somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন সক্রেটিসের চেতনাকে ধারণ করি

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিস আমার খুব প্রিয় একজন মণীষী। আমি তাকে মনে করি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে। আপনারা এই মহান ব্যক্তি সম্পর্কে কম বেশী হলেও জানেন। আজ সকালে আমার বাসায় রক্ষীত একটি বই 'আমার জীবন দর্শন' এ সক্রেটিস সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ পড়ছিলাম।প্রবন্ধের কথা গুলো যদিও আপনারা জানেন তবুও এই সাধারণ কিন্তু অসাধারণ কথা গুলো মনে করিয়ে দেওয়াটা কর্তব্য মনে হল। প্রবন্ধটি লিখেছেন গিলবার্ট মারে। বইটি ১৯৬৮ সালে ঢাকাস্হ ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের সহায়তায় সিরাজুদ্দীন হোসেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
কথাগুলো মনে করিয়ে দেওয়া কর্তব্য মনে হল কারণ আজকের এই সমাজে সক্রেটেসের মত মানুষ, যারা কিনা সমাজের ভুলগুলো চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবেন এবং মানুষের মিথ্যা আস্ফালনকে নস্যাৎ করে দিতে পারবেন, তাদের খুব প্রয়োজন। প্রয়োজন তাঁর চেতনাকে বারবার স্মরণ করার। তাঁর চেতনাকে উপলব্ধি করার এবং তা মানুষের মাঝে প্রতিফলিত করার আজ বড় প্রয়োজন। নিচে মারে'র প্রবন্ধটি হুবহু তুলে দেওয়া হল।
"সক্রেটিস(খীষ্ট্রপূর্ব ৪৬৯-৩৯৯)তাঁর অভিজ্ঞান লিপিবদ্ধ করে যাননি। মনে হয়, উক্তিকে কলমের খোচার নিগড়ে অপরিবর্তনীয়রুপে লিপিবদ্ধ করে রাখা পছন্দও করতেন না তিনি।তাঁর মতে জ্ঞানের অনুশীলন হবে চলমান ও জীবন্ত- আলোচনারই অনুরুপ। মানবিক ও সামাজিক সমস্যাবলীকে কেন্দ্র করেই ঘুরে বেড়াতো সক্রেটিসের চিন্তাধারা। বিজ্ঞতা কি, সদগুণ কাকে বলে, আর কি করে মানুষ সৎজীবন যাপন করতে পারে- এ কয়টি প্রশ্নের উত্তরই তিনি খুজেছেন আজীবন। এ ধারণা তাঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো যে, প্রকৃত জ্ঞান- এমনকি নিজ প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্বন্ধেও মানুষের জ্ঞান নিতান্তই সীমাবদ্ধ। তিনি প্রকাশ্যেই বলতেন, নিজেও তিনি কিছুই জানেন না। কোন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবি করতেন যাঁরা, সেটা যে তাঁদের নিছক মতামত - অনেক স্হলে অস্পষ্ট ধারণার উধের্ব কিছু নয়, তা প্রমাণ করতে তিনি খুবই আনন্দ পেতেন। তাঁর প্রখর বুদ্ধিমত্তা, অদমনীয় সাহস, সীমাহীন সহনশীলতা আর গণতান্ত্রিক সরকার ও বিপ্লবী গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সরকারের অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ প্রবাদবাক্যে পরিনত হয়েছে।
বক্তৃতাও সক্রেটিস দেননি। তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি ছিলো প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে। এরিষ্টটলের মতে এ ব্যাপারে তিনি দুটি মূলনীতি অনুসরণ করতেন। প্রথমতঃ সংজ্ঞা(Definition); দ্বিতীয়তঃ অবরহণ(Induction)। সব ধরনের দার্শনিক, সফিস্ট ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধেই তিনি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর কথোপকথন এতো আনন্দদায়ক ছিলো যে, শ্রোতারা নিয়মিত হাজির হতো তা শুনতে।
সক্রেটিসের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে খব কমই জানা যায়। তিনি জ্যাস্টিপেকে বিয়ে করেছিলেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী এই মহিলা ছিলেন খুব ঝগড়াটে; কিন্তু এর সত্যতার কোনো প্রমাণ বা সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি।
তাঁর জনকয়েক প্রধান শিষ্য এথেনীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দুটি বিপ্লবে বিজড়িত ছিলেন। পরাস্ত হয়ে যদিও তাঁরা ক্ষমা পেলেন কিন্তু রোষানলে পড়তে হলো স্বয়ং সক্রেটিসকে। অভিযোগ করা হলো যে, তিনি এথেন্সের দেবতাদের উপাসনা না করে অন্যান্য উদ্ভট দেবতার বন্দনা করেন; আর যুব সমাজের মন তিনি বিগড়ে দিচ্ছেন। অন্যায় স্বীকার, আজন্ম সত্যের সন্ধান পরিত্যাগ কিংবা লঘুদন্ডের জন্য অন্যরোধ করা,-কোনো কিছুতেই রাজী হলেন না তিনি। বন্ধু-বান্ধবেরা তাঁর পলায়নের পথ করে দিতে প্রয়াসী হলেও সে সুযোগ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এক চুমুক হলাহল পান করে মৃত্যুর দন্ড মাথা পেতে নিলেন তিনি। ‘ফিডো’ গ্রন্থে প্লেটো কারাগারে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সক্রেটিসের শেষ আলোচনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। এর বিষয়বস্তু ছিলো মূলতঃ আত্মার অবিনশ্বরতা। নিখুঁত শান্তভাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যান, অবশ্যি কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাননি তিনি। অবশেষে হলাহলের পাত্র হাতে এগিয়ে এলো কারারক্ষী। এ লোকটির সাথেও শেষ পর্যন্ত তিনি সুহৃদসুলোভ আচরণ করেছেন। সক্রেটিসের বন্ধুরা একে একে ভেঙে পড়লেন কান্নায়। প্লেটোর গ্রন্থের নায়ক ফিডোর ভাষায়ঃ ‘এ ভাবেই সমাপ্তি হলো সেই মহাপ্রাণের যাঁকে আমি বিজ্ঞতম, সবচাইতে ন্যায়প্রায়ণ আর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে গণ্য করতাম।’"
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×