ক্ষমতার পালাবদল দেখে দেখে একমাত্র অক্লান্ত - ইতিহাস ! তার বুকে বয়ে গেছে কত হাজার পালাবদল !! এই জগতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর কে ? কালে কালে এই প্রশ্নের উত্তর বদলে গেছে । কিন্তু প্রশ্নটি রয়ে গেছে সেই আগের মতই !!! ইতিহাসজুড়ে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের যুদ্ধ দেবতাদের পাশে আরো অনেক যুদ্ধদেবের নাম রয়েছে । রয়েছে ক্রুসেড-প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের নাম । শক্তিমানের শক্তি প্রমানের দাপটে কত ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে মাবতার ইতিহাসে তার ইয়ত্তা নেই ।
ফিরে যাই সেই প্রশ্নে- সবচেয়ে ক্ষমতা বেশি কার ? এককালে এর উত্তর ছিল-জোর যার মুল্লুক তার । যাকে আধুনিক কালে অনেকে বলতে চেয়েছেন 'বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস' । অর্থাৎ ক্ষমতাধর সে-ই যার পেশিশক্তি আছে -এটা ছিল ইতিহাসের শুরুর দিকের উত্তর ।তবু আজো অনেকে সেই উত্তর দিয়ে সাজাতে চান দুনিয়া । ফলে সন্ত্রাসী অভিধায় ভুষিত হতে হয় তাদের । অথবা পরাজয় মেনে নিয়ে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয় ।
এলো পরবর্তি যুগ । এবার এ প্রশ্নের জবাব পাল্টে হল ' জ্ঞানই সকল ক্ষমতার উৎস ' ।এটা কখন শুরু হয় তা নিয়ে প্রাচ্য-প্রতীচ্যে দ্বন্দ্ব আছে । কারণ প্রতীচ্য যাকে সৃষ্টিহীন অন্ধকারচ্ছন্ন মধ্যযুগ বলে, সেই সময়েই প্রাচ্য তার সবচেয়ে আলোকিত সময় অতিবাহিত করছিল মুসলমানদের উত্থানে ।এই সময়টায় জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে যায় । এগিয়ে যায় প্রাচ্য ।আর প্রতীচ্যের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর 'জ্ঞান' হয় রেনেসাঁর কল্যানে ।৬০ এর দশকে মার্শাল ম্যাকলুহানের 'গ্লোবাল ভিলেজ' তত্বেরও বহু আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ই, এই উত্তরটা বদলে যায় । তাহলে বলা যায় জ্ঞানের রাজত্ব ছিল হাতে গোনা দুইশ' বছরের মত !
এল নতুন যুগ ।এ যুগের যুদ্ধদেবের নাম গণমাধ্যম ।এনাকে যিনি সন্তুষ্ট করতে পারবেন তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাধর !বলা হয় বর্তমান বিশ্বে হাজার হাজার পারমানবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী অস্ত্র হল মিডিয়া ।তাই বলে ভাববেন না সকল ক্ষমতা মিডিয়ার হাতে ! কারণ মিডিয়া কিন্তু সবসময়ই নিয়ন্ত্রিত !কার হাতের অদৃশ্য সুতোয় পাপেটের মত নাচছে মিডিয়া ? কে সেই অদৃশ্য ক্ষমতাধর ? আর কেউ নয়, আপনার আমার অতি পরিচিত ব্যবসায়ী মহল । অর্থাৎ টাকা ! গোটা দুনিয়ার মিডিয়াই টাকার কাছে জিম্মি । টাকার মালিকের বিরুদ্ধে যাবেনা মিডিয়া । কারণ মিডিয়ার সৃষ্টিই তো তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য !
উত্তর থেকে দক্ষিণ কিংবা পুব থেকে পশ্চিম । সর্বত্রই সবচেয়ে ক্ষমতাবানের নাম অর্থ ।অর্থই অনর্থের মূল-এ কথার উপযোগিতা অন্তত, শত বছর আগে শেষ হয়ে গেছে । আজ অর্থহীনতাই সকল অনর্থের মূল ।
আমাদের দেশের ক্ষুদ্র পরিসরেই তাকান না ! দেখুন কিভাবে সকল সাংসদ ধীরে ধীরে ব্যবসায়ী হয়ে উঠছেন ! কিংবা অন্যভাবে বললে ব্যবসায়ীরা কিভাবে ধীরে ধীরে সাংসদ হয়ে উঠছেন !! আজ স্পীকার সংসদ চালাতে পারছেন না বলে উষ্মা প্রকাশ করছেন ।কারণ কি ? কারণ সবাই তো ব্যবসায়ী ! তাদের কাছে তো সংসদের চেয়ে ব্যবসা বড় !
ইতিহাসের এই ক্রান্তিকালে এসে প্রশ্নটি বড় আতঙ্কিত ! কারণ তার পরবর্তি উত্তর কি আবার জোর যার মুল্লুক তার-এ ফিরে যাবে ? অর্থপিপাসু শেয়ালবণিকদের পিপাসায় জীর্ণ হয়ে একদিন হয়তো মানুষ সহ্যসীমা অতিক্রম করবে ।হয়ে উঠবে হায়েনার চেয়েও বর্বর । আর এভাবেই হবে ইতিহাসের পুণরাবৃত্তি ।মানুষ ফিরে যাবে আদিম হিংস্র অমানবিকতায় !!