somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব মন্দা ও আমেরিকার বাঙালি

১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(

বহু জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক এবং আই এম এফ এর য়ৌথ উদ্যোগে ,৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে ৭ই অক্টোব্র , তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের আওতা ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতিবিদ গণের এক বিশাল সন্মেলন। আলোচনার বিষয়বস্তু’রোড টু রিকভারি’--কিভাবে এর প্রভাব থেকে বের হওয়া যায় ।

বিশ্ব মন্দার এক বছর পার হ’য়ে গেল।সমগ্র বিশ্ব জুড়ে একই কথা একই প্রশ্ন’এরপর কি?’।বাকী বিশ্বের মত যুক্ত্ররাষ্ট্রের অধিবাসীরা ও সদা আতঙ্ক গ্রস্থ। যেখানে রয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি প্রচুর বাংলাদেশী।বিভিন্ন বর্ণের, গোত্রের ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে গড়া এ দেশে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পেশজিবী ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। ।কেউ ই এই মন্দার প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।অনেকের মতে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই এমন ভয়াবহ মন্দা।ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যাবে ,এ নতুন কিছুনা। কারণ ভিন্ন ভিন্ন হ’লে ও মন্দার প্রভাব অতীতে ও বহুবার এসেছে ভবিষ্যতেও আসবে। এ ছিল, আছে এবং থাকবে।

কোন দেশের সম্পূর্ণ এক বছরের নিজস্ব আয় যদি কমে যায় তখনই শুরু হয় অর্থনৈতিক মন্দা। দৃশ্যমান হয় জনগনের আয়ে, বেকার সমস্যায়,শিল্পখাতে,পাইকারী বাজ়ারে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা ইনফ্লেশন এবং মন্দা ওঁতো প্রতো ভাবে জ়ড়িত।এর সাথে যোগ হয় মানুষের অতিরিক্ত সঞ্চয়ী স্বভাব। দাম বাড়ার কারণ হ’তে পারে বহুবিধ।অপর্যাপ্ত উৎপাদন,অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ বা যে কোন কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, দেশের সার্বিক লোনের পরিমাণ ইত্যাদি।এই মূল্যবৃদ্ধি যদি বেশ কিছুদিন ধরে চলে মানুষ কেনা কাটার পরিমাণ যথা সম্ভব কমিয়ে ফেলে প্রয়োজ়নের অতিরিক্ত কোন কিছুই সে আর কেনেনা।এবং এভাবে আরও কিছুদিন চলতে থাকলে কোম্পাণী তাঁর খরচ বাঁচাতে শুরু করে কর্মচারী ছাঁটাই। মানুষের মাঝে শুরু হয় নিরাপত্তাহীনতা বোধ, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ী মনোভাব।মানুষ খরচ করা একেবারেই কমিয়ে দেয়। আর তখনই অচল হ’য়ে পড়ে অর্থনীতির চাকা।মন্দা আর ও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।



১৯৩০ সালের পর এই প্রথম যুক্ত্রাস্ট্রের বড় বড় ব্যাঙ্কগুলোকে এভাবে ধ্বসে পড়তে দেখা গিয়েছে।মাত্রাতিরিক্ত আর্থিক লোন আদান প্রদানকেই এর মূল কারণ বলে মনে করা হয়।




আমেরিকা প্রবাসি বাঙালি ও তাদের পরিবারের সবাই কোন না কোন ভাবে ভুক্তোভূগী।চাকুরী চলে যাওয়া কিম্বা যে কোন মুহূর্তে চলে যাওয়ার আতঙ্কে পরিবারের সবাই।এমনকি স্কুলগামী ছোট্ট শিশুটি ও।স্কুলে কেউ না কেউ প্রতিদিন ই খবর নিয়ে আসছে,বাবা/মা’ র লে অফ (চাকুরি চ্যুত), ব্যাঙ্কের কাছ থেকে লোণ নিয়ে কেনা বাড়ী ও ধরে রাখতে পারেনি, স্কুল ছাড়তে হচ্ছে।এমন অনেক ঘটনা ।ঘরে এসে বলছে’বাবা তোমার চাকুরী কবে ্যাবে?’তাকে ও যদি স্কুল ছাড়তে হয় এ ভয়ে ভীত সে। চাকুরী চলে গিয়েছে যে কত লোকের!কত হতাশা!সমগ্র সমাজ জুড়ে বিরাজমান আতঙ্ক ও হতাশা। বেড়ানো কিম্বা দেশে যাওয়া সবই সীমিত কিম্বা স্বপ্ন।


গ্যাসের দাম গ্যালন প্রতি চার ডলার হ’য়ে গিয়েছিল।পায়ে হেঁটে,বাইসাইকেলে করে কিম্বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করছে মানুষ।বড় বড় দু একটি শহর ছাড়া আমেরিকার পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা খুবই খারাপ। অনেকেই করছে কার পুলিং--একে অন্যের সাথে ভাগাভগি ক’রে নিয়েছে গ্যাস খরচ।বাসা থেকে অনেক আগে বের হ’য়ে সহকর্মী কারো সাথে পালা ক’রে কাজে যাওয়া আসা করছে।
বাংলাদেশী পরিবার গুলোর লোকজন সাধারণতঃ বাসায় রান্না করে খেতে পছন্দ করে। এবার যোগ দিয়েছে অন্যান্য সবাই।অতিরিক্ত খরচ কেউই করছেনা।রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীদের অবস্থা খুবই করুণ। পাঠাচ্ছে নানা ধরণের কুপন,একটি কিনলে একটি ফ্রি কিম্বা ৫ ডলার, দশ ডলার অফ। এমন কত প্রলোভণ! কত কি!

এত কিছুর মাঝেও আতিথেয়তা প্রিয় এবং আড্ডা প্রিয় বাঙালি জাতি বাসায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বন্ধুদের।কারো হয়তো চাকুরী চলেই গিয়েছে, কারো যাই যাই করছে,ব্যবসা গুটানোর মত অবস্থা।তবু একে অন্যকে পেয়ে খুশী। একে অন্যকে সাহস যোগায়। এখানেই তো জ়ীবনের আনন্দ বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।সব ভুলে সবাই আবার স্বপ্ন দেখে। সারা বিশ্বে, বাংলাদেশে ও মন্দা। প্রবাসী বাঙালীরা দেশের কথা ভাবে। এবার ঈদের কেনা বেঁচা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে শুনে খুশি হয়। এমন অনিশ্চিত চাকুরীর বাজারে বেহিসাবী খরচ ও যেমন গ্রহণ যোগ্য ন্য় তেমনি একেবারে কঞ্জুসের মত হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও অর্থনীতির বাজারে সুবাতাস বইবেনা। এ দুয়ের মাঝামাঝিই উত্তম পন্থা। দেশে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে উন্নত ।স্বাস্থ্য খাতে ব্যায় হ্রাসের সাথে সাথে উৎপাদোন্মুখি শ্রম ও বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া এই ফেসবুক,ফ্লিকর ,ওয়েব ২’০ এর যুগে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রযুক্তিকে আরো বেশী কাজ়ে লাগাতে হবে। আমরা আশাবাদী শেষ হবে অমারাত্রি আবার হাসবে সূর্য। বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদগন আলাপ আলোচণা ও মত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে বের করে আনবেন মুক্তির উপায়।

দৈনিক সমকাল অক্টোবর,১০ ,২০০৯ এ প্রকাশিত।
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×