির মত নয়। কারণ রুটিন করে হাঁটার মন মানুসিকতার এখনও অভাব । তবে বিজ্ঞ সরকারি চাকুরিজীবির মত। সরকারি চাকরির তো আর সময় মত অফিসে যেতে হয় না। ঢাকার রাস্তায় হাঁটা স্কুলজীবনে শ্রেণী কক্ষে শিক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বন্ধুর সাথে লাটিম খেলার গল্প বলার মত। মাঝে মাঝে যখন দেখি দুই দিক থেকেই গাড়ি আসছে, তখন আমার ভূমিকা একজন বিজ্ঞ ম্যারাথন দৌড়বিদের মত । অবশ্যই এই ভূমিকায় অনেক কর্মজীবি মহিলাদেরকেও দেখা যায় ঢাকার রাস্তায়। রাজধানী শহর, মানুষ অনেক যানবাহনও অনেক। অনেকে আবার নিজস্ব গাড়ির সুবিধায় রাস্তার সিগন্যালগুলো মানার প্রয়োজনবোধ করে না। যদিও রাস্তাটা তার বাপ দাদার না।
প্রতিদিনের মত সে দিনও হাঁটার উদ্দেশ্যে বের হলাম। তবে হাঁটা আমার উদ্দেশ্য কিন্তু হাঁটার কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আমার ক্ষেত্রে কোন কালেও ছিল না । ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে সারা দিন হাঁটলেও পরিচিত কারও সামনে পড়ার ভয় থাকে না। তাই হেলে দুলে মনের মত করে হাঁটা যায়। যদিও হাঁটার মাধ্যমে অনেক সময় গঙ্গাযাত্রার ভয় থাকে তথাপি হাঁটার আনন্দ পাওয়া যায় সবটুকু। আসতেছিলাম জয়কালি মন্দির থেকে শুক্রাবাদ । যাওয়ার সময় একবার হেঁটে গেলাম, তাই হাঁটার গতি খুবই মন্থর। এই দিক দিয়ে বাসায় আসাও খুব জরুরি হয়ে গেল,কারণ বাসায় এসে আবার একটু পড়তে হবে। যদিও পড়াটা ছিল একটা প্রতারণা নিজের সাথে নিজে, কেন না রেডিমেট পড়ার মাঝে যে শিক্ষার কোন আনন্দ নেই তা ততদিনে বুঝে গেলাম। তারপরও ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক পড়ার ভন্ডামি ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। জয়কালি মন্দির থেকে যখন গুলিস্থান আসলাম তখন এক বাসের হেল্পার ডাকতে ছিল মিরপুর ১০, ১১, ফার্মগেইট........। চিন্তা করলাম নিজেকে খুব ক্লান্ত লাগছে একটু বাসে চড়ে ফার্মগেট চলে যাই, ওখান থেকে না হয় হেঁটে শুক্রাবাদ যাওয়া যাবে। উঠলাম, বাস চালক নেশাগ্রস্তের মত বাসকে হেলে দুলে মাঝারি গতিতে টানতে ছিল। রাত তখন প্রায় দশটা বেজে গেল। প্রেস ক্লাবে আসার পর বাসের হেল্পার হঠাৎ করে বলল, ফার্মগেটের যাত্রীরা নেমে যান, এখান থেকে বাস গেইট লক করে মিরপুরে চলে যাবে। এখন আমার মত অনেক যাত্রী ছিল যাদের গন্তব্য ছিল ফার্মগেইট তারাতো ক্ষেপে গেল। আমি তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলাম। যাত্রীরা কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে নামার সিদ্ধান্ত নিল, তবে শর্ত দিল ভাড়া দিবে না। হেল্পার বলল ঠিক আছে ভাড়া দিয়েন না। সবাই দেখি হাসি মুখে নামতে লাগল, কি করব আমিও তাদেরকে অনুসরন করে নেমে পড়লাম। অতঃপর হাঁটা শুরু করলাম । শাহবাগে পৌঁছার পর আজিজ থেকে এক কাপ চা খাওয়ার ইচ্ছা জাগল, কিন্তু কিছুই করার নেই, দেশের কর্তাদের নিয়ম অনুযায়ী তখন সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যূৎটা যে কেন আবিষ্কার করা হল তা আমার বোধগম্য নয়। আবিষ্কারক কি জানতেন না বাংলাদেশের কথা ? দরকারটা কি ছিল বিদ্যুতের, বিদ্যুৎটা না থাকলে বাঙালিরা আর কিছু না পারে আপাতত অন্ধকারটাকে ভাল ভাবে ব্যবহার করতে পারতো। যে বিদ্যূৎ অন্ধকারকে দূর করে আলো এনে দেয়, সে আলোর জায়গাই যত সব অন্ধকারের কার্যকলাপ। যাই হোক বাসায়তো ফিরতে হবেই,তাই হাঁটা আর থামানো গেল না। শাহবাগ পার হওয়ার আগে রিকশা নেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করলাম না। কিন্তু যখন পরিবাগ রোডে ঢুকলাম তখন মনে ভয় জাগল। অন্ধকার একটু বেশিই ছিল,কারণ আশে পাশে কোথাও কোনো ফ্লাড লাইট ছিল না। পরিবাগ রোডে কয়েকটা রিকশা দেখলাম, ভাবলাম অন্ধকার রাত্রির সঙ্গী হিসেবে একজন রিকশাওয়ালাকে নেওয়া যেতে পারে। তাই এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম পান্থপথ যাবে কিনা, সে বলল যাব তবে ভাড়া হবে বিশ টাকা, আমি কিছু না বলে সামনে হাঁটতে শুরু করলাম। রাস্তা অন্ধকার, আর আমার হাঁটার গতিও খুব বেশি। যখন পরিবাগ ইর্ষ্টান কটেজের কাছে আসলাম কয়েকটা কুকুর সামনে এসে ঘেউ ঘেউ শুরু করল। ভয়ে হার্টবিট সম্ভবত শূন্য,কারণ বাড়তে বাড়তে তা শূন্যে চলে গেল। এমনভাবে সামনে এসে দাঁড়ালো যেন তারা শহরের অন্ধকার রাত্রির একদল ছিনতাইকারী। কাঁধে ছিল একমাত্র সম্বল আমার ব্যাগটা। ভাবলাম খাবার ভেবে আবার ধরতে আসবেনা তো ব্যাগে ? ব্যাগটাকে এমনভাবে গায়ের সাথে চাপটে ধরলাম ঠিক যেন ছোটবেলার ভয়ে রাত্রের কাঁথা মুড়ে দেওয়ার মত। ছোটবেলা যখন রাত্রে কোথাও বের হতাম বন্ধুদের সাথে খেলা কিংবা দুষ্টামি করার জন্য, তখন বড় একটা কাঁথা গায়ের সাথে জড়াতাম, কারণ আমার ধারণা ছিল কাঁথা গায়ে থাকলে পেছনে কেউ হাঁটলে তার শব্দ পাওয়া যাবে না, কারণ আমি মনে করতাম ভূত আমাকে তাড়া করবে বাইরে বের হলে। কারণ ভূতে আমার যত ভয় । কুকুরগুলি সম্ভবত বুঝতে পেরেছে আমি এক বোকা পথিক, কারণ আমি তখন দাঁড়িয়ে ছিলাম । অল্প একটু হাঁটলে তার দ্বিগুণ সমান পেছনে চলে যায়। একসময় কুকুরগুলি আমাকে সেদিনকার মত মহা ক্ষমা ঘোষণা করল। অতঃপর প্রবল বেগে হাঁটা শুরু করলাম । হাঁটি আর পেছনে এমনভাবে তাকায় যেন কুকুরগুলি বুঝতে না পারে আমি তাদেরকে দেখছি। কারণ তখনও আমার ভয় ছিল যদি পেছন থেকে ধাওয়া করে। যাই হোক ধনুকের বেগে হেঁটে প্রধান সড়কে উঠলাম। প্রধান সড়কে তখনও দুই একটা যাত্রীবাহী বাস চলছিল । না সেদিন কোন ছিনতাইকারি আমাকে আক্রমণ করে নি। অনেক হাঁটার পর বাসায় পৌঁছালাম, পেন্ডুলামটা তখন আমাকে জানান দিল রাত এখন পৌনে এগারটা বাজে । বাসায় পৌঁছে জানতে পারলাম আমাদের মহামান্য বুয়া খালার কল্যাণে বাসায় রাতের খাবার তৈরি হয় নি। মাথায় যেন আকাশটা ভেঙে পড়লো। কারণ ততক্ষণে ক্ষিধা চরমে পৌঁছেছে । যেন সারা বিশ্ব জয় করে ঘরে এসে দেখলাম পাতিলে ভাত নেই আর তখনই আমার মতো অনেক অভূক্ত মানুষের কথা মনে করে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×