somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ভাষার আশা: মুক্তির ভাষার সন্ধানে

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ সবগুলো নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন আলোচনা হতে পারে, কিন্তু আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় ভাষার প্রশ্নটি। ভাষার বিকাশ হয় ব্যবহারে। আজকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলা ভাষার বিকাশে কারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন? বাংলাদেশের উচ্চ আমলাতন্ত্র? বিচার বিভাগ? ধনিক-বনিক অংশটি? সংস্কৃতি জগতের পাণ্ডারা? প্রায় বেশিরভাগ েেত্র সাধারণ উত্তর হচ্ছে: না।
এই যে আমরা বারংবার শুনি, ইংরেজি না শিখলে পিছিয়ে পরব, আমাদের বাস্তবদবাদী হতে হবে, শিল্প-সাহিত্যওয়ালারা বেশ লাজুক লাজুক মুখে বলেন, “আমি তো আসলে বাংলা মিডিয়মেই দিতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু ও বলে..., আসলে যে যুগ পড়েছে...।” একে শুধু হীনমন্যতা কিংবা সুবিধাবাদিতা দিয়েই ব্যাখ্যা করলে চলবে না, যদিও এগুলোও মূল প্রক্রিয়ারই স্বাভাবিক উপজাত। আসলে আমরা এমন একটা জাতির সদস্য, যাদের শাসকরা স্বজাতিভূক্ত হলেও স্বজাতির প্রতিনিধি নন। জনগণের স্বার্থের নয়, তারা প্রতিনিধিত্ব করেন নিজ জাতিকে যে সকল স্বার্থ হীনবল করে রেখেছে, তাদের সম্ভাবনাকে দাবিয়ে রেখেছে এবং তাদের সকল সম্পদকে কেবল নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী ব্যবহার করছেÑ সেই বহুজাতিক বেনিয়া পুঁজির।
জাতির সম্ভাবনা বলতে কি বোঝায়? প্রথমত: যে কোন জাতির েেত্রই এটা সাধারণভাবে সত্য যে, একটি জাতিয়তাবাদী উত্থান তার জনগোষ্ঠীর উৎপাদন সম্ভাবনাকে সম্ভাব্য সকল উপায়ে বিকশিত করে। সেখানে উৎপাদন সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্থ করে এমন সকল কিছুকে উৎখাত না করে সেটা ঘটতে পারে না। আজকের যুগে উৎপাদন সম্ভাবনাকে আটকে রাখে এমন শক্তির মাঝে থাকতে পারে ভূমিকেন্দ্রীক সামন্ত জমিদার কিংবা বিদেশী এমন স্বার্থ যা ঐ বিকাশকে রুদ্ধ করে ফায়দা লোটে। কিন্তু কোন ভাবে যদি এদের অবসান ঘটে, তাহলেই জাতির যে মুক্তি ঘটে, তা শুধু যে তার অর্থনৈতিক উৎপাদনই বৃদ্ধি ঘটায়, তা কিন্তু নয়। সেই জাতির শিল্প-সাহিত্য-কৃষ্টি, সর্বোপরি ভাষা ব্যবহারের সকল েেত্র তা মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে, যেন পুরনো খোলসের ভেতরে নতুন এক প্রাণ জেগে ওঠে।
এই জেগে ওঠা প্রাণ প্রথম যে দু’টি কাজটি করে, তা হল প্রথমত: নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গূরুত্ব প্রতিষ্ঠা, জনগণের সকল অংশের মাঝে তার প্রসার এবং বিকাশের ব্যবস্থা করা; দ্বিতীয়ত: সারা বিশ্বের জ্ঞানজগতকে নিজেদের ভাষায় অনুদিত করে তাকে নিজের ভাষায় আত্মস্থ করা।
পরভাষা আত্মস্থ করে জাতি হিসেবে আত্মঅবলম্বী হবার কোন নমুনা নেই, বরং প্রায় সকল মুক্ত জাতির েেত্রই দেখা যাবে মাতৃভাষা সেখানে ভাবপ্রকাশের প্রধান অবলম্বন।
সার্থক যে কোন কবিই একা কিন্তু তার সময়ের কাব্যভাবনা বা কাব্যআলোড়নকে প্রতিনিধিত্ব করেন না, তার পাঠক, তার সমালোচক, তার সতীর্থ কবিকূল(যাদের অনেকেই হয়তো প্রচলিত অর্থে সফল হননি), সর্বোপরি যে সমাজ থেকে তিনি রসদ আহরণ করেন, অর্থাৎ তার প্রতিবেশÑ কোন কবিই এই সব শর্তের বাইরে নন। অর্থাৎ, কোন সমাজের সাহিত্যচিন্তার অল্প ক’জন প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যক্তিরা বিচ্ছিন্ন কেউ নন, তাদের পেছনে এবং পাশে যারা আছেন, তারাও ওই ইতিহাসের অনিবার্য ও অপরিহার্য অংশ।
সমাজে, বিজ্ঞান এবং দর্শন চর্চার েেত্রও একই কথা কিন্তু সমানভাবে প্রযোজ্য। একজন নিউটন, আইনস্টাইন কিংবা সত্যেন বোস এর পেছনে কাজ করে গোটা সমাজের আলোড়ন, কোন বিশেষ সমস্যা নিয়ে বহু মানুষের লিপ্ততা। এভাবেই বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত বহু মেধা সচেতন বা অসচেতনভাবে একটা জটিল সামাজিক-গাণিতিক যন্ত্রের মতো সমষ্টিগতভাবে ক্রিয়াশীল থাকে, অবশেষে গুটি কতেক হয়তো ঐ সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধানগুলো হাজির করেন।
এটি কিন্তু সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি বিদ্যাসহ বিদ্যার আর সব মানবিক বিষয়ের জন্যও সাধারণ ভাবে প্রযোজ্য। অর্থনীতির প্রাতিষ্ঠানিক মহলের বাইরেও আরও বহু মানুষ যখন এ বিষয়ে সন্ধানী হন
এমনকি প্রায় সবগুলো ধর্মের ইতিহাসেও দেখা যাবে, কাছাকাছি সময়ে সাদৃশ্যমূলক (কোন কোন েেত্র অস্তিত্বের সংঘাতে লিপ্ত, কিন্তু একই ধরনের সামাজিক সংকট থেকেই উদ্ভুত) প্রচারকের উপস্থিতি।
সার কথা এই, সমস্যাটি যাই হোক না কেন, যথাসম্ভব বেশি মানুষের তার সাথে যুক্ততার সুযোগ থাকা চাই।
এই যুক্ততার েেত্রই মাতৃভাষা প্রধানতম মাধ্যম।
এই যুক্তির বিপে একেবারেই প্রথমে যে প্রশ্নটি আসবে সেটি হলো: যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের এই যুগে সমসমস্যা নিয়ে ভাবিত লোকগুলোকে আমার চায়ের আড্ডার প্রতিবেশী হতেই হবে, তার কী কারণ? প্রথমআলোতেই তো নিত্য নিত্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের সংবাদ পাচ্ছি, তাদের অনেকেই এমনকি ভালো বাংলাও বলতে পারেন না!
বিষয়টি ঐখানেই। পরভাষা আয়ত্ত করে ব্যক্তিগত সাফল্য কেউ পেতেই পারেন, কিন্তু এর সাথে নিজ সমাজের বিকাশের প্রায়শঃই কোন যুক্ততা থাকে না, বহু েেত্রই ঐ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বরং জাতীয় বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান।
কীভাবে? প্রথমত, সমস্যায় যে নির্দিষ্ট মানুষেরা আক্রান্ত, তারা যখন সমাধানের যোগ্য হয়ে ওঠেন, সেটিই একমাত্র ন্যায্য সমাধানের সম্ভাবনা। কিন্তু নিজ জনগোষ্ঠীর সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত নন, এমন একজন পণ্ডিত হয় অনিচ্ছাকৃত ভুল করবেন, নয়তো নিজের আখের গোছাবেন। যেটিই ঘটুক না কেন, চাপিয়ে দেয়া সমাধানটি নিত্য নতুন সমস্যারই জন্ম দিতে থাকবে, আর ফলস্বরুপ চাপিয়ে দেয়া বোঝার পরিমানও বাড়বে ক্রমশঃই। এরই একটা ধ্র“পদী উদাহরণ হলো আমাদের দেশের নদী-শাসন প্রকল্পগুলো। প্রথম পর্যায়ে বিদেশী লগ্নিকারী আর তাদের দেশি-বিদেশী পরিকল্পকরা নানা রকম অবকাঠামো নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিকত্ব ধংস্ব করলো। বিনিময়ে লগ্নীকারী তার লগ্নীর মুনাফা তুলে নিল, পরিকল্পকরা পেলো রাজকীয় ইনাম, জনগণের ভাগ্যে জুটলো উত্তরোত্তর দারিদ্র। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা সেই অস্বাভাবিক প্রকৃতিতে কী করে বেঁচে থাকতে হবে তার জন্য নতুনতর প্রকল্প নিয়ে হাজির হলো: মাটি লবনাক্ত হয়ে গেছে? জৈব প্রযুক্তির বীজ কেনো। সুপেয় পানির অভাব? পানির উৎস ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দাও। জলাশষ কমে গেছে? হাইব্রিড মাছ চাষ কর। কেনো ভ্যাকসিন, সার, কীটনাশক, বীজ।দিন শেষে আবারও চাষার শূন্য থলি। মাঝখান দিয়ে লোপাট হয়েছে মাছ ধরার নদী-খাল, উপকারী সব কীটপতঙ্গ আর পাখি, গোচারণভূমি। প্রকৃতিকে নিজের কাজে লাগানোর বিরোধী কোন বিবেচক মানুষই নন, কিন্তু এই পুরো সমাধানের প্রক্রিয়াতে যদি এদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা, তাদের স্বার্থ আর আকাঙ্খার প্রতিনিধিত্ব থাকত, পুরো বিষয়টিই নিশ্চয়ই অন্য রকম হতো।
আরেকটা উদাহরণ দেই, এটা আরো মজার। আমরা কি জানি, শুধু গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন কত টাকা মুনাফা বাবদ নরওয়েতে পাঠায়? কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত উদ্যোক্তাকে প্রথম আলো পরিচয় করিয়ে দিয়েছে গ্রামীণ ফোনের পরিকল্পক হিসেবে। তিনি আসলেই প্রতিভাবান, স্বীকার করতেই হবে। তিনি নরওয়ের টেলেনর আর বাংলাদেশের গ্রামীন ব্যাংককে নিশ্চত করতে সম হন যে, বাংলাদেশের লোকেরা গরিব হলেও এখানে মোবাইলের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার আছে। লাগ্ ভেলকি লাগ। শুধু এই পরিকল্পনা রুপায়নের কাজটি করে তিনি পেলেন বেশ বড় একটা ভাগ, শেয়ার। টেলেনর পেল বিশাল এক মাছ, যেটাকে নিজের তেলে ভাজা যায়। প্রাথমিক সামান্য বিনোগের বিশাল মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করে গোটা দেশ তাদের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায়। গ্রামীণ পেল আরেকটা গৌণ শেয়ার। খুব দ্রুতই আমাদের প্রতিভাবান বাঙালি তার শেয়ারটুকুও টেলেনর-এর কাছে বেঁচে দিলেন। তার ভাষাকে আমরা আমাদের মতো পাঠ করতে পারলে দাঁড়াবে: তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই থাকেন, এ রকম মওকা মাফিক দাঁও মারতেই কেবল মাঝে মাঝে দেশে আসেন।
পুরো বিষয়টিকেই কয়েকটা (হতে পারতো এমন) সম্ভাবনা দিয়ে বিচার করা যেতে পারে। বাংলাদেশে টিএন্ডটি বোর্ড বহু সমালোচনার পর নিজেই এখন মোবাইল সেবা দিচ্ছে। লাভের পরিমান উঁচু, এবং নিন্দুকেরা বলেন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উপঢৌকনের বিনিময়েই তার কথাবলার খরচ কমানো যাচ্ছে না। আমাদের প্রথম আলোর নায়ক কিন্তু একেবারে শুরুতেই টিএন্ডটি কে রাজি করতে পারতেন এই বাজারটি ধরার জন্য। তিনি সে চেষ্টা করেননি।
হয়তো তিনি সে চেষ্টা করেননি, কেননা তিনি হয়তো মনে করেন সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল সেবা পাওয়া যায় না, কিংবা তারা আদৌ রাজি হতো না। কিন্তু, আমরা ভেবে অবাক হতে পারি গ্রামীণ কেন নিজেরাই এই উদ্যোগটি নেয়নি? সে েেত্রও বাংলাদেশের হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিক আর গার্মেন্টস কর্মীদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে আয় করা বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শুধু মোবাইল কোম্পানিগুলোর মারফতই নিমেশেই বিদেশে পাচার হয়ে যেত না। প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যে, মালয়েশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে অমানুষিক পরিশ্রম করে, গোপনের সীমানা অতিক্রমের সময়ে ডুবে মরার কিংবা গুলিতে প্রাণ হারাবার ঝুঁকি মাথায় করে, বিদেশ-বিভূয়ে নিত্য পুলিশের চোখ এড়িয়ে, ঘুষ দিয়ে, অবমাননাকর জীবন যাপন করে বৈধ কিংবা অবৈধ প্রবাশী শ্রমিকরাই এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রার উৎস, তারপরই গার্মেন্ট শ্রমিকরা। আর তাদের এই রক্ত পানি করা বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আবারও বিদেশে চলে যায় শুধুমাত্র মোবাইল কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাবদ।
খেয়াল করা দরকার, বর্তমান বাস্তবতায় প্রতিদিন কোটি শিশুর শিাজীবনের গূরুত্বপূর্ণ অংশ ইংরেজি মুখস্থ করায় ব্যয় হচ্ছে, যা তার গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান ও ইতিহাস অধ্যয়নে ব্যয়িত হলে শিার গুণগত মান বহু গুন বৃদ্ধি পেত। ইংরেজিভাষী কারও সাথে হয়তো জীবনভর সাাতের কোন প্রয়োজন এই কোটি শিার্থীর ঘটবে না। অর্থাৎ শিার প্রয়োজনীয়তার দিক দিয়ে বিবেচনায় এই বারো বছরের ইংরেজি শিা প্রায় বিফলেই যায়। অথচ উচ্চশিার প্রয়োজনে বহু ছাত্রই বছর খানেকের ভেতর কোনদিন চর্চা না করা জার্মান, জাপানী বা চিনা ভাষা রপ্ত করে ফেলে। এমনকি উচ্চশিার স্তরে যারা আসেন, তাদের েেত্র দেখা যায় একদিকে ইংরেজি খুব খারাপ জানার কারণে যারা মৌলিক গ্রন্থ অধ্যয়নে ব্যর্থ হন, অন্যদিকে বাঙলায় ভাল পাঠ্যবই না থাকার কারণে চোথা মুখস্ত করেন। অথচ ঐ গ্রন্থগুলোর মানসম্মত অনুবাদ থাকলে উচ্চশিার েেত্র এ সংকট একেবারেই ঘুচে যেত।
ঐ যে উপরে উল্লেখ করা হলো আমাদের শাসন করছে এমন একটা শাসক শ্রেণী, যারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না, তারই একটা ফল হলো ইংরেজি ভাষাজ্ঞানকেও তারা তাদের আধিপত্য অব্যাহত রাখার একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সারা দেশের শিার্থীদের মানসম্মত বিদেশী ভাষায় শিা দেয়া কখনোই সম্ভব না, কিন্তু তাদের নিজেদের সন্তানদের পূর্ণ পশ্চিমা শিায় শিতি করার সামর্থ্য তো তাদের ভালোই আছে। মধ্যবিত্তের অন্যান্য অংশও তাই এই দৌঁড়ে সামিল হয়ে সাধ্যমত ইংরেজি মাধ্যম স্কুরে সন্তানদের পড়াচ্ছে। নিন্মবিত্তদের জন্যও চালু হয়েছে ভেজাল, মানহীন ইংরেজি স্কুল। এদের মধ্যে গুটিকয়েক হয়তো শাসকশ্রেণীর বলয়ে স্থান পাচ্ছে, অধিকাংশই না শিখছে বাংলা, না ইংরেজি। আর বাংলামাধ্যম স্কুলগুলো প্রায় পরিত্যক্ত হচ্ছে দিন কে দিন। এ থেকে যা বোঝা যায়, তা হলো ইংরেজি এখানে সমাজে শ্রেণী আধিপত্যেরই প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
যদি আমরা বৈশ্বিক জ্ঞানের জগতের কথা ভাবি, ইংরেজি ভাষা শিাই কিন্তু যথেষ্ট নয়, দর্শন-বিজ্ঞান-চিকিৎসা শাস্ত্র-সাহিত্য েেত্র আরও কয়েকটি ভাষায় গূরুত্বপূর্ণ সব প্রকাশনা প্রতিবছর হয়। কিন্তু সেগুলোর সাথে পরিচিত হবার উপায় কি শুধু ইংরেজি ভাষা?
আসলে আমরা যদি একটা আদর্শ অবস্থার কথা কল্পনা, তাহলে এই অনুবাদ কর্মের জন্যই প্রয়োজন বিশেষায়িত শিা,এবং গূরুত্বপূর্ণ রচনা হচ্ছে, এমন প্রতিটি ভাষায় দখল সম্পন্ন জনশক্তি। আর সেটার জন্যও শিশুকাল থেকে বাধ্যতামূলক পাঠের প্রয়োজন নেই, উচ্চাশিার স্তরে তা পাঠই যথেষ্ট।
আরেকটি প্রসঙ্গ তোলা যাক, সেটা হলো ইউরোপীয় অধিকাংশ দেশেই কখনো প্রয়োজন না হলেও ছাত্রদের অন্য যে কোন একটি ভাষা শিার ব্যবস্থা করা হয়। ভাষাগত সাদৃশ্যের কারণেই সেটা অস্বাভাবিক ঠেকে না। কোন দিন যদি এমন ঘটে যে, বাংলাদেশ তেমন একটি মুক্তি অর্জন করে, যে মুক্তি তার জনগণের জীবনের বিচিত্রতর সমৃদ্ধির দরোজা খুলে দেবে, এবং এটা ঘটে আসে পাশের সবগুলো জাতির েেত্র, যদি আমাদের তেমন কোন মুক্তি ঘটে যে পশ্চিমা সভ্যতার সাথে আমাদের কোন হীনতার সম্পর্ক নেইÑ এটা কিন্তু ভাবার কারণ নেই যে শিার্থীরা দলে দলে আর ইউরোপীয় জ্ঞান শিখতে যাবে, সেই ভাবিকালের ছাত্রেরা হয়তো অহমীয়া বা উড়িয়া ভাষা মন দিয়ে পড়বে, বোঝার চেষ্টা করবে কিভাবে এই ভাষাবোনেরা বিকশিত হলো; তারা হয়তো ফার্সী আর সংস্কৃত পড়বে, আমাদের সাহিত্য আর ইতিহাসের বহু গোপন রহস্য উদঘাটনের আশায়; তারা হয়তো তামিল সাহিত্য পাঠ করে আমাদের আরো ভালভাবে জানাবে আমাদের ভক্তি আন্দোলনে তাদের প্রভাব কি; আর এই জ্ঞানই আমাদের আরাধ্য হবে রাজা রিচার্ডের জীবনীর খুঁটিনাটি জানা কারও কাছে সে হীনবোধ করবে না।
আসলেই আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের কত কম জানি! কিন্তু আমাদের নদীগুলো অভিন্ন, পরিবেশ আর প্রকৃতি সাদৃশ্যপূর্ণ, আমাদের ইতিহাস কত কাছাকাছি। আমরা এখন আলাদা আলাদা হয়ে তৃতীয় এক পরে অধীনস্ত, কাজেই পরস্পরের প্রতি বহু েেত্র শত্র“ভাবাপন্নও। কিন্তু মুক্তভাবে আমরা হতে পারি একে অপরের নিকটজন। আমাদের সকলের বিকাশই তাতে বহু গুন বৃদ্ধি পাবে।
প্রশ্নটা তাই শুধু অগ্রাধিকার এর নয়: পাশাপাশি শেখারও নয়। প্রশ্নটা নিজের অর্থনীতি, নিজের জীবন, নিজের সংস্কৃতির ওপর কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়ার, তারপর সিদ্ধান্ত নেয়াÑ কী আমরা শিখতে চাই, কী শেখা আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু গূরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবেÑ ভাষার স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের যুগ অনৈতিহাসিক হয়ে গিয়েছে, আধিপত্যমূলক বিকাশের যুগ আমরা পাড়ি দিচ্ছি, যে যুগটি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি উভয়টির সম্ভাবনাই ধ্বংস করে টিকে রয়েছে।
নিপীড়িত ও অমুক্ত একটি ভাষা কি আজ আর নতুন করে আধিপত্য সৃষ্টির ল্য নিয়ে বিকশিত হতে পারবে? না। কেননা, আজ আর দুনিয়া দখলের ল্য নিয়ে নতুন কোন জাতি ইতিহাসে উত্থিত হতে পারছে না। বরং আজকে পৃথিবীর সকল দমিত ভাষার সংগ্রাম আধিপত্য অবসানের সংগ্রামের সাথেই একসূত্রে গাঁথা।
কাজেই বাঙলা ভাষার আজকের লড়াই নিজেকে মুক্ত করা,এবং অন্যদের মুক্তির লড়াইয়ে সামিল হওয়া। বাঙলার একমাত্র আশা এটিই। ভাষার স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের যুগ অতিক্রান্ত, আধিপত্যের যুগটির অবসান একমাত্র সর্বভাষার সাম্য এবং মৈত্রির মধ্যেই সম্ভবপর।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×