somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকারে নোবেল বিজয়ী হেরটা মুলার

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকারে নোবেল বিজয়ী হেরটা মুলার
''স্বৈরশাসন ছাড়া আমার সামনে লেখালেখির জন্য আর কোন ল্যান্ডস্কেপ ছিল না ''
=======================================

গত ৮ অক্টোবর এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টার

ব্যবধানে রেডিও লিবার্টি ২০০৯ সালের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লেখক হেরটা মুলারের এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করে। তাদের ওয়েব সাইট থেকে সংগৃহীত এই সাক্ষাৎকারটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মারসিয়া টিকুডিয়ান। সংবাদ সাময়িকীর জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন নাফিসা নাওয়াল


'আমার জন্ম রুমানিয়ায়। আমি বেড়ে উঠেছি সেখানে; আর ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম। তবে এক জটিল মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাকে দেশ ছাড়তে হয়; যা আমি আমার প্রথম গ্রন্থে লিখেছি। আমার প্রথম গ্রন্থ, ইংরেজিতে যার নাম ল্যান্ডস্কেপ। এটি ছিল একটি শিশুর দৃষ্টিতে জার্মান অধ্যুষিত এলাকা 'বানাত'-এর বর্ণনা। বানাত_ পশ্চিম রুমানিয়ায় অবস্থিত। আমার ঐ গ্রন্থে এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য গ্রন্থে আমি বারবার যে বিষয়টি লিখেছি এবং লিখতে চেয়েছি তা হলো_ স্বৈর-শাসন। এমন না যে আমি এই বিষয়টি নিয়েই লিখতে চেয়েছি; আসলে আমার সামনে এটি ছাড়া আর কোন বিষয় ছিল না। কিংবা অন্য কোন বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতাও ছিলনা_ যা নিয়ে আমি লিখতে পারতাম। আমি বারবার না জেনে, না বুঝে এই বিষয়টিই টেনেছি আমার লেখায়_ কেননা অন্য কোন 'ল্যান্ডস্কেপ' আমার নেই। যে এলাকা থেকে আমি এসেছি সেটাই আমার লেখার ল্যান্ডস্কেপ। আমি দেখাতে চেয়েছি চরমপন্থার মধ্যে_ সামাজিক বিভিন্ন স্তরে এবং কাঠামোতে যখন স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করে তখন মানবতা কীভাবে অপদস্ত হয় পদে পদে, কীভাবে মানবাত্মা নীরবে-নিভৃতে কাঁদে । তবে আমি মনে করি আমি বিষয়টিকে বেছে নেইনি, বিষয়টিই বরং আমাকে বেছে নিয়েছে। আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোনো স্বাধীনতা ছিল না। আমি বলতে পরতাম না, এ বিষয় নিয়ে লিখতে চাই, ও বিষয় নিয়ে লিখতে চাই। কেননা, আমার সত্তায় যে বিষয়টি সবসময় আমাকে আলোড়িত করেছে তাই নিয়ে আমি লিখেছি।'



'সারা পৃথিবীতে আমি জানি, এক ধরনের সাহিত্য আছে যা আত্মজীবনীমূলক রচনা। একজন লেখকের জীবন তার সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরালভাবে হাঁটে। যা তার জীবনে ধ্রুবসত্য। পূর্ব ইউরোপে একটি নির্দিষ্ট ধারায় ছিল স্বৈরশাসন, লেবার ক্যাম্প, হিটলারের ইহুদী নিধন। বহু লেখকের লেখায় এই বিষয়গুলি ঘুরেফিরে এসেছে। কেননা সেইসব লেখক এই ধারার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। তাদের লেখায় সমান্তরাল জীবন হিসেবে এই কথাগুলোই বার বার উঠে এসেছে। আমি মনে করি এ ধারার লেখাই টিকে থাকবে_ কিউবা থেকে চায়না পর্যন্ত।'

'নিওশিডর্ফ_ বানাতের একটি শহর। যেখানে জার্মানভাষীরা বসবাস করত। তারা ছিল ঐ এলাকার সংখ্যালঘু জার্মান। আমার দাদা ছিলেন ধনী কৃষক এবং ব্যবসায়ী। বাবাও তাই। মাকে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সেস্নভ লেবার ক্যাম্পে কাটাতে হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি সেখানে ছিলেন_ ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত। এগুলোই আমার লেখার মূল উপজীব্য।'



হিত্রা মুলারের মূল ভাষা 'জার্মান' হলেও তিনি 'রুমানিয়া' ভাষায় সমান পারদর্শী। টিসিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি 'জার্মান স্টাডি' এবং 'রুমানিয়া সাহিত্যে' পড়াশোনা করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি একজন অনুবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাক্টরিতে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্ট গ্রোত্রভুক্ত 'সিক্রেট পুলিশে'র সাথে সহযোগিতা না করার জন্য তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি একটি কিন্ডারগার্টেনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেসময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে জার্মান শিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় এসময়। যা ছিল একটি সেন্সরড ভার্সন। যদিও তখন সব লেখাই সেন্সরড হয়ে প্রকাশিত হতো। ১৯৮৭ সালে তার বিয়ে হয় জার্মান

ঔপন্যাসিক রিচার্ড ভাগনারের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে বার্লিনে চলে যান। এরপর তিনি জার্মানি এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি বার্লিনে অবস্থান করছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি 'জার্মান একাডেমি ফর রাইটিং এন্ড পয়েট্রি'র সদস্যপদ লাভ করেন। মুলারের প্রথম বইটি ১৯৮২ সালে সেন্সরড অবস্থায় প্রকাশিত হয়। এর দুই বছর পর জার্মানি থেকে যখন বইটি প্রকাশিত হয় তখন মুলার যা লিখেছিলেন তাই হুবহু ছাপা হয়। একই বছর রুমানিয়া থেকে তার আরেকটি গ্রন্থ 'ড্রাকেনডার ট্যাঙ্গো' প্রকাশিত হয়। তবে রুমানিয়ার প্রেস তার কাজকে মোটেও সুনজরে তেদখেনি। অন্যদিকে জার্মান প্রেস সানন্দে তাঁর লেখাগুলো প্রকাশ করেছে। রুমানিয়ার সু-নজরে না দেখার কারণ হিসেবে তিনি মনে করে, খোলামেলাভাবে স্বৈরশাসকের সমালোচনা করেছেন তাঁর লেখায়। তার গল্পের পরতে পরতে তিনি দেখিয়েছেন জার্মান অধ্যুষিত এলাকার মানুষদের বেদনা, স্বৈরশাসকদের দুর্নীতি, সীমাহীন অহিষ্ণুতা এবং মানবতার চূড়ান্ত অবদমন।
[দৈনিক সংবাদ সাময়িকী / ১৫ অক্টোবর ২০০৯ ]
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×