somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়তু ফেইসবুক :D:)

১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জ্বরে মরতেছি, এর মধ্যে সারা রাত কাজ, তার উপরে এই সামারেও পড়ছে চরম ঠান্ডা - আমার অবস্থা বেহাল :( নেটে বসার মত অবস্থা নাই, সারা দিন শুয়ে থাকি, রাতে কোন রকমে কাজে যেয়ে হাজিরা দিয়া আসি। এর মধ্যে মাঝে মাঝে পিসি অন করি মুলতঃ গান শোনার জন্য। এমন সময় গতকাল সন্ধ্যায় দেখলাম ফেইসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। খুইলা দেখি ইফতেখার রায়হান নামক কেডা জানি রিকুয়েষ্টটা পাঠাইছে। মেয়ে হইলে আমি সাথে সাথে একসেপ্ট কইরা দেই ;) ছেলে হইলে তত্ব তালাশ না কইরা একসেপ্ট দেই না B-) যাই হোক ... যথারিতি খুইজা দেখি সে আমার ৬ জন বাল্য বন্ধুর সাথে যুক্ত, কাজেই একসেপ্টেড।

সেই রুকুয়েষ্ট একসেপ্ট করার ২০ মিনিটের মধ্যে +৪৫ দিয়ে শুরু আজিব এক নাম্বার থিকা ফোন। বিরক্তি নিয়া ফোন ধরি -

= হেলু (ফাইজলামো আর কি :P)
~ হ্যালো ... _____ বলছেন?
আমার অরিজিনাল নিক নেইম ধইরা ডাকছে, একটু ডরাইছি ... :|
= জ্বি বলছি
~ বন্ধু, আমি রিমন
= ও রিমন ... কেমন আছেন?
~ বন্ধু তুমি আমাকে চিনতে পারো নাই
= হুম ... সত্যি চিনতে পারছিনা, স্যরি ... মানে ঠিক কোথায় যেন ...

পাশ থেকে সুচিক্কন নারী কন্ঠের ঝারী "চিনে নাই? তোমারে চিনার কথাও না, আমারে দেও, শালার পুতেরে চিনাইতেছি"

আমার গলা এমনিতেই শুখায় ছিলো, এই কথা শুইনা নিশ্বাস পর্যন্ত আর নামতেছে না গলা দিয়া, এত পরিচিত ... এত পরিচিত ... কিন্তু কে?

~ __ইন্যা, আমি রিমা, চিন্তারছস? না চিনলে এমুন এক থাবড়া খাবি, তোর বেয়াক্কেল দাঁত পর্যন্ত নইড়া যাইবো ...
= আরে আরে আরে ... ডার্লিং কিরাম আছো? তুমারে না চিনার কুনু কারন নাই। কিন্তু স্যরি, রিমনরে চিনতে পারি নাই। অনেক দিন আগের কথা তো ...

থাবড়া দিয়া বেয়াক্কেল দাঁত ফেলে দেয়ার কথাটা রিমা ছাড়া আর কাউকে বলতে শুনি নাই জীবনে। আসলে বন্ধু বান্ধবের মধ্যে এমন কিছু কিছু কথা থাকেই যেগুলো এক মুহুর্তেই ফিরিয়ে দেয় ১৫ বছরের পুরানো সময়টা।

~ হুম ... বাইচা গেছস। আছস কেমন? মনে হয় জ্বর বাধাইছোস? গলা এমুন কেন? অষ্ট্রেলিয়াতে কি করস তুই? বিয়া করছোস দেখলাম, বাবুটা মাসআল্লাহ কিউট হইছে, তোর মত উড়চুঙ্গা টাইপ হয় নাই।

আমি পুরাই বেকুব ... আমার এই সব তথ্য কই পাইলো ওরা?

= হে হে ... কই পাইলি আমার ডিটেইলস?
~ আজকে তুমি রিমনরে এড করছো ফেইসবুকে, একটু আগে ...
= ও ... মনে পড়ছে। কেমন আছিস তোরা? কই আছস এখন?
.....................................................................................

রিমন আমাদের কলেজ ফ্রেন্ড। পুতু পুতু মা-কি-বাচ্চা বলতে যা বুঝায়, সে তাই ছিলো। কথায় কথায় আম্মু এটা বলেছে, আম্মু ওটা বলেছে, আম্মু এটা করবে - ওটা করবে - আমরা খুব মজা করতাম ওকে নিয়ে। কেমন করে এই লালটু মার্কা ছেলেটা আমাদের মত বজ্জাত পোলাপাইনের সাথে মিশে গেছিলো সেটা আর সবার মত আমরাও বুঝতে পারিনি। কিন্তু ও ছিলো আমাদের জন্য এক জীবন্ত ফান প্যাক :D:D

রিমন একদিন একটা হলুদ শার্ট পরে আসে, সুন্দর শার্টটা। বাপ্পি সেটা জোর করে ওর গা থেকে খুলে নিয়ে নিজের গায়ে দেয়, আর বলে "থ্যাঙ্কু দোস্ত, সুন্দর একটা গিফট দিলি"। এদিকে রিমনের চোখ গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসার দশা :P "না না না ... আমার আম্মু মেরেই ফেলবে এই শার্ট তোমাকে দিয়ে দিলে"। আমি রিমনকে বলি "রিমন, একটা শার্টের জন্য তোমার আম্মু তোমাকে মেরে ফেলবে? তাহলে তো তোমার কোন দামই নাই, আজকে বরং শার্টটাকেই তাহলে বাসায় পাঠায় দেও, তুমি থাইকা যাও আমাদের সাথে"। রিমন কিছু না বলে উঠে চলে যায় সেদিন, পরের দিন আর আসেনা। তার পর দিন থেকে আবার সব আগের মত, কিন্তু ওই শার্টের কথা আর তোলেনি সে :P

কলেজের মাঠে একটা বাঁকা কৃষ্ণচুড়া গাছ ছিল। ওটার ডাল ধরে আমরা বান্দরের মত ঝুলতাম। আমাদের তুলনায় ছোটখাটো রিমন কোনদিন ঝুলতে পারতোনা। একদিন দীপক ওকে খপিয়ে দেয়, বলে রিমন ওই ডালটা ধরতেই পারবে না। রিমন খেপে গিয়ে দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে ডালটা ধরে ফেলে। আর দিপক মাঠ ভর্তি ছেলে মেয়ের সামনে একটানে ওর ট্রাউজার নাময়ে দেয় হাটু পর্যন্ত :P:P:P ... ভাগ্যিস আন্ডু ছিলো নীচে ;)

এদিকে রিমা ছিলো চরম বাউন্ডুলে টাইপ। টম বয় মার্কা। মেয়েদের সাথে কম মিশতো, আমাদের সাথেই থাকতো বেশীরভাগ সময়। সবার খুব ভাল বন্ধু। আমরাও ওকে মেয়ে বলে ট্রিট করতামনা। আমি মাঝে মাঝে ওকে ডার্লিং বলে ডাকলেই খেপে যেত, সারা কলেজ দৌড়ে আমাকে ধরে এনে মারতো :D রিমার আরেকটা জিনিস মনে আছে। ওর মন খারাপ হলে এক ফ্লাক্স চা আর কিছু বিস্কিট নিয়ে ঘন্টা হিসাবে রিক্সা ভাড়া করে একা একা ঘুরতো। সেই রিমার সাথে কেমন করে যেন রিমনের প্রেম হয়ে গেছিলো :|

ওদের প্রথম ডেট ছিলো কলেজের পেছনে বড় দিঘীটার পারে। সে দিন বিকেলে ওর হাতে এক প্যাকেট প্রোটেকশন (;)) ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলাম "বন্ধু, বি সেইফ ;)" প্যাকেটটা হাতে নিয়ে প্রথমে রিমনের হাত কাঁপতে শুরু করে, পরে গোটা রিমনই কাঁপতে শুরু করে, যেন অজ্ঞান হয়ে যাবে এখনই B-):P তারাতারি ওর হাত থেকে নিয়ে নেই প্যাকেট, সেদিন সে রিমার সাথে তেমন কোন কথাও বলতে পারেনি। পরে রিমা বলেছিল "শালার এক মাকুন্দার প্রেমে পড়লাম শেষ পর্যন্ত?" =p~ =p~
.......................................................

১৫ বছর, অনেক লম্বা সময়। ধন্যবাদ ফেইসবুক, আমার পুরনো সময়টা, সেই আনন্দময় সময়গুলোর স্মৃতী, আমার বন্ধুদের ফিরিয়ে দেবার জন্য।

ওরা এখন আছে ডেনমার্কে। ভালই আছে দুজন, একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে ওদের। সুন্দর জীবন।

ভাল থেকো রিমন, ভালো থাকিস রিমা।
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×