somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জামাতী অভিজ্ঞতা-১

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের আধা গ্রাম আধা শহরের হাড় হাভাতে স্কুলটাতে নেতাগিরি দেখানো ছিল একরকম ঐতিহ্যের অংশ। এই নেতাগিরি ছিল ছাত্রদের নেতাগিরি। দু একজন শিক্ষক ছিলেন শিক্ষকদের নেতা। তারা মাঝে মাঝে কিছু ছাত্র নেতাদের পিঠ হাতিয়ে দিতেন। কারণ এই ছাত্ররাই ভবিষ্যতে তার রাজনৈতিক এবং স্থানীয় কাজে আসবে বড় হয়ে।

আমিও সেইসকল নেতাদের মাঝে একজন ছিলাম। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি কোনদিন। আমার কাছে ক্ষমতা জিনিসটা খুব ভাল লাগে উপভোগ করতে। সত্য বলতে লজ্জা নেই, আমি নেতাগিরি করতে খুব পছন্দ করি। একদল ছেলে আমার দলে আছে, আমার নির্দেশে চলছে, ভাবতেই ভালো লাগে। এখানে আমার নীচু মানসিকতার প্রকাশ পেয়েছে জানি, কিন্তু কিছু করার নেই। আমি এমনই। গোষ্ঠী এবং গোষ্ঠাধিপতি আমার খুবই প্রিয় জিনিস। আমি ক্ষমতা পছন্দ করি।

আমি ছিলাম আমাদের গরীব স্কুলটার স্কাউট টিমের লীডার। তাই ক্লাস সিক্স থেকে নাইন পর্যন্ত আমার বিশাল পরিচিতি ছিল সকল ছাত্রদের মাঝে। আর আমি আমার দলের জন্য সবসময় জান প্রাণ দিয়ে খাটি। যার কারণে আমার জনিপ্রিয়তা ছিল প্রচুর এবং অন্য কেউ তাতে ভাগ বসাতে পারেনি।

আমাদের স্কুলে টিফিন টাইমের ছুটি হত যোহরের নামাজের সময়। স্কুলের ভিতরেই একটা মসজিদ ছিল। কালে ভদ্রে কোন কোন ছাত্র সেই মসজিদে নামাজ পড়তে যেত। সাধারণত বাইরের লোকরাই এসে যোহরের নামাজের জন্য দুই তিন কাতার জায়গা ভরাট করত। অথচ স্কুলের অর্ধেক ছাত্রও যদি যোহরের নামাজে জন্য মসজিদে দাঁড়ায়, তাহলে মসজিদে জায়গা হবে না। হাড় হাভাতে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একজন করে হুজুর স্যার থাকেন। আমাদেরো একজন হুজুর স্যার ছিলেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন একজন চমৎকার ব্যাক্তি। একজন সত্যিকার অর্থেই ভাল মানুষ। উনি যোহরের নামাজ পড়তেন, কিন্তু কখনই কোন ছাত্রকে নামাজ পড়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন না।

একদিন উনার পক্ষ থেকে নামাজ পড়ার জন্য চাপ এল। কিছু কিছু ছাত্র নামাজ পড়তে গেল, আমরা কিছু পুংটা পোলাপান নামাজে ফাকি দিয়ে স্কুলের বাইরে দিয়ে ঘুরে এলাম। এভাবে পরেরদিনও গেল। দেখা গেল যে হুজুর স্যার নামাজের কথা টিফিন টাইমের সময় ক্লাসে এসে বলে যান। এতে আমাদের গা ছাড়া ভাবটা লেগেই থাকে। অনেকেই ক্লাসে বসে থাকে। নামাজ পড়তে যায় না। টিফিন টাইমটা হল বিশ্রামের সময়। একঘেয়ে চারটা বাংলা ইংরেজী অংক বিজ্ঞান ক্লাস করে যদি কিছুক্ষণ বিশ্রাম না নিতে পারি তবে বাকী চারটা ক্লাস করব কিভাবে? বেশ কিছুদিন ফাকি দিলাম নামাজে। কিন্তু একদিন আটকে গেলাম। হুজুর স্যার হঠাৎ টিফিনের সময় এসে যেসব ছাত্ররা নামাজ পড়তে না যেয়ে ক্লাসে বসে বসে রয়েছে, তাদেরকে তিনি হেড মাষ্টার স্যারের বিশেষ বেতটা দিয়ে বোধড়ক পেটানো আরম্ভ করলেন। শুধু বাদল বলল, স্যার আমি হিন্দু। তবুও বেচারা বলতে বলতে একটা বেতের বাড়ি খেয়ে ফেলল। হঠাৎ এত নামাজের কড়াকড়ির রহস্য কি বুঝলাম না। তবে আমাকে বোঝানোর জন্য অনেকেই একে একে আসতে লাগলেন। ব্যাপার হল, একদিন স্কুলে ঘুরতে যেয়ে দেখি একজন স্মার্ট, শার্ট ইন করা, পায়ে সু, সেভড ছেলে আমাদের ক্লাসে ঢুকল। ঢুকে শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ লেকচার টেবিলটায় দাঁড়িয়ে সকলের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতে লাগল। এইসব পুংটা পুলাপান যারা ক্লাসে শিক্ষকের মোটা বেতের সামনে বসে দুষ্টামী করে তারা তার আহবানে যে কতটা সাড়া দেবে তা বলাই বাহুল্য। কেউ তার ডাকে সাড়া দেয় না। উনি দৌড়াদৌড়ি করা, বেঞ্চে লাফানো, হ জ ব র ল অবস্থায় ব্যাস্ত ছাত্রদের মাঝেই একটা বক্তৃতা দেওয়া শুরু করলেন। গলার স্বর খুবই ক্ষীণ। আমাদের উদ্দাম নৃত্য দেখে, না আসলেই তার গলার স্বর ক্ষীণ তা বুঝতে আমার বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। উনি বক্তৃতা দিলেন উনার হাতের কয়েকটি কিশোর পত্রিকা নিয়ে। নাম হল, "কিশোর কন্ঠ" আর "Juvenile Voice". আমি ভদ্রভাবে বসে উনার ক্যানভাস শুনলাম। কারণ আর কেউ তার ক্যানভাস শুনছিল না। পুলাপানকে কিছু বলছি না। ওরা ওদের মত ফূর্তি করুক। স্কুল হল ফূর্তির জায়গা। এইখানে যদি ফূর্তি না করে তবে করবে কোথায়? তবে ভদ্রতার একটা কথা আছে। আমি আমার স্কুলের খাতিরে সেই সামাজিক ভদ্রতা হিসেবে তার ক্যানভাস শুনছি। উনার বাংলা বইটার দাম দশ টাকা আর ইংরেজী বইটার দাম বার টাকা। কেউ বই কিনল না। আমি ভদ্রতার খাতিরে দুই টাকা বেশী দিয়ে একটা ইংরেজী বই কিনলাম। যদিও বাংলা কিনলেও চলত, তবুও বেচারার প্রতি মায়া লাগছিল। হাজার হলেও আমি বিপ্লবী একজন মানুষ। এইসব মেহনতী মানুষদের পাশে আমি না দাড়ালে আর কে দাঁড়াবে? আমি সুন্দর করে উনাকে বিদায় দিয়ে স্কুলের গেট পর্যন্ত পৌছে দিলাম।

বই বা পত্রিকা, যাই হোক কিছু একটা হবে ওই ম্যাগাজিনটা, যার কভার পৃষ্ঠায় ফিলিস্তিনের শিশুদের কিছু মর্মান্তিক ছবি ছিল। আমার কাছে খুব একটা খারাপ লাগল না ম্যাগাজিনটা। তবে এইটুকু বুঝলাম যে ম্যাগাজিনটায় মুসলিম ধর্ম একটু ভাল স্থানে আছে। ভাল কথা। মুসলমানদের দেশ, তাদের কত জানা জিজ্ঞাসা আছে মাছলা মাছায়েল সম্পর্কে, সে জানা জিজ্ঞাসা যদি এ ম্যাগাজিন মেটাতে পারে খারাপ কি। তবে আমি পরবর্তীতে আর এই ম্যাগাজিন কিনবনা বলে ঠিক করলাম। কারণ মানের দিক থেকে এটা নিতান্তই শিশু। আমার মত ক্লাস নাইনের পুলাপানের জন্য এটা উপযোগী নয়। শুধু শুধু পয়সা খরচ করে লাভ নেই। বাপের কাছ থেকে দুটো টাকা আদায় করতে কষ্ট আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪০
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিজে বাঁচো— আমাদেরও বাঁচাও ।

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২০



ষোলকোটি মানুষের জন্য
যারা যোগাড় করে অন্ন
তাদের কথা ভাবি
তাদেরও যে আছে দাবি
ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ।
উজানে আন্তনদী সংযোগে
ও নিত্য নতুন বাঁধ বিনির্মাণে
বদলে যায় নদী প্রবাহ— বাড়ে যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বেনজিরের হালচাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×