(ছবি. কমলকুমার মজুমদার)
১২. সারওয়ার রেজা
“তথাকথিত মান ভাষার মান-সম্মান লইয়া ইদানিং আমাগো অনেকের চিন্তাই রিভাইজ হইতেছে দেইখা ভালোই লাগতেছে। এইটা অনিবার্য। প্রতিক্রিয়াশীলরা কয়দিন হইল চিল্লা-ফাল্লা করতে পারব কিন্তু ঠেকানোর উপায় নাই। পয়লা পয়লা খারাপ লাগলেও আস্তে আস্তে সব সইয়া যাইব! আরে ভাই এইটাই হিস্টোরিক্যাল ডিটারমিনিজম। আমি নিজেও ছড়ায় যথাসম্ভব এই ভাষায় মানে আমার প্রকৃত ভাষায় লেখার চেষ্টা করতেছি। কারণ আমাগো মান ভাষায় অবশ্যই আমাগো মান-ইজ্জতের প্রতিফলন থাকতে হইবই।”
- জগলুল হায়দার
এই ‘আমাগো মান ভাষা’ টি নির্ধারণ করছে কে? রাজধানী ঢাকার আজিজ মার্কেট বলয়ের নব্য বুদ্ধিজীবীরাই তো! যে যুক্তিতে নদীয়া-শান্তিপুরকেন্দ্রিক মানভাষাকে ম্লেচ্ছ বলার তাগিদ এঁরা অনুভব করছেন, সেই একই যুক্তিতেই তাঁদের নির্ধারিত ‘আমাগো মান ইজ্জতের প্রতিফলন’যুক্ত ভাষাটিও ব্যক্তিগত চর্চা হতে পারে, বাংলাদেশের মানভাষা নয়। ঢাকার মিশ্র/অবিমিশ্র ভাষার বাইরে পুরো বাংলাদেশের কথ্যরীতি পড়ে আছে ভাই। কোন বিচারে আপনারা আপনাদের এই ‘মান-ইজ্জত’কে সবার ওপর চাপিয়ে দেন? দিনাজপুরের শহর অঞ্চলের মানুষ যে ভাষায় কথা বলছে, গ্রামের লোকগুলো সে ভাষায় বলছে না, নাটোর, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল বা চাটগাঁর লোকেদের (শিক্ষিত বা অন্ত্যজ, যাদের বিবেচনায় আপনারা স্বস্তি বোধ করেন) ভাষা অন্যরকম, ক্রিয়াপদের ব্যবহার, রসপ্রয়োগ, pun… ইত্যাদি যে প্রসঙ্গগুলো উঠেছে—সবই স্বতন্ত্র। তাদের ওপর আপনার পছন্দের মানভাষা চাপিয়ে দেয়া বা দেয়ার প্রক্রিয়া জারি হবে কেন? কেন-ই বা আপনারটাই ‘আস্তে আস্তে সব সইয়া’ যেতে হবে?! মিডিয়াটা আপনার দখলে বলে (সেটা দৈবযোগ বা যে যোগ্যতাতেই হোক না কেন)? ফারুকী, রাইসুরা জনপ্রিয় বা প্রভাবশালী হয়ে গিয়েছেন বলে? ফারুকী এবং তার ভাই বেরাদরদের জনপ্রিয়তায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘করসস্’, ‘খাইসি’, ‘হইতেসে’, ‘খাইতেছে’, ‘হেগো লগে’, ‘আমাগো’ ইত্যাদির যে সংক্রমণ নিজে দেখেছি তা কোনোভাবেই আপনাদের ‘হিস্টোরিক্যাল ডিটারমিনিজম’ হতে পারে না, কৃত্রিমভাবে আরোপিত একধরনের হেজিমনি ছাড়া।
লেখক, শিল্পী তাঁর শিল্প স্বাধীনতার অজুহাত/প্রিভিলেজ থেকে যেভাবে খুশি লিখুন, অন্যের জন্য মানভাষা নির্ধারণ করতে গিয়ে নিজেদের কুয়োর ঘেরাটোপকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করবেন না দয়া করে। [...]
(সম্পূর্ণ বিতর্কের জন্য এখানে ক্লিক করুন।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫২